আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিয়ানমারে বিনিয়োগে যাচ্ছে মবিল যমুনা

মবিল যমুনাই দেশের প্রথম কোম্পানি, যারা এই সুবিধা পেল। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান গত ১৩ মে কোম্পানিটিকে সহজ শর্তে ওই পরিমাণ অর্থ নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দেন।  
মবিল যমুনা তাদের এক্সপোর্টার রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) থেকে ওই অর্থ মিয়ানমারের এ কে টি অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে খাটাবে। সেখানে অ্যাকশন মবিল নামে লুব্রিকেন্ট উৎপাদন ও বাজারজাত করবে তারা।   
ওই যৌথ উদ্যোগে মবিল যমুনার ৫৫ শতাংশ, আর এ কে টি অ্যান্ড কোম্পানির ৪৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।


মবিল যমুনার চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিয়ানমার অ্যাকশন মবিল বাজারজাত করার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকে। সিঙ্গাপুর, মালয়শিয়া, থাইল্যান্ডের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আমরাও তাতে অংশ নেই এবং কাজটি পাই। কিন্তু মিয়ানমারের শর্ত হলো, আমাদের সেখানে বিনিয়োগ করতে হবে। বিষয়টি আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানালে তারা আমাদের বিনিয়েগের জন্য তহবিল নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। ”
প্রাইম ব্যাংকের এই সাবেক চেয়ারম্যান জানান, মিয়ানমারে এই যৌথ বিনিয়োগের অধিকাংশ মালিকানা মবিল যমুনার হাতে থাকবে।

প্রযুক্তি সহায়তাও মবিল যমুনাই দেবে। এজন্য ওই কোম্পানি রয়্যালিটিও মবিল যমুনাই পাবে।
লুব্রিকেন্টের পাশাপাশি মবিল যমুনা মিয়ানমারে এলপিজিও (রান্নার গ্যাস) বাজারজাত করবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আহসানউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মবিল যমুনাকে তাদের ইআরকিউ থেকে মূলধন নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্তমান মুদ্রা নীতিতে এ ধরনের মূলধন নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।


মবিল যমুনাকে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য মূলধন নিয়ে যাওয়ার অনুমতির সঙ্গে ‘মূলধন হিসাব রূপান্তরের’ কোনো সম্পর্ক নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে বেশ কয়েকটি কোম্পানি বিদেশে মূলধন নিয়ে বিনিয়োগের অনুমোদন চাইলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি পায়নি। এর কারণ হিসাবে বিদেশি মুদ্রার মজুদে সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব, অবৈধভাবে অর্থ পাচার, হুন্ডি উৎসাহিতকরণসহ বিভিন্ন কারণের কথা বলা হয়েছে সে সময়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ অনুমোদন দিয়েছে। বলা যায় এটি একটি টেস্ট কেইস।

এর ফলাফল দেখে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, মূলধনী হিসাব রূপান্তর করার জন্য মূল বিবেচ্য বিষয় হলো বিদেশি মুদ্রার মজুদ পরিস্থিতি। দেশীয় আমদানি চাহিদা মেটানোর পর বিদেশে বিনিয়োগযোগ্য যথেষ্ট পরিমাণ রিজার্ভ থাকলে এবং রপ্তানি, রেমিটেন্স ও বিদেশি বিনিয়োগের আন্তঃপ্রবাহে দীর্ঘ মেয়াদে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেই মূলধনী হিসাব রূপান্তর করা যেতে পারে।
বর্তমানে বিদেশে মুদ্রার মজুদের পরিমাণ সাড়ে ১৪ বিলিয়ন ডলারের মতো। আমদানি কম এবং রপ্তানি ও রেমিটেন্স প্রবাহ ইতিবাচক হওয়ায় রিজার্ভ পরিস্থিতিও সন্তোষজনক বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী দেশের বাইরে শাখা অফিস বা সাবসিডিয়ারী অফিস স্থাপনের জন্য সর্বোচ্চ ৩ হাজার মার্কিন ডলার সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানো যায়। তবে ব্যাংকগুলোর এক্সচেঞ্জ হাউজ কিংবা বিদেশে শাখা স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ‘কেইস টু কেইস’ অনুমোদন দিচ্ছে।
সরকারি মালিকানাধীন যমুনা অয়েল কোম্পানি ও ইস্টকোস্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড ১৯৯৮ সালে যৌথভাবে মবিল যমুনা গঠন করে।
এ কোম্পানি মধ্যপ্রাচ্য থেকে লুব্রিকেন্ট আমদানি করে দেশে ‘প্যাকিং’ ও বাজারজাত করার পাশাপাশি চট্টগ্রামে স্থাপিত প্ল্যান্টের মাধ্যমে কিছু উৎপাদনও করে।
মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফেরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় এবং পশ্চিমা দেশগুলো বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় অনেক দেশের উদ্যোক্তারাই এখন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করছেন।


মবিল যমুনার আগে ২০১১ সালে দেশের ৭টি প্রতিষ্ঠান বিদেশে মূলধন নেয়ার আবেদন করে। দেশবন্ধু গ্রুপ ব্রাজিল অথবা থাইল্যান্ডে আখ নির্ভর চিনি শিল্প কেনার জন্য পুঁজি নিতে চায়।
এরপর আবেদন করে সামিট শিপিং লিমিটেড। সিঙ্গাপুরে ইক্যুইটি বাবদ ৯৬ লাখ ডলার নিতে চেয়েছিল তারা। কম্বোডিয়ায় জমি কেনা ও বিনিয়োগের জন্য অর্থ নিতে চেয়েছিল মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।


ডিফেন্স এক্স সোলজারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (ডেসওয়া) ট্রাস্ট আফ্রিকায় চাষাবাদের লক্ষ্যে মূলধন নিতে চেয়েছিল। আর নর্থ সাউথ সিড লিমিটেড নেপালে ৭১ হাজার ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল।
প্রাণ আরএফএল গ্রুপ ভারতে ২০ লাখ ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন চায়। আর নিটল নিলয় গ্রুপ আফ্রিকার উগান্ডায় চাষাবাদের জন্য ১০ বছরে ৭০ থেকে ৮০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখায়। ৭ থেকে ৮ বছরে তারা লাভসহ মূলধন ফিরিয়ে আনারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।


এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান দুবাই ও ইউরোপে পুঁজি নিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সায় দেয়নি। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদের চেষ্টাও অনুমোদন পায়নি বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.