আমি যা বলতে চাই... চট্টগ্র্রামের সাতকানিয়ায় গ্রামের বাড়ি। শহরে এসে বহদ্দারহাটের পার্শ্ববর্তী চেয়ারম্যানঘাটায় বাসা নিয়ে থাকছেন চার বছরের বেশি সময় ধরে। তখন থেকেই বড় ভাই মোক্তার হোসেন (৪৫)কে সঙ্গে নিয়ে ছোট ভাই মোহাম্মদ মফিজ (২৬) টুক-টাক ব্যবসা করে আসছেন। সম্প্রতি মা আর বড় ভাইরা তাকে বিয়ে করিয়ে সংসারী দেখতে চেয়েছিলেন। সবাই একমত হওয়ার পর সুখের সংসার গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন মফিজও।
সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ২৬ বছরের এই যুবক। ধার্য করা হয়েছিল বিয়ের দিন-তারিখ। আর ক’দিন পর ডিসেম্বরের ১১ তারিখেই হওয়ার কথা ছিল সেই শুভ ক্ষন। কিন্তু ২৪ নভেম্বর, শনিবার সন্ধ্যায় বহদ্দারহাটের নির্মাণাধীন উড়ালসড়ক কেড়ে নিয়েছে সব। মুহুর্তের দুর্ঘটনায় চোখের পলকেই সকল স্বপ্নের যবনিকাপাত।
স্বপ্নের সমাধির সাথে সাথে ইহজগতও ছাড়তে হয়েছে মফিজকে। সর্বশেষ গত সোমবার গ্রামের বাড়ীতে সমাধিস্থ করা হয় তার ক্ষত-বিক্ষত লাশ। ছোট ভাইকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বড়ভাই মোক্তার হোসেন। মঙ্গলবার দুপুরে বহদ্দারহাট মোড়ের মদিনা হোটেলের সামনে বসে ভাইয়ের শোকে আহাজারি করছিলেন তিনি। এ সময় সেখানে ছোট-খাট এক জটলার সৃষ্টি হয়।
অনেকে তাকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এক ফাঁকে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় মোক্তার হোসেনের। আহাজারির ফাঁকে- কান্না ভেজা চোখের জলে তিনি জানালেন, তাদের গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়ন এলাকায়। ৩ ভাই-১ বোন ও বিধবা মাকে নিয়েই তাদের সংসার। ভাইদের একজন মোহাম্মদ মোস্তাক (৩২) সৌদিয়া প্রবাসী।
বোনের বিয়ে দিয়ে দেওয়ায় ৮৫ বছর বয়স্ক মা দিলোয়ারা বেগম মোক্তারের পরিবারের সাথেই থাকেন। বড়ভাই মোক্তার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে শহরে বাস করলেও ছোট ভাই মফিজ চার বছর ধরে আছেন তার সাথে। দু’ভাই মিলে বহদ্দারহাট এলাকাতেই জুতা বেচা-কেনার ব্যবসা করে আসছেন। ২০১০ সালে উড়ালসড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হলে বহদ্দার পুকুর পাড়ে নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের নিচে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করে আসছেন তারা। রোজকার মতো ২৪ নভেম্বর বিকেলে জুতার পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন দু’ভাই।
সন্ধ্যার দিকে আরো কিছু মাল (জুতা) আনার জন্য মফিজই বাসায় পাঠান বড় ভাই মোক্তারকে। তাদের জন্য বিভিষীকাময় এক ভবিষ্যৎ যে অপেক্ষা করছে দু’ভাইয়ের তা জানার কথা নয়। মোক্তার মাল নিয়ে আসার এই ফাঁকেই ঘটে যায়
মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনা। মাল নিয়ে এসে বড়ভাই মোক্তার তার ছোটভাই মফিজকে আর খুঁজে পান নি। বহু কষ্টে সন্ধান মেলে আদরের ছোটভাইয়ের ক্ষত-বিক্ষত লাশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।