বিভ্রান্তির মাঝে বাস , অনেক আগেই ঘটে গেছে চরম সর্বনাশ । উৎসর্গ - ( গল্প - কবিতা ত বটেই , যার ফেসবুক স্ট্যাটাস এ প্রায়ই মুগ্ধ
হই , ভাবি এত চমৎকার করে কিভাবে ভাবতে পারে লোকটা !
প্রিয় ব্লগার নোমান নমিকে । )
এই রিক্সাওলা শুয়োরের বাচ্চারা রোদ একটু বাড়লেই দাম চড়িয়ে দেবে ! ডেকচির চাইতে ডাকনির তেজ বেশি , রোদের চাইতে ভাড়ার টাকার তেজ হুদা সাহেবের হৃদপিণ্ড সিদ্ধ করে ফেলল । ৩০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা ! কি ডাকাত! । আসমান ফেটে চামড়া পোড়া গরম নেমে না আসলে , আশেপাশে রিকসা - সিএনজির আনাগোনা থাকলে , হুদা সাহেবের বিবাহ - বার্ষিকী আজ না হলে এবং এ উপলক্ষে তার হস্তিনী অর্ধাঙ্গিনীর
পরিবারের সবাই মিলে দুপুরে খাওয়ার হুমুকত জারি না করলে - ব্যাটার গালে ৮০ সিক্কার থাবড়া লাগিয়ে বুঝিয়ে দেয়া যেত ভাড়া বলে কাকে !
ঠেকায় পড়ে রিক্সাতে উঠলেও ভাড়ার অঙ্কটা হুদা সাহেবের হৃদপ্রকোষ্ঠে মাছের কাটা হয়ে অবিরাম খচখচ করতে থাকে ।
হুদা সাহেব বলে উঠেন , এ জুলুম , এ টাকা হারাম ! তোর পেটে এমন টাকা সইবে না ! রিক্সাওলাও কম কি , গণতন্ত্রের জামানা - হুদা সাহেব ও রিক্সাওলা উভয়ে সমান সমান এক ভোট , প্যাসাঞ্জার যদু , মধু , রাম সাম বলে যাবে আর রিক্সাওলা হুক্কা - হুয়া রবে সায় দিতে যাবে কোন দুঃখে ! হুদা সাহেবের বাউন্সারে রিক্সাওলার সপাটে পুল চালাতেও তাই দেরি হয় না , ''আপনেরে ত আমি জোর কইরা উঠাইনাই , নিজ থিকাই উঠছেন , আর হারাম যদি হজম না অয়ত , তাইলে এত বিল্লিং উডে ক্যামনে , এত গাড়ি চলে ক্যামনে !
এভাবে মুখের উপর জব্দ হয়ে হুদা সাহেবের মন কিছুটা খারাপ হলেও রিক্সাওলার মুখের দিকে তাকিয়ে তা দ্রুত কাটিয়ে উঠলেন । গাল টা খুব ভাঙ্গা , যেন ট্রেন্স , এমনি ট্রেন্স যে নির্ঘাত দেড় সের চাল গালের পরিখায় এটে দেয়া যাবে । শুধু কি তাই ? চোখের মণি দুটো কেমন কুয়োর তল , নোংরা - কালো ময়লা , ভাঙ্গাচুরা ।
এমন চেহারার উৎস কোথায় হুদা সাহেবের তা জানা থাকলেও পুলিশি কায়দায় তা উদঘাটনে তিনি দেরি করেন না , '' তুই নিশ্চয়ই গাজা খাস '' ?
হ । - প্যাডেলের চাকার বেগের সাথে ' হ ' শদটাও ফুস করে বেরিয়ে আসে ।
রহস্যভেদের আনন্দে হুদা সাহেব রিক্সাওলাকে আরো চেপে ধরেন ,'' তা ত দেখেই বুঝা যায়! তোর বউ কিছু বলে না ?
রিকশাওলার দাত বেড়িয়ে আসে । '' বউ কইব কি , মাইরা ভাগাই দিছি ! গাজা লইয়া কতা কইছিল একদিন , দিছি এক্কেরে ! গাজার কাছে বউ কি !
- তোর ছেলেমেয়ে কয়টা ?
আবারো রিকশাওলার হাসি । পোলা কয়ডা নিজেও কইতারি না । বিয়া ত করছিলাম ৫ ডা , অহন এক বউ ও নাই । পোলা রা আছে মনে অয় যার যার মার লগে ।
আবারো রিকশাওলার হাসি । পোলা কয়ডা নিজেও কইতারি না । বিয়া ত করছিলাম ৫ ডা , অহন এক বউ ও নাই । পোলা রা আছে মনে অয় যার যার মার লগে ।
এরপর এমন বদখত থার্ডক্লাস রিকশাওলার সাথে হুদা সাহেব কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন ।
বলবেনই বা কি ! '' এই জাত খারাপের শেষ ! তোরা কি করস তা আমি জানি না ! - হুদা সাহেব
মনে মনে বলেন । '' শালারা এক দিন রিকশা চালাবি ত দশ দিন মটকা মেরে ঘরে পড়ে থাকবি , বউয়ের কামানি খাবি । মদ খাবি , জুয়া খেলবি , সুযোগ পেলেই পাবলিকের গলা কাটবি , হারামির বাচ্চারা ! ''
কবে এরা মানুষ হবে ? অথচ তার তার ছোট ছেলের কিডনি নষ্ট হলে , উত্তর - দক্ষিণ , পূর্ব - পশ্চিম দৌড়িয়েও কারো কিডনি ম্যাচিং হচ্ছিল না , তিনি নিজেই টেস্ট করালেন । আল্লাহর অসীম দয়ায় কিডনি ম্যাচিং হলে , তিনি দেরি করেন নি । কিডনি দিতে হুদা সাহেবের মা মানাও করেছিলেন ।
'' আল্লাহর নামে কসম কর , তুই কিডনি দিতে পারবি না , তোর ত আর ও ২ টা ছেলে আছে , ১ টা গেলে যাক , পোলা যখন - তখন হওয়ানো যায় । '' জীবনে সেই প্রথম তিনি মার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে কথা বলেছিলেন । বিয়ের পরের দিনগুলো ও কি ভুলবার ! শাদীর ৬ মাসের মাথায় ব্যবসায় লস খেয়ে বউ শিরিন কে নিয়ে কত বেলা তিনি না খেয়ে থেকেছেন । মুখে আলুর ভর্তা গুজে দিয়ে চলেছেন সপ্তাহের পর সপ্তাহ । কই তিনি ত বলেন নি , যা তোর বাপ থেকে টাকা আন ! এর পর যখন খোদার ফজলে চাকরি হল , টাকা - টুকা অনেক হল , তিনি কি চাইলে আরো বিয়ে করতে পারতেন না ? হারামখোর রিকশাওলার মত ? তার চেহারার জৌলুস কি কম ছিল তখন ? শিরিনের মত দামড়া ধুমসী কে পাছায় লাথি মেরে বের করে দিলে কে কি বলত ! কি আশ্চর্য ! রিকশাওলার সাথে এতক্ষণ নিজেকে তুলনা করছেন বলে হুদা সাহেব লজ্জিত হলেন ।
কই কলার কান্দি , কই ইন্দিরা গান্ধী !
এইসব লোক খারাপের একশেষ ! আজীবন বদমাশ থেকে যাবে , জীবনে ও ভালো হবে না । । আসলে ভালই বা কে আছে ! এই দেশে সব চোর - চাটটা , দেশ টারে খেয়ে খেয়ে সব ছিঁড়ে -ছোবড়া করে ফেলল ! এই হারামখোর রিকশাওলা কি জানে রাস্তায় বাহাদুরি করা অমন দশটা মার্সিডিজ তিনি চাইলেই নামাতে পারেন ।
সরকারী চাকরির এমনি বদনসিব যে , তাকে ফকিরের মত রিকশায় চড়তে হয় ,আরাম করব খালি শালার বসেরা ! একেকটা খেয়ে খেয়ে দেশের থালা কানা করে ফেলল !
ভাগ্য ভাল বড় ছেলেটাকে আগেই আমেরিকা পাঠিয়ে দিয়েছি্ , রিটায়ার করা মাত্রই হোল ফ্যামেলি আমেরিকায় চলে যেতে হবে , এ দেশে থাকা মানে ভবিষ্যৎ নেই । কিভাবেই বা হবে ? আলো বাতাস পর্যন্ত ঠিক নাই দেশটার ।
তার বড় ছেলে ঠিকই বলে , বাঙ্গালীর সভ্য হতে আরো ৫০০০ বছর লাগবে !
