মানুষের জীবনের শুরু থেকেই শুরু হয় পরিবর্তন খেলা। পরিবর্তন এর খেলার মাঝে আমরা কত কিছু হারাই কত কিছু পায়। সবার জীবনের মত আমার জীবনেও পরিবর্তন নামক এই খেলাটি এসেছে এখন পর্যন্ত খেলে যাচ্ছি। পরিবর্তন খেলাই জায়গা একটা বড় ব্যাপার একেক শহরের মানুষের পরিবর্তনের ধরন একেক রকম।
যেমন কুষ্টিয়াতে যখন ছিলাম অন্য রকম ছিল লাইফ স্টাইল, দুররন্ত পথ চলা।
ক্রিকেট খেলা, সাইকেল নিয়ে হই হই টই টই করা। ছোট শহরের একটা অবুঝ বালক যার কাছে মনে হত জীবনে বাস্তবতা মানে কিছু নেই। আসলে ঐ টা ছিলো আমার শৈশব।
আমাদের দেশের ছেলে মেয়েদের মধ্যে হইতো পরিবর্তনটা আসে ক্লাস নাইনে। ঐটা হইত আমাদের সময় হত এখন অনেক আগে আসে জানি।
জীবনের প্রতিযোগিতার একটা চরম পর্যায় ক্লাস নাইন । যেখানে আপনার কাছের বন্ধু গুলাও আপনার বড় রকমের শত্রু তে পরিবর্তিত হয়।
এক কথায় "Competition of Life" এর শুরু এইখান থেকেই। এর জন্য আমাদের সমাজ, আমাদের শিক্ষা, আমাদের শিক্ষক, সর্বোপরি আমাদের বাবা- মা দায়ি ।
কেউ বিজ্ঞান , কেউ বাণিজ্য , কেউ মানবিক।
আমাদের দেশের অভিভাবকরা মনে করেন আমার ছেলে কে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াতে না পারলে প্রেস্টিজ পুরাই পাঙ্কচার হয়ে যাবে। যার ফলশ্রুতি তে অনেক কেই জোর করে পড়ান হয় বিজ্ঞান বিভাগে। যে মানবিক এর ছাত্র- ছাত্রী তাকে নিয়ে তো কটাক্ষ করা এইটা আমাদের সমাজের স্টাইল।
যাইহোক আমি বেচে গিয়ে ছিলাম অন্তত বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে । এখন কথা হল বিজ্ঞান বিভাগে যারা পরে আল্লাহর রহমতে তারা অনেক টীচার এর কাছে প্রাইভেট পড়ে।
আমার বন্ধুরা এইরকম অনেক প্রাইভেট পড়তো, হুম মধবিত্ত ঘরের সন্তান এত প্রাইভেট পরতে পারতাম না। কথা হল তাদের কে যদি জিজ্ঞেস করা হত তোমরা কার কাছে পড়, তোমাদের টিচার কি নোট দেয়, তারা এমন একটা লুক দিত যেন তাদের কিডনি চেয়ে বসছি আমি। তাদের অভিভাবকগন নিজের ছেলে মেয়েদের গুন গান এমন ভাবে গাইত যেন পুরা বিটিভি এর তেল মাখান সংবাদ ও ফেল। যাইহোক এদের দেখতে দেখতে বিশ্বাস হল এই খানে সত্যিকার বন্ধু পাবা মুশকিল। তবুও অনেক ভালো কিছু ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
এর ভিতরে আম্মা মারা গেল, অনেক জটিলতার মাঝে এইভাবে এসএসসি ধাপ শেষ হল। আমি এস এস সি পর উপলব্ধি করলাম আমি এই ঢাকা শহরে এসে অনেক খানি অলস হয়ে গেছি। কোথায় যেন হারাই গেছে আমার দুররন্ত শৈশব।
তারপর এইচ এস সি প্রতিযোগিতা পূর্ণ জীবনের একটা চূড়ান্ত পর্যায় । কলেজ ও সেই একই কাহিনী কে কার থেকে আগে যেতে পারে।
জীবনের এই ধরনের প্রতিযোগিতা পূর্ণ ধাপ গুলা মেনে নিতে বড়ই কষ্ট হচ্ছিল। তারপর শান্তি ছিল যে অনেক ভালো কিছু বন্ধুর দেখা পেলাম। তারপর প্রতিনিয়ত অনেক পরিবর্তন চলছেই।
