আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্দয় ছেলেটি ... এবং অতঃপরঃ

ভাললাগে ক্রিকেট(বাংলাদেশ) , ফুটবল(ব্রাজিল) , টেনিস(ফেডেরার) । কবিতা আর ছোট গল্প লেখি । পড়তে ভালবাসি। ভালবাসতে ভালবাসি :) :) রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে , আমি ঘুমিয়ে পড়ছি ... ................................. ওর সাথে আমার প্রথম দেখা ঠিক কবে হয়ছিলো মনে নেই । যেহেতু এই ভালোবাসাটা 'লাভ এট ফার্স্ট সাইট' না সেহেতু প্রথম দেখা নিয়ে অযথা প্যাঁচাল পেড়ে লাভ নেই ।

সে যাই হউক ! এমনি বন্ধু ছিলাম , কখনো মনে হয়নি ওকে জীবন সাথী করবো , ঘর বাধবো, আগডুম বাগডুম ব্লা ব্লা... একদিন ক্লাসে বসে ছিলাম , মোবাইলে একটি প্রেমময় মেসেজ পেলাম ! শেষ লাইনটা মনে আছে , "তোমার চোখে একদিনের জন্য হলেও বাসা বাঁধতে চাই " ভালোকথা , অপরিচিত নাম্বার থেকে কল / ম্যাসেজ আসলে ব্যাক করা ২-৩ বছর আগেই বাদ দিয়ে দিয়েছি । কিন্তু মানুন আর নাই মানুন , কোনো অপরিচিত নাম্বার থেকে ভালোবাসার ম্যাসেজ আসলে মনের মধ্যে খচখচানি শুরু হবেই ( যদি আপনি আমার মতো মহাপুরুষ না হন) । ওইদিন আমি হাল্কাপাতলা মহাপুরুষ ক্যাটাগরিতে ছিলাম , সেজনই দুপুরে ম্যসেজ পেয়ে বিকালের মধ্যে ব্যপারটা পুরোপুরি ভুলে গিয়েছিলাম ...সন্ধ্যায় মগ ভর্তি গরম চা নিয়ে কেবল মাত্র কম্পিউটার টেবিলে বসতে যাচ্ছিলাম এমন সময় চার্জে রাখা ফোনটা বেজে উঠলো , -হ্যালো! হ্যালো ! (নারী কন্ঠ ! উরিব্বাপজ ! ) -কে বলছেন ? চিনতে পারছেন না ? - জি না, কে বলছেন ? কাকে চাচ্ছেন বলুন তো ? আপনি কি সে ? - মানে ? কি বলতে চাচ্ছেন ? স্পস্ট করে বলুন কাকে চান , কেনো করেছেন ? নইলে রাখলাম ! না না! রাখবেন না ! আপনি কি তন্ময় ? -জী আমি তন্ময় , আপনি ? টুট টুট টুট ... জ্বালা! আমার কিসের ঠেকা ? আর কল দেয়ার প্রয়োজন মনে করিনি । কদিন পর আবার কল এলো , এইবার ধরলাম! এইটা আর কেউ না ! আমার একটা হাই হ্যালো বন্ধু দৃষ্টি । ভালো কথা ! এরপরের কাহিনি খুবই সিম্পল , কম বেশি সবাই ই ধরতে পেরেছেন যে তন্ময় আর দৃষ্টি ( অর্থাৎ আমি আর ও ) এমনি বন্ধু থেকে খুব ভালো বন্ধু অতঃপর প্রানের বন্ধু শেষমেশ মন দেয়া নেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি ।

