যাত্রা পর্ব :
কুয়াকাটা যাবার ইচ্ছে অনেকদিনের। কিন্তু ব্যাটে বলে এক হয়না। এবার হলো। হাক ডাক দিয়ে মোট ৬ জন যোগাড় হলাম। আগে থেকে বরিশালের লঞ্চ সুন্দরবন ৮ এ বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম।
৪ টা সোফা, ৬০০ টাকা করে প্রতিটি। এ সোফায় করেই ৬ জন যাচ্ছি। লঞ্চে ১০ টা পর্যন্ত ঘুরেফিরে কাটিয়ে ডিনার সারলাম সোফার পেছনে ছোট্ট রেষ্টুরেন্টটায়। মাছ ভাত, ডাল আমার আমাদের একজন তার বাসা থকে কোরবানী মাংশ নিয়ে গিয়েছিলো তা দিয়ে।
সকাল ৫ টায় লঞ্চ বরিশাল পৌছালো।
আমরা লঞ্চ থেকে নেমে বাইরে আসতেই দেখি কুয়াকাটার বাস দাড়িয়ে। ছোট্ট বাস, ছাড়বে সাড়ে ৬ টায়। আমরা ২২০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটলাম। ঠিক সময়ে বাস ছাড়লো তবে রুপাতলি দাড়ালো প্রায় ৫ মিনিট। এরপর দপদপিয়া সেতু পার হয়ে কুয়াকাটার দিকে চলতে লাগলো।
ঘন্টা দুয়েক পরেই শুরু হলো ফেরি। আমরা ফেরিঘাটে নেমে চা আর স্থানীয় ফল খেলাম। ফেরী ছিলো আরো ৩ টি। আমরা ৪ টি ফেরিতেই নেমেছি। এই ফেরীগুলোর কারনে অনেকে বিরক্ত হলেও আমরা বেশ এনজয় করেছি।
কুয়াকাটা যাবার রাস্তা
এবার রাস্তা সম্পর্কে বলি। কুয়াকাটা যাবার রাস্তা এখন অনেক সুন্দর। কোথাও ভাঙ্গা নেই। শুধু শেষ ২ কি:মি: রাস্তা খারাপ। এছাড়া পুরো রাস্তাটা একদম পাকা।
কোথাও ভাঙগা নেই। এ তথ্যটি সবার সাথে শেয়ার করবেন আশাকরি। যাই হোক কুয়াকাটা পৌছালাম দুপুর ১২ টার দিকে। বীচ থেকে মাত্র ১০০ মিটার দুরে বাস আমাদের নামিয়ে দিলো। আমাদের দলের ২ জনের তাবু আছে।
তারা তাবুতে থাকবে। আর আমরা বের হলাম হোটেলের সন্ধ্যানে। বীচের পাশে একমাত্র একটি হোটলই দেখলাম যেট বেড়িবাধের বাইরে মানে বীচ লাগোয়া। হোটেল কিংস । আমরা একটা রুম নিলাম ১০০০ টাকা দিয়ে।
রুমটা বেশ বড়, ২ টি ডাবল বেড, টিভী। বাথরুমটাও বড়। সবচে বড় কথা বীচ দেখা যায় জানালা দিয়ে।
আলীপুর ফেরি থেকে
খাই দাই পর্ব :
চলছে মাছের ফ্রাই
আমি কোন জায়গায় বেড়াতে গেলেই সবার আগে আমার মাথায় প্রশ্ন আসে - দুপুর বেলা খামু কি?। কুয়াকাটা বেড়াতে গিয়েও একই প্রশ্ন আসে।
সঙ্গী হায্যের হাত বাড়িয়ে দ্যান। এছাড়াও কুয়াকাটার স্থানীয়রা তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন খাই দাই এর ব্যাপারে। তো কুয়াকাটা ছিলাম দুদিন। এ দুদিনে খাই দাইর বিবরন নীচে দিলাম :
খেপুপাড়া রেষ্টুরেন্ট এর লাক্ষা মাছ
আমাদের মধ্য একজন তার কোন এক বিশেষজ্ঞ আত্মীয়ের কাছ থেকে জানলেন এখানকার খেপুপাড়া রেষ্টুরেন্ট সবচে ভালো। আমরা খোজ দ্যা সার্চ লাগালাম রেষ্টুরেন্টটির সন্ধ্যানে।
প্রায় ১০ টি রেষ্টুরেন্ট (সবগুলোর লোকজন সামনে দাড়িয়ে কি কি পাওয়া যায় তা তোতাপাখির মতো আমাদের শোনাচ্ছিলেন) পার হয়ে হয়ে পৌছালাম খেপুপাড়াতে। পৌছে ভুল করলাম না। দেখলাম রান্না করা আছে- রুপচাদা, সামুদ্রিক বায়লা, আরো ২/৩ রকমের মাছ আর মাংশ। আমাদের একটু হেজিটেট করতে দেখে দোকানী মহিলা ডিপ ফ্রিজ খুলে বললেন কি মাছ খাবেন দ্যাখেন- রান্না করে দেবো। আমরা বেশ বেছে বেছে একটা লাক্ষা মাছ বের করে দিলাম।
তিনি আধ ঘন্টা সময় নিলেন।
আমরা হাত দুয়ে টেবিলে বসে আড্ডা দিলাম। আধ ঘন্টা পর মাছ রান্না হয়ে গেলো। মাটির চুলায় রান্না করা মাছ সামনে এলো। সাথে ছিলো চিংড়ি লাউ আর পাতলা ডাল।
