আমি যার শিয়রে রোদ্দুর এনে দেবো বোলে কথা দিয়েছিলাম সে আঁধার ভালোবেসে রাত্রি হয়েছে। এখন তার কৃষ্ণপক্ষে ইচ্ছের মেঘ জোনাকির আলোতে স্নান করে, অথচ আমি তাকে তাজা রোদ্দুর দিতে চেয়েছিলাম। ….. “রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ”
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম তাঁর পিতার কর্মস্থল বরিশাল জেলায়। তাঁর মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে। ঢাকা ওয়েস্ট এ্যান্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এস এস সি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচ এস সি পাস করেন।
অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। এই কবির স্মরণে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মংলার মিঠেখালিতে গড়ে উঠেছে "রুদ্র স্মৃতি সংসদ"।
তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা। জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ভালো আছি ভালো থেকো সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন।
১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বহুল আলোচিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে। ১৯৯১ সালের ২১ জুন রুদ্র ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে-
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?
তিনি ঘোষণা করেন ‘আমি কবি নই–শব্দ-শ্রমিক। ’ সত্যিকার অর্থে রুদ্রের কবিতাকর্মকে নি:সন্দেহে শব্দশ্রম বলা যাবে।
কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কবিতার সাথে যাদের পরিচয় ঘটেছে তারা অবগত আছেন মার্কসবাদের সাথে রুদ্রের কবিতার ভাব কত গভীর। নির্যাতিত গণমানুষের দীর্ঘশ্বাস কীভাবে রক্তাক্ত করে দিয়ে যায় রুদ্রের মুখ। একাত্তরের যুদ্ধের সময় তিনি নবম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবাকে ধরে নিয়ে গেছিল পাকিস্তানি হানাদারেরা।
যে আমি সিগারেট হাতে ধুমায়িত রিকশার
পায়ের উপরে রেখে পা অবিকল দ-য়ের মতো
কি যেন ভাবতে-চলেছি।
কোথাও
রেস্তোরাঁয় কোনের এক চেয়ারে বোসে চায়ে লেবু দিচ্ছি
অথবা যে আমি পথচারী রমনীর নিতম্বে
ঢেউ দেখে আহা মরি পুলকিত হই কখনো
আমি তাকে বিশ্বাস করি না।
আশির দশকে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে ক’জন কবি বাংলাদেশি শ্রোতাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। সক্রিয়ভাবে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন সাথে যুক্ত ছিলেন। ডাকসুর ইলেকশনে করে হেরেছিলেন আপন বন্ধুর কাছে। চূড়ান্ত বাউন্ডুলে এই কবির বন্ধুবান্ধবের সংখ্যা ছিল তার নিজেরও অজানা।
তিনি ছিলেন এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অংশীদার।
উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯), ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম (১৯৮২), মানুষের মানচিত্র (১৯৮৪) এবং ছোবল (১৯৮৬) তার সম্পাদিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮), মৌলিক মুখোশ (১৯৯০)। ছোটগল্প ‘সোনালি শিশির’, নাট্যকাব্য ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ ও ‘পুরস্কার’ তিনিই সম্পাদনা করেছিলেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে পেয়েছিলেন মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার।
“ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো”র মতো অসম্ভব সুন্দর আর জনপ্রিয় গান লিখেছেন। গানের দল গড়েছেন “অন্তর বাজাও” নামে। শেষ জীবনে ফিল্ম বানাতে চেয়েছিলেন। মৃত্যু ঠেকিয়ে দিলো। ভীষণ এক খামখেয়ালীর জীবন ছিলো তাঁর।
চাকরির প্রাতিষ্ঠানিকতায় নিজেকে বাঁধেননি । কয়েকটা রিক্সা ছিলো, তা থেকে যা আয় হতো তাতেই চলতেন। ঠিকাদারী করেছেন, চিঙড়ির খামার করেছেন। আর দুহাতে টাকা উড়িয়েছেন। পাঞ্জাবী আর জিন্সের যুগলবন্দী তখন বোধহয় তিনি একাই ছিলেন।
অনেক ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তসলিমা নাসরিনকে। তখনো তসলিমা নাসরিন নামে খ্যাতি পাননি। সে বিয়ে টেকেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্যামা তরুণী শিমুলের সঙ্গে প্রেম হলো। কিন্তু নায়িকার অভিভাবক রাজী না।
সে সম্পর্কও চুকে বুকে গেলো। সেই থেকে রুদ্র আরো বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে যেতে লাগলেন। ভেতরে ভেতরে একা হয়ে যেতে লাগলেন। ক্ষয়ে যেতে লাগলেন।
অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা ফল সরুপ আলসারে পেয়ে বসেছিল তাঁকে।
পায়ের আঙ্গুলে রোগ বাসা বেধেছিল। ডাক্তার বলেছিলো পা বাঁচাতে হলে সিগারেট ছাড়তে হবে। তিনি পা ছেড়ে সিগারেট নিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন।
আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি
অনেক আঁধার আমাকে ছিন্নভিন্ন করেছে।
নীল হয়েছে আমার শিরা উপশিরা ।
তবু -
তবু, আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি ।
তোমাকেই শুধু তোমাকেই -
সকাল (তসলিমা নাসরিন) কে লেখা রোদ ( রুদ্র) এর চিঠির অংশ বিশেষ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।