আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিতু, তার বয়ফ্রেন্ড এবং লিটনের ফ্ল্যাটে যাইবার গল্প

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! কথাটা শুনেই মিতু মনটা খারাপ হয়ে গেল ! শেষ পর্যন্ত সুমনও ? এতো দিন সবার কাছ থেকে যা শুনে এসেছে সুমনও তাই করলো ? সুমন ওকে ওর ফ্ল্যাটে নিতে চাইলো !! ওর বান্ধবীরা ওকে অনেক আগেই বলেছিল যে আজকাল কার ছেলে মেয়ে গুলো কখনই ঠিক সুবিধার হয় না । এদের প্রধান লক্ষ্য থাকে লিটনের ফ্ল্যাটের দিকে । কিন্তু মিতুর এইটা মানতে কষ্ট হত ! অন্ততঃ সুমনের ক্ষেত্রে মনে হত এমন টা না । সুমন ওকে আসলেই ভালবাসে ! ও ওকে কখনও লিটনের ফ্ল্যাটে নেবার কথা বলবে না ! এটা ওর বিশ্বাস ছিল ! এমন নোংরা ব্যাপার ওদের ভিতর আসবে না ! মিতু রাগে দুঃখে মরে যেতে ইচ্ছা করছে । গত কালকের কথা ! বিকেলে মিতু সুমনকে নিয়ে বসুন্ধারায় গিয়েছিল ! এখান কার কাশবনটা মিতুর খুব পচন্দ ।

প্রায়ই সুমন কে নিয়ে আসে । সুমনের হাত ধরে হাটতে খুব ভাল লাগে । শুধু হাত ধরেই ! অন্য কিছু না । সুমনও অন্য কিছু না কেবল মিতু হাত ধরে হাটে । কত কথা বলে ওরা ! ওদের কথা ! ওদের সামনের দিনের কথা ! সবই ঠিক ছিল কালকে হঠাৎ সুমন বলল -কালকে তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো ।

তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো । তুমি জীবনেও ভুলবা না । -মানে কি ? -মানে কিছু না । আমার বহুদিনের একটা ইচ্ছা কালকে পুরন হবে । সুমনের রহস্যময় কথা ওর কাছে ঠিক মত বোধগম্য হল না ।

আসলে সুমনকি বলতে চাইছে ? রুমে এসে ওর রুমমেইট কাছে বলতেই, ওর রুমমেইট সুমি হায় হায় করে উঠল ! মিতু কিছু বুঝতে না পেরে বলল -কি হয়েছে ? এমন কেন করছিস ? সুমি বলল -তুই এখনও বুঝতে পারছিস না ? -কি বুঝতে পারবো ? -আরে এই সে তার আসল রূপ দেখাতে শুরু করেছে । কালকে তোকে ওদের বাসায় নিয়ে যাবে । তারপর .... -তারপর ? সুমি বিরক্ত হয়ে বলল -মিতু তুই বোকাই রয়ে গেলি রে ! লিটনের ফ্ল্যাটের গল্প শুনিস নাই । এখানে পার্থক্য হল সুমনের ফ্ল্যাট ! আর কিছু না । মিতুর কথাটা মানতে কষ্ট হল ।

বলল -নাহ । সুমন এমন করতে পারে না । ও এমন ছেলে না । -সব ছেলেই এক । তোকে কি বলেছে ও ? অনেক দিনের একটা ইচ্ছা পুরন হবে তাই না ? -হুম ।

-মানে বুঝে নে । আমরা সবাই জানি সুমন তোর পিছনে কত দিন ঘুরিছে । কথা সত্যি । সুমন আসলেই মিতুর পিছনে অনেক দিন ঘুরেছে । -কি করবো ? -তুই জানিস ! আমি কিভাবে বলবো ? -একটা কিছু বল ? কি করতে পারি বা কি করবো ? ওকে মানা করে দিবো ? -দিতে পারিস ! ঐদিন রাতেই মিতু সুমনকে ফোন দিয়ে বলল যে ও আসতে পারবে না ।

কিন্তু সুমন কিছুতেই শুনতে চাইলো না । বলল আসতেই হবে । কোন কথা হবে না । আসতেই হবে । মিতু নিজের মাঝেই কেমন একটা দ্বিধায় পরে গেল ।

কি করবে ? কি করা উচিৎ ওর ? যাবে ? যদি সত্যি এমন কিছু করে ? কিন্তু সুমনের উপর এখনও তার বিশ্বাস হারাতে ইচ্ছা হচ্ছে না । এমন কিছুতেই হতে পারে না । শেষ রাজি হয়ে গেল আবার । অন্তত এই টুকু বিশ্বাস আছে যে সুমন জোর করে এমন কিছু করবে না যাতে ওর সম্মতি নাই । সকাল বেলা থেকে তাই মিতুর মনটা বিষন্ন হয়ে আছে ।

