ধুত্তোর ডাইনোসরের ডিম সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধুমধামের সাথে শেষ হলো ৫৭ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ব্যাপক লড়াইয়ের পর অবশেষে দ্বিতীয় বারের মত আরো চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউজে গেলেন বারাক ওবামা। অভিনন্দন তাকে।
বলা হয়ে থাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন পৃথিবীর সব থেকে ক্ষমতাধর ব্যাক্তি। আর তাই, তারা যখন নির্বাচনের প্রার্থী পর্যায়ে থাকেন, তখন তারাই হয়ে যান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি।
এমন আলোচিত কাউকে চিঠি লেখাটা খানিকটা দুঃসাহসিক কাজ বটে! কিন্তু কেউ যদি এই দুঃসাহসিক কাজ করে তার উত্তরও পেয়ে যায়, তবে তাকে অসাধ্যসাধন ছাড়া আর কি-ই বা বলা যায়! এমনই অনন্য একটি ঘটনা ঘটেছিল ১৮৬০সালে, ১৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়।
নির্বাচনের প্রার্থী ছিলেন রিপাবলিকান আব্রাহাম লিঙ্কন, ডেমক্র্যাট স্টিফেন ডগলাস, সাউদার্ন ডেমক্র্যাট জন ব্রেকিনরিজ এবং নিউ কন্সটিটিউশনাল ইউনিয়ন পার্টির জন বেলকে। বলাই বাহুল্য রিপাবলিকান পার্টির আব্রাহাম লিঙ্কনের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনামুলকভাবে বেশি।
নির্বাচনের আগে যে যার মত করে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। ঠিক সে সময়ই আব্রাহাম লিঙ্কনকে চিঠি লিখে বসে ১১ বছর বয়সী এক বালিকা।
চিঠিটা নিচে দেয়া হল: [‘(** **)’ চিহ্নের মাঝের কথা গুলো আমার মন্তব্য ]
“ডিয়ার স্যার,
আমার বাবা এই মাত্র মেলা থেকে আপনার একটা ছবি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আমি ছোট্ট মেয়ে। বয়স মাত্র এগারো। আমি একান্ত ভাবেই চাই আপনিই হোন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। আমি এত ছোট যে, আমি কোন ভাবেই আপনার মত বড় মাপের মানুষের কাছে চিঠি লেখার উপযুক্ত নই।
আপনি যে আমার এই চিঠির উত্তর দিতে পারবেন-তেমনটা আশাও রাখি না। আপনার কি আমার বয়সী কোন কন্যা আছে? যদি থাকে তবে তাকে আমার ভালবাসা জানাবেন আর বলবেন, সে যেন আমার কাছে চিঠি লেখে। (**সে মেয়ের কি ঠেকা পড়েছে! **)
আমার চারটি ভাই আছে। তাদের কেউ কেউ আপনাকে ভোট দেবে। কিন্তু আপনি যদি দাড়ি রাখেন তবে আমি চেষ্টা করবো, তাদের সবাই যেন আপনাকে ভোট দেয়।
আপনার চিকন গড়নের মুখে দাড়ি রাখলে দেখতে খুব ভালো লাগবে। (**সাহস কত!! বড় একটা মানুষকে কি বলে!! **) সব মেয়েই পুরুষের মুখে দাড়ি রাখা পছন্দ করে। (**ওট্টুক বয়সে মেয়ে কি পাকনা! **) তারা আপনাকে ভোট দেওয়ার জন্য তাদের স্বামীদের জ্বালাতন করতে থাকবে এবং আপনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে যাবেন। (**বালিকা মনে হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে পুতুল খেলা ভেবেছিল **) আমার বাবা আপনাকে ভোট দেবেন। আমি পুরুষ হলেও আপনাকেই ভোট দিতাম।
