স্বপ্ন দেখে যেতে চাই আমৃত্যু ... ! হোক না সে দুঃস্বপ্ন ... ! ক্ষতি কি ... ! ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় ফাস্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার আগের দিন রাতে ঘটে যাওয়া কিছু মজার অভিজ্ঞতার কথা বলব আজকে।
সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। নটার সময় ক্লাস শুরু হয়। প্রথম ক্লাসটা কখনই করা হয়না । কারন সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারতাম না ।
তার কারন সারারাত জেগে বাসার রান্নাঘর লাগোয়া বারান্দায় বসে চেয়ে থাকতাম সামনের দুরের বাড়িগুলোর দিকে । আশা , কোন রাত জাগা ছেলের দেখা পাওয়া ! যদি কোন বাড়ির বারান্দায় আমার মতই রাতজাগা কেউ জেগে বসে থাকে । অল্প বয়সী উড়ু উড়ু মন । কখন কি চায় সেই জানেনা। বান্ধবীদের কেউই প্রেম শুরু করতে পারেনি এখনো।
তবে ইচ্ছার কোন কমতি ছিল না কারো মধ্যেই ।
এভাবে দেখতে দেখতে আচমকাই ফাস্ট ইয়ার ফাইনাল চলে আসলো । অথচ কিছুই তখনও পড়া হয়নি। পরীক্ষার আগেরদিন সন্ধ্যায় বই খুলে দেখি চোখের সামনে সবকিছু নতুনের মতো ঝকঝকে । কিচ্ছু পড়া হয়নি।
কাল পরীক্ষার খাতায় যে কি লিখব জানিনা। টেনশন শুরু হয়ে গেল । জীবনে কখনো ফেল করার মতো দুসসময় আসেনি । এখন যেন সেই আলামতই চোখের সামনে দেখতে পেলাম । সন্ধ্যার দিকে বই নিয়ে বসে কিভাবে কি করা যায় চিন্তা ভাবনা করছি এর মধ্যে কলিংবেল বেজে উঠল ।
দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললাম । দেখি নুরজাহান । শারলিদের বাসার কাজের মেয়েটা । কি ঘটনা জিজ্ঞেস করাতে বলল, খালাম্মা খালুজানরে নিয়া মাদ্রাজ গেছে। আফা আপনারে আমার সাথে নিয়া বাসায় যাইতে কইছে ।
চলেন । আমিতো পড়লাম মহা টেনশনে । কাল পরীক্ষা । আর এখন ওর বাসায় যাওয়া মানে পড়ার মুখে আগুন। যদিও ওর বাসা খালি শুনে মনে মনে একটা লাফ দিয়ে উঠলাম।
সারারাত একসাথে বসে আড্ডা মারা যাবে । তারপরেও পরীক্ষার চিন্তাটা মনের মধ্যে কাঁটা হয়ে খচখচ করতে লাগলো । যাই হোক শেষ পর্যন্ত আড্ডারই জয় হল ।
কিন্তু বাসায় কি বলা যায় ?
