যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই যেহুতু বিদেশে থাকি তাই অনেকেই প্রশ্ন করেন, কিভাবে ইউরোপে পড়ালেখা করতে আসা যায়?
তাদের জন্য বলছি, আমি স্টুডেন্ট কাউন্সিলার না। ইউরোপের প্রতিটা দেশের নিয়মকানুন আমি জানি না। আর যেহুতু জার্মানিতে থাকি এবং এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছি তাই কিছু নিয়ম-কানুনের কথা আমি জানি।
১) জার্মানিতে পড়তে আসতে চাইলে http://www.daad.de লিঙ্কটিতে যান। আপনি কি বিষয়ে পড়তে চান, তা সমন্ধে নিশ্চিত হোন।
জার্মান ভাষা যেহুতু বুঝবেন না, তাই ভাষা বোঝার জন্য ইংরেজী অপশন সিলেক্ট করুন।
২) জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে জরুরী তা হলো জার্মান ভাষায় পারদর্শিতা। শুধু মুখে বলতে পারলেই হবে না। সঙ্গে সঠিক ব্যাকরনসহ লিখতে হবে। আর এই জন্য আপনাকে বা আপনাদের জার্মান ভাষায় ডিগ্রী নিতে হবে।
সর্বোচ্চ ডিগ্রী টেষ্ট ডাফ বা গোয়েটে ইন্স্টিটিউটে C 2 সার্টিফিকেট নিতে হয়। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা গোয়েটে ইন্সটিউটের B 2 সার্টিফিকেট গ্রহণ করে। যদি ইনটেনসিভ কোর্স করেন তাহলে ১ থেকে ২ বছরে ভাষার কোর্সটি করা যায়। আর জার্মান ভাষায় গ্রামার ইংরেজী থেকে সম্পূর্ণ আলাদ। তাই মাথায় ইংরেজী রেখে না শিখাই ভালো।
৩) ভাষা শিক্ষার জন্য ছাত্র হিসেবে জার্মানিতে আসলে জেনে রাখা ভালো, ভাষা শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে ভালো হচ্ছে গোয়েটে ইন্স্টিটিউট। যেখানে প্রতিটি ইন্টটেনসিভ একটি কোর্সের জন্য ১০০০ হাজার ইউরো খরচ হয়। আর থাকা খাওয়া, ইন্সুরেন্সের জন্য খরচ হয় আরও ৬০০-৭০০ ইউরো। অর্থ্যাৎ গোয়েটে ইন্স্টিটিউটে আপনার মাসে ১৭০০ ইউরো খরচ হবে। আর ভিসাও পাবেন নিশ্চিতভাবে।
৪) যেহুতু গোয়েটে ইন্স্টিটিউটের খরচ আমাদের দেশের অনেক ছাত্রই বহন করতে পারবেনা, তাই তাদের জন্য অন্য পন্থা। এখানে গোয়েটে ইন্স্টিটিউট ছাড়াও ভাষা শিক্ষার জন্য আরো কিছু প্রতিষ্টান রয়েছে, যেমন আই এস এফ ( জার্মান ভাষায় তা ই এস এফ), তারপর এবিসি স্কুল বা sprachschule-info.de এই লিঙ্কটিতে ক্লিক করে।
৫) এসব স্কুলে মাসে ভাষা শেখার খরচ ৩০০- ৫০০ ইউরো। তারপর আবার থাকা, খাওয়া ইন্সুরেন্স ইত্যাদি মিলিয়ে ৬০০-৭০০ ইউরো। তারপরো গোয়েটে ইন্স্টিটিউটের চেয়ে খরচ অনেক কম।
৬) ভাষা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথম সাবধান বানী হলো, তাদের আসলে কাজের কোন সুযোগ নেই। আর কেউ যদি অনুমতি ছাড়া ব্ল্যাক কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে তাহলে তার ভিসা বাতিল হতে পারে, এমনকি ৪০,০০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে আসে তাদেরকে স্টুডেন্ট জবের অনুমতি দেয়া হয়, তাও সপ্তাহে ২০-২৪ ঘন্টা। কাজ করে পড়ালেখা করা সত্যি ভীষন দুরহ ব্যাপার। আর গোয়েটে ইন্স্টিটিউট ছাড়া কোথাও জার্মান ভাষা শিখতে আসতে চাইলে তাকে অবশ্যই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনভাইটেশন দেখাতে হয় জার্মান এ্যাম্বাসীতে।
