মনোয়ারা মণি
আমার বয়স কতই বা হবে দশ কি এগারো বছর।
কোনো এক মেলাতে গেছি দুই ভাইবোন। আমার ছোট হলেও আমি ওকে দাদা বলে ডাকি।
বাবা অনেক বকা দিয়েও আমাকে নাম ধরে ডাকা বন্ধ করাতে পারেন নাই। এখনো আমার নাম ধরেই ডাকে।
মেলাতে ঘুরছি হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখি ভাইটি একজন বড় মানুষের দিকে রুখে দাঁড়িয়েছে আর বলছে-
‘এতো বড় সাহস আমার বোনের দিকে এভাবে তাকায়...’
ভয়ে তাড়াতাড়ি ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলাম।
বাসায় এসে মাকে বললাম ওকে নিয়ে আমি আর কোথাও যাবো না মা আমার জন্য আমার ভাইয়ের বিপদ হবে।
সময়ের সাথে গল্প জমতে থাকে।
সারা বছরের হাত খরচের টাকা জমিয়ে বোনের জন্য তার প্রিয় সন্দেশ কেনা, মন খারাপ বোনকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে মন ভালো করার চেষ্টা করা আরো কতো কাহিনী।
জীবনের প্রয়োজনে দেশ ছাড়তে হলো।
‘নামাযী তোর নামাজ হলো যে ভুল’ অথবা ‘প্রেমে পড়লে বারো মাস গান সবাই গায়’ গানগুলো শুনলে হু হু করে কেঁদেছি কতোদিন।
প্রে করতে গেলেই পিছন থেকে সুর করে গাইতে শুরু করতো ‘তোর নামাজ হলো যে ভুল’...আর আমি হেসে ফেলতাম।
‘তোরা কে যাস রে...’ গানটি এখনো চোখে জল আনে।
এখনকার মতো আগে ইচ্ছে হলেই বাংলাদেশে যাওয়ার সুযোগ ছিলো না। বছরে একবার দেশে যেতাম।
এক বছর ওকে বললাম দাদা, আমি একবছর দেশে না এসে টাকাগুলো পাঠিয়ে দেই। সাথে সাথে ওপাশ থেকে জবাব দিলো ‘আমার টাকার দরকার নাই তুই দেশে আয়’।
দেশে গিয়ে ডেংগুতে বেহুঁশ হয়ে ছিলাম। ও নাকি বড় বোনকে বলেছে সারারাত ফোন ধরে ওর সাথে বসে থাকতে না জানি কখন আমি মরে যাই।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুর প্রয়োজন আর আমার প্রয়োজন দেশে যাওয়া।
এখন সেই ছোট্ট ভাইটি বাবা হয়েছে কিন্তু স্বভাব একই রয়ে গেছে।
আমি দেশে না গেলে সে বাড়ীর গাছের একটা ডালও কাটবে না।
অনেকের মতো ওর বাচ্চারাও হয়তো ভাবে ওদের বাবা কখনও বড় হলো না।
আজ ভাই ফোঁটার দিন।
এই একটা মাত্র উৎসব আমাকে আন্দোলিত করে, আমাকে চঞ্চল করে, আমি অস্থির হই।
এই একটা মাত্র দিন আমার কাছে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়।
শুভ ‘ভাই ফোঁটা’ দিবস !!
সকল ভাই দীর্ঘজীবী হোক !! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।