অলস মস্তিস্ক বহু বান্দরামীর উর্বর ভূমি এফ ১৫ ঈগল (F-15 Eagle) ২ ইন্জিনের একটা ট্যাকটিকাল এয়ার সুপিয়রটি ফাইটার। যা বর্তমানে ইউএস এয়ারফোর্সের প্রধান এয়ার সুপিয়রটি ফাইটার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা ইউএস এয়ারফোর্সে এফ ১৫ কে সবচেয়ে সাকসেসফুল বিমান হিসাবে গন্য করা হয় । ইউএস এয়ারফোর্স এই বিমানকে আগামি ২০২৫ সাল পর্যন্ত ফ্লিটে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই ফাইটার এর ডেভলপমেন্ট বেসিক্যালি শুরু হয় ১৯৬০ এর দশকে।
সেসময় আমেরিকানরা ভিয়েতনাম আর কোরিয়ান যুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরে বুঝতে পারে তাদের ফাইটার ফ্লিটের দুর্বলতা গুলোকে। কারন ছিলো সোভিয়েতদের দ্রুত গতির মিগ আর স্যাম সাইটের ভয়াবহ আগ্রাসন আমেরিকান ফাইটার ফ্লিট কে বেশ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়। এই অবস্তায় আমেরিকা ১৯৬৯ সালে নতুন ফাইটার তৈরির জন্য কঠোর গোপনীয়তার "এফএক্স" নামে একটা প্রোগ্রাম হাতে নেয়। এখান থেকেই হেভিয়েট ফাইটার হিসাবে এফ ১৫ এবং লাইট ওয়েট ফাইটার হিসাবে এফ ১৬ এর ডিজাইন হয়।
এফ ১৬ এর ডিজাইন করার সময় ইউএস এয়ার ফোর্সের একটা ইন্টারনাল মেজারমেন্ট ছিলো যে তারা কি চায় এই বিমানের কাছে ।
সে হিসাবে তারা এটা তৈরির দায়িত্ব দেয় তৎকালীন ফাইটার মাফিয়া বলে পরিচিত ২ কোম্পানি General Dynamics এবং Northrop এই শর্তে যে বিমান ইউএস এয়ার ফোর্সের পরীক্ষায় পাশ করবে সেটা সিলেক্ট হবে।
কিন্তু এফ ১৫ এর ক্ষেত্রে ইউএস এয়ার ফোর্স বিপদে পড়ে কারন তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলো নাহ তারা আসলে কি চায় এই বিমানের কাছে। এই অবস্থায়ই তারা ৩ টা কোম্পানি ( Fairchild Republic, North American Rockwell আর McDonnell Douglas )থেকে প্রাইমারি প্রোপজাল পায়। এর পরে McDonnell Douglas কে এই বিমানের দায়িত্ব দেয়া হয়।
এফ ১৫ এর দায়িত্ব পেয়ে কাজে নেমে যায় McDonnell Douglas।
১৯৭২ এর জুন নাগাদ তারা 71-0280 নামে সিন্গেল সিটের একটা প্রোটোটাইপ কমপ্লিট করে এবং তা সাবমিট করে ইউএস এয়ার ফোর্সের কাছে। এই প্রটোটাইপ কে পরে ইউএস এয়ার ফোর্স তাদের পরবর্তি এয়ার সুপিয়রটি ফাইটার হিসাবে ঘোষনা করে। ১৯৭৬ সাল নাগাদ এই বিমান সার্ভিসে আসে।
ম্যাকডোনালন্ড এফ - ১৫ ঈগলকে বানাতে নিজেদের পুরা ঢেলে দিয়েছিলো। এফ ১৫ ঈগল এর বডি ফুল মেটাল সেমি মোনোকিউ (Monocoque) প্যাটার্ন এর ।
এর ফলে এই বিমান "জি" লেভেল এ কিছুটা সুবিধা পেত তৎকালীন বিমান গুলোর তুলনায়। পরে আরো মডিফিকেশন এর ফলে বর্তমানে এই বিমানের টলারেবল "জি " লেভেল ৯।
এটাতে ব্যবহার করা হয় Pratt & Whitney F100 axial-flow turbofan যা ছিলো ইউএস এয়ারফোর্সের প্রথম axial-flow ক্যাপাসিটি সংম্বলিত জেট ইন্জিন ।
এফ ১৫ এ ফিক্সড ইন্টারনাল গাইডিং সিস্টেম ইনক্লুড করা হয় । যা পাইলট কে ফ্লাইং , সিলিং লেভেল এর ব্যাপারে গাইড করতো কিছু ক্ষেত্রে এটা নিজে কিছু ডিসশন নিত।