সাড়ে চার বছর আগে আমি জানতাম, ব্যাংক এ্যাকাউন্টে টাকা দেখাতে হয় আট লাখ ( এখন সম্ভবত বেড়ে ১২/১৬ লাখ টাকা হয়েছে) তা সঙ্গে নিয়ে আসতে হয়। বাংলাদেশ শুধুমাত্র একটি ব্যাংকেই এই সুযোগ দেয়া হয়েছে, সেটি হলো স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের কোন একটি বিশেষ শাখা থেকে ডয়েচে ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করার। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসলে তাদের খরচ ৭০০- ১০০০ ইউরো হয়ে থাকে।
৭) জার্মানিতে পড়তে আসলে গ্রাজুয়েশন করার পরে আসা ভালো। এরা আমাদের গ্র্যাজুয়েশনের স্টুডেন্টদের সার্টিফাই করে।
তাদের অবশ্যই চার বছরের গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেট থাকতে হয়। যারা ৩ বছরের গ্র্যাজুয়েশন করেছে তাদের মাষ্টার্সের সার্টিফিকেট লাগে। ইন্টার মিডিয়েট শেষ করে আসলে তাকে কিছু কোর্স করে নিতে হয়। আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়ারদের এখানে অনেক মূল্য। এই একটা বিষয়ে ইংরেজীতে পড়ালেখা করা যায়।
আর যেকোন বিষয়ে এমনকি ডাক্তারী পড়তে হলেও আপনাকে জার্মান ভাষায় পারদর্শী হতে হবে।
৮) মাষ্টার্স করার পর আপনাকে জার্মান সরকার ১৮ মাস সুযোগ দিবে এখানে একটি চাকুরী খুঁজে নেবার। যদি না পান আপনাকে দেশে ফেরত যেতে হবে। মাষ্টার্স করার পর পিএইচডি পেয়ে গেলে তো আর কথাই নেই ভিসার কোন সমস্যা নেই।
৯) জার্মান সরকার এখন গ্রীন কার্ডের মতো ব্লু কার্ডের ব্যাবস্থা করেছে।
যারা চাকুরী নিয়ে এসে বছরে ৫০ হাজার ইউরোর মতো আয় করে তাদের জন্য এই সুবিধা।
১০) এখানে ভুয়া পরিচয়ে এসাইলাম নিয়ে যদি কেউ চলে আসে তার অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। যাদের সত্যি সত্যি এসাইলাম দরকার তাদের জন্য ব্যাপারটি ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে জার্মান সরকার অনেক ধরনের সাহায্য নিজে থেকেই করে থাকে। ব্লু কার্ডের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে গুগুল সার্চ দিন।
এই হলো আমার জার্মানিতে কেউ পড়তে আসতে চাইলে সে বিষয়ে বিস্তারিত লেখা। যারা পড়তে আসতে চান, তারা বাংলাদেশ গোয়েটে ইন্স্টিটিউটে খবর নিন। কোন দালাল দিয়ে আসবেন না। তাহলে নিজেরাই বিপদে পড়বেন। আর আমি ব্যাক্তিগত ভাবে তথ্য দেয়া ছাড়া আর কোন সাহায্যই করতে পারবো না।
আবারো বলছি http://www.daad.de সবচেয়ে বড় তথ্য জোগান দাতা। তাই মনযোগ দিয়ে ওয়েবসাইটি সার্চ করুন। ধন্যবাদ। সবাইকে শুভেচ্ছা।
ফারজানা কবীর খান ( স্নিগ্ধা) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।