আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অগ্নিদগ্ধ লিখনী আমার...

কখনো দেশলাইয়ের আঁচ লেগেছে আপনার সুডৌল হাতে? হাত জ্বলে গেছে? পুড়ে গেছে কখনো আপনার সভ্যতার আবরণে মোড়ানো চামড়া? খুব ব্যাথা তাই না? আহা উহু করে ঘন্টা খানেক ব্যাস্ত রেখেছেন আপনার প্রিয়জনদের? শুনুন কোনো এক আতিকুলের কথা। হ্যা কোনো এক আতিকুল। এভাবেই জানলেন না হয়। এর বেশী আর পরিচয়ের কি দরকার? কিংবা এমন তো নয় যে তার পরিচয় দিলেই আপনি একবারে চিনে ফেলে বলেন,'ওওও আতিকুল...। ' আবার এমনও নয় যে তার নাম শুনে তার সাথে একবার দেখা করে আসবেন।

দেখা শুনার অনেক উর্ধ্বে আছে এখন আতিকুল। তো যা বলছিলাম। আতিকুল বাসায় ফোন করে বলছে, '' আগুনে আমার শরীর পুড়ে যাচ্ছে। হয়তো আর বাঁচতে পারলাম না। শুধু কষ্ট পাচ্ছি এই ভেবে- আমার অনাগত সন্তানকে দেখতে পারলাম না।

এখন থেকে তুমিই ওর বাবা ও মা। আদর দিয়ে বড় করো। '' জীবনের শেষ ২৫ সেকেন্ডের ফোনকলে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রাশেদাকে এ কথাগুলোই বলে যান আতিকুল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত্য আতিকুলের স্ত্রী এক লক্ষ টাকা পাওয়ার আনন্দে রাতে ঘুমাতে পারছেন না। আরে এ কি পাঠক? আপনি খাওয়া থামালেন কেনো? একদম মানাবে না বিশ্বাস করুন।

মানাবে না একদম। আবারো একটু অপ্রাসঙ্গিক হই। আমার এক বন্ধুর কথা বলি। ওর সাথে প্রায়ই বের হই। এবং নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই বাসায় ফিরে আসি।

কারন প্রতি ২০ কি ২৫ মিনিটে আমার বন্ধুর মোবাইলে তার বাবার একটা করে ফোন আসে। 'বাপজান তুমি কই? আসবা কখন?' মাঝে মাঝেই খুব বিরক্ত হই। ফোন বন্ধ করে দিতে বলি। ও হাসে। কোনো এক গোলাপী বেগমের নয়ণের মণি পলাশের কথা বলি পাঠক? ভয় নেই।

আমার বা আপনার কেউ নয় পলাশ। গোলাপী বেগম কেউ নন। পলাশও কেউ নন। একটু বলি। অপরাধ মার্জনা করে একটু পড়ুন না হয়।

'মা, আমি মনে হয় আর বাঁচতে পারবো না। আমাদের গার্মেন্টসে আগুন লেগেছে। এখান থেকে বের হতেও পারবো না। ধোঁয়ায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমার কোমরে পরনের শার্টটি বাঁধা থাকলো।

এটি দেখে লাশ চিনে নিও। ' মায়ের প্রতি এই ছিলো পলাশের করা ফোনের শেষ কিছু কথা। লাখ টাকা আচলে বেঁধে গোলাপী বেগম এখন খুশিতে ডগমগ। পাঠক! এ কি! আপনার চোখে পানি নাকি? নাকি ভুল দেখছি? মুছে ফেলুন পাঠক। চটজলদি মুছে ফেলুন আর কেউ দেখার আগেই।

একদম মানাবে না বিশ্বাস করুন। মানাবে না একদম। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মৃত্যুর পর চিতার আগুনে স্বজনকে বিদায় জানান। পাঠক ঐ অবস্থাতেও অনেককে দেখেছি ও শুনেছি বিলাপ-হাহাকার-আহাজারিতে কেঁদে উঠতে। পারবেন পাঠক? পারবেন আপনি চোখের সামনে আপনার আপনজনকে আগুনের আঁচে জ্বলে ঝলসে লাশ হয়ে যেতে দেখতে?ওহ।

সরি। মাই মিসটেক। লাশ নয় পাঠক। কয়লা। কুচকুচে কালো কয়লা।

রংপুরের আনোয়ার ভাগ্য ফেরাতে ঢাকায় এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রেহানা। কিন্তু এখন আর স্ত্রীকে খুঁজে পাচ্ছেন না। "সন্ধ্যার পর আগুন আর কালো ধোঁয়া দেখে আমি স্ত্রীকে আনতে দুই তালা থেকে ছয় তলায় যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আশপাশের লোকজন আমারে ওপরে উঠতে বাধা দেয়।

আর সিঁড়িতে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। কালো ধোঁয়ায় ভইরা গেসে। ' জীবন বাঁচাতে তিনি একপর্যায়ে বেরিয়ে আসেন। সকাল থেকে আনা সবগুলো লাশের মধ্যে স্ত্রীর মুখ খোঁজার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু পাননি।

আনোয়ারের আর চিন্তা কি। দেশে ফিরে গিয়ে লাখ টাকা সাথে নতুন বিয়ের যৌতুক মিলিয়ে মুদি দোকানে জমিয়ে বসতে পারবেন। পাঠক। বিচলিত হবেন না প্লিজ। বিচলিত হয়ার মতন কিছুই ঘটে নি।

আর তাছাড়া বিচলিত হলে মানাবে না একদম। একদম মানাবে না। বিশ্বাস করুন। এই লেখা পরে খাওয়া থামানোর, চোখে পানি আসার মত বাতুলতা দেখিয়ে কি লাভ বলুন? তাতে আপনার কিইইই বা যায় আসে। গোলাপী বেগম না হয় আজ রাতে নোনা জল মেশানো ভাত খাবেন।

রাশেদা নিজের অনাগত সন্তানের নাম নিতে নিতে ডুকরে কেঁদে উঠবে। আনোয়ার কয়লার মতন কালো কালো দেহভরা বস্তাগুলোতে কাউকে খুঁজে না পেয়ে বুকের ভেতরের রুদ্ধ অশ্রুকে গতি দেবে। আমার আপনার কিছুই না। আসুন আমরা অমানুষ হয়েই থাকি। এমনিতেও মানুষ হয়ে আজকাল নাকি লাভের চাইতে ক্ষতিই বেশী।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.