আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাদাম চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা

‍আ । ল । ম । গী । র সহজে চাষযোগ্য, উৎপাদিত ফসলের খরচ কম, কাক্সিক্ষত দাম পাওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা বাদাম চাষে ঝুঁকে পড়ছেন।

বাদাম চাষ করে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া ও মাগুরা জেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করে ৩০ সহস্রাধিক প্রান্তিক ও ভূমিহীন বর্গাচাষির মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। এ বছর এসব জেলার চরাঞ্চলের ৪০ হাজার একর জমিতে প্রায় ৬৫ হাজার মেট্রিক টন বাদাম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে দুটি জেলার দইকান্দিরচর, চরআগবাঙলা, শিমুলকান্দি, বারোপাখিয়ারচর, ধীতপুর, কুশিরচর, ভুমোরিয়া, চাঁমতারা, পদ্মারচর, বাইরচর, শ্রীপুর, খিদ্রদাশুরিয়া, ঘোড়জান, মুরাদপুর, শিংঘুলি, বরঙ্গাইল নয়াহাটাবরঙ্গাইল, ভারদিঘুলিয়া, চরপেচাকোলা, চরআড়ালিয়া, সাঁড়াশিয়া, চরসাফুল্লা, চরনাগদা, চরঢালা, চরকল্যাণপুর, পূর্বশ্রীকণ্ঠদিয়া, মেঘাইরচর, খাসকাউলিয়া, মিনারদিয়াচর, ওমরপুরচর, পয়লারচর, বানতিয়ারচর, মীরকুটিয়ারচর, রস্তমেরচর, সোলজানারচর, চরবলরামপুর, চরভাড়ারা, সাদিপুর, সুদিরাজপুর, আশুতোষপুর, কোমরপুর, বীরপুর, পীরপুর, চালাকপাড়া, হঠাৎপাড়াচরসহ ছোট-বড় ১২৫টি চরের ২৫ হাজার একর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বাদামের দাম ভালো পাওয়ার আশায় কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার একর বেশি জমিতে বাদাম চাষ করেছেন।

সূত্র আরও জানায়, শুধু কাজিপুরে যমুনা নদীর বুকে জেগে ওঠা ৩০ চরে ৬০৫ হেক্টর জমিতে চীনা বাদাম চাষ করে ১ হাজার ভূমিহীন বর্গাচাষি ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন। বাদাম চাষের সফলতা নিয়ে চৌহালী উপজেলার মিনারদিয়া চরের কৃষক জহির মিয়া জানান, এ বছর তিনি ৬ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। বীজ বপনের পর উপযুক্ত পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ায় বাদামের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন। গত বছর ৬ বিঘা জমি থেকে ৮৬ মণ বাদাম পাওয়া গেছে। এতে তার লাভ হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা।

তিনি আরও জানান, অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে বাদাম আবাদে পরিশ্রম ও খরচ অনেক কম। বাদামের জমিতে নিড়ানির প্রয়োজন হয় না। ঢালারচর, ফৈলজানার চর, মীরকুটিয়া চর, আজিবর শ্রীপুর চর, ভারদিঘুলিয়া চরসহ বিভিন্ন চরের কৃষকরা জানায়, এ বছর তারা বাদাম আবাদ করে ভালো ফলন ও দাম পাওয়ার আশা করছেন। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলায় বাদামের দানা পুষ্ট হয়েছে। বাদাম গাছে তেমন কোনো রোগবালাইয়ের আক্রমণ হয়নি।

এদিকে ফারাক্কা বাঁধের কারণে শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যাওয়া পদ্মার দুই তীরের বিশাল চরের বেলেমাটিতে বাদাম চাষে সফলতা পেয়েছেন দৌলতপুর উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের কৃষকরা। দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, মরিচা, ফিলিপনগর ও চিলমারি ইউনিয়নের চরে ১০-১২ বছর ধরে বাদাম চাষ হচ্ছে। ফিলিপনগর গ্রামের অনেক কৃষক ২০ বছর ধরে চরে বাদাম চাষ করছেন। চাষিরা জানায়, এক বিঘাতে বাদাম চাষে ৭-৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বিঘাতে ১০-১১ মণ বাদাম উৎপাদন হয়।

বিক্রি করে ১৫-১৬ হাজার টাকা আয় হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মার চরে ১ হাজার ৮৭৫ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। অন্যদিকে বাদাম চাষের সফলতায় মাগুরার মহম্মদপুরের মধুমতি নদীর বিস্তীর্ণ চর এলাকার নদী ভাঙা বিপর্যস্ত চরাঞ্চলের দুই সহস্রাধিক মানুষের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। মহম্মদপুর উপজেলার নদী সিকস্তি চরসেলামতপুর, বৃহসনগর, দয়ারামপুর, গয়েশপুর, পাল্লা, শিরগ্রাম, বসুরধুলজুড়ি, ভোলানাথপুর, রুইজানি, গোপালনগর, জাঙ্গালিয়া, রায়পাশা, মুরাইল, পাঁচুড়িয়া, আড়মাঝি, চরঝামা, চরদেউলিসহ নদীভাঙনের শিকার অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ চরের জমিতে বাদাম আবাদ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং পুঁজি পেলে বাদাম চাষের পরিধি আরও বিস্তৃত করতে পারবে বলে তাদের দাবি।

এরই মাঝে আগাম জাতের বাদাম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। চরাঞ্চলের বাদাম চাষকে কেন্দ্র করে বাদাম বিক্রির পাইকারি ও মোকাম গড়ে উঠেছে। বাদাম বেচা-বিক্রির জন্য মোকামগুলোতে ২০ থেকে ২২টি আড়ৎ গড়ে উঠেছে। বাদামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় আড়ৎদারদের মাধ্যমে বাদাম কিনে নিজ নিজ গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার পোস্তগোলার বাদাম ব্যবসায়ীরা জানান, চরাঞ্চলের বাদামের গুণগতমান ভালো হওয়ায় প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

এদিকে চীনাবাদাম চাষে ঝুঁকেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা। সদর উপজেলার বালিয়া, ভুল্লী, শুকানপুকুরী, গড়েয়া ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চীনাবাদামের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য ফসলে বিভিন্ন সমস্যা থাকায় এবং চীনাবাদামের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ ফসলের দিকে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে চীনাবাদামের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে দেড় থেকে দুই টন চীনাবাদম উৎপাদন হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলের কৃষকরা ঢাকা-১, বিনা-১, বিনা-২, বিনা-৩, ঝিঙ্গা, বাসন্তী, ত্রিদানা, ঝিঙ্গা এবং মাইজচর জাতের বাদাম চাষ করেছেন। এছাড়া উন্নতমানের হাইব্রিড জাতের বাদামের আবাদও করেছেন। সব জাতের বাদামেরই ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাদাম চাষে এ অভাবনীয় সাফল্যে খুশির ঝিলিক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে চরাঞ্চলের কৃষাণ-কৃষাণীর চোখে-মুখে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.