সকাল আর আসেনা গোলাপ হয়ে ফোটেনা কিশোরীর হাতে শৌভিক ভাল নেই। সে একটা খুন করার অপরাধবোধে আচ্ছন্ন থাকে। বাবাকে সে সামান্য সাহায্য করত। সংসারের ভার লাগভের চেষ্টা আর কি!ওরা তিন ভাই। বাবা-মা।
বোনও ছিলো একজন। পরম আদরের। বলতে গেলে শৌভিকই কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। ছেলেবেলা থেকেই সে শৌভিককে বড়দা বলে ডাকত। ছোট বোনটাকে না দেখে শৌভিক থাকতে পারত না।
কোথাও গিয়েও শান্তি পেত না।
মিষ্টি মুখাবয়বের শ্যামবরণ মেয়ে। বড় আহলাদ করে কথা বলত। মেয়েটি সংসারটিকে আনন্দে ভরপুর করে রাখত।
তানিয়ার মৃত্যুর পর ছয়মাস হতে চলল।
পাড়া প্রতিবেশিরা ভুলেই গেল তার কথা। বাবা-মা কখনো সখনো মেয়ের কথা ভেবে নিরবে চোখের অশ্রূ ঝরায়। কিন্ত্ত শৌভিক দিন দিন কেমন মানসিক রোগীর মত আচরণ করতে থাকে। কোন কাজ করে না। পাগলের মত এই হাসে তো এই কাঁদে।
আলেয়াকে যেদিন ভালো লেগেছিলো সে প্রথমেই তানিয়াকে এসে বলল। বড় বড় চোখ আলেয়ার। ষাঁড়ের মত টানা টানা চোখ। সে তানিয়ার মতামত চেয়েছিলো। তানিয়া বলল আলেয়ার দায়িত্ব আমার।
তুই কোন চিন্তা করিস না। দেখবি কেমন করে ম্যানেজ করে ফেলেছি। তানিয়া খোঁজ খবর নিল। জানতে পারে আলেয়া তার দাদার কখনই হবে না। আলেয়ার অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেম আছে।
কথাটা বলতে এসে বড়দা'র গায়ে পড়ে কাঁদতে লাগলো।
-দাদা তোর কি খুব মন খারাপ লাগবে?
-না, কেনো কী হয়েছে বল। মন খারাপ করবো না।
-দাদা ওর অ্যাফেয়ার আছে।
-ধুর পাগলি তুই কাঁদছিস কেনো?আমি কি তার প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছি নাকি?জাস্ট ভাল লাগত এই যা!তোর দাদার কপাল ভালো না বুঝলি?আলেয়া আমার জন্য আসলেই আলেয়া,হাহা।
শৌভিক ভাবে এভাবে তানিয়াকে হত্যা না করলেও তো পারতাম। আমি আমার প্রিয়তমা বোনের খুনি। পাগলেরমত প্রায়ই গুমড়ে কাঁদে। কিন্ত্ত সে হত্যার জন্য কোন শাস্তি হবে না।
তানিয়াকে একটা ছেলে কলেজে যাবার পথে টিজ করতো।
শৌভিক সে কথা জানত। বলত পাত্তা দিবি না। পাত্তা না দিলে নিজ থেকেই কেটে পড়বে। ভেতরে ভেতরে শৌভিক ছেলের খোঁখবর নেয়। সে পাড়ার উঠতি মাস্তান।
রাজনৈতিক দলের সাথেও ভালো সম্পর্ক। মাদক দ্রব্যেরও নাকি ব্যবসায় করে। শৌভিক সব কিছু জেনে তানিয়াকে বিস্তারিত বলে আর সাবধানে থাকার পরামর্শ দেয়। বলে -দেখিস কিন্ত্ত আবার প্রেমে পড়ে যাবি না । পরে পস্তাতে হবে।
তানিয়া তাকে আস্বস্ত করে।
এরপর অনেকদিন কেটে যায়। শৌভিক তার বোনের মাস্তান 'রুমিও'র কথা ভুলে যায়। সে শুধু জানে
তার বোন এমন ভুল করতে পারে না।
শৌভিক একদিন একটা খবর পায়।
মাস্তান ছেলেটা একটা খুন করেছে। খবরটা জেনে সে খুব আশ্চর্য হয় নি। মনে মনে ভাবে এমন ছেলেদের এসব কাজ। খবরটা সে তানিয়াকে এসে বলে।
তানিয়া খবরটা শুনে চুপ করে থাকে কিছুই বলে না।
-কি হলো খারাপ লাগছে?প্রেমে ট্রেমে পড়িস নি তো?
-আরে না দাদা ।
এপর্যন্ততই। আর কথা চালায় নি।
সেদিন তানিয়াকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। শুক্রবার।
কলেজ ও বন্ধ। সারাদিন খুঁজে ক্লান্ত। আবার সামাজিক বাঁধা ও আছে। মানুষ এমন খবরে চোখ কোটর থেকে বের করে তাকায়। আর একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে কথা বলে।
যা অশ্লীল ঈঙ্গিত দেয়।
সন্ধায় তানিয়া ফিরে আসে। ভাব ভঙ্গি একে বারেই ফ্যাকাসে। শৌভিক বাবা-মা'কে বকাঝকা না করতে বলে। সারারাত একটা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করে।
শৌভিক কিংবা অন্য কেউ তাকে কিছুই জিজ্ঞেস করে না। কি হয়েছিলো? কোথায় গিয়েছিলো?
পরের দিন সকালে তানিয়া শৌভিকের পায়ে পড়ে কাঁধতে থাকে। নিজ থেকেই বলে সে মাস্তান ছেলেটিকে ভালবাসে। তাকে দেখতে গতকাল কারাগারে গিয়েছিলো। তার বোনের এমন কান্ডজ্ঞান দেখে সে মেজাজ ঠিক রাখতে পারে নি।
তড়িঘড়ি করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। বের হবার আগে মুখ বাড়িয়ে বলে যায়-'ফিরে এসে যেন আমি তোর মুখ না দেখি' ।
শৌভিক ঘন্টাখানেক পরেই ফোন পায়।
বাসায় কান্নার সোরগোল। পুলিশ এসে লাশ নামায়।
তানিয়া ফাঁস নিয়েছে।
শৌভিক এখন ভাল নেই। সে চামড়া ছিলা মুরগির মত ছটফট করে। তানিয়া তার দাদার হুকুম মেনেছে। সে তার মুখ তার দাদা আসার আগেই লুকিয়েছে।
তানিয়া একবার মরেছে।
কিন্ত্ত তার দাদা এখন প্রতিদিন মরে। ক্ষণে ক্ষণে মরে। তানিয়া কি তার দাদার এত কষ্ট সহ্য করতে পারে! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।