এই সুবিধা টা পরে এফ ১৫ বিমান গুলোর জন্য ভালো ঝামেলা হয়ে দাড়ায় কারন বিমান গুলোর কিছু পারফরমেন্স বা ম্যানুভার গুলো এই সিস্টেম এর সাথে সাংঘর্ষিক। সেই ম্যানুভার গুলোতে এই সিস্টেম পাইলট কে বাধা দিত এর ফলে অনেক দক্ষ পাইলট আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এফ- ১৫ এর উপর। পরে এই সিষ্টেম কে অপশনাল করে ঝামেলা মিটায় ইউএস এয়ার ফোর্স।
এফ - ১৫ এর এভিয়েশন এ এফ ১৬ এর মত রাডার কন্ট্রোল হিসাবে প্রথমে ব্যবহার করা হয়েছিলো "লংরেন্জ অন বোর্ড কন্ট্রোল রাডার" পরে এটাকে রিপ্লেস করে Phased array মানের Raytheon AN/APG সিরিজের রাডার দিয়ে। যার দ্বারা এই বিমান Beyond-visual-range ফাইটার এর যুগে প্রবেশ করে।
টোটাল স্পেফিকেশন :
পাইলট : ১ জন বা ২ জন
লেংথ: ৬৩ ফিট ৯ ইন্চি
উইং স্প্যান : ৪২ ফিট
শক্তির উৎস: 2 × Pratt & Whitney F100 সিরিজ টার্বোফ্যান
পারফরমেন্স -
সর্বচ্চো গতি :
হাই অলটিটউড : ম্যাক ২.৪ (২৫০০ কি.মি./ ঘন্টা)
লো অলটিটউড : ম্যাক ১.২ (১৪০০কি.মি./ঘন্টা )
রেন্জ :
কমব্যাট রেন্জ :১৯০০ কি.মি.
ফেরি রেন্জ : ৫৫০০ কি.মি.
*সার্ভিস সিলিং : ৬০০০- ৬৫,০০০ ফিট
আর্মামেন্ট :
*৯৫০ রাউন্ড সহ একটা ২০ এমএম M61 Vulcan 6-barreled gatling cannon
* ১১ টা হার্ড পয়েন্টে যার মাঝে ফিক্সড ২ টা এয়ার টু এয়ার (AIM Sparrow সিরিজ )মিসাইল বাকি ৯ টায় যখন যা লোড করা হয়।
[img|http://ciu.somewherein.net/ciu/image/50488/small/?token_id=a68315aa63038e295fdae144ca14d515
বর্তনামে এফ - ১৫ এর অন্যতম ঝামেলা এর বডি শেপ। বিভিন্ন সময়ে এই বিমানের বিভিন্ন স্টাকচারাল ডিফেক্টস ধরা পড়ে যার অধিকাংশই সারানো সম্ভব হয়নি।
আর এই বিমানের মেইনটেইন্যান্স কষ্ট ও মারাত্বক রকম হাই । বলা হয় একটা এফ - ১৫ এর মেইনটেইন্যান্স কষ্ট এর ১২ টা এফ ১৬ এর মেইনটেইন্যান্স কষ্ট এর সমান।
১৯৮২ এর দিকে কেজিবি এর এক এজেন্ট এর মাধ্যমে এফ-১৫ এর স্ট্যাকচারাল আইডেন্টিফিকেশন সোভিয়েত পেয়ে যায়। পরে যা ব্যবহৃত হয় তাদের স্যামসাইট আর মিসাইল ডেভলপমেন্ট এ।
বিশালাকার এই বিমান এর তুলনায় এর ম্যানুভারিং পারফরমেন্স বেশ খারাপ।
এফ - ১৫ এর ইউজার খুবই হাতেগোনা । ইউএস মাত্র কিছু দেশের কাছে এই বিমান বিক্রির ফলে এই বিমানের সমস্যা গুলার ব্যাপারে তেমন ভালো ইনফো বাইরের দুনিয়াতে আসে নাই ।
তবে ইউএস এয়ারফোর্স এই বিমানকে আগামি ২০২৫ সাল পর্যন্ত ফ্লিটে রাখার সিদ্ধান্ত দেখে ধরনা করা যায় এই বিমান এখনো ইউএস এয়ার ফোর্সের কাছে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য।
ফাইটার এয়ারক্রাফট এর উপর আগের পোষ্ট গুলো :
এফ - ১৬ ফাইটিং ফ্যালকন
মিগ ৩১ ফক্সহাউন্ড - আইকন ইন্টারসেপ্টর ফাইটার
" মিগ ২৫" "ফক্সব্যাট" - স্নায়ু যুদ্ধের সোভিয়েত কিংবদন্তি
মিগ ২৯ - সোভিয়েত স্টেট ওফ আর্ট ফাইটার
আমেরিকান স্টেলথ ফাইটার : লকহিড মার্টিন এফ ২২ র্যাপটর (Lockheed Martin F-22 Raptor)
কিংবদন্তী জেট ফাইটার - মিগ -২১
আমাকে বার বার গুতা দেবার জন্য আমাদের ব্লগার কালীদাস (স্যার) কে আমি আমার এই পোষ্ট উৎসর্গ করিলাম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।