হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ ও ধ্বংসযজ্ঞের পর এক মাস কেটে গেছে। কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে কোনো তদন্ত বা অনুসন্ধান করেনি। ধ্বংসযজ্ঞের পর গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করার কথা বলা হলেও সে চেষ্টা শুরুই হয়নি।
পুলিশ বলছে, কাজে ব্যস্ত থাকায় তারা ভিডিও ফুটেজ দেখার সময় পায়নি। তা ছাড়া তদন্ত দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের দিক থেকে কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা।
গত ৫ মে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থানের পর রাজধানী শহরের ভেতরে ঢুকে পড়ে হেফাজতে ইসলাম। সরকার অবশ্য তাদের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। কিন্তু হেফাজতের নেতা-কর্মীরা পল্টন-মতিঝিল এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান। অর্ধশতাধিক যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়, আগুন দেওয়া হয় বিভিন্ন ভবনে, ফুটপাতের দোকানগুলোতে, বিপণিবিতানে, সরকারি ও পুলিশের কার্যালয়ে। রাস্তার মাঝে থাকা গাছগুলোও কেটে ফেলা হয়।
সড়ক বিভাজকের গ্রিল আর কংক্রিটের চাঁইগুলো খুলে, ভেঙে টুকরা টুকরা করে ফেলেন তাঁরা। এই ধ্বংসযজ্ঞে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির কিছু কর্মী-সমর্থকও অংশ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
১৩ দফা দাবি আদায়ে ওই দিন শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে চলে যাওয়ার কথা থাকলেও হেফাজতে ইসলাম সন্ধ্যার পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাপলা চত্বরে অবস্থান নিলে মধ্যরাতের পর পুলিশ, র্যাব, বিজিবি যৌথ অভিযান চালায়। এই অভিযানের ৩০ মিনিটের মধ্যে খালি হয়ে যায় ওই এলাকা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ৫ মের ঘটনার পর রাজধানীর মতিঝিল ও পল্টনসহ কয়েকটি থানায় ৩৬টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার রাতে ৬১ জন ও পরে হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার হন। তিনি জানান, ৫ মে সারাদিনের সংঘাতে একজন পুলিশসহ ১১ জন নিহত হন।
পুলিশ সূত্র জানায়, হেফাজতের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরাই বেশির ভাগ মামলা করেছেন।
আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের। আর এক পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের গাড়ি পোড়ানো, থানা ও ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ মামলা করেছে। এসব মামলার একেকটিতে ২৪৭ জন পর্যন্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে ৩০ থেকে ৪০ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা, বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতার নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।
আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, জুনায়েদ বাবুনগরী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, ৫ মে সকাল থেকেই বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যর ওপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজসহ তাণ্ডব চালান জামায়াত-শিবির, ছাত্রদল এবং যুবদলের নেতা-কর্মীরা।
তাঁদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন হেফাজতের কর্মীরাও।
পুলিশ সূত্রগুলো বলছে, বাবুনগরীর জবানবন্দি ছাড়া তদন্তে দৃশ্যমান আর কোনো অগ্রগতি নেই। মামলার আসামি বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ এখনো সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে পারেনি। তাঁদের গ্রেপ্তারও করা হয়নি।
ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করার কথা থাকলেও সেই প্রক্রিয়া শুরুই হয়নি।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ আশরাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় করা ৩৬টি মামলার তদন্ত চলছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ হরতাল ও রাস্তায় নাশকতা ঠেকাতে বেশি ব্যস্ত থাকায় মামলাগুলোর তদন্ত কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। মামলায় এখনো বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই বলে মন্তব্য করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ তদন্ত না করায় মিলছে না অনেক প্রশ্নের উত্তর। সমাবেশ মঞ্চে কেন গেলেন না হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী।
ওই তাণ্ডব কারা, কী উদ্দেশে চালাল, কারা এর পরিকল্পনাকারী, কারা মদদদাতা ইত্যাদি বিষয় এখনো খোলাসা হয়নি। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পুলিশকেও তৎপর দেখা যাচ্ছে না।
নিহতের সংখ্যা: প্রথম আলো ৫ মে দুপুর থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত ২২ জন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছিল। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজন মারা যান। বিভিন্ন হাসপাতাল ও মর্গ থেকে জানা যায়, ৫ মে নিহত হওয়া ২২ জনের মধ্যে ১১টি লাশ সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ও মর্গে গেছে ৬ মে ভোরের দিকে।
ধারণা করা হচ্ছে, ৬ মে ভোররাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানের সময় ১১ জন নিহত হয়েছেন। অন্য ১১ জনের লাশ ৫ মে দুপুর থেকে মধ্যরাতের মধ্যে হাসপাতালে গেছে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫ মে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ৬ মে ভোর পর্যন্ত রাজধানীতে সহিংসতায় ৫৭ জন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত দুই হাজার ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।