আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্তমানের রাজনীতি

এক সময় রাজনীতি করা ছিল ভাল কোন বিষয়; গর্বের বিষয় তো বটেই। এখন রাজনীতি করা গর্বের বিষয় তো নয়ই; বরং রাজনৈতিক ব্যক্তিরা মানুষের ঘৃণার পাত্র। এটা কেউ বুক ফুলিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলতে পারবেন না যে রাজনীতি করা কোন ভাল মানুষের কাজ। বর্তমানে রাজনীবিদরা মানবসেবা বাদ দিয়ে যে সকল নীতি মেনে চলেন। তা হল- স্বার্থনীতি।

নিজের আখের গোছানোর নীতি। বর্তমানে আমাদের সমাজে বা দেশে রাজনীতিবিদদের প্রতি সাধারণ মানুষের মনে একটা বিদ্বেষ মনোভাব তৈরী হয়েছে। এক্ষেত্রে দেশের বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রথিতযশা সাংবাদিক এবি এম মুসার কথাকে স্বরণ করা যেতে পারে। কিছুদিন আগে একটা অপ্রিয় সত্য কথা তিনি মুখ ফসকে বলে ফেলেন। তা হল ’বর্তমান সরকারী দলের লোক দেখলেই জনগণ বলবে তুই চোর তুই চোর।

’ দেশের পরিন্থিতি কতটা ভয়াবহ হলে একজন প্রবীণ মানুষ এ রকমের কথা বলতে পারেন পাঠক, আপনারাই চিন্তা করে দেখুন। এক সময় রাজনীতি করত এমন সব লোক যারা নিজেদের সুযোগ-সুবিধার চাইতেও সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখকে বড় করে দেখতেন। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে আমাদেরদেশের অনেক গুণীজন রাজনীতিতে এসে জনগণের জন্য কাজ করেছেন, জীবনকে উৎসর্গ পর্যন্ত করে দিয়েছেন। সাদা চামড়ার ইংরেজরা যখন আমাদের উপর অত্যাচারের স্ট্রীম রোলার চালাতে শুরু করল। ঠিক তখনই এ দেশে এমন অনেক রাজনীতিক ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়েছে।

যাদের ত্যাগ-তীতিক্ষা, মেধা, শ্রমকে জনগণের পক্ষে কাজে লাগিয়েছেন। তারা হলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়-শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, বাঘা যতীন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ফজলুল কাদের চৌধুরী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায়। ইংরেজদের পরাজয়ের পর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হল। পাকিস্তান একের পর এক আমাদেরকে কেবল বঞ্চিত করেই যাচ্চিল।

আমাদের পূর্ব বাংলায় উৎপাদিত পণ্য পণ্য পশ্চিম পাকিস্তানে সস্তায় বিক্রি করা হত। একই পণ্য আমাদেরকে অনেক চড়া দাম দিয়ে কিনতে হত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি সব ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবহেলার চোখে দেখতে লাগল। এভাবে প্রতি পদে পদে নানাভাবে নানা রকমে পাকিস্তানি শাসকরা আমাদেরকে বঞ্চিত করে চলছিল অবলীলাক্রমে। বাঙালি জাতির ইতিহাস অধ্যয়ন করলে যে বিষয়টি আমার মাথায় এসেছে তা হল-’বাঙালি জাতি নামের এই জাতিটির বোধহয় কেবল শোষিত আর বঞ্চিত হবার জন্যই পৃথিবীর বুকে পয়দা হয়েছিল।

’ না হয় আপনি ইতিহাস অধ্যয়ন করলে অন্তত আমার কথার কিছুটা হলেও সত্যতা খুঁজে পাবেন। পাকিস্তানি নরপশুরা আমাদের একই ধর্মীয় সম্প্রদায় অধিভূক্ত ছিল তবুও তারা ইসলামের সেই মানবতাবাদী মহান আদর্শের ছিঁটেফোটাও আমাদের সাথে দেখায়নি, দেখাতে পারেনি। যার ফলে তৎকালীন পাকিস্তানীদের এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করতে আমাদের বাংলার ভূমি হতে জন্ম নিল সেই মহান পুরুষরা; যারা আমাদের হৃদয়ের গহীনে ভালবাসার জায়গা দখল করে বসে আছেন। সেইসব প্রিয় মানুষরা হলেন-হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আতাউল গণী ওসমানী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামছুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দিন আহমদ। আর স্বাধীনতা পূর্ববর্তী হিরন্ময় ছাত্রনেতারা হলেন- আ স ম আবদুর রব, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, শাহজাহান সিরাজসহ প্রমূখ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।

যাদের ধ্যান-জ্ঞান শুধুমাত্র দেশ এবং দেশের মানুষের কণ্যানের জন্যই ছিল। দেশের মানুষও কোনও বিপদ আপদের সম্মুখীন হলে তাদের কাছেই ছুটে যেত। সুখে-দুঃখে তাদেরকেই ব্যক্তিদেরকে স্বরণ করত। এখন মানুষ আর রাজনৈতিক নেতাদেরকে আগের মত পোছে না। তাদের কাছে রাজনীতি মানে ভেল্কিভাজি, চাপাবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, চুরি-চামারি, জোচ্চুরি, খুন, রাহাজানি, সাধারণ মানুষদেরকে চোখ রাঙানি, জনদুর্ভোগ তৈরী করা ছাড়া আর কোন কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পরিচয় বহন করে না।

নির্বাচন আসলে আমাদের দেশের একজন মেস্বার প্রার্থীকে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতে দেখা যায়। ছেলে সৌদি আরব থাকে, বাবা মেম্বার প্রার্থী হয়েছে। হায়লে একটা ফ্যাস্টিস ইস্যু আছে তাই ছেলে বাবার জন্য নগদ তিন লাখ টাকা পাঠিয়েঠে নির্বাচন করার জন্য। বাবা পাঞ্জাবীর পকেটে সে টাকা নিয়ে ভোটের দিন জেলে বাড়ির সামনে দাঁড়ালেন প্রত্যেক ভোটারকে কেন্দ্রে যাবার সময় হাতে খুঁজে দিলেন একটা করে পাঁচশ টাকার নোট। টাকা খেয়ে জেলে বাড়ির লোকেরা প্রতারণা করেনি ঠিকই মোরগ মার্কায় ভোট দিয়ে সে লোককে মেম্বার নির্বাচিত করেছে।

এই হল আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের পরিচয়। আর স্বার্থবাদী গরীব ভোটারদের অবস্থা। এ রকম চলতে থাকলে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা মোটেই পাল্টাবে না। আর রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি না পাল্টানো মানে দেশও না পাল্টানো। যে লাউসে কদু অবস্থা।

টাঙানি আর লটকানি একই কথা। ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থীদেরকে ভোটের সময় কোটি টাকাও খরচ করতে দেখা যায়। এদের টাকা আদায়ের সিস্টেম অভিনব সেটা হচ্ছে, চেয়ারম্যান প্রার্থীর এলাকার বড় বড় ব্যাবসায়ী যারা ঢাকায় অবস্থান করছে তাদের তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি দুই তিন লাখ টাকা করে টাকা আদায় করে। প্রবাসীদের কাছ এভাবে আদায় হয় প্রায় দুই তিন কোটি টাকা। আর চেয়ারম্যান প্রার্থী যদি হয় কোন প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের সদস্য তাহলে এলাকার ধনী মানুষ যারা আছেন তারা তাকে নির্বাচন করার জন্য টাকা দেয়।

এভাবে একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী প্রায় কোটি টাকার উপরে খরচ করে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পদপ্রার্থীরা কত খরচ করেন তা একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন। তবে আন্দাজ করা যায় তারা প্রায় পনের থেকে বিশ কোটি টাকার মত খরচ করে। তাদের টাকার উৎসের শেষ নেই। প্রবাসী, ব্যবসায়ীরাও তাদের টাকার প্রধান যোগান দাতা।

একটা কথা চিন্তা করুন, একজন মেম্বার প্রার্থী যদি নির্বাচনের সময় লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেন। একজন ইউনিয়ন প্রার্থী যদি কোটি টাকার উপরে খরচ করে। একজন সংসদ সদস্য প্রার্থী যদি পনের- বিশ কোটি টাকা খরচ করে। তাহলে পাঠক, আপনারাই চিন্তা করুন নির্বাচনের পর উক্ত মেম্বার প্রার্থী। ইউনিয়ন প্রার্থী।

সংসদ সদস্য প্রার্থী নির্বাচিত হবার পর তার এলাকার জন্য কত টাকাই বা বরাদ্দ পাবেন সরকার থেকে। যদি পান তাহলে ভাল কথা। আর যদি না পান তাহলে ঔ সম্মানিত প্রার্থীটি কি করবেন? পাঠক, আপনারাই বলুন। আমার মনে হয় তাকে এদিক ওদিক ঠু মারা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। সে যেদিক থেকে পারবে সেদিক থেকেই সে খাবে।

কারণ, সে কি করবে নির্বাচনের আগে যে কোটি টাকা মানুষ থেকে হাওলাত নিয়েছে। মানুষও মনে করেছে ভাল কথা এখন দিই, নির্বাচিত হলে তো টাকা ঠিকমত পেয়ে যাবো। না হয় এখন এক লাখ টাকা দেয়ার বদলে পাঁচ লাখ টাকার ব্যবসায়ী সুযোগ পাওয়া যাবে। বর্তমানে রাজনৈকি নেতাদের মধ্যে একটি জিনিস খুবই প্রকট রূপ ধারণ করেছে যে, দু’জন একই দলের রাজনীতি করে তবুও একে অপরের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব পোষন করেন না আর অন্য দলের নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোদ, সম্মানবোধ, মত্ত্ববোধ একেবারেই নেই বললেই চলে। সরকার দল আছে শুধু স্বৈরাচারি মনোভাব নিয়ে আর বিরোধী দল আছে শুধু বিরোধীতা নিয়ে।

আমাদের দেশের সরকারী দলগুলো বিরোধী দলকে একেবারেই সহ্য করতে পারে না। আর বিরোধী দলও শুধুমাত্র বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতা করে চলে। আর চিন্তা করতে থাকে কখন তারা ক্ষমতায় যাবে। সে জন্য জ্বালাওপোড়াও কর্মসূচি হরতাল, অবরোধ, মারামারি, খুনাখুনি করতেও তাদের বিবেকে বাধেনা। বাস চালককে পুড়িয়ে হত্যা।

প্রকাশ্য রাজপথে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদেরকে হত্যার পর লাশের উপর নৃত্য করা। এই হচ্ছে আমাদের বর্তমানের বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ধিক জানাই আমি এই সব রাজনৈতিক কর্মসূচিকে। বর্তমানে আমরা এই অবস্থায় পৌঁছেছি যে, সরকার থেকে চাটুকারীতা না করলে জাঁদরেল মুক্তিযোদ্ধাও রাজাকার হয়ে যায়। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

আর সরকারের চাটুকারীতা করে রাজাকারের মত ঘৃনিত ব্যক্তিও রাতারাতি বনে যান বীর মুক্তিযোদ্ধা। হয়রে আমাদের বিবেক! ত্রিশ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের দামে কেনা স্বাধীনতার এই কি পরিণতি। এসব কাদা ছোড়াছোড়ি করে কোনই লাভ নেই। আমরা যে লাভ করতে পারি নাই স্বাধীনতার ৪২ বছরে আজ তা প্রমাণিত হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত আমরা এসব খারাপ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে না পারবো ততদিন আমাদের মুক্তি নাই ততদিন আমাদের উন্নতি নাই।

ততদিন আমরা বিশ্বের প্রভাবশালী দেশের লাথি খেয়েই যাবো। আর কালক্ষেপন করার সময় নেই। সরকারী দল এবং বিরোধী দল উভয়কে আরো বেশি সহনশীল হতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা, কৃষক-শ্রমিক, রিকসাওয়ালা, ঠেলাগাড়িওয়ালার কথা চিন্তা করতে হবে। তাহলেই আমারা এগিয়ে যাবো, আমাদের দেশটা এগিয়ে যাবে।

আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বলতে পারবো ’এই দেখ, বিশ্ববাসী আমি বাংলাদেশের নাগরিক, বাংলা আমার ভাষা, আমি বাংলায় কথা বলি, বাংলাকে ভালবাসি, আমাদের আর কোন দুঃখ নেই। ’ সেই সোনালী দিনের প্রত্যাশায় প্রহর গুনছি। লেখক: এম এ অধ্যয়নরত ,ঢাকা কলেজ,বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ০১৮২০১৪৭৬৫৪-ংঁৎবফধশনধৎ@মসধরষ.পড়স ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.