আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবি খাদিজা এবং বর্তমানের নারী নীতি



ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুল হক আমিনীর ঘোষণায় সরকারের প্রস্তাবিত নারী নীতি প্রতিরোধে আহুত হরতাল পালিত হওয়ার আগেই সরকার ঘোষণা দিয়েছিলো প্রস্তাবিত নারী নীতিতে কুরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো বিধান নেই, সম্ভবত ফজলুল হক আমিনী সরকারের প্রস্তাবিত নারী নীতি পড়েন নি, সেখানে নারী ও পুরুষ সন্তানের প্রাপ্য সম্পদে সমতা আনবার কোনো বিধান নেই। মুক্তমনায় সরকারের নারী নীতির বিস্তারিত পর্যালোচনা করেছে নাস্তিকের ধর্মকথা, অনেক বেশী তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটি। প্রস্তাবিত নারী নীতির ২৫ তম ধারায় নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বিষয়ে দুইটি অধিকার প্রদানের অঙ্গীকার করেছে সরকার, ব্যবসা ঋণ, উপার্জন এবং অন্য যেকোনো অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত সম্পদ এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রনের অধিকার থাকবে নারীর। এর বাইরে অসংখ্য বক্তব্য দেওয়া হলেও উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে নারী নীতিতে বক্তব্য এটুকুই, যদি নারী উত্তরাধিকার সূত্রে কোনো সম্পদ প্রাপ্ত হয় তাহলে সেটা নিয়ন্ত্রনের সম্পূর্ণ অধিকার নারীর। এই বিধানে কুরআন ও সুন্নাহ কিভাবে লঙ্ঘিত হলো সেটা সম্ভবত ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামী শাসনতন্ত্রের দাবী জানানো আমিনী জানেন না।

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র সকল নাগরিককে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা প্রদান করে এবং স্বীয় ধর্মীয় বিধান অনুসারে জীবনযাপনের অধিকার প্রদান করে, সে কারণেই বাংলাদেশের মুসলীমগন মুসলিম পারিবারিক আইনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, মুসলিম উত্তরাধিকার আইন মেনে তারা সম্পদে তাদের প্রাপ্য অধিকার অর্জন করেন, সে একই কারণেই রাষ্ট্র তার নীতি কোনো ধর্মবিশ্বাসের বিপরীতে গিয়ে চাপিয়ে দিতে পারে না কিংবা এমন বৈপ্লবিক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে নি এখনও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক এখনও চিন্তার সে স্তরে পৌঁছাতে পারে নি কিংবা রাষ্ট্র সেভাবে নাগরিকদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারে নি যাতে সে এখনই নারীর সমান অধিকারের দাবীতে পূর্ণ সম্মতি জ্ঞাপন করতে পারবে। বাংলাদেশ এখনও সেই ক্ষেত্র তৈরির সংগ্রাম করছে, প্রতি চার বছর পর পর তাদের অগ্রগতির প্রতিবেদন পাঠাচ্ছে জাতিসঙ্ঘে উত্তরাধিকারীদের ভেতরে সম্পত্তিবিষয়ক বিবাদ নিরসনের পন্থা হিসেবে নিজের ওয়াসিয়ত নামা লিপিবদ্ধ করবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে হাদিসে, “It is not permissible for any Muslim who has something to will to stay for two nights without having his last will and testament written and kept ready with him."” [Narrated by al-Bukhari,al- Wasaayaa2533]. তবে উত্তরাধিকারীদের ভেতরে স্বীয় সম্পদ বিলিবন্টনের ক্ষেত্রে বিশ্বাসী মুসলীমগণদের সুরা নিসায় বর্ণিত নিয়ম মেনেচলবার স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে নির্দেশনায় বলা হয়েছে প্রতিটি পুরুষ উত্তরাধিকারী নারীর দ্বিগুন সম্পদ পাবে। তৎকালীন সমাজের বিদ্যমান রীতি নীতির তুলনায় ইসলামিক বিধানের উৎকর্ষ নিশ্চিত হয়েছিলো কুরআনের নারী বিষয়ক বিভিন্ন আয়াতে, সেখানে সম্পদে নারীর উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিলো, একই সাথে ধর্মীয় বিধানে বিবাহযোগ্য যেকোনো পুরুষের সাথে পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার এবং যৌক্তিক কারণে উপযুক্ত জরিমাণা দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার লাভের বিষয়টাও নিশ্চিত করা হয়েছিলো।