কিছু ভাল লাগছে না । সুমনের সাথে যেতে ইচ্ছা করছে না । আবার সুমনকে মানাও করতে পারছে না । সিএনজি থেকে যখন মিতু নামলো তখন আর একবার মনের ভিতর কু ডেকে উঠলো । -কি হল ? সুমনের হাস্যজ্জল মুখ দেখে একটু শান্তি এল মনে ।

মনে হল নাহ । এই হাসির পেছনের মানুষটি কখনও কোন অন্যায় করতে পারে না ওর সাথে । পারবে না । সুমনদের বাড়ি বারিধারার একটা অভিজাত এলাকায় ! মিতু যতদুর জানে সুমনের বাবা মা দুজনেই ব্যাংকে চাকরী করে । ওর একটা ছোট বোন আছে ।

এই এসএসসি পরীক্ষা দেবে । এখন বেলা এগারোটার কিছু বেশি বাজে । ওর বাবা মা দুজনেই নিশ্চই এখন অফিসে । বোনটাও স্কুলে মনে হয় ! পুরা বাসায় ওরা একা । মিতু মনে মনে আবার বলল প্লিজ সুমন এমন কিছু কর না যাতে আমার চোখে তুমি চোখে নিচে নেমে যাও ! প্লিজ ! একটা দরজার সামনে এসে সুমন থামলো ।

বলল -এটা আমাদের বাসা । -তাই ? একটু হাসি আনার চেষ্টা করলো । না জানি কি সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে ওর জন্য । সুমন কলিংবেল চাপ দিল । সুমনের কলিংবেল বাজানো দেখে মিতুর একটু অবাক লাগলো ! মিতু ভেবেছিল বাসায় কেউ থাকবে না ।

সুমন চাবি দিয়ে দরজা খুলবে । দুবার বাজানোর পরেই দরজা খুলে গেল । এক মাঝ বয়সী মহিলা । মিতুর মনে হল ইনি বাড়ির কাজের মহিলা । বাড়ির কাজের মহিলাটা মিতু কে দেখতেই একটা অবাক করার মত কাজ করলো ।

জোরে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো । -আম্মা ! আম্মা !! ভাইজান বউ নিয়া আসছে । জলদি আহেন ! বুয়ার মুখে বউ কথাটা শুনে মিতু বেশ চমকে গেল ! কিছুক্ষন কিছুই বুহতে পারলো না কি হচ্ছে ? আম্মা বলে কাকে ডাকছে ? বাড়িতে কি তাহলে আরো কেউ আছে ? সুমনের দিকে তাকিয়ে দেখে সুমন মিটমিট হাসছে । অর্থ পুর্ন চোখে সুমনের দিকে তাকিয়ে দেখে সুমন হাসছে । কি নিস্পাপ হাসি !! ডান দিকের ঘর থেকে এক মহিলা বের হয়ে এল ।

কেউ বলে দিল না কিন্তু মিতুর বুঝতে একটুও কষ্ট হল না ইনিই সুমনের মা ! সুমনের মা হাসি মুখে এগিয়ে এল । মিতু আসলে কিছু বুঝতে পারছিল না যে কি করবে ! সুমনের মা সুমনের দিকে তাকিয়ে বলল -যাক এতো দিনে একটা কাজ করেছিস ? তারপর মিতুর দিকে তাকিয়ে বলল -আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে আমার ছেলের এত সুন্দর একটা গার্লফ্রেন্ড আছে । তুমি তো মা তোমার ছবির থেকেও বেশি সুন্দর ! মিতু খুব লজ্জা পেল ! এখন ওর কি করা উচিৎ ? কোন কিছু না বুঝে মিতু সুমনের মাকে সালাম করতে গেল কিন্তু মাঝ পথেই তিনি মিতু ধরে বুকে জড়িয়ে ধরলেন ! এক অজানা ভাল লাগা মিতুর সারা মন জুড়ে প্রবাহিত হল । সুমন বলল -মা ! আব্বা কই ? -তোর আব্বা একটু বাইরে গেছে ! -কেন ? -আরে সব কিছু রেডি করতে গিয়ে দেখি রোরহানী কেনা হয় নাই । সেইটাই আনতে গেছে ! সুমন কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই সুমনে ছোট বোন নিনা ঘরে ঢুকলো ! মিতুকে দেখে তো হইচই বাধিয়ে দিল ! একদম সরাসরি সবার সামনে ভাবি বলে ডাকা শুরু ।

