শহীদুল্লাহ হলের পুকুরনিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত আছে নানা কল্পকাহিনী। এমনকি শিক্ষার্থীদের আড্ডায়ও মাঝে মাঝে স্থান পায় রহস্যঘেরা এ পুকুরের অজানা কাহিনী। পুকুরের এই রহস্য নিয়ে লিখেছেন
শামছুল হক রাসেল
প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা। ভর্তি পরীক্ষা দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন একজন পরীক্ষার্থী। তার এক বন্ধু থাকতেন শহীদুল্লাহ হলে।
এ সুবাদে শহীদুল্লাহ হলেই ওঠেন সেই পরীক্ষার্থী। এরপর দুপুরে গোসল করতে নামেন হলের সামনের পুকুরে। ঘাটের পাড়ে বেশ কিছুক্ষণ সাঁতারও কাটেন। কিন্তু মাঝ পুকুরে গিয়ে হঠাৎ তিনি পানির নিচে তলিয়ে যেতে থাকেন। পাড় থেকে অনেক ডাকাডাকির পরও তার সাড়া মেলেনি।
খবর শুনে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু সেই পরীক্ষার্থীকে আর জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে পারেনি। এ তো গেল একজনের কথা। এমনিভাবে শহীদুল্লাহ হলের এই পুকুরটিতে অনেক মানুষের প্রাণ নিভে গেছে। সময়ের প্রেক্ষাপটে এ পুকুরটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে নানা কল্পকথা।
শহীদুল্লাহ হলের সীমানার ভেতরেই পুকুরটির অবস্থান। দৃষ্টিনন্দন এ পুকুরটির চারদিকে গাছ লাগানো আছে। পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে রয়েছে পাকা দুটি ঘাট। চারদিকের পরিবেশ যে কাউকেই পুকুরটির কাছে টানবে। বিশেষ করে পড়ন্ত বিকালে অনেকেই গল্প করতে এখানে ছুটে আসে।
আবার কেউ কেউ পুকুরের সামনে এলেও ঘাটের দিকে নামেন না। এসব কল্পকথার জন্য এই পুকুরটিকে আজ শহীদুল্লাহ হলের কলঙ্ক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে এই পুকুরটিতে সাঁতার কাটতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে ১০ থেকে ১২ জন। ছয় বছর আগেও বুয়েটের এক ছাত্র এই পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যান। তার আগে মারা যায় নিমতলী বস্তির দুটি ছেলে, চাঁনখারপুল বস্তির একটি ছেলে।
দিনে দিনে পুকুরটিকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হতে থাকে। কার্জন হলের ক্যাফেটেরিয়া গেটের দায়িত্বরত কর্মচারী আলী আহম্মদ বলেন, আমাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তারপরও যতদূর মনে পড়ে এখানে আসার পর আমিও একজনের ডুবে যাওয়ার ঘটনা শুনেছিলাম। এর আগেও নাকি বেশ কয়েকজন এখানে সাঁতার কাটতে গিয়ে মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, সত্য-মিথ্যা যাই হোক না কেন এই পুকুরকে ঘিরে অনেক কল্পকাহিনী রয়েছে।
কেউ কেউ বলেন, এখানে নাকি ডাইনি বুড়ি রয়েছে। অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মচারী যিনি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, এই পুকুরে জিন-ভূতের আছর আছে। তিনি কর্মরত অবস্থায় এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচজনকে এ পুকুরে ডুবে মরতে দেখেছেন। প্রথম দুজন মারা যাওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুকুরটির পাড়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়।
সেখানে সাঁতার না কাটার নোটিস জারি করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নোটিসেও কাজ হয়নি। সাঁতার কাটতে বা গোসল করতে গিয়ে একের পর এক প্রাণহানি ঘটে। কথিত আছে, সাইনবোর্ড লাগানোর পর হলের এক কর্মচারী স্বপ্নে দেখে, পুকুর থেকে লম্বা চুলওয়ালা এক ডাইনি বুড়ি তাকে বলছে, 'তুই আমার আহার বন্ধ করেছিস, তোর খবর আছে'। এর পরপরই ওই কর্মচারী চাকরি ছেড়ে চলে যান।
বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, দুপুরের পরে বা বিকালে আশপাশের নিমতলী ও চাঁনখারপুল এলাকার লোকজন গরমের সময় পুকুরটিতে গোসল করতে আসে। এসব কল্পকাহিনী উপেক্ষা করেই লোকজন সাঁতার কাটতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। এ ছাড়া কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক ছাত্র মো. কামাল হোসেন মানিকের সঙ্গে। তিনি এক সময় শহীদুল্লাহ হলেই থাকতেন। বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হলে থাকাকালীন কখনো এরকম প্রাণহানির ঘটনা দেখিনি। তবে অন্য শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মুখে অনেক কল্পকাহিনী শুনেছি। তারা বলতেন, এই পুকুরে কিছু একটা আছে। যার জন্য সাঁতার কাটতে নামলে প্রাণ হারায়। পুকুরের এ রহস্য নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এসব কল্পকাহিনী সবই মানুষের মনগড়া।
তার মতে, এখানে যেসব মানুষ সাঁতার কাটতে আসে তাদের বেশির ভাগই আসে শখের বশে। দেখা গেছে, দীর্ঘদিন তারা সাঁতারের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকার কারণে এতবড় পুকুরে সাঁতার কাটতে এসে পানিতে ডুবে মারা যায়। তাছাড়া এখানে বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটেছে দুপুরের পর বা বিকালে। সাধারণত এ সময় আহারের পর মানুষের শরীর এমনিতে ক্লান্ত ও ভারী হয়ে আসে। পুকুরের এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে এই ভারী শরীর নিয়ে পার হওয়া কষ্টসাধ্য।
তিনি আরও বলেন, এখানে ডুবে মারা যাওয়া বেশির ভাগ মানুষই বাহাদুরী দেখাতে পুকুরটিতে সাঁতার কাটতে নেমেছে। একে অন্যের সঙ্গে টেক্কা দিতে গিয়েই প্রাণ হারিয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার অনেক মানুষ এখনো এসব যুক্তিতে কর্ণপাত করেন না। তারা এখনো বিশ্বাস করেন, পুকুরটিতে জিন-পরীর মতো কোনো কাল্পনিক শক্তি আছে
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।