আম্মাকে বললাম সারলির সাথে রাতজেগে পরীক্ষার পড়া পড়বো । এ ও বলে গেলাম যে রাতে ওর বাসাতেই থাকবো ।
একসাথে বসে পড়লে প্রিপারেশনটা ভালো হবে । এটা বলেই বই খাতা নিয়ে নুরজাহানের সাথে রওনা দিলাম । আর আমার ভালমানুষ মা সরল মনেই কথাগুলো মেনে নিল ।
এখানে বলে রাখা ভালো যে শারলিদের বাসা আমাদের বাসার খুব কাছেই। পায়ে হেটেই যাওয়া যায়।
তো পাঁচ সাত মিনিটেই ওর বাসায় পৌঁছে গেলাম । ঢুকেই দেখি এলাহি কাণ্ড । কম্পিউটারে ফুল ভলুমে গান চলছে । গানের শব্দে কেউ কারো কথা শুনতে পারছিনা।
শারলি ও শশী কেউই পড়ার টেবিলের ধারেকাছেও নেই।
আমি আর কি করা। পড়ার টেবিল লাগোয়া চেয়ারটাতে গিয়ে বসলাম ।
বরাবরের মতই সারলি খাটে বসা। সারলি খাটে বসেই পড়ে সাধারণত । এখানে একটু বর্ণনার প্রয়োজন বোধ করছি।
আমাদের বান্ধবীদের মধ্যে স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে সারলি দ্বিতীয় স্থান অতি গর্বের সাথে ধরে রেখেছে । প্রথম স্থান লিমির। সারলি আশি কেজির নিচে না। উপরেও হতে পারে। যাই হোক।
আমাকে আর বাকি কজনকে সাধারণের পর্যায়ে ফেলা যায়।
তো যা বলছিলাম। সাস্থের কারনেই সারলির এই বিছানা প্রীতি । মেলিয়ে ছড়িয়ে বসতে না পারলে ওর কেন যেন ভালোই লাগেনা। তো পূর্বের কথায় ফেরত আসি।
আমি চেয়ারে বসে সবে মুখের সামনে বই খুলে ধরেছি তখন সে বালিশের চিপা থেকে কতগুলো সিডি বের করে আমার দিকে ছুড়ে মারল । আমি সিডি গুলো হাতে নিয়ে দেখি পরিবারের লোকজন নিয়ে দেখা যায়না এমন কিছু নিষিদ্ধ ছবি । ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখে চাপা মিচকা হাসি।
এখানে বলে রাখা ভালো যে অকালপক্বতার ব্যাপারটা আমার ছোটভাইয়ের মধ্যে আমার অনেক আগেই বিকাশ ঘটালেও সময় ও সুযোগের অভাবে আমি পুরোটাই পেছনে পড়ে আছি এই বিষয়ে। জ্ঞান আহরণের ইচ্ছাযে কখনোই ছিলনা তা বলবনা ।
তবে মেয়েমানুষ বলেই হয়তো সুযোগ হয়ে ওঠেনি কখনো।
তাই বান্ধবীর এই অসাধ্য সাধনের গুণে আমি রীতিমত মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কোথায় পড়াশুনা কোথায় কি ... কতক্ষণে এই গুঢ় রহস্যের উদ্ঘাটন করা যায় তাই নিয়েই তখন চিন্তাভাবনা করছি। এইসব জল্পনাকল্পনার মধ্যে সারলি জানালো সমস্যার কথা। সিডি দেখতে হলে কমপিউটার চাই ।
কম্পিউটার আছে শুধুই সারলির ছোট ভাই শশীর ঘরে। সে তার ঘর ছাড়বে এমনটা মনে হয়না।
যাইহোক ... আমি শুরু হয়ে গেলাম অসাধ্য সাধনে । শশীকে পটানোর কাজে । শারলির ছোট ভাই শশী আমার কথা মোটামুটি ভালোই শোনে ।
তাই যখন তাকে বললাম দুই দুইটা নতুন গেমস এর সিডি গিফট করব এবং আইসক্রিম খাওয়াবো তখনি শুধুমাত্র সে তার ঘর ছাড়তে রাজি হল । তারপরও ঘ্যানঘ্যান করতে লাগলো সে কোথায় ঘুমাবে এই কথা বলে। আমি তখন শশীকে বললাম আন্টির ঘরে গিয়ে টিভি দেখতে এবং ঘুম আসলে ওঘরেই ঘুমাতে । কারনটা জানতে চাইলে বললাম আমরা ওর কম্পিউটারে মুভি দেখবো সারারাত। এটা অবশ্য বললাম না কি ধরনের “মুভি” ।
