আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাণ বাঁচাতে রুদ্ধশ্বাস ৩০ ঘণ্টা

সাভারে ধসে পড়া ভবনে চারজনের জীবিত থাকার বিষয়টি উদ্ধারকর্মীরা জানতে পারেন গত শনিবার বিকেল পাঁচটায়। এর পরই শুরু হয় তাঁদের জীবিত উদ্ধারের জন্য অভিযান। তাঁদের মধ্যে একজন শাহীনা। পোশাক কারখানার শ্রমিক। বাড়ি কুষ্টিয়ায়।

প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে চলছিল রুদ্ধশ্বাস এই অভিযান। আর এ জন্য তখন পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যবহার করা হয়নি ভারী যন্ত্রপাতি। এ যেন প্রাণের স্পন্দন টিকিয়ে রাখার অন্য রকম শ্বাসরুদ্ধকর এক অভিযান। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হাসান ও আশরাফ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক রাকিবুল হাসান, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা জলিল, ইউসুফ ও রব এবং স্বেচ্ছাসেবক এজাজউদ্দিন। কিন্তু রাত ১০টার দিকে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হাসান ও ক্যাপ্টেন আশরাফের নেতৃত্বে তাঁকে বের করে আনার প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে সব আশার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসে।

ধসে পড়া ছাদ থেকে প্রায় ৭০ ফুট দূরে একটি রড কাটার সময় তৈরি স্ফুলিঙ্গে আগুন ধরে যায়। এতে স্বেচ্ছাসেবক আজিজ আহত হন। বাকি উদ্ধারকারীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিভিয়ে ফেলেন। রাত ১১টার দিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, উদ্ধারকর্মীরা জীবিত বের হয়ে এলেও শাহীনাকে উদ্ধার করা যায়নি।

তাঁর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা তাঁদের জানা নেই। এ সময় দুই সেনা কর্মকর্তা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমল কবির জানান, রাত ১২টার দিকে ধ্বংসস্তূপ সরাতে ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের অভিযান শুরু হয়েছে। কেউ জীবিত থাকলে তাঁকে অবশ্যই উদ্ধার করা হবে। গতকাল দুপুরের পরই মূলত শেষ হয়ে যায় রানা প্লাজায় জীবিত উদ্ধারের প্রচেষ্টা।

ধসে পড়ার পর ১৫ থেকে ২০টি স্থানে ছাদে গর্ত করে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। বেলা তিনটার দিকে শুধু ধসে পড়া ভবনের তৃতীয় তলার উত্তর-পূর্ব পাশে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়। সেখানেই শাহীনার অবস্থান। যন্ত্রের টানাটানিতে পাছে শাহীনার জীবন চলে যায়—এই আশঙ্কায় উদ্ধারকর্মী থেকে শুরু করে গণমাধ্যমকর্মী, উৎসুক জনতা সবাই চেয়েছেন আগে তাঁকে জীবিত উদ্ধার করা হোক। কর্তৃপক্ষও সেই আবেগের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হাতুড়ি, প্লাস, হেক্সো ব্লেড আর ড্রিল মেশিনের ওপর নির্ভর করেই চলে অভিযান।

যেভাবে অভিযান: প্রথমে উদ্ধারকর্মীরা ধসে পড়া ভবনের আটতলার ছাদ থেকে কেটে কেটে চতুর্থ তলা পর্যন্ত যান। এ কাটা অংশটুকু দৈর্ঘ্য-প্রস্থে চার ফুট। দড়ি ও কাপড় ধরে ধরে নিচে নামতে হয়। ধসে পড়ার পর প্রতিটি তলার সঙ্গে মেঝের ফাঁকা অংশ এক থেকে দেড় ফুট। হামাগুড়ি দিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে কেটে ইংরেজি বর্ণমালা ‘এল’-এর আদলে ৩৪ ফুট যান তাঁরা।

সেখান থেকে তৃতীয় তলার ছাদ কাটেন উদ্ধারকর্মীরা। তৃতীয় তলায় এক কোনায় বড় একটি বিমের আড়ালে ছিলেন শাহীনা। এর নিচের কয়েক ইঞ্চি ফাঁকা দিয়ে তাঁর আওয়াজ পাওয়া যায়, তবে দেখা যায় না। গতকাল সকাল পর্যন্ত তিনি জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে আরও তিনজন জীবিত আছেন। তবে অন্যদের কথা বলার শক্তি নেই।

অভিযানের বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা এসব কথা জানান। শাহীনাকে উদ্ধারের তৎপরতা —শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে গর্ত করে তৃতীয় তলায় পৌঁছান উদ্ধারকর্মীরা। সেখানে শাহীনাসহ চারজন জীবিত রয়েছেন বলে নিশ্চিত হন তাঁরা। —বিকেল পাঁচটা থেকে রাতভর চলে যন্ত্রপাতি ও প্রতিবন্ধকতা সরানো। —গতকাল ভোর থেকে খাওয়ার স্যালাইন পৌঁছানো হয়।

এরপর নলের মাধ্যমে আশপাশে অক্সিজেন দেওয়া হয়। —সকাল নয়টা নাগাদ শাহীনা যে বিমের আড়ালে ছিলেন, সেখানে পৌঁছান উদ্ধারকর্মীরা। —এরপর শুয়ে শুয়ে বিম কাটা শুরু হয়। —বেলা দুইটার দিকে এজাজউদ্দিন বিমের চারটি রড কেটে বের হন। —আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী উদ্ধারস্থল থেকে চিরকুট পাঠান।

এতে লেখা হয়, শাহীনা কথা বলছেন। অন্যরা নিশ্চুপ। —তিনটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক জানান, মোটা বিমের তিন-চতুর্থাংশ কেটে ফেলা হয়েছে। —তিনটা ১০ মিনিটে মুরাদ জানান, হাত বের করা যাচ্ছে, কিন্তু মাথা আটকে যাচ্ছে। —সাড়ে তিনটায় ক্যাপ্টেন হাসান জানান, মাথা বের করার জন্য নিচের টাইলস কাটা হচ্ছে।

শাহীনা টাইলসের স্তূপ তাঁদের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। —চারটা থেকে ড্রিল মেশিনসহ নতুন করে যন্ত্রপাতি ভেতরে নেওয়া হয়। —রাত ১০টার দিকে সুড়ঙ্গে আগুন। —রাত ১১টায় আইএসপিআরের ব্রিফিং: উদ্ধারকর্মীরা জীবিত বের হয়ে এলেও শাহীনাকে উদ্ধার করা যায়নি। —রাত ১২টায় ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরাতে দ্বিতীয় পর্যায়ের অভিযান শুরু করা হয়।

সুত্র: প্রথম আলো: View this link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.