সে সময়ের সামাজিক পরিস্থিতিতে কোনো নির্ধারিত উত্তরাধিকার আইনের অনুপস্থিতিতে সম্পদে কারো অধিকারই নিশ্চিত ছিলো না, এই যাদৃচ্ছিক ব্যবস্থায় উদ্ভুত বিবাদ ও সংঘাত নিরসনে ওসিয়ত নামা লিপিবদ্ধ করা এবং সেই ওসিয়তনামা লিপিবদ্ধ করবার সময় ইসলামের বিধান মেনে চলবার বাধ্যবাধকতা সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছিলো। প্রাক ইসলামী যুগে ইসলামী উত্তরাধিকার আইন প্রচলিত ছিলো না বলেই কোনো রকম কর্তন ছাড়াই, "কোনো কোনো সুত্র" অনুসারে পিতার সম্পূর্ণ সম্পদের এবং "অন্য সুত্রানুসারে" স্বামীর সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন বিবি খাদিজা। খাদিজা মুহাম্মদকে তার ব্যবসা তদারকির কাজে নিয়োজিত করবার সময় তিনি বিধবা ছিলেন না কি তিনি কুমারী ছিলেন, তার অঢেল বিত্তের উৎস তার পিতা না কি তার মৃত স্বামী এই বিষয়ে নানা মুনির নানা মত। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত যদি প্রাক ইসলামী সমাজে এমন ইসলামী উত্তরাধিকার বিধান থাকতো তবে বিবি খাদিজা এত সম্পদের উত্তরাধিকারী হতে পারতেন না। এই অর্থনৈতিক সম্পদ মুহাম্মদকে যতটুকু মত ও আদর্শ প্রচারের স্বাধীনতা দিয়েছিলো ততটা সম্ভব হতো না যদি ইসলামী বিধান মেনে দুই তৃতীয়াংশের অধিক সম্পদ খাদিজা তার অন্যান্য পুরুষ আত্মীয়দের প্রদান করতে বাধ্য হতেন।

রাষ্ট্র তার নিজস্ব কেতায় নারীকে পুরুষের সমান দায় ও দায়িত্ব প্রদান করেছে, যেকোনো রাষ্ট্রীয় চুক্তিতে নারী এবং পুরুষ একই সমান বিবেচিত হয়, কিন্তু ধর্মীয় বিধানমতে পরিচালিত বিষয়াদিতে নারীর সমতা অর্জিত হয় নি। একজন নারী একক ভাবে সাক্ষ্য দিতে পারেন না, একক নারীর সাক্ষ্য গ্রহনযোগ্য নয় বিবাহ কিংবা অন্যান্য চুক্তিতে একজন পুরুষ দুইজন নারির সমান, এই ব্যতিচার রাষ্ট্র প্রবর্তিত আইনে নেই। নারী কোন যুক্তিতে হীন এ বিষয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই কিন্তু এটা ধার্মিক মানুষের অন্ধ বিশ্বাস এবং সে কারণে যৌননীপিড়নের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধেও নারী কিংবা নারীরা নিজেদের উপরে নির্যাতনের বিচার চাইতে গেলেও ধর্মীয় বিধানানুসারে তাদের একক সাক্ষ্য গ্রহনযোগ্য হতে পারবে না , নির্জনে ধর্ষিত কিংবা যৌননির্যাতিত নারী কখনই ধর্মীয় বিধান মেনে তার উপরে নির্যাতনকারী পুরুষের শাস্তি দাবি করতে পারবেন না, কিন্তু রাষ্ট্র একই সাথে নারীর যৌনসুরক্ষা ও শাররীক নিরাপত্তা প্রদানের অঙ্গীকার করেছে। নারীর অর্ধেক মানুষ নয় পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো যথেষ্ঠ আধুনিক হয়ে না উঠতে পারাটা আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, ধর্মিয় বিধান যুগের সাথে বদলাবে এবং রাষ্ট্র যখন নারীর সম্পদের উপরে তার পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছে তখন নারী তার কন্যা সন্তানকে স্বীয় সম্পদের সম্পূর্ণ অধিকার প্রদান করলে রাষ্ট্রের যেকোনো আদালতই এই ওয়াসিয়ত নামা মেনে নিতে আইনত বাধ্য আমিনী কিংবা মুফতি কোনো ব্যