আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল । হুজুর পাক (সাঃ) এর কোন ছায়া ছিলো না । সূর্যের আলোতেও না , চাদের কিরণেও না । হাকীমে তিরমিযী নাওয়ারেদূর উসুল কিতাবে হযরত যাকওয়ান (রাঃ) থেকে এই বর্ণনাটি উপস্হাপন করেছেন ।
'নূর' - হুজুর পাক (সাঃ) এর নাম মোবারক সমূহের অন্যতম নাম । নূরের কোন ছায়া হয় না ।
উম্মুল মোমেনিন হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, " আমি এক রাত্রে সুই দিয়ে কিছূ সেলাই করছিলাম, তখন হঠাৎ করে আমার হাত থেকে সুইটা পড়ে যায় । আমি ইহা খুজতে লাগলাম কিন্তু পেলাম না । তখন হুযুর (সাঃ) ঘরে প্রবেশ করলেন ।
সুইটা তখন উনার মুখের উজ্জ্বলতায় জ্বলজ্বল করছিলো । "
কুরআনে মহানবী (সাঃ) কে নূর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছেঃ
এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, মহানবী (সাঃ) এর কোন ছায়া ছিলো না । কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ মহানবী (সাঃ)কে নূর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ।
'হে আহলে কিতাবগণ ! তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমণ করেছেন । কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন ।
তোমাদের কাছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্হ । " (সূরা মায়েদা - ১৫)
"হে নবী ! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি । এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তার দিকে আহ্বায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে । " (সূরা আল-আহযাব -৪৫/৪৬)
হাদিস থেকে বর্ণিতঃ
হাদিস-১/
সাঈয়েদিনা হাকিম তিরিমিযি উনার নাওয়ারিদূল উসুল গ্রন্হে, মহানবী (সাঃ) এর একজন নিকটতম সাহাবী সাঈয়েদিনা যাকওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, " মহানবী (সাঃ) এর ছায়া সূর্যের আলোতে বা চাদের কিরণেও দেখা যেত না । "
হাসিদ২/
আল্লামা ইবনে আল-জাওযি উনার কিতাবূল-ওয়াফা গ্রন্হে মহানবী (সাঃ) চাচাত ভাই সাঈয়েদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, " নবী (সাঃ) এর কোন ছায়া ছিলো না, যখন উনি সূর্যের সামনে দাড়িয়ে থাকতেন তখনও নয় বরং উনার আলোর তীব্রতা সূর্যের আলোকে ম্লান করে দিত ; যখন কোন জ্বলন্ত আলোর সামনে বসে থাকতেন তখনও না বরং উনার বিকিরিত আলোর দীপ্তি অন্য আলো থেকে বেশী হত ।
"
হাসিদ৩/
ইমাম নাসাফি উনার তাফসীর মাদারিক গ্রন্হে মহানবী (সাঃ) এর জামাত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে," সর্বশক্তিমান আল্লাহ আপনার ছায়াকে মাটিতে পড়তে দেননি যেন কোন মানুষ তা মাড়াতে পারে "
হাসিদ৪/
ইমাম জালালুদ্দিন সয়ূতি উনার কাসায়েসুল কোবরা গ্রন্হে ইবনে সাবা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, " এটা মহানবী (সাঃ) এর একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিলো যে উনার ছায়া মাটিতে পড়ত না কারণ তিনি 'নূর' ছিলেন এবং যখন তিনি সূর্যের আলোতে হাটতেন তখন উনার ছায়া দেখা যেতনা । "
মহানবী (সাঃ) এর কয়েকটি হাদিসঃ
১. হযরত আব্দূল্লাহ ইবনে বুসর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক বেদুইন সাহাবী রাসূল (সাঃ) এর দরবারে উপস্হিত হয়ে আরয করলেনঃ ইয়া রাসূলূল্লাহ! মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম কে ? জবাবে তিনি বললেনঃ যার আয়ু দীর্ঘ ও আমল উত্তম । তারপর প্রশ্নকারী জিজ্ঞেস করলেনঃ ইয়া রাসূলূল্লাহ ! সর্বোত্তম আমল কোনটি ? জবাবে তিনি বললেনঃ তুমি এমন অবস্হায় দুনিয়া থেকে বিদায় হবে যে তোমার রসনা আল্লাহর যিকিরে সিক্ত থাকবে । (মুসনাদে আহমদ ও জামে তিরমিযি)
২. হযরত আবু সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর যিকির এত বেশী পরিমাণে কর, যাতে লোকে পাগল বলে । (মুসনাদে আহমাদ )
৩. হযরত উকবা ইবনে আমের (রাঃ)বলেন, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামত দিবসে সূর্য্য যমীনের নিকটবর্তী হবে ; ফলে মানুষ ঘর্মাক্ত হতে থাকবে ।
কারো ঘাম গোড়ালী পর্যন্ত, কারো অর্ধহাটু , কারো উরু, কারো কোমর , কারো মুখ পর্যন্ত পৈাছবে । কারা মাথা পর্যন্ত ঘামের মধ্যে ডুবে যাবে ।
৪. হযরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেন,রাসূলূল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যেদিন মানুষ রাব্বূল আলামিনের সম্মুখে হিসাবের জন্য দন্ডায়মান হবে , সেদিন অনেকেই নিজের ঘামে কান পর্যন্ত ডুবে যাবে ।
আর এক হাদিসে আছে, মানুষ দন্ডায়মান অবস্হায় চল্লিশ বছর পর্যন্ত আসমানের দিকে তাকিয়ে থাকবে এবং সীমাহীন কস্টের দরুণ ঘাম ঝরে ঝরে গলা পর্যন্ত পৈাছবে ।
মহানবী (সাঃ) এর এক স্ত্রী উলঙ্গ থাকার কথা শুনে লজ্জা অনুভব করার কথা বললে, মহানবী (সাঃ) বলেন,
'প্রতিটি মানুষ সেদিন এমন অবস্হার সম্মুখিন থাকবে, যা তাকে অন্য সবকিছুর কথা বিস্মৃত করে দিবে ।
'
সূত্রঃ
১. মাদরিজ উন নবুয়ত । শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহঃ) ।
২. মুক্কশাফাতূল ক্বুলুব -ইমাম গাজ্জ্বালী (রহঃ) ।
২. Click This Link
৩. Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।