কথা পছন্দ না হইলে করা ভাষায় সমালোচনা করুন, কৃতজ্ঞ থাকব.। .। .। .। ।
পোষ্ট টা কোন গল্প নয়। তবে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে লেখা হলে ও মুল বিষয় টা মনে হয় সবার মাঝে থাকা উচিত। প্রবন্ধ মুলক পোষ্ট পড়ার ধৈর্য আমদের কম। আপনাদের কত ক্ষণ ধৈর্য থাকবে জানি না।
আমরা যারা ঢাকায় থাকি, তারা প্রতিদিন স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, অফিস বা বেবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বাস এর উপর নির্ভরশীল।
প্রায় দুই কোটি মানুষের এই ঢাকা শহরে এই লোকাল বাস গুলোতে এত ভিড় হয়, তা যারা যায় তারাই বোঝে। বাসে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অনেক বৃদ্ধ, নারী বা মাঝারি বয়সের অনেক চাকরিজীবী বা বেবসায়ি দাঁড়িয়ে আছেন। অথচ সবাই নিজের মনে বসে আছেন। আপাতত মাঝারি বয়সের বাস যাত্রীদের কথা বাদ দেই। কিন্তু পাশে বৃদ্ধ বা নারী কাও কে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে ও সবাই নিজের মনে বসে আছেন।
হয়ত বলবেন যে সারাদিন ক্লাস করে, চাকরি করে আমরা ক্লান্ত। প্রথমে যারা ছাত্র তাদের উদ্দেশে বলি, আমরা যারা ছাত্র তারাই তো নতুন প্রজন্ম । আমাদের বয়স এমন বেশি নয় যে একটু দাঁড়িয়ে থাকলে আমরা এত বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ব যে আর পরের দিন চলতে পারব না। আমাদের কি উচিত নয় যে বৃদ্ধ ও নারীদের যারা বাসে দাঁড়িয়ে থাকেন, নিজের সিট টা তাদের জন্য ছেড়ে দেওয়া? যদি বলি আমরা ক্লান্ত , তাহলে তো আমরা মনে মনেই বৃদ্ধ হয়ে গেছি, কুড়িয়ে গেছি। আমাদের নিয়ে আমাদের দেশ মিছে স্বপ্ন দেখছে।
এক জন বৃদ্ধ যেখানে বাসে দাঁড়িয়ে থেকে জীবনের যুদ্ধে টিকে আছেন, সেখানে কোথায় আমাদের তারুণ্য? বলতে পারেন আমাদের শক্তি আছে, কিন্তু আমরা অযথা কেন কষ্ট করতে যাব?
এখানে একটা পুরাতন প্রবাদ বলি প্রথমে,
" Student life is not a bed of roses."
ভাই আমাদের ছাত্র জীবন তো কষ্ট করার জন্যই যাতে আমরা একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে পারি নিজেদের জন্য। সেখানে আমরা যদি আর একটু কষ্ট করি, তাহলে হয়ত আমাদের দেখে আমাদের ছোটরা শিখবে বড়দের আসলে কিভাবে সম্মান দিতে হয়। আমরা ও তো একদিন বুড়ো হব। তখন যদি কোন দিন বাসে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সময় দেখি আমার পাশে আমার ই নাতি বা ছেলের বয়সি একজন কানে হেডফোন লাগিয়ে বসে গান শুনছে, বা বন্ধুদের সাথে হাসি গল্প করছে, আর আমার দাঁড়িয়ে মাথা ঘুরে উঠছে। অথচ কেও একটু বসার জায়গা দিচ্ছে না।
বসার উপায় ও নেই। কেমন লাগবে আমার? আচ্ছা আমাদের বাবা দাদা বা আপন জন কেও ও তো এমন পরিস্থিতিতে হর হামেসা পরছে হয়ত। আমাদের বয়স্ক কেউ যখন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, আমরা পাশে থাকলে হয়ত বাসের যাত্রীদের মানবতায় মনে মনে গালি দেই। গালি টা আসলে পরছে কোথায়?