মিতু এমনিতেই লজ্জ পাচ্ছিল । আর বেশি করে লজ্জা পেতে লাগলো । নিনা নিজের ওদের সবার ফ্ল্যাট ঘুরে দেখালো ! নিজের ঘরে নিয়ে গেল । এমন একটা ভাব যেন মিতু সুমনের না নিনারই বন্ধু ! মিতুর আসেই খুব ভাল লাগছিল । খুব বেশি ।

আজ নাকি সব কিছু ওর জন্য করা হয়েছে । কদিন থেকেই মিতুর আসার কথা ওরা আলোচনা করছিল । বাড়ির কেউ আসলে ঠিক বিশ্বাসই করে নাই যে সুমনের একটা গার্লফ্রেন্ড থাকতে পারে । আজকে ওদের বাবা মা দুজনেই অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে ওর আসার জন্য । নিনা স্কুলে যায় নি ।

বাড়ি রান্না স্পেশাল রান্না হচ্ছে এসবই মিতু আসার জন্য ! বাড়ির সবাই খুশি ! মিতুও খুশি ! কিন্তু মনের ভিতর একটা অপরাধ বোধকাজ করছে । ইস কি ভুলই না বুঝেছে সে সুমন কে ! এখনই ওর কাছে ক্ষমা চাওয়া দরকার । -নিনা ! -বল ভাবি ! -আমি একটু তোমার ভাইয়ার ঘরে যাই ! ওর সাথে কয়টা কথা বলতাম । -ও আচ্ছা ! এখন থেকেই এতো কিছু !! একটুও সহ্য হচ্ছে না ?? -না !! সেটা না ! মিতু হাসলো ! মিতু সুমনে ঘরে গিয়ে দেখে ও যেন কি একটা খুজতেছিল ! -সুমন ! সুমন ঘুরে দাড়ালো ! -বল ! মিতু দরজাটা একটু ঠেলে দিয়ে সুমন কে জড়িয়ে ধরলো ! জীবনের এই প্রথম বারের মত । মনের ভিতর কোন সংকোচ নাই ! কিছু্ক্ষনের ভিতরেই একটু ফোঁপানীর শব্দ শুনতে পেল সুমন ! -আরে কি হল ? কাঁদছো কেন ? -আমি খুব খারাপ ! খুব ! তুমি আমাকে মাফ করে দাও ! -আরে আশ্চার্য ! কি হয়েছে ? বলবা তো ? মিতুকে শান্ত করতে সুমনের আরো কিছু সময় লাগলো ! আরো কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই নিনা ঘরে ঢুকে পড়লো ! দুজন কে একসাথে দেখে বলল -আচ্ছা !! এই ব্যাপার ! ভাইয়া ! তলে তলে এতো দুর .. -এই যা ভাগ !! -যাবো না ? আম্মাকে বলে দিবো ! সুমন বলল -যা বল গিয়ে ! মিতু সুমন কে থামিয়ে দিয়ে বলল -কি বলছো ? বলবে কেন ? নিনা তুমি বলবা বল ? -বলব না ! তবে একটা শর্ত আছে ! মিতু হেসে বলল -কি শর্ত বল ! -এখানে বলবো না ।

তুমি এস আমার সাথে ! এসো তো ! কালকে রাতেও মিতু কি না ভেবেছিল আজকের দিনটাকে নিয়ে ! কিন্তু দিনটা এমন সুন্দর হবে তা মিতু ভাবতেও পারে নাই !! সুমন ওকে আসলেই ভাল একটা সারপ্রাইজ দিয়েছে । কোন দিন এই মধুর স্মৃতি ভোলা যাবে না ! ***** আপু মনি রা ! এইটা গল্প ! বাস্তবে এমনটা হয় না ! সব আপুদের কেই বলতেছি জীবনটা অপু তানভীরের গল্প না আর সব প্রেমিকরা অপু তানভীরের গল্পের নায়কদের মত সোজা না ! সুতরাং সাবধান ! প্রেম করবেন ! অবশ্যই প্রেম করবেন । ভালবাসবেন ! সমস্যা নাই ! প্রেম চমৎকার একটা ব্যাপার ! কিন্তু কিছু নোংরা কাজ এই প্রেমটাকে কুলষিত করে ফেলে । আপনার মত আপুরা আপনাদের মত ভাইয়াদের দ্বারাই এটা হয় ! প্রেম একটা মনের ব্যাপার ! যেন সেটা মন পর্যন্তই থাকে । লিটনের ফ্ল্যাট পর্যন্ত যেন না যায় ! Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।