আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মবিল চৌধুরী (+নতুন ৪৭০ শব্দ)

https://www.facebook.com/tanvir.mh “মবিল চৌধুরী” অফিস শেষে খুব দ্রুতই বাসায় ফিরতে চান। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তার গাড়ীর ড্রাইভার “রহিম বক্স” কে খুজতে গিয়ে। -ঐ রহিম কই তুমি? -স্যার আইতাছি। গাড়ীর চাক্কায় হাওয়া দিতে গিয়ে দেরি হইয়া যাইতেছে। -তুমি শিওর ক্ষেপ মারতেছো? -তউবা তউবা স্যার কি যে কন।

একদিন ক্ষেপ মারছিলাম আর কপাল খারাপ সেইদিনই ধরা খাইছিলাম আপনার কাছে। -১০ মিনিটের ভেতর আসতে না পারলে কালকেই তোমারে এমিরেটস এয়ারলাইন্সে নীলফামারী পাঠাইয়া দিবো। -জী স্যার জী স্যার। মবিল চৌধুরীর অফিসে বনানিতে। আর বাসা উত্তরায়।

রহিম বক্স সকালে একবার তাকে দিয়ে যায় আবার বিকেলে ফেরত নিয়ে যায়। প্রতিদিন রহিম পণ করে আজ সে ক্ষেপ মারবেনা কিন্তু মেইন রোদে উঠলেই তার মুখ দিয়ে বের হয়ে যায় “চলেন বনানী ২০ টাকা”। ৩০ মিনিট পর উপস্থিত হয় রহিম বক্স। -কয় সেকেন্ডে এক মিনিট? -স্যার চাক্কায় হাওয়া দিতে গিয়ে লেট। কারেন্ট গেছিলগা।

-তুমি কি টেবিল ফ্যানের বাতাস আমার গাড়ীর চাকায় ধুকাইতেছিলা? -জী স্যার। না স্যার না স্যার। রহিমের সাথে কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে গেল। কারণ বাসায় যাওয়ার জন্য বউয়ের ফোন, মেসেজ আসতেই আছে। “কৈ” মাছ দিয়ে নাকি কি এক ইটালিয়ান রেসিপি রান্না করেছে তার বউ।

ইটালিয়ানরা কি আর কাজ পায়না? পিয়াজ দিয়ে ভুনা করে “কৈ” মাছ ছেড়ে দিবে। কিন্তু না এইটার উপরেও হামলা। মেসেজের উত্তর দিয়েই দিয়েছিলো “রান্না অনেক মজা হয়েছে” না খেয়ে রান্না মজা হয়েছে বলার লঘু অপরাধে কি গুরু শাস্তি যে হতে পারতো তা আর ভাবতেই ভয়ে বুক কেপে উঠেছে মবিল চৌধুরীর। ভাগ্যিস মেসেজটা যায়নি। গাড়ীর ভেতরে অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে রহিম এইটাকে ভিআইপি ২৭ বানিয়ে ছাড়বে।

-রহিম বক্স চিন্তা করছি একটা দামি গাড়ি কিনবো। -স্যার ভালো সংবাদ স্যার। কবে কিনবেন? -তোমার জন্য ভালো সংবাদ না। কারণ তখন দামি ড্রাইভারও রাখবো। -স্যার চাকরি গেলে আমি কি করমু? -২৭ নাম্বার বাসের ড্রাইভারগিরি করবা।

-স্যার তাইলে আমার আত্মহত্যা ছাড়া আর গতি থাকবনা। -আত্মহত্যা কেন? তোমারে আমি হত্যা করমু। -স্যার আপনি আমার জান নিলে আপত্তি নাই। ম্যাডাম আর আপনার লাইগা জান দিবার পারি। মবিল চৌধুরীর একমাত্র বিবি “জানিয়া চৌধুরী”।

জানিয়ার কারনেই রহিম বক্সকে ড্রাইভার হিসেবে বাদ দিতে পারেনা। জানিয়া মেয়েটা সব জানে। “কৈ মাছের ভেতর শিং মাছের টেস্ট ঢুকিয়ে দিতেও জানে”। কিন্তু কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ সেটা জানেনা। বাসায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নামতেই রহিম বক্সের আবদার।

-স্যার যদি কিছু টাকা দিতেন। কালকেই দিয়ে দিতাম। -তুমি কি আমার লগে রসিকতা করো?টাকা দরকার চাইবা। মালিকের কাছে কেউ ধার চায়? -স্যার আমি চাই। হে হে।