আমাদের মা বোন এর মত যারা বাসে দাঁড়িয়ে যায়, মানে যাদের আমরা নিজের বসার সুযোগ করে দেই না, তারা তো নানা মানুষের নানা দৃষ্টির স্বীকার হয়। অনেকে ভীরের সুযোগে একটু হালকা স্পর্শ করে বিকৃত মজা নেয়।
আমরা ও কি বসে বসে মজা দেখি ? বেশ তো। আমাদের মা বোন বাসায় আছে, অন্নের মা বোন কে কে কি করল তা সামান্য যদি হয় তাহলে আমরা কিছু বলব না, তাই না? তবে কেও যদি পত্রিকায় ওঠার মত বে ইজ্জতির স্বীকার হয়, তাহলে আমরা ছাত্র সমাজ বিড়ি তে টান দিয়ে অবশ্যই প্রতিবাদ এ ফুসে উঠবো। এখন কি করছি তা বড় কথা না। আমরাই তারুণ্য। আমরাই তো বড় বড় আন্দোলন করেছি, তাই না?
আচ্ছা শুধু বৃদ্ধ আর নারী নয়, সাথে যারা অফিস বা প্রতিস্থান এ সারাদিনের পরিশ্রম শেষে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরেন নিজের স্ত্রী সন্তানের কাছে আমরা ছাত্ররা তো বুড়ো হউয়ার আগে তাদের বয়সেই যাব।
এখন যারা এই বয়সে আছেন, তাদের জন্য বাসায় ভালবাসা নিয়ে অপেক্ষা করছে তাদের স্ত্রী সন্তান। একটি পরিবারের স্ত্রী অপেক্ষা করে কখন তার ভালবাসার মানুষের সাথে একটু কথা হবে। কিন্তু সারা দিনের ক্লান্তি নিয়ে কি ঐ বাসের মানুষটার তার বউ এর সাথে বাড়ি ফিরে সব সময় মিষ্টি কথা বলতে ইচ্ছা করবে? আবার যেসব কর্মজীবী নারী আছেন, ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে কি পরিবারের জন্য যথেষ্ট সময় দিতে পারেন? ( যেহেতু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের কেই পরিবারে বেশি শ্রম ও সময় দিতে হয়, সেই ভিত্তিতে বললাম) মাঝে মাঝে এই ক্লান্ত তা ঝগড়া তে পরিবর্তিত হতে পারে। এখানে কাও কে দোষ দেয়ার কিছু নেই। হয়ত বলবেন পড়ে ঝগড়া ঠিক হয়ে যায়।
তা ঠিক। কিন্তু কোন পরিবারের ঝগড়া হয়ত বাড়তেই থাকে। কারন প্রতিটা মানুষের মানসিকতা ভিন্ন। যে পরিবারে ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে, সে পরিবারের শিশু সন্তান কি সুস্থ ভাবে বেরে উঠবে? হয়ত উঠবে। কিন্তু কিছু কিছু বিপথে চলে যাবে অসুস্থ মানসিকতায় গড়ে বেড়ে ওঠার কারনে।
এই শিশুরা ও কিন্তু স্কুলে ভর্তি হবে। তাদের সাথেই হয়ত পড়বে আপনার ছোট ভাই বোন বা ভাগ্নে ভাগ্নি। আপনার ভাই বোন, ভাগ্নে ভাগ্নি যত ভাল পরিবেশেই বড় হোক, একটা অসুস্থ মানসিকতার ছেলে বা মেয়ে শিশুর সাথে মিশলে কি মানসিকভাবে খতিগ্রস্থ হবে না?