( আসলে কমন বিষয় গুলা রসিয়ে রসিয়ে বলে বিরক্ত করতে চাচ্ছিনা, কি কি হয়েছে অনুমান করে নিন ) তো ! ভালই চলছিলো ! আগেই বলে রাখি ,আমরা কেউই কারো জীবনের প্রথম প্রেম নই। আমি আমার প্রথম প্রেমের অনুভুতি অনেক আগে পার করে এসেছি এবং বিপত্তিটা এখানেই ! আর দশটা সাধারন প্রেমিক প্রেমিকার মতই আমরা চলছিলাম , আমি বরাবরই নিরস নির্দয় কাটখোট্টা প্রকৃতির মানুষ ( আমার লেখা পড়ে এটুকু অন্তত সবাই বুঝে ফেলেছেন ) । দিন যতই যাচ্ছিলো আমার মধ্যে নিঃস্পৃহ ভাব ততই বাড়ছিলো , মেয়েটি তার সর্বস্ব দিয়ে আমাকে ভালোবেসেছিলো তবু কেনো জানি আমি ভেতর থেকে ভালোবাসার কোনো অনুভুতি পাচ্ছিলাম না। এমন কেনো হচ্ছিলো ? খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম কারন , দৃষ্টিকে ভালোবাসার পর থেকে আমি শুধুমাত্র দৃষ্টি-কেন্দ্রিক হয়ে পরেছিলাম । মেয়েটা আমাকে পাগলের মতো চায়... সকল কাজে সারাক্ষণ আমাকে ঘিরে রাখে ... আমার অনেক বন্ধু , সবাইকেই আমি অনেক ভালোবাসি , কিন্তু দৃষ্টি আসার পর থেকে আমি ওদের থেকে অনেক দূরে সরে গেছি , স্বেচ্ছায় না, দৃষ্টি আমাকে পরক্ষ ভাবে বাধ্য করেছে এমন হতে ... প্রেমের বেড়াজালে এক নিঃসঙ্গতা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো ... এরপর ? ? নিজেকে গুটিয়ে নেবার পালা !... সহজ হয়নি বিষয়টি , অনেক অবজ্ঞা অনেক অবহেলায় মেয়েটকে গুড়িয়ে দিতে একটুও বুক কাপেনি আমার ! কিভাবে বলব ? এই ভালোবাসা আমি চাইনি ... সস্তা আবেগে নিজেকে আর জড়িয়ে রাখতে চাই না ... ভেবেছিলাম , মুক্তি পেয়েছি - শান্তির নিদ্রা বেশিদিন স্থায়ী হলনা ... দৃষ্টি এক রাতে পাগলের মতো কল দেয়া শুরু করলো , আমি ধরছিলাম না ... শেষমেশ ধরলাম; গলা জড়ানো কন্ঠে দৃষ্টি বলল, - আমি প্রেগনেন্ট ! চমকে উঠলাম ! ফোনে বললাম -আচ্ছা রাখি, সকালে দেখা করছি ।

সারারাত ভেতরে কালবৈশাখী ঝড় বইলো ... একদিকে অপরাধবোধ , একদিকে অজানা এক ভালোবাসা - মনে হচ্ছিলো 'পিতৃত্ব' নামক অনুভুতিটাই আমার মধ্য প্রকৃত ভালোবাসার অনুভুতি জাগিয়ে তুলেছে ... সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম , কাল সকালেই পালিয়ে যাবো দুজনে , কিছু টাকা আছে জমানো , দু একটা সার্টিফিকেট , সব মিলিয়ে খেয়ে পড়ে দুজন বেঁচে থাকতে পারবো ... এতদিনের চেনা জানা সম্পর্ক থেকে আমি এটুকু নিশ্চিত ছিলাম যে দৃষ্টি আমার সাথে পালিয়ে যেতে কখনোই আপত্তি করবে না , বরং এক পা এগিয়ে থাকবে... সকালে যখন ওর সাথ দেখা হলো দৃষ্টির দৃষ্টিতে তখন কেমন জানি একটা জড়তা ... অপরদিকে আমি নিজের মধ্যে অনেক বড় একটা পরিবর্তন অনুভব করছি , একটা প্রফুল্ল ভাব । দৃষ্টিকে বললাম ,-ভয় কি ? আমার কোনো সমস্যা নেই, দুজন মিলে আজই পালিয়ে যাবো । এবরশনের নামে নিজের সন্তানকে হত্যা করতে পারবোনা আমি। দৃষ্টি তখন উদ্ভ্রান্তের মতো করে বলল, আমাকে ক্ষমা কর ! তোমাকে পাবার জন্য মিথ্যে বলেছি , আমি ঠিকই আছি, প্রেগন্যান্ট নই ...... - ও আচ্ছা ! খুব সাধারন ভাবে গ্রহন করলাম কথাটি , কিন্তু একটু পরে দৃষ্টি যখন আমাকে স্পর্শ করলো , ঘৃণায় হাতটা সরিয়ে নিলাম ! রাগে আমার হাত পা কাঁপছিল ... নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। জানিনা এমন কি হয়ছিলো আমার , দৃষ্টি এমন কোন অন্যায় করেনি , আমাকে পাবার জন্যই সামান্য ছলনা করছিলো ... এতোতুকু... সামানই... কিন্তু এভাবে এই সামান্য ছলনা আমাকে কেনো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলো ? কেউ বলতে পারেন ? দৃষ্টির সাথে স্বাভবিক হবার চেষ্টা করেছি , বহুবার... পারিনি ... আমাকে দিয়ে সত্যিই ভালোবাসা হবে না ... আমি ঘুমোলাম ... আমার এই হৃদয় বড় নির্দয় , তাই ভয় পাবার কোন কারন নেই , নির্দয় এই ছেলেটি আর যাই করুক আত্মহত্যা করবে না .......................................... [ ঘটনা , চরিত্র , স্থান, কাল সম্পূর্ণ অবাস্তব ] - প্রকাশসত্বঃ তৌহিদ- আন- নূর (৬ কার্তিক ১৪১৯) প্রথম প্রকাশঃ ফেসবুক ওয়াল (৫ কার্তিক) http://www.facebook.com/666tomato ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.