.অহেতুক এই জীবন যাপন... প্রথমবার ব্লগ লিখছি। তাই নিজেকে কেটেকুটে দেখতে পাচ্ছি : এ আমার অহেতুক জীবন যাপন ।
ফিরে দেখি আমার শৈশব। সবুজ ঘাস আর ঘিয়ে মাটির দেয়াল ঘেরা ছোট্ট একটি রাজ্য। আমার গ্রাম।
আমার বাড়ী। আমার চৌকাঠ পেরুলেই আমার রাজ্য শুরু। আমবাগানে ছোট্ট পায়ে কাঠবিড়ালীর পিছে পিছে কেওড়া বনের দিকে তাকিয়ে থাকা। কোথায় হারাল বড় লেজের কাঠবিড়ালীগুলো! ইদুরমুখো প্রাণীগুলোর চোখেমুখে লেগে থাকা কৌতুহল বড়ই বিস্ময় তখন।
সেই শৈশবের কাঠবিড়ালীর মতই এখন আমি হাজারো কৌতুহল নিয়ে জীবন যাপন করি।
আমার ছোট্ট রাজ্য থেকে সেই কবে বিতাড়িত হয়েছি তা মনে নেই।
বীরশেষ্ঠ মতিউর আমার স্বপ্ন পুরুষ হয়েছিল তারপর। সেই কাগজের প্লেন বানাতে শেখা। নিজের বানানো প্লেন আকাশে উড়িয়ে দেওয়া। আহা! মতিউর হব।
প্লেন ওড়াব আকাশে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে আবার সে দেশ থেকে আরো অনেক দেশে। ভয় কি মরণে!
মুরুব্বী কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতাম সেই স্বপ্নের খবর। লাজুক ভঙ্গিমায় বলতে হত মতিউর হব। বাবার সে কি হাসি।
আরো একটু বড় হলে ক্লাসে শিক্ষককে বলতে হল পাইলট হব।
আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা মুখস্ত করতে গিয়ে হারিয়ে ফেললাম আমার সেই মতিউর হবার স্বপ্ন। মুখস্ত বিদ্যা গড়গড়ে উগরে দিয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখতে শুরু করলাম শিক্ষক হতে চাওয়ার যুক্তি- তক্ক। বাংলায় ১০০ তে ৯৮।
বাহ! বাহ্বা দিল মুরুব্বীগণ।
বাবার স্বপ্ন ছেলে বড় হয়ে ম্যজিষ্ট্রেট হবে। টিএনও হবে। ডিসি হবে। কিন্তু শিক্ষক হওয়া যাবেনা। আমার শিক্ষক বাবা কি যে বুঝেছিল তখন।
বোধ হয় শিক্ষক হওয়া কোন নিদারুণ যন্ত্রণা। অভাব অনটন আর ঋণখেলাপী শিক্ষক বাবার চোখ চিক্ চিক্ করে ওঠা দেখতাম মাঝেমধ্যে। সেই হাহাকার আমার আজ ও থামেনা।
এখন আমি অহেতুক জীবন যাপন করছি।
অথচ নব্বই দশকের মনের মুকুরে প্রচারিত: সংশপ্তক নাটকের কুশীলবে কান কাটা রমজান আমার স্বপ্ন বদলে দিল।
তারপর টিভি নাটক পরিচয় করিয়ে দিল আবদুল্লাহ আল মামুন, মামুনুর রশীদ, মমতাজ উদ্দীন আহমদ, হুমায়ুন আহমেদ সহ প্রথিতযশা নাট্যকারদের। আমার চেহারা নায়কের মতন নয় কোন দিনই। তাই ভিলেন চরিত্র আমাকে টেনে নিয়ে গেল শিল্পকলা একাডেমীর নাট্যকলা বিভাগে। বুকের ভিতর স্বপ্ন দানা বাধতে থাকল হুমায়ুন ফরীদির মত কান কাটা রমজান হবার। তারপর একসময় এমচার থিয়েটার এর সাথে জড়িয়ে যাওয়া।
মফস্বল থেকে ঢাকায় বড় দলে কাজ করতে যাওয়া। কত বড় স্বপ্ন ! নাট্যকার হব। মৌলিক নাটক দিয়ে দেশে নতুন ধারা তৈরি হবে। বাংলার মঞ্চ বিশ্ব বিখ্যাত হবে।
সে সবই হচ্ছে।
বাংলার মঞ্চ দ্রুতই এগুচ্ছে। কিন্তু আমার কিছুই হওয়া হলনা। বাবা শিক্ষকতা থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিলেন অনেকটা বাধ্য হয়েই। শেষ অবলম্বন রইলাম আমি। ঘরের খেয়ে বনের মশা তাড়ানোর কাজে ইস্তফা দিলাম।
আমি এখন অহেতুক জীবন যাপন করি। এতে কারও বিচলিত হওয়ার কিছু নাই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।