যাই হোক ফিল্ড খালি হওয়ার সাথে সাথেই আমরা কাজে লেগে পড়লাম। দরজা জানালা বন্ধ করে বহু আকাঙ্খিত নিষিদ্ধ বিনোদন চালু করে দিলাম। কাহিনী ও চিত্রনাট্য খুব একটা উন্নতমানের না হওয়ায় ঝড়ের বেগে কাহিনী সরাসরি একশান সিনে চলে গেল। আমরা দুই বেচারা নাদান বাচ্চা এই কীর্তিকলাপ ও লম্ফঝম্ফ দেখে পুরাই ঘাবড়ে গেলাম। সারলির পতিক্রিয়া দেখে মনে হল সে এই জিনিস আগেও দেখেছে।
তাই ও মোটামুটি স্বাভাবিক ই আচরণ করতে লাগলো। এদিকে আমার তো কালো ঘাম ছুটে গেল। পুরাই ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম। ঘোর যখন কাটল দেখি ঘড়িতে রাত চারটা বাজে। মনে পড়ে গেল পরীক্ষার কথা।
কিছুই পড়া হয়নি এখনো। সারলির দিকে চেয়ে দেখি সে ওখানের বিছানাতেই ঘুমানোর পাঁয়তারা করছে। আমি কোনমতে টলতে টলতে ওর ঘরে গিয়ে বিছানায় ঝাপিয়ে পড়লাম। বাকিরাতটা ঘুম হল বললে ভুল হবে। যা হল তার নাম দুঃস্বপ্ন ।
আবোল তাবোল অনেক কিছু দেখলাম ঘুমের ঘোরে । যেই মানুষ আমি সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারি না সহজে সেই আমিই ভোর ছয়টা বাজে জেগে উঠলাম । একে তো রাতে না খাওয়া তার ওপর আবার না ঘুমের কারনে সারা শরীর তখন আমার থরথর করে কাপছে। কোনরকমে বইখাতা ব্যাগে ভরে মনেমনে সারলিকে একটা গালি দিয়ে ওর বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।
বাসায় ফিরে কোনরকমে বিছানায় উপুড় হয়ে দিলাম আর এক ঘুম।
আম্মার ডাকাডাকিতে একসময় ঘুম ভাঙল । উঠে দেখি আটটা বাজে। প্যারাসুট নারকেল তেলের বোতলের অর্ধেকটা খালি করলাম মাথায়। গোসল করে একটু কিছু মুখে দিয়ে ছুটলাম কলেজের দিকে । পরীক্ষার হলে আমার পিছনেই সারলির সিট ছিল।
ওর দিকে একবারের জন্যও তাকালাম না। প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে দেখি চোখের সামনে সবকিছু নাচানাচি করছে। মাথাটা হঠাৎ একটা চক্কর দিয়ে উঠল। চোখে অন্ধকার দেখলাম। মনেমনে ব্যাপারটার জন্য সারলিকেই বারবার দায়ী করলাম ।
এরপর একসময় পুরো সাদাখাতা সাদা রেখেই ঘণ্টা পড়ার অনেক আগেই হল থেকে বের হলাম। বের হয়েই সারলির মুখোমুখি পড়লাম। মুখ থেকে তখন সশব্দেই গালিটা এবার বেরিয়ে আসলো। ওর দেখলাম কোন ভাবান্তর হলনা। এরপর একে একে সবগুলো বান্ধবী বের হয়ে আসতেই গর্বমাখা বীরত্বের সাথে সারলি রাতের ঘটনা সবাইকে বলল ।
সাথেসাথেই একটা হইহই শুরু হয়ে গেল সবার মধ্যে। কতক্ষনে তারা সারলির বাসায় যাবে এবং এই জিনিস দেখবে। বাধ্য হয়ে আমাকেও দলে যোগ দিতে হলো ।
আমাদের বান্ধবীদের মধ্যে একজন ছিল হুজুর । হিজাব করে ।
সাজগোজের ধারেকাছেও যায়না । মজার ব্যাপার হল , শুরুথেকে তার উৎসাহই দেখা গেল সবথেকে বেশি ।
যাইহোক , তারপরের ঘটনা খুবই সামান্য । ছবি শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের মাথায় আমাদের হুজুর বান্ধবী ওয়াক ওয়াক করতে করতে বাথরুমের দিকে ছুটল । আর আমার বেলায় দ্বিতীয়বার দেখার সময় এক এক জনের অদ্ভুত অদ্ভুত সব রসিকতা আর মন্তব্যে অসস্থির জায়গায় হাসিই পেতে লাগলো।
আর এদিকে পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট হলে দেখা গেল আমি ইংরেজিতে ফেল করেছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।