আন্না যখন আমার ওয়ার্ডে আসে তখন তার ওজন মাত্র ৪০ কেজি। তার বয়স ৪৫ বছর। গত মাস খানেক ধরে কিছুই খেতে পারেনা। দেড় মাস আগে তার ওজন ছিল ৫৮ কেজি। হঠাৎ করে তার খাওয়াতে অরুচী।
সব খাবার থেকে গন্দ্ব পায়। এমন কি পানি ও খেতে পারে না। স্বামী, ১২ বছরের ছেলে এবং ৯ বছরের মেয়ে সহ তার ছিল সুখের সংসার। স্বামী একজন ইন্জিনিয়র আর আন্না নিজে একটি আইটি কোম্পানীতে প্রোগ্রামার হিসাবে কাজ করতো। স্বামী জন ও বলতে পারে না কি থেকে যে কি হয়ে গেলো!
আন্নার সাথে কথা বলি, জানতে চাই কেন সে খেতে পারছে না? উত্তর পাইনা।
কাজের কথা জিজ্গেস করাতে বললো, সবই ভালো ছিলো। কিন্তু নতুন চীফ আসার পরই কাজের চাপ আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে এবং নতুন চীফ প্রতিটা কাজের জন্য সময় বেধে দেন, যা খুবই কষ্টকর।
স্বামী সংসারের কথা জিগ্গেস করাতে বললো, জন খুবই ভালো মানুষ। বাচ্চারা ও খুবই কেয়ারী।
আমার যা জানার তা পেয়ে গেলাম।
চীফ স্পেশালিস্ট ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। তাড়াতাড়ি আন্নার একটা সিটি স্কান করা হলো। নাহ, কোন টিউমার বা ঐ রকম কিছু নাই। সিজোফ্রেনের ও কোন চিন্হ নাই। বুঝলাম ব্যাপারটা চাকুরীতে কাজের চাপ জনিত ভয় এবং ডিপ্রেশন।
এভাবে আন্না আমাদের কাছে প্রায় ৩ মাস ছিলো। তার অবস্হা এতোই খারাপ ছিলো যে, তাকে প্রতিদিন ৪টা করে ২৫০ মিলি শক্তিশালী মিনারেল ড্রিন্ক নাক দিয়ে দিতে হতো। কি কষ্টকর ব্যাপার!
আর আমার কলিগরা সহ আমরা প্রতিদিন ভাবতাম, আজ হয়তো কাজে গিয়ে শুনবো আন্না মারা গেছে!
এভাবে আড়াইমাস চলার পর চীফ ডাক্তার আমাদের সাপ্তাহিক মিটিং এ বললেন, আন্নাকে ইলেকট্রিক শক (Electroconvulsive therapy) দেবার কথা। আমরা নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া চাউয়ি করি। এই ইসিটি দিলে বা্ঁচবে তো আন্না?ডাক্তার বললেন, এ ছাড়া আর অন্য কোন পথ খোলা নেই! আন্না তো এভাবে থাকলে ও মারা যেতে পারে! তার চেয়ে আমরা একটু চেস্টা করেই দেখি যে ইসিটিতে কোন কাজ হয় কিনা?
যাই হোক, আন্নাকে শক দেয়া হলো।
প্রথম শকের পর পানি, জুস তরল জাতীয় খাবার অল্প পরিমানে খাওয়া শুরু করলো।
৩দিন পর দ্বিতীয় শকের পর বিকালে ডাইনিং এ নিয়ে যাওয়া হলো। আন্না প্রথম প্লেট খাওয়া শেষ করে ২য় বার খাবার নেয়। এ ঘটনা আমরা ছাড়াও তার স্বামী জন ও দেখছিলো। হটাৎ দেখলাম, জন দৌড়ে অন্য দিকে গেলো।
আমরাও জনের পিছে যাই। দেখি জন কান্না করছে। জিগ্গেস করি " এনি থিং রং"? জন বলে, "না, এই যে দেখছো আমি কা্ঁদছি, এটা কোন কস্টের কান্না না। এটা আমার সুখের কান্না। আমি ধরেই নিয়েছিলাম, আমার আন্না আর খাবে না।
না খেতে খেতে ও মারা যাবে। আজ আমি দেখলাম, আন্না একবার খাবার শেষ করে ২ বার খাবার নিয়েছে। আমার আন্নাকে আবার আমি ফিরে পাবো। "
আন্নাকে মোট ৬টা ইসিটি দিতে হয়েছিল। আর এর ফাকে ফাকে তার সাইকোথেরাপী চলছিলো।
প্রায় ৩ মাস পর আন্না তার স্বামী সংসারে ফিরে যায়।
(একটি সত্য ঘটনা। স্বাভাবিক ভাবেই আসল নাম দেয়া হয়নি)
আমার সাইকোথেরাপীর ব্লগ থেকে এইখানে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।