Shams
পৃথিবীর অন্যতম নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত দেশ ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ! প্রকৃতি যেন এখানে দু'হাত ভরে সাজিয়েছে_ যা দুনিয়াজোড়া মানুষকে করে মুগ্ধ। আর এ কারণেই এ দেশের প্রধান আয়ের উৎস পর্যটন। প্রতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্তর থেকে লাখ লাখ পর্যটক মালদ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন। এক ঋতুর দেশটির উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম মিলে রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার ছোট ছোট দ্বীপ। এ দ্বীপগুলোর সমন্বয়েই সৃষ্টি মালদ্বীপ।
সংস্কৃত শব্দ 'দ্বীপমালা' শব্দ থেকেই মালদ্বীপ। আবার কেউ কেউ বলে, 'মালে দিভেই রাজে'_ এই কথা থেকে মালদ্বীপ শব্দটির উদ্ভব। 'মালে দিভেই রাজে'_ এই কথার অর্থ, 'দ্বীপরাজ্য'। অনেকে মালদ্বীপকে মহলদ্বীপও বলে। মহল মানে (আরবিতে) প্রাসাদ।
দ্বাদশ শতক থেকেই মালদ্বীপের মুসলিম শাসন। ইবনে বতুতা মালদ্বীপ গিয়েছিলেন ১৩৪৩ খ্রিস্টাব্দে। ইবনে বতুতা ও অন্য আরব পর্যটকরা এই অঞ্চলকে 'মহাল দিবিয়াত' নামে উল্লেখ করেছেন। আরবিতে মহাল অর্থ প্রাসাদ। বর্তমানে এই নামটিই মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় প্রতীকে লেখা হয়।
সংস্কৃতে মালদ্বীপকে লক্ষদ্বীপও বলা হয়েছে। এর অর্থ লক্ষ দ্বীপের সমাহার। আসলে মালদ্বীপ লক্ষ দ্বীপের সমাহার নয়; রয়েছে ২৬টি অ্যাটোল। (অ্যাটোল মানে লেগুন ঘেরা প্রবাল দ্বীপ) ২৬টি অ্যাটোল আর ১১৯২টি ক্ষুদ্র দ্বীপ। যার মধ্যে কেবল ২০০টি বাসযোগ্য।
প্রাচীন শ্রীলংকার ঐতিহাসিক গ্রন্থে মালদ্বীপকে বলা হয়েছে মহিলা দ্বীপ।
মালদ্বীপের বর্তমান জনসংখ্যা তিন লাখের কিছু বেশি। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে রয়েছে অত্যাধুনিক মালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। মালদ্বীপের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কল্যাণে পর্যটকরা অনায়াসে ছুটে বেড়াতে পারেন এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে। পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র মালদ্বীপেই বিশালকায় সাবমেরিনে করে সমুদ্রর তলদেশে ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে।
যা পর্যটকদের ১২০ ফুট গভীর সমুদ্রর তলদেশ পর্যন্ত নিয়ে যায়। গভীর সমুদ্রর তলদেশে বিশাল বিশাল মাছ, গাছ-গাছালি, ভয়ংকর প্রাণী, উঁচু-নিচু পাহাড় দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকরা। সমুদ্রর তলদেশে ভ্রমণ এতই রোমাঞ্চকর যে, বারবার ফিরে আসতে ইচ্ছে করে মালদ্বীপে। সমুদ্র উপকূলের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য রয়েছে সাফারিবোট। যা উপকূল থেকে পর্যটকদের নিয়ে যায় গভীর সমুদ্রে।
সৌন্দর্য পিপাসুদের দেয় অনাবিল আনন্দ। এক একটি সাফারিবোট ১৫-২০ দিনের জন্য ২০-২৫ জন পর্যটক নিয়ে পাড়ি জমায় গভীর সমুদ্র ভ্রমণের পথে। সাফারিবোটে ভ্রমণের অংশ হিসেবে পর্যটকরা দক্ষ ও প্রশিক্ষিত গাইড, অক্সিজেন, ওয়াটার প্রুফ জ্যাকেট নিয়ে পাড়ি জমায় অজানার উদ্দেশ্যে। পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য মালদ্বীপে রয়েছে প্রায় ২০০র বেশি সাফারিবোট। মালদ্বীপের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ইউরোপের দেশগুলো থেকে আসছে হাজার হাজার পর্যটক।
এ কারণে শত শত হোটেল রিসোর্ট সব সময় থাকে মুখরিত। মালদ্বীপের আরেক বিস্ময় হল সমুদ্রের মাঝখানে স্কয়ার সাইজের কয়েক কিলোমিটার জায়গা। যেখানে নেই কোন সাগরের ঢেউ, মনে হয় পুকুরের পানির মতো নীরব হয়ে আছে। এই জায়গায় পর্যটকরা নির্ভয়ে সাঁতার কাটে। স্পিডবোটে চড়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেন।
এখানে দেখা মিলে বিরল প্রজাতির পানি কাটা পাখি। পর্যটকরা যখন রাজধানী মালে আসেন তখন প্রথমে তাদের মন কেড়ে নেয় একটি পার্ক। সেই পার্কে রয়েছে শত শত কবুতর। এই কবুতরের সঙ্গে পর্যটকরা মনে খুলে আনন্দ-উল্লাস করে।
মালদ্বীপে আসা বাংলাদেশী পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ মালদ্বীপের রাজধানী মালের বড় মসজিদটি।
প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় থাকে এই মসজিদটি দেখার জন্য। দেশটিতে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার প্রবাসী শ্রমিক কাজ করছে। তার মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।
মালদ্বীপে বহু বছরের পুরনো অনেক ছোট ছোট মসজিদ আছে, যা পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। মালদ্বীপের জাদুঘর পৃথিবীর সমৃদ্ধ জাদুঘরগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এখানে রয়েছে তাদের পুরনো স্থানীয় মুদ্রা, বিশাল বিশাল মাছের কংকাল, মালদ্বীপের লোকজ শিল্পের সংগ্রহ।
মালদ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তুলনা মালদ্বীপ নিজেই। তাই এই প্রাকৃতিক রূপ আর সৌন্দর্যের জন্য দুনিয়ার পর্যটকরা এই ভ্রমণ তীর্থে ছুটে আসে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।