একবার এক যুবক গেছে ডাক্তার এর কাছে। বলল, ডাক্তার সাহেব, দেখেন তো আমার পা দুটো কেমন নীল হয়ে গেছে। ডাক্তার দেখলেন, সত্যিই তাঁর পা জোড়া নীল হয়ে গেছে। গম্ভীর হয়ে তিনি উপদেশ দিলেন, ‘পায়ে পচন ধরেছে, কেটে ফেলতে হবে। নয়তো সারা শরীরে ছড়িয়ে পরবে।
তথাস্তু। অপারেসানের পরে কাঠের পা লাগিয়ে দেয়া হোল। কিছুদিন পরে যুবক পুনরায় এসে হাজির ‘আমার পা তো আবার নীল হয়ে যাচ্ছে। ‘ গম্ভীর ডাক্তার পুনরায় পর্যবেক্ষণ করলেন। হাসিমুখে বললেন, এবার আপনার রোগ ধরতে পেরেছি।
আপনার জিনসের প্যান্টের রঙ উঠছে।
চিকিৎসকদের ঘিরে এমন হাজারো রসিকতা চালু আছে। এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা যেন না ঘটে—সে ব্যাপারে চিকিৎসা শাস্ত্র সচেতন। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমাদের এমন কিছু বই পড়তে হয় যেখানে আমাদের শেখানো হয় ‘কিভাবে রুগী দেখতে হয়। ’ রুগীর কথা শোনা থেকে রুগীকে পরীক্ষা করা—সব কিছুরই কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে।
আছে ধারাবাহিকতা—কোনটা প্রথমে, তারপরে কোনটা—সবশেষে কোনটা।
একজন চিকিৎসকের রুগী পর্যবেক্ষণ শুরু হয়ে যায় রুগী তার চেম্বারে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই। সে কিভাবে হাঁটছে, সাথে কোন লাঠি আছে কি না, মুখের ভাবে কোন বিষাদ আছে কি না, গলার আওয়াজ কেমন—অনেক কিছুই রুগীর অগোচরে পর্যবেক্ষণ করে ফেলা হয়। এরপর শুরু হয় আনুষ্ঠানিক কথোপকথন—প্রথম নিয়ম—রুগীকে কথা বলতে দিতে হবে, কোথাও থামান যাবে না, কোন নোট নেয়া ঠিক হবে না (কারণ রুগী ভাবতে পারে তার কথা ডাক্তার ঠিক মত শুনছে না)।
প্রথম নিয়মটি কি ভয়ানক আকার ধারণ করে—ভুক্তভুগি ছাড়া কেউ বুঝবে না।
‘ডাক্তার সাহেব প্রথম থেকে না বললে আপনি সবটা বুঝতে পারবেন না’ এরপর শুরু হয় ‘প্রথম থেকে’। সেই প্রথম ‘ছয় দিন’ হলে তো রক্ষা—কিন্তু ‘ছয় বছর’ হলে? শুরু হয় অসীম ধৈর্যের পরীক্ষা। ‘এই অসুখটা আমার আগে ছিল না ডাক্তার সাহেব। ছয় বছর আগের কথা। একদিন হল কি বুঝলেন, আমি মাঠে গেছি, আকাশ পরিস্কারই ছিল, হঠাৎ বৃষ্টি, ছাতা ও সঙ্গে ছিল না.........’ বাঁধা দেয়া যাবে না—আইন বিরুদ্ধ।
যদিও আমি প্রয়োজনীয় একটাই তথ্য পেলাম—ছয় বছর আগে তিনি ভালো ছিলেন—এরপরের উপকারী তথ্য কখন পাব জানি না তাই—শুনতে থাকলাম।
‘এরপর তিনবছর আল্লায় দিলে আর কোন সমস্যা হয় নি। ‘ কিছুটা নিষ্কৃতি—তিন বছর পার হয়ে গেছে! অপেক্ষায় আছি কখন বর্তমানে আসবেন রুগী। ‘তিন বছর আগে একদিন আমার স্ত্রী ওপর রাগ করে বারান্দায় যেয়ে শুয়েছিলাম.........’ আরেকটা তথ্য মাথায় রাখতে হবে—‘ফ্যামিলি ডিশহারমনি’ আছে কি না। পরে জিজ্ঞেস করতে হবে।
এরপর একসময় তিনি বর্তমানে আসেন এবং বর্তমান সমস্যা বলেন।
এমন ঘটনা সবসময় ঘটে—তা না। বেশির ভাগ রুগীই সুন্দর সাজিয়ে নিজের সমস্যা বলেন। আবার অনেক সময় খুবই কম কথা বলা রুগীও পাই। একদিন এক রুগিনী আসলেন।
বসার পর—নাম, বয়স জানতে চাইলাম—বললেন। এরপর বললাম, বলুন আপনার সমস্যা। রুগিনী বললেন, ‘ঐ যে’ আমি বললাম, ‘কৈ যে?’ রুগিনী মহা বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘হাঁপানি’। এবার বিরক্তির কারণ বুঝলাম, বাইরে যেহেতু লেখা আছে, ‘হাঁপানি বিশেষজ্ঞ’ তাই এমন ডাক্তার এর কাছে তো ‘হাঁপানি’ রুগীই আসবে—আবার জিজ্ঞেস করা কেন—‘বেকুব ডাক্তার’
আরেকটা ঘটনা প্রায়ই ঘটে—সমস্যা লিখে আনা। রুগী এর আগে যতবার ডাক্তার দেখিয়েছেন—প্রতিবারই কিছু সমস্যা বলতে ভুলে গেছেন এবং বাসায় যেয়ে মনে পরবার পর বেজায় অশান্তিতে ভুগেছেন।
তাই নতুন এই সমাধান। তবে লেখাগুলো নিজে পরে ফেলব সেই সুযোগ পাওয়া যায় না—কারণ সেখানে ‘শর্ট কাট’ এ লেখা থাকে—যা তিনি এখন বিশদভাবে আলোচনা করবেন।
ডাক্তারদের হস্তাক্ষর নিয়েও বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যায়। বিচ্ছিরি হস্তাক্ষর নিয়ে আরেকটি ধাঁধা শুনলাম। ধাঁধাটি হচ্ছে, ‘একজন ডাক্তার তার বিচ্ছিরি হস্তাক্ষরে যা লিখেন তা একজন ঔষধ বিক্রেতা ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারে না।
সেখানে ঔষধ বিক্রেতার জন্য কি নির্দেশনা থাকে?’
উত্তরটি হচ্ছে, ‘এই রুগীকে আমার যতটা লুটপাট করার ইচ্ছে ছিল, আমি করে ফেলেছি—এবার তুই শুরু কর। ‘
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।