-উল্লুক কোথাকার। বেতনের বাইরে কোন টাকা আর তুমি পাবানা। সারাদিন ক্ষেপ মারো আবার ম্যাডাম এর বকশিশ পাওয়ার পরও তোমার পেট ভরেনা?পেটে কি চাইনিজ রাবার লাগাইছো? অনেক মেজাজ খারাপ হয়ে গেল মবিলের। কিন্তু বাসায় কলিংবেল চাপতে হবে হাসিমুখে। বেকাতেরা মুখ নিয়া রহিমের সামনে থাকা যায় কিন্তু জানিয়ার সামনে নয়।

মেইন গেট ক্রস করে হাহা করা শুরু করল মবিল। কারণ একজন বলেছিল যতই মন খারাপ থাকুক না কেন, “হা হা ” করতে থাকলে হাসি আসে। গেটে আজ কলিং বেল চাপতে হয়নি। জানিয়া গেট খুলে দাড়িয়ে আছে। -স্লামালাইকুম মবিল চৌধুরী।

-ওয়ালাইকুম সালাম বিবি জানিয়া চৌধুরী। -তো আপনার এত দেরি হল কেন? পুরাতন বউ কি ভালো লাগছেনা? -তুমি আবার পুরান হলে কবে?সেইদিন না বিয়ে করলাম আমরা। বিয়ের দিন খাওয়া খাসীর মাংসের স্বাদ এখনও মুখ থেকে যায়নাই আর তুমি বলতেছ পুরান হয়ে গেছো। -কি? বিয়ের দিন তুমি আমাকে দেখো নাই? তুমি বলতে পারতেনা আমি দেখতে আগের মতই আছি?এই রকম ফালতু যুক্তি কেন দিবে?যাও আজ তোমার জায়গা নেই। রহিম বক্সের সাথে থাকো গিয়ে।

-মানুষ কি বলবে আজব তো। বিয়ের দিনতো আমি শুধু তোমার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। কাবিন নামায় সাইন করতে আমার নামের জায়গায় মারুফের নাম দিয়ে দিয়েছিলাম তোমার মনে নেই? -মিথ্যুক। আচ্ছ আসো। আমার কপালে ভালো জামাই নেই।

তোমাকে দোষ দিয়ে আর কি হবে। জুতা খুলতে খুলতে মবিল মনে মনে বলতে থাকলো “উপমহাদেশে জামাই নিয়ে কোন রিয়্যালিটি শো হলে এই মবিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই প্রথম স্থান অর্জন করতো”। তখন হয়ত জানিয়ার জায়গায় ক্যাটরিনা কাইফই থাকতো। কপাল আমার। হটাত আবার কলিং বেলে চাপ।

দরজা খুলে রহিম বক্সকে দেখে আবার মেজাজ খারাপ হল মবিলের। -কি দরকার? -ম্যাডাম আইতে কইছিল। -আইতে কইলেই আইতে হবে নাকি?তোমারে আর নিচ তলার মেসেও রাখা যাবেনা। -স্যার ম্যাডাম নাকি কাল বাদ ফজর কোথায় যাবে। সেইটা নিয়ে কথা বলতে আসছি।

-ওহ তাইলেতো জরুরী দরকার। সোফায় বসে রেস্ট নেন। চা কফি যা লাগে বলেন। তারপর আপনার কথা শুনে ইচ্ছে হলে চলে যাবেন। -জী আচ্ছা স্যার।

গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে আসতে বউয়ের ডাক। -ওগো তুমি কি কাল বাসে অফিসে যেতে পারবে? -কেন? গাড়ি আছেতো। এত টাকা ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনলাম কি বাসে চড়তে? -তুমি সব সময় টাকার খুটা দাও কেন? আমি কাল সকালে একটু বের হবো তাই বলছিলাম। -ওহ সেটা আগে বলবেতো। আমার উচ্চতার মানুষ বাসে দাড়িয়ে থাকলে আমার ঘাড় ব্যথা হয় তুমি জানইতো।

তাই বলেছিলাম। -একদিন ব্যথা হলে কিছু হবেনা। কাল সকালে আমি জয়দেবপুর যাবো রিনি খালার বাসায় “লুডু” খেলতে। -আচ্ছা আচ্ছা। তুমি যদি ৫ দিন ব্যাপী লুডুর টেস্ট ম্যাচ ও খেলতে চাও রিনি খালার সাথে আমার কোন আপত্তি।

তা রহিম সাহেব কি এখন যাবেন? -না যাবেন না। তিনি “কৈ” মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে যাবেন। চলবে তানভীর মাহমুদুল হাসান ১৭। ১১। ২০১২ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.