তবে আমার পরিচিতদের সবাই যাতে আপনাকেই ভোট দেয়, আমি সেই চেষ্টাই করব।
আমার একটা ছোটবোন আছে। (**ওরে, কত্ত পুলাপাইন রে! **) বয়সমাত্র ৯ সপ্তাহ, তবে বেশ দুষ্টু। যদি চিঠির জবাব দিতে চান তবে গ্রেস বেডেল, ওয়েস্টফিল্ড চটকোয়া কাউন্টি, নিউইয়র্ক-এই ঠিকানায় লিখতে পারেন।
-গ্রেসবেডেল।
”
ছোট্ট মেয়ে গ্রেস বেডেল খুব শখ করে এবং সাহস নিয়ে চিঠিটা লিখেছিল। কিন্তু এর উত্তর অথবা অনুরোধ রক্ষা কোনটাই নিশ্চয়ই সে আশা করে নাই। তা সে নিজেই চিঠিতে লিখেছিল। কিন্তু এই চিঠি পাঠানোর কিছুদিন পরেই গ্রেস বেডেলকে অবাক করে দিয়ে তার হাতে পৌঁছায় স্বয়ং আব্রাহাম লিঙ্কনের লেখা চিঠির উত্তর। আব্রাহাম লিঙ্কন সে চিঠিতে লিখেছিলেন;
“মাই ডিয়ার লিটল মিস,
প্রথমেই দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমার কোন কন্যা সন্তান নেই।
আমার তিন ছেলে। একজনের বয়স ১৭, আরেকজনের ৯ এবং অন্যজনের বয়স ৭ বছর। তারা এবং তাদের মা কে নিয়ে আমার সংসার। আর দাড়ির ব্যাপারে বলছি- যেহেতু আগে কোনদিন দাড়ি রাখিনি, এখন হঠাৎ করে শুরু করলে মানুষ হাসি-ঠাট্টা শুরু করে দিতে পারে।
তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী,
-এ. লিঙ্কন।
”
যদিও চিঠিতে কোথাও দাড়ি রাখার কথা বলেননি, তবু চিঠি পাবার পর থেকে দাড়ি রাখতে শুরু করেন লিঙ্কন। কয়েক মাস পরে যতদিনে লিঙ্কন হোয়াইট হাউজের জন্য নির্বাচিত ততদিনে তার মুখভর্তি দাড়ি। হোয়াইট হাউজে পা রাখতে নিজ রাজ্য ইলিনয় থেকে ট্রেনে করে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে যাত্রার সময় পথে নিউ ইয়র্কে যাত্রা বিরতি করেন লিঙ্কন। আর তখনই তিনি প্রথমবারের মত গ্রেসবেডেলেরসাথেদেখাকরেন। ছোট্ট গ্রেস বেডেলকে দেখেই তিনি বলে ওঠেন- “গ্রেসি, আমার দাড়ি দেখ, তোমার জন্যই আমি দাড়ি রেখেছি।
”এরপর ছোট্ট গ্রেসিকে চুমু দিয়ে তার কাছ থেকে বিদায় নেন আব্রাহাম লিঙ্কন।
এর ৩ বছর পরে গ্রেসি আবারও লিঙ্কনকে চিঠি লিখেছিল। তবে এবার আর দাড়ি নয়- লেখার বিষয়বস্তু ছিল পারিবারিক। মাঝের ৩ বছরে গ্রেসির পরিবারের আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়। গ্রেসি লিঙ্কনকে ওয়াশিংটনের ট্রেজারি বিভাগে চাকরি পাইয়ে দেয়ার অনুরোধ করে।
এই চিঠিটি ১৮৬৪ সালে লেখা হলেও ২০০৭ সালে, অর্থাৎ প্রায় ১৫০ বছর পরে চিঠিটি খুঁজে বের করেন এক মার্কিন গবেষক।
এই ঘটনাগুলোতে কি বোঝা গেল বলুনতো? বেশ কিছু জিনিস:
যতই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হননা কেন, স্টাইল একটা বিষয়। আর মেয়ে মানুষ কিছু একটাকে ভাল বললেসেটাকে খুব গুরত্ব দেয়। (তা সে মেয়ে যত ছোটই হোক না কেন) সেলেব্রিটি মানুষজন কোন মেয়ের স্টাইল/লুক বিষয়ক কোন আব্দার সহজে ফেলতে পারেন না। সেটা দেড়শ’ বছর আগের জন্য ঠিক যতোটা সত্য, ঠিক ততোটাই সত্য ২০১২’র জন্যও।
ইনফোঃ গুগল সার্চ, উইকিপিডিয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।