এসব সাত - পাঁচ ভাবতে ভাবতে হটাত ৭ হাত দূরে থাকা রাস্তার কিনারার একটা জটলার দিকে হুদা সাহেবের দৃষ্টি গেল । আরো কাছে আসতেই তিনি দেখতে পেলেন ,
হাটু ভাজ করে রাস্তায় শুয়ে আছে একজন লোক , সম্ভবত অজ্ঞান , নাকি মারা গেছে ? । তার মাথা হতে রক্তের একটা ক্ষীণ ধারা কিছুদুর পর্যন্ত গিয়ে পিচডালা রাস্তা নোংরা , চটচটে করে রেখেছে ।
লোকটাকে গোল করে ঘিরে আছে একদল মানুষ , এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এই লোকটাই একমাত্র দর্শনীয় বস্তু । জটলার কাছাকাছি গিয়ে রিকশাওলা রিকশা থামিয়ে ফেলল ।
কি হল ? ঘটনা কি ? লোকটা কে ? - রিকশাওলাকে পুলিশ কনস্টেবলের সুরে জিজ্ঞেস করলেন হুদা সাহেব , যেন রিকশাওলাই সব জানে !
ক্যামনে কমু আমি ! - রিকশাওলার কণ্ঠে বিরক্তি , রিকশাটা রাস্তার কিনারায় আরেকটু সরিয়ে রেখে - দেহি , আপনে খারান একটু - এ কথা বলেই রিক্সাওলা জটলার ভিতর চটপট ঢুকে গেল ।
হুদা সাহেব কিছু বলার ও সুযোগ পেলেন না ।
কি অবস্থা! একজন লোক রাস্তায় এভাবে শুয়ে আছে কেউ দেখার নেই ! আর লোকগুলো বা কেমন ! হাভাতের মত তাকিয়ে আছে । এতগুলো লোক , একজনও কি লোকটাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে পারল না ? দেশ থেকে কি মানবতা উঠে গেল ?কই যাচ্ছে দেশ! !
হুদা সাহেবের আক্ষেপে রাস্তার বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকা কাকেরাও কা কা করে উঠল ।
একটু পর রিকশাওলা ফিরে এল ।
তার চোখটা চক চক করছে দেখেই কিনা হুদা সাহেবের হাতের চকমকে ঘড়ির দিকে চোখ গেল এবং সেই সাথে সময় দেখে হোক অথবা অর্ধাঙ্গিনীর আগাম শাসনকম্পের ভয়ে হোক হৃদযন্ত্রটা এক লাফে গলার কাছে এসে যেন আটকে গেল । হুদা সাহেবকে আরো বিব্রত করার আয়োজন সম্পন্ন করতে তার নোকিয়া মোবাইলে মিসেস হুদার কর্কশ মিসকল জুড়ে বসল । ঢোক গিলতে চেয়েও পারলেন না তিনি ।
-তাড়াতাড়ি চল । - হুদা সাহেব তাগাদা দেন ।
লোকটা বাইচা আছে ! হাত দেখছি ! - রিকশাওলার কণ্ঠে উল্লাস ।
-আরে তাড়াতাড়ি যাও , পা চালাও ! -
- আপনে নামেন , বেডারে হাসপাতালে নেওন লাগব ।
- মানে ? আমি কই যাব ?
-আপনে আরেক রিকশা লইয়া যান , অহন নামেন ।
- কি না কি আকাম - কুকাম করছে এই লোক তুমি জান ? এসব নিয়া থানা পুলিশ হইতে পারে , তোমারে জেলেও ঢুকিয়ে দিতে পারে , একবার হাঙ্গামায় পড়লে তোমার কোন বাপ - ভাই তোমারে নিয়া দৌড়াবে ?
- যা অইব আমার অইব । আপনের কি ? আপনে নামেন ।
আমি কিন্তু ভাড়া দিব না , এখানে নামলে ।
আমি কি আপনের কাছে ভাড়া খুজছি ? তাড়াতাড়ি নামেন দেহি -
তারপর বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ডের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আজমল হুদা সাহেবের অবয়ব রাস্তায় ছোট হতে হতে মিলিয়ে গেল । হারামখোর রিকশাওলাকে দেখা গেল
মায়াময় পরীর মত উড়ে যেতে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।