এর পরেরটা ইতিহাস। আমরা ৫ জন বিশাল এক গামলা ভাত সাবার করে দিলাম। এই যে টিংটিং এ রাফিদ, সেও খেলো ৪ প্লেট ভাত। বিল এলো সাকুল্যে ৮০০ টাকা।
১ ম দিন ডিনার :
এক রেষ্টুরেন্টে দুবার খাবার কোন মানে নেই।
এতএব আবার খোজ দ্যা সার্চ। রাত সাড়ে আট টার দিকে এক মোটর সাইকেলওয়ালা এক নিদারুন ইনফো দিলো যে এখান থেকে বীচ ঘেষে মাইল পাচেক গেলেই লেবুর বন বীচ। সেখানে নাকি কয়েকটা দোকান আছে যারা তাজা মাছ ফ্রাই করে দ্যায়। আর কালবিলম্ব নয়। আমাদের দলের ২ জন নাকি নিজেরা রান্না করবে তাই আমরা ৩ জন দুটি মোটর সাইকেল ভাড়া নিয়ে ছুটলাম লেবুর বন বীচে।
পূর্ন চাদের আলোতে বীচ ধরে ছুটে চলার সে আনন্দের কোন তুলনা নেই।
লেবুর বন বীচে পৌছে দেখি ৫/৬ টি টং দোকানে সোলার লাইট জ্বালিয়ে বসে আছে। রাত তখন সাড়ে ৯ টা, অন্য কোন কাষ্টমার নেই। আমরা একটি দোকানের মাছের ষ্টক দেখলাম। অনেক রকমের সামুদ্রিক মাছ।
প্রায় ৬০০ গ্রাম ওজনের একটি কোরাল কিনলাম ৩৫০ টাকা দিয়ে, একটা পোয়া মাছ নিলাম ১০০ টাকা দিয়ে, একটা বড় চিংড়ি ১২০ টাকা, একটা কাকড়া ৮০ টাকা ও ছোট সাইজের কিছু চিংড়ি- এগুলো ফ্রি। এ দামের মধ্যে রান্না করাও আছে।
মাছ কাটা শেষ
এক চুলায় বসেছে ভাত অন্য চুলা প্রস্তুত মাছের জন্য
চলছে মাছের ফ্রাই
এবার অপেক্ষার পালা। আমরা বীচে হাটাহাটি করে মিনিট তিরিশেক কাটালাম। এরপরই ডাক এলো।
কোরাল মাছ ভুনানা, পোয়া মাছ পেয়াজ দিয়ে হালকা ভুনা, চিংড়ি আর কাকড়া ফ্রাই। সাথে লেবুর বনে লেবু। আহ! কি আর বলবো । জেলেদের মাছ রান্না যারা খাননি তাদের বলেও লাভ হবেনা। তবে একটু বুঝার জন্য বলি- আমরা ৩ জন প্রায় দেড় কেজি চালের ভাত সাবাড় করে ফেলি।
একপাশে সী বীচ অন্যপাশে বন, ওপরে বিশাল চাদ- এর মাঝে এমন মজাদার খাবার। জীবনে ভোলার নয়। রাত ১১ টার সময় ভরাপেট নিয়ে ফিরে এলাম হোটেলে।
দিনের বেলা লেবুন বন বীচের সেই দোকান গুলো (পর দিন সকালে গিয়েছিলাম আবার)
২ য় দিন লাঞ্চ :
কুয়াকাটায় আমাদের শেষ খাওয়া। সো খুব একটা ঝামেলা করতে চাইলাম না।
তবু লাষ্ট লাঞ্চ বলে কথা। বাসে ওঠার আগে আবার গেলাম সেই খেপুপাড়াতে। এবার নিলাম রুপচাদা আর লাউ সাথে পাতলা ডাল। জার্নির ভয়কে দুরে রেখে এবারো খেলাম ৩ প্লেট ভাত।
ঘুরাঘুরি পর্ব :
খুব একটা ঘুরিনি আমরা।
বরং কুয়াকাটার বীচটাকে উপভোগ করেছি সকাল সন্ধ্যা রাত। বীছটা কক্সবাজারের মতো গ্লামারাস নয় তবে বেশ নির্জন আর পরিষ্কার পরিছন্ন। আর লেবুর বন বীচটাও অনেক সুন্দর। পরদির অবশ্য গিয়েছিলাম টেংরাগিরি সংরক্সিত বনে (ফাতরার বন নামে পরিচিত)। অসাধারন সে জার্নি।
সুন্দরবন যারা যাননি তারা এখানে সুন্তরবনের স্বাদ পাবেন।
ফেরা পর্ব :
এবার বিদায়ের পালা। মুনলাম লঞ্চ ধরতে হলে নাকি ২ টার বাস ধরতে হবে। আমরা তাই করলাম। কুয়াকাটাকে সালাম জানিয়ে বাসে উঠলাম।
২ টায় বাস ছাড়লো। বরিশাল পৌছালো সন্ধ্যা ৭ টায়। এরপর সোজা বরিশালের লঞ্চ এ। সকালবেলা ঢাকাভ ছবি দেখন কয়েকটি :
যাবার পথে ফেরি থেকে তোলা
আলিপুর থেকে তোলা
কুয়াকাটায় প্রথম ক্লীক
আমাদের হোটেলের পাশেই এ জায়গাটা
কুয়াকাটায় সূর্যাস্ত
ঐ দেখা যায় টেংরাগিরি
টেংরাগিরির পথে
টেংরাগিরিতে সাপ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।