আচ্ছা বলেন তো….. ব্যাটম্যানের প্রথম টিভি appearance -এ ভিলেন কে ছিলো?....... জোকার? টু-ফেস? পেঙ্গুইন? ক্যাট ওম্যান? নাকি রিডলার?......
।
।
।
হয়নাই !!! সেই বান্দার নাম হইল…. ড. ডাকা…!!
কি হইল? জীবনেও শুনেন নাই হ্যার নাম?..... টেনশন লইয়েন না, কয়দিন আগে আমিও জানতাম না
পুরা কাহিনী খোলাসা কইরাই কই….. ‘ব্যাটম্যানঃ দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’ দেখার লাইগা প্যাট পুড়তাসিল অনেকদিন ধইরা। বড় ভাই ভালো প্রিন্ট ও নামাইয়া সারতে পারেনা আর আমারও প্যাট ঠাণ্ডা হয়না।
তো… কোন এক আজাইরা মুহূর্তে….. ব্যাটম্যানের জীবনে বেন-এর ভূমিকা বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের খায়েশ মনে নিয়া, ব্যাটম্যানের ইতিহাস ধইরা সার্চ মারলাম। ফলাফল দেইখা আমার চক্ষু মান্দার গাছ (চড়ক গাছে কুলাইল না)!!
তাই ভাবলাম, সামুতে আমার মতো নাদান যারা আছেন, তাগো লাইগা একটা পোস্ট দিয়া লাই!!
১৯৪৩ সাল, টিভিতে প্রথমবারের মতো জলজ্যান্ত ব্যাটম্যানরে নিয়া আসে কলাম্বিয়া পিকচারস । ১৫ পর্বের সেই টিভি সিরিজে ব্যাটম্যান হইসিলেন লুইস উইলসন এবং রবিন চরিত্রে ছিলেন ডগলাস ক্রফট। আর জাপানি বিজ্ঞানি/ভিলেন ড. ডাকা ছিলেন জে. ক্যারল ন্যাশ। (উহাদের কাউকেই আমি চিনি না, আমার জন্মের ৪৪ বছর আগের কাহিনী, চিনুম ক্যামনে?)
ব্যাটম্যান টিভি সিরিজের প্রথম পর্বের পোস্টার
সেই ভিলেন দাদাজি এমুন এক যন্ত্র বানাইসিলেন যা দিয়া জনতাকে আমজনতাতে (জম্বি) পরিণত করা যায়।
সেই মাস্টার পিলান-এর মধ্যে বাম হাত ঢুকাইয়া দিল ব্যাটম্যান আর রবিন। অতঃপর জনতা রক্ষা পাইল আর ভিলেন বেচারা তার নিজের তৈরি কুমির ভর্তি কুয়ায় পইড়া ইন্তেকাল ফরমাইলো।
দুই আমজনতার হাতে বন্দি ব্যাটম্যান এবং অট্টহাস্যরত ড. ডাকা
এই সিরিজটার কিছু চুম্বক তথ্যঃ
১। ইহা টিভিতে ব্যাটম্যানের সর্বপ্রথম চেহারা প্রদর্শন
২। ইহাতে ব্যাটম্যানকে দেখানো হয়েছে ইউ. এস. গভর্নমেন্টের এজেন্ট হিসেবে (যেন এই বস্তুকে দেখে জনতা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে অনুপ্রাণিত না হয়)
৩।
অতি কম বাজেটের দরুন ব্যাটম্যানের কোন ব্যাট-মোবিল দেখানো হয়নাই। একখানা কালো ক্যাডিলাক দিয়া ব্যাটম্যান এবং ব্রুস ওয়েন দুইজনেই চলাচল করতেন!!
৪। ব্যাটম্যানের ইউটিলিটি বেল্টে প্রচুর পরিমাণ পাউচ বিদ্যমান থাকলেও তা থিকা কিছুই বাইর হইতে দেখা যায় নাই...
অনবদ্য আক্রমণোদ্যত ভঙ্গিতে ব্যাটম্যান আর রবিন
১৯৪৯ সাল, কলাম্বিয়া পিকচারস দ্বিতীয়বারের মতো ব্যাটম্যানকে ছোটো পর্দায় নিয়া আসলো, প্রথম সিরিজের সাফল্যের পর। এইটাও ১৫ পর্বের টিভি সিরিজ। এবার ব্যাটম্যান চরিত্রে ছিলেন রবার্ট লওরি, রবিন হিসেবে জনি ডানকান আর লাইল ট্যালবট অভিনয় করেন কমিশনার গর্ডন চরিত্রে।
এইবারের ভিলেনের নাম ‘দ্য উইজার্ড’। জনাব একজন দুষ্টলোক হইলেও খুবই পর্দানশীল ছিলেন। পুরা সিরিজ শেষেও তার পরিচয় পাওয়া যায়না। তার মাথায় থাকতো ঘোমটা (হুড) আর হাতে থাকতো এমন এক আচানক যন্ত্র যা দিয়া সকল গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা যাইত!!
ব্যাট-কেভের কেমিস্ট্রি ল্যাবে গবেষণারত ব্যাটম্যান ও রবিন
এই সিরিজটার কিছু চুম্বক তথ্যঃ
১। বাজেট স্বল্পতার এবং তা ধামাচাপা দেয়ার প্রবল চেষ্টা সত্ত্বেও তার মুহুর্মুহু বহিঃপ্রকাশ
২।
ব্যাটম্যান পরিহিত জঘন্যতম কস্টিউম
মন্তব্য করতে পারতেসিনা...
৩। রবিন তো এমনিতে হাফ প্যান্ট পইড়া ঘুরাঘুরি করে, তাই তার লোমশ পা ঢাকার লাইগা গোলাপি রঙের টাইটস!!!!!
৪। এই সিরিজেও ব্যাট-মোবিলের দেখা পাওয়া যায় নাই, কিন্তু ব্রুস ওয়েন আর ব্যাটম্যান দুইজনেই এবার লেটেস্ট মডেলের একটা গাড়ি (১৯৪৯ মার্কারি) ভাগাভাগি কইরা চালাইতেন।
সেই গাড়ি......
৫। এই মুভিতে কিন্তু ব্যাটম্যানের ইউটিলিটি বেল্ট দেখানো হয় নাই, বদলে একটা নরমাল পাউচ বিহীন বেল্ট দেখা যায়, যেটা কিনা আবার এক প্রয়োজনীয় মুহূর্তে একটা ব্লো-টর্চে পলটি খায়।
কমিকসে যদিও কোথাও কোথাও ক্ষুদ্রাকৃতির টর্চ দেখা গেসিলো কিন্তু এমন full-size অক্সি-এসিটিলিন টর্চ তাও আবার সিলিন্ডার ছাড়া, পুরাই অভূতপূর্ব ছিল...
ভালো কথা, ২০০৫ এ নাকি এই সিরিজটার DVD বাইর হইসে... মুঞ্চাইলে জোগাড় করতে পারেন!
১৯৬৬ সালে আবার টিভি পর্দায় প্রত্যাবর্তন করে ব্যাটম্যান। এইবার কিন্তু ব্যাটম্যান ‘রঙিন রূপবান’-এর মতো রঙিন, আগের গুলার মতো ডিসকালার্ড না!! সেই মাপের হিট খাইসিলো এই সিরিজটা। ১৯৬৬ থিকা টানা ১৯৬৮ পর্যন্ত টোটাল ১২০ পর্ব দিয়া টিভির পর্দা কাঁপাইয়া ভাইঙ্গা ফেলার জোগাড় করে এই সিরিজের ব্যাটম্যান আর রবিন। ছুটুবেলায় আমরা শুক্রবার সকাল বেলা বিটিভিতে এই জিনিসই দেখতাম।
ব্যাট-মোবিলের টি এন্ড টি ফোনে গুরুত্বপূর্ণ কল করছেন ব্যাটম্যান
এই সিরিজ থিকা উস্কানি পাইয়া, ১৯৬৬ সালেই 20th Century Fox বানাইয়া ফেলে সর্বপ্রথম ব্যাটম্যান মুভি ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’ এর দাদার ও পরদাদা, ‘ব্যাটম্যানঃ দ্য মুভি’…..!
মুভির কাস্টিং পুরাপুরি টিভি সিরিজ থেকেই নেয়া শুধুমাত্র ক্যাট ওমেন চরিত্রটি বাদে।
অ্যাডাম ওয়েস্ট অভিনয় করেন ব্যাটম্যান চরিত্রে, বার্ট ওয়ার্ড ছিলেন রবিন, নীল হ্যামিল্টন – কমিশনার গর্ডন, সিজার রমেরো – জোকার, বার্গস মেরিডিথ – পেঙ্গুইন, ফ্রাঙ্ক গরশিন – রিডলার এবং লি মেরিওয়েথার – ক্যাট ওম্যান। টিভি সিরিজে ক্যাট ওম্যান ছিলেন জুলি নিউমার, যিনি কিনা মুভিতে অভিনয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
এই সিন টিভি সিরিজের প্রত্যেক পর্বে থাকতো….
মুভির শুরুটা এমন…… in a fine morning, ব্যাটম্যান আর রবিন গোপন সূত্রে খবর পাইল যে, জনাব কমোডোর স্মিডল্যাপ তাহার নিজের প্রমোদ তরণীতে বিপদাপন্ন হইয়াছেন। আঁতকা এমন আচানক সংবাদ পাইয়া ব্যাটম্যান আর রবিন ‘ব্যাট-কপ্টার’ নিয়া বাহির হইয়া গেলেন!! পথিমধ্যে একপিস ‘বিস্ফরন্মুখ হাঙ্গর’ ব্যাটম্যানের পা ধরিয়া লটকি খাইয়া গেলো!!! তখন ব্যাটম্যান ‘শার্ক রিপেলেন্ট ব্যাট-স্প্রে’ নামক বস্তু উহার চক্ষে ছিটাইয়া দিয়া সে যাত্রা রক্ষা পাইল!!! কিন্তু ততক্ষনে আস্ত প্রমোদ তরণী গায়েব, উহা নাকি শুধুমাত্র হলোগ্রাফিক ফটো ছিল!! পরবর্তীতে ব্যাপক চিন্তা-ভাবনা ও জ্ঞান খরচের পর তাহারা আবিষ্কার করতে সক্ষম হন যে পুরা ব্যাপারটাই ছিল ‘দ্য ইউনাইটেড আন্ডারওয়ার্ল্ড’ নামক এক কুচক্রি মহলের ধান্দাবাজি!!
এখন পাঠক মহল আমার কাছে দাবী করতেই পারেন, এই ‘বিস্ফরন্মুখ হাঙ্গর’, ‘শার্ক রিপেলেন্ট ব্যাট-স্প্রে’ ইত্যাদি বিষয়ক বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে। যদি করেই বসেন এহেন দাবী, আমি কিন্তু কানে না শোনার ভান করবো!! ব্যাপারটা নিয়া আমিও লোডশেডিঙে, তাই!
‘দ্য ইউনাইটেড আন্ডারওয়ার্ল্ড’ এর প্রতিষ্ঠাটা সদস্য ছিল গথাম সিটির মহা পরাক্রমশালী এক হালি ভিলেন – জোকার, পেঙ্গুইন, রিডলার এবং ক্যাট ওম্যান।
এই বিধ্বংসী সম্মিলন একত্রে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় আমাদের কলাবাদুরের মতো নিরিহ ব্যাটম্যান এবং নাদান রবিন কে নিকেশ করার জন্য।
অটোগ্রাফসহ ‘দ্য ইউনাইটেড আন্ডারওয়ার্ল্ড’
এই সিরিজটার কিছু চুম্বক তথ্যঃ
১। এইবার ভিলেনদের হাতে ছিল এক কঠিন মারণাস্ত্র, ‘ডিহাইড্রেটর’, যাহা দিয়া মানুষকে ধূলায় পরিণত করা যায়!!.... পরবর্তীতে তৎসাময়িক বিজ্ঞানীরা ‘রিহাইড্রেটর’ বানায়া ফেলেন যা দিয়া সেই ধূলা হইতে মানুষ ফিরায়া আনা যায়!! (প্রতিভা কি আর গাছে ধরে….!! )
২। ব্রুস ওয়েন জনৈকা সোভিয়েত সাংবাদিক ‘মিস কিটকা’র প্রেমে উষ্টা খাইয়া যান এই মুভিতে। এই মিস কিটকা আসলে ছিলেন ক্যাট ওম্যান, যিনি বুইঝা ফেলেন ব্যাটম্যানের পরিচয় আর পিলান করেন বেচারারে প্রেমের ফাঁদে ফালাইয়া, বাগে আইনা রাস্তা কিলিয়ার করার।
পরে ব্যাটম্যানের সাথে ফাইটিং এর এক পর্যায়ে ক্যাট ওম্যানের মুখোশ খুইলা গেলে ব্যাটম্যান কাহিনী বুইঝা ফেলেন এবং তার দিল ভাইঙ্গা চুর চুর হইয়া যায়...... (স্যাড ফেস)
৩। এই মুভিতে ব্যাটম্যানের ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থার বেশ উন্নতি দেখা যায়….
ব্যাট-মোবিল ছাড়াও আরও ছিল….
ব্যাট-সাইকেল (আসলে কিন্তু মোটর সাইকেল!!)
ব্যাট-বোট
ব্যাট-কপ্টার
এরপর অনেকদিনের বিরতি…… একে একে বড় পর্দায় আসে ব্যাটম্যান সিরিজের অনেকগুলো মুভি...... দিনে দিনে সময়ের দাবী পুরণ করে আরও পরিণত হয়েছে ব্যাটম্যান….. প্রমাণ দেখেন এই ছবিগুলাতে…..
ব্যাটম্যান (১৯৮৯)
ব্যাটম্যান রিটার্ন্স (১৯৯২)
ব্যাটম্যান ফরএভার (১৯৯৫)
ব্যাটম্যান এন্ড রবিন (১৯৯৭)
এরপরের ঘটনাপ্রবাহ শুধুমাত্র ব্যাটম্যান চরিত্রটির কালোত্তীর্ণ রূপ পাওয়ার ইতিহাস। ক্রিস্টোফার নোলানের পরিচালনায় তার ব্যাটম্যান ট্রিলজি নিয়া আমি মুখ খুলার যোগ্যতাও রাখি না…..
ব্যাটম্যান বিগিন্স (২০০৫)
ব্যাটম্যানঃ দ্য ডার্ক নাইট (২০০৮)
ব্যাটম্যানঃ দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস (২০১২)
ব্যাট-মোবিলের মেটামরফোসিস (১৯৬৬ – ২০১২)
বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত ব্যাটম্যান সিম্বল (মুভি + টিভি সিরিজ + কার্টুন)
বিদায়ে বলি…… তোমার জন্য হ্যাটস অফ, ব্যাটম্যান…..
you are & always will be my favorite SUPER-HERO…. \m/
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।