এই সময় মানুষের কাছ থেকে কমন কিছু বানী শুনতে চরম বিরক্ত লাগতো " অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে তুমি,' কিছুই বুঝনা, জীবন মানে যুদ্ধ, এই খানে কেউ কার না " আর ও কত হাবি যাবি মাথা পুরা তাল মাটাল করে দিত। মানুষের ঐ কথা গুলা খুব সিরিয়াস ভাবে নিয়েছিলাম যার ফল শ্রুতি তে কিছু পরিবর্তন।
সব চেয়ে খারাপ ব্যাপার হল আপনার আত্মীয় স্বজন আপনাকে উৎসাহ কম টিপ্পনী দিতে বেশি পছন্দ করে। তাদের সাথে বেশ দুররুত্ত চলে আসলো।
আত্মীয় স্বজন, বন্ধুদের টিপ্পনির একটা চূড়ান্ত পর্যায় আসে আপনি যখন গ্রাজুয়েশন জীবনে ঢুকবেন ঠিক তখন। এদের এই ধরনের আচরন আপনাকে কষ্ট দিবেই। এই আচরনটা ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে যতক্ষণ না আপনি কোথাও ভর্তি হচ্ছেন।
তারপর আবার তাদের মুখ এর এই বিষ মাখান কথা শুনবেন আপনি যখন গ্রাজুয়েশন শেষ করবেন, ভালো চাকরি বা ভালো কিছু করার আগ পর্যন্ত।
ভর্তির পর আপনার সাথে সব স্বাভাবিক যেন তারা কিছুই বলেনি। কিন্তু অতীত ঐ কথা গুলা সত্যি আমাদের অল্প কিছু হলেও পরিবর্তিত করে দেয়, আমি কিছুটা হয়েছি হইত।
আপনি যখন টিনেজ জীবনে থাকেন আপনার আবেগটা হইত বেশি কাজ করে। খুব অল্পতেই অনেক কিছু ভালো লাগে, অনেক বড় বড় চিন্তা আসে।
অনেকের প্রতি ভালো লাগার সৃষ্টি হয় হইত কোন রাস্তায়, কোন বাসে। কিন্তু ঐটা সত্যি অনেক ক্ষণস্থাহি হয়। কিছুদিন পর আপনার বাস্তবতা আপনাকে সঠিক পথে নিয়ে আসে।
তবে কিছু বন্ধু থাকে যারা আপানকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ জাগাই আমার কাছেও এমন কিছু বন্ধু, বড় ভাইয়া আছে। তাদের কাছে কৃতজ্ঞ তারা আমাকে হিংশা নামক কথাটা ভুলে যেতে সাহায্য করেছে।
আর আমার পরিবার এক অসম্ভব সাপোর্ট দিয়েছে, দিচ্ছে আমাকে সবসময়।
আমি জানি জীবনের এই পরিবর্তনের কোন শেষ নেই, হইত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষ এই ভাবে পরিবর্তিত হয়। কিছু পরিবর্তন আপনাকে সেরা বানাবে, কিছু পরিবর্তন আপনাকে অনেক নিচে ও নামাবে, তবুও আমরা পরিবর্তন দেখে ভয় পায় না, পরিবর্তিত হবই প্রতিনিয়ত। এত পরিবর্তন এর মাঝে এইটুকু আশা নিজের চরিত্রকে ঠিক রেখে সামনে এগিয়ে যাব । হইত আমার এই বন্ধু গুলাও আমার বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হবে, তবে সেটা হবে মধুর প্রতিযোগিতা।
জীবন হোক প্রতিযোগিতা পূর্ণ, কিন্তু সেই প্রতিযোগিতা এমন হওয়া উচিত যেটা আমাদের চরিত্র কে নষ্ট না করে, শত্রুতার সৃষ্টি না করে ।
ভালো দিকে পরিবর্তিত হয়, কখনও কাঊকে অপমান না করি। বাবা মা এর স্বপ্ন পূরণ করি, সমাজ এর জন্য কিছু করি।
নিজের অতীত কে না ভুলি। এই ভাবে সুন্দর নির্মল এক পরিবর্তন হোক আমাদের জীবনের।
জানি বলা সহজ করা কঠিন কিন্তু যখন বিশ্বাস থাকবে অটুট দেখা হবে বিজয়ের। আপনার চেষ্টা আপনার বিজয় নিশান কে উড়াতে সাহায্য করবে।
অনেক কথা বলেছে, সবই মনের কথা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা । কেউ কষ্ট নিবেন না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।