কথায় তো আছে, "অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। "
হয়ত বলবেন, ঐ অসুস্থ মানসিকতার ছেলের বা মেয়ের সাথে কেও মিসবে না। তাহলে কোথায় আমাদের মানবতা? যতই বলি এভাবেই আমাদের শিশু সম্পদ গুলো বিকৃত রুচিতে বড় হবে।
তারাই মদ খাবে, গাজা খাবে, আজেবাজে পোশাক পড়বে.। । । আর কি কি করবে, কি আর আমি বলব? আমরা কি এর জন্য একটু ও দায়ি না।
কথা পেচাই তে পেচাইতে হাস্যকর করে তুলেছি হয়ত।
কিন্তু হাসিটার মাঝে কি বাস্তবতা নেই?
আমি কথা বলছিলাম, বাসে যাতায়াত প্রসঙ্গে । অনেক মানবিক দিক, সামাজিক দিক নিয়ে বললাম। এবার বেক্তি স্বার্থের কথা বলি। আমরা যদি আজ বাসে যাওয়ায় সময় যদি সম্ভব হয় তাহলে বৃদ্ধ, নারী, বা অপেক্ষাকৃত ক্লান্ত কর্ম জীবী মানুষ গুলোকে নিজে কষ্ট করে একটু বসতে দেই। হয়ত আমাদের ছোটরা ও এই সংস্কৃতি ধারন করবে।
আমদের বৃদ্ধ আত্মীয় স্বজন, মা বোন, ও অনেকেই উপকৃত হবেন। আসল কথা, এই সংস্কৃতির চর্চায় আমরা ও আরেক টু বয়স হলেই এর সুফল পাব। শুধু তাই নয়, মানুষে মানুষে শ্রদ্ধা বোধ, ভালবাসা , সৌহার্দ হয়ত বেড়ে গিয়ে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ এর পথে আমরা একধাপ এগিয়ে যাব।
পরিশেষে একটা অবাক করা ব্যাপার এর উদাহরন দেই, আমেরিকান লেখক মেল্কম গ্লাডঅয়েল এর বই, " দা টিপিং পয়েন্ট" বই থেকে নেয়া। একটা সাদা পৃষ্ঠা কে মাঝ বরাবর আমরা যদি একবার ভাজ করি।
তারপর ভাজকরা কাগজ টাকে আবার একবার ভাজ করি। এভাবে যদি পঞ্চাশ বার ভাজ করি, তাহলে সেটি কত মোটা হবে?
হয়ত বলবেন একটা ডিকশনারির সমান। কেউ খুব বেশি বিচক্ষন হলে বলবেন যে, একটা ফ্রিজের সমান। কিন্তু সত্যি হিসাব টা হচ্ছে, এভাবে একটা কাগজ কে পঞ্চাশ বার ভাজ করলে তার পুরুত্ত হবে পৃথিবী থেকে সূর্যের দুরুত্তের সমান। বিশ্বাস হচ্ছে না জানি।
নিজে খাতা কলম নিয়ে হিসাব করে দেখতে পারেন। একান্ন বার ভাজে পুরুত্ত হবে পৃথিবী থেকে সূর্যে যাওয়া আসার দুরত্তের সমান।
এই উদাহরন দ্বারা যা বোঝাতে চাচ্ছিলাম তা হচ্ছে, একটা কাগজ কে অনবরত পঞ্চাস বার ভাজ করায় যে ফলাফল পাওয়া যায়, তার তুলনায় কাগজের পরিবর্তন খুব খুব খুব বেশি ছোট।
আমাদের ও বুঝতে হবে, সমাজে আমাদের ছোট ছোট পরিবর্তন আমাদের জন্য অনেক বেশি সুফল বয়ে আনতে পারে। সেভাবে ছোট ছোট ভুল সমাজের জন্য অনেক বেশি ক্ষতির কারন হতে পারে।
সঠিক উপায়টা আমদের ই বেছে নিতে হবে।
ভাই আমাদের দেশ ছিনেমার মত উড়ে এসে কোন সরকার সোনার বাংলায় রুপান্তর করবে না। আমাদের দেশ কে আমাদের ই সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
কম জ্ঞানে বেশি লিখে ফেলেছি, ভুল মনে করলে নিজ গুনে ক্ষমা করে দেবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।