আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাদেশ কথন এবং এর আদ্যোপান্ত

যে ব্যথা দেয়,তারও তো ব্যথা থাকতে পারে-মাটির ময়না মহাদেশ হল পৃথিবীর অনেকগুলো বৃহৎমাপের স্থলভূমি। প্রথাগতভাবে,মহাদেশ দ্বারা বড়,একটানা,বিযুক্ত জমিকে বোঝানো হয় যা আদর্শগতভাবে বিস্তৃত জলাভূমি দিয়ে পৃথকীকৃত । এগুলো সাধারণত কঠোর মানদণ্ড নয় বরং প্রচলিত রীতি দ্বারা সাতটি মহাদেশে বিভক্ত । মহাদেশগুলো হল(বড় থেকে ছোট): এশিয়া(৪৩,৮২০,০০০ বর্গকিঃমিঃ),আফ্রিকা(৩০,৩৭০,০০ বর্গকিঃমিঃ),উত্তর আমেরিকা(২৪,৪৯০,০০বর্গকিঃমিঃ),দক্ষিণ আমেরিকা(১৭,৮৪০,০০০বর্গকিঃমিঃ),এন্টার্কটিকা(১৩,৭২০,০০০বর্গকিঃমিঃ),ইউরোপ(১০,১৮০,০০০বর্গকিঃমিঃ) এবং অস্ট্রেলিয়া(৯,০০৮,৫০০বর্গকিঃমিঃ) । মহাদেশগুলোর সর্বমোট আয়তন হল-১৪৮,৬৪৭,০০ বর্গকিলোমিটার(৫৭,৩৯৩,০০ বর্গমাইল),যা পৃথিবীর মোট আয়তনের(৫১০,০৬৫,০০০ বর্গকিলোমিটার/১৯৬,৯৩৭,৪০০ বর্গমাইল) ২৯.০১%।

এই সাতটি মহাদেশের ধারণা প্রচলিত আছে চীন,ভারত এবং ইংরেজি ভাষাভাষী অঞ্চলসমূহে । ছয় মহাদেশীয়(মিলিত ইউরেশিয়া)ধারণা প্রচলিত প্রাক্তন সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ায় এবং বর্তমান জাপানে প্রচলিত । ছয় মহাদেশীয় (মিলিত আমেরিকা) ধারণা ইউরোপের কিছু অংশ,গ্রীস,পর্তুগাল এবং স্পেনে পাওয়া যায় । অলিম্পিকের লোগোতেও পাঁচটি রিং দ্বারা পাঁচটি মহাদেশ(এশিয়া,আফ্রিকা,আমেরিকা,ইউরোপ,অস্ট্রেলিয়া)বুঝায়। মহাদেশগুলির উৎপত্তি সম্পর্কে ‘আলফ্রেড ওয়েজেনার’ (Alfred Wegener) ১৯১২ সালে সর্বপ্রথম এক মতবাদ প্রদান করেন ।

উক্ত মতবাদের নাম ‘মহাদেশীয় সঞ্চারণ’ । এই মতবাদ অনুসারে বলা হয় যে,কোন একসময় সাতটি মহাদেশ একত্রিত থেকে তৈরি করেছিল এক ‘অতিকায় মহাদেশ’(Super Continent)। প্রায় ২৫০ মিলিয়ন (২৫ কোটি) বছর আগে (Late Carboniferous Period)মাত্র একখণ্ড বিশাল স্থলভাগের উৎপত্তি ঘটেছিল,যার নাম ছিল প্যানজিয়া(Pangaea) । এর প্রায় ৬৫ মিলিয়ন (৬ কোটি ৫০ লক্ষ) বছর পরে বিশাল ঐ ভূখণ্ডটি বৃহৎ বৃহৎ দুইটি ভূখণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায় । ভূখণ্ডদুইটির নাম হল লরেশিয়া (Laurasia) ও গন্ডোয়ানাল্যাণ্ড (Gondwanaland)।

তারপর বৃহৎ ঐ ভূখণ্ডদুইটি একে অপর থেকে দূরে হটে যেতে থাকে। লরেশিয়া ভূখণ্ড থেকে উৎপত্তি ঘটে আজকের দিনের ‘উত্তর আমেরিকা’ ও ‘ইউরেশিয়া’ মহাদেশ । আর গন্ডোয়ানাল্যাণ্ড ভূখণ্ড থেকে থেকে উৎপত্তি হয় দক্ষিণ আমেরিকা,আফ্রিকা,অস্ট্রেলিয়া এবং এন্টার্কটিকা মহাদেশগুলি। মহাদেশগুলি একত্রিত হয়ে যে বিশাল ভূখণ্ড তৈরি করে –তা উপরোক্ত মতবাদকে সমর্থন করে। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর মতে ইউরেশিয়ার ৪/৫ ভাগ ভূবৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হল বর্তমান এশিয়া ।

এশিয়ার অবশিষ্ট পশ্চিমাংশ,যা ইউরোপ দ্বারা অধিকৃত-যা ইউরাল পর্বতমালা(Ural Mountains )এবং সুয়েজ খালের( Suez Canal)পূর্বে,এবং ককেশাস পর্বতমালা( Caucasus Mountains or the Kuma-Manych Depression) ,কাস্পিয়ান ও কৃষ্ণ সাগর(Caspian and Black Seas)দক্ষিণে অবস্থিত। এর পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর(Pacific Ocean),দক্ষিণে ভারত সাগর( Indian Ocean) এবং উত্তরে মেরুর সাগর (Arctic Ocean)অবস্থিত। আফ্রিকার উত্তরে ভূমধ্যসাগর (Mediterranean Sea),উত্তরপূর্বে সুয়েজ খাল( Suez Canal) ও লোহিত সাগর( Red Sea),দক্ষিণপূর্বে ভারত সাগর( Indian Ocean) এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর(Atlantic Ocean) অবস্থিত। দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিমে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর(Pacific Ocean),উত্তরে উত্তর আমেরিকা,পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর(Atlantic Ocean),উত্তরপশ্চিমে পারস্য সাগর (Caribbean Sea )। উত্তর আমেরিকার উত্তরে মেরুর সাগর (Arctic Ocean),পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর(Atlantic Ocean),পশ্চিমে এবং দক্ষিণে প্রশান্ত মহাসাগর(Pacific Ocean),দক্ষিণপূর্বে দক্ষিণ আমেরিকা,পারস্য সাগর অবস্থিত।

ইউরোপ উত্তরে মেরুর সাগর (Arctic Ocean),পশ্চিমে ভারত সাগর( Indian Ocean),দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর (Mediterranean Sea),দক্ষিণপূর্বে কৃষ্ণসাগর( অবস্থিত। এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত উচ্চতম শীর্ষস্থান-মাউন্ট এভারেস্ট(Mount Everest),নিম্নতম স্থান মৃত সাগর(Dead Sea)। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের অন্তর্গত উচ্চতম শীর্ষস্থান অ্যাকনকাগুয়া (Aconcagua),নিম্নতম স্থান লেগুনা ডেল কার্বন(Laguna Del Carbon)। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অন্তর্গত উচ্চতম শীর্ষস্থান মাউন্ট ম্যাককিনলি(Mount McKinley),নিম্নতম স্থান মৃত্যু উপত্যকা(Death Valley)। আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত উচ্চতম শীর্ষস্থান মাউন্ট কিলিমানজারো(Mount Kilimanjaro), ),নিম্নতম স্থান জিবুতি(Lake Assal,Djibouti)।

ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত উচ্চতম শীর্ষস্থান মাউন্ট এলব্রাস(Mount Elbrus),নিম্নতম স্থান কাস্পিয়ান সাগর(Caspian Sea)। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের অন্তর্গত উচ্চতম শীর্ষস্থান পুন্চাক জায়া(Puncak Jaya),নিম্নতম স্থান আইরি লেক(Lake Eyre)। এন্টার্কটিকা মহাদেশের অন্তর্গত উচ্চতম শীর্ষস্থান ভিনসন ম্যাসিফ(Vinson Massif), নিম্নতম স্থান ডিপ লেক(Deep Lake,Vestfold Hills)। যদি মহাদেশগুলোকে কতগুলো ছড়ানো-ছিটানো বৃহদাকার ভূমি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়,যারা অনেকটা একই সমতলে পরস্পর সংলগ্ন কতগুলো ভূখণ্ডকে একত্রিত করে,তখন এশিয়া,ইউরোপ এবং আফ্রিকা মহাদেশ একক মহাদেশে প্রকাশিত হল,যা আফ্রো-ইউরেশিয়া নামে স্বীকৃত। আর এর দ্বারাই চারটি মহাদেশ(আফ্রো-ইউরেশিয়া,আমেরিকা,এন্টার্কটিকা,অস্ট্রেলিয়া)সম্বলিত একটি মডেল ধারণা করা যায়।

যখন প্লাইস্টোসিন বরফযুগে সমুদ্রসমতল অপেক্ষাকৃত নিচু ছিল,এই সময়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউগিনি একটা একক মহাদেশ ছিল । একইভাবে আমেরিকা(উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা)এবং আফ্রো ইউরেশিয়া বেরিং ল্যাণ্ড ব্রিজ দ্বারা সংযুক্ত ছিল । অন্যান্য দ্বীপসমূহ যেমন-গ্রেট ব্রিটেন মহাদেশের মূলভূমির সাথে সংযুক্ত ছিল । তখন মাত্র তিনটি পৃথক মহাদেশ ছিল- আফ্রো-ইউরেশিয়া,আমেরিকা,এন্টার্কটিকা,অস্ট্রেলিয়া-নিউগিনি। ইউরোপ এর পূর্বদিকে ইউরাল(Ural)এবং ককেশাস পর্বতমালা(Caucasus Mountains), ইউরাল নদী (Ural River),কাস্পিয়ান এবং কৃষ্ঞসাগর (the Caspian and Black Seas) দ্বারা এশিয়া থেকে পৃথক হয়েছে।

এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ পৃথক হয়েছে মালয় দ্বীপপুঞ্জ(Malay archipelago)দ্বারা। এভাবেই একসময়কার একটা অবিচ্ছিন্ন বিশাল ভূখণ্ড নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সাতটি মহাদেশে উপনীত হয়েছে। তথ্যসূত্র এবং ছবি:গুগল,উইকিপিডিয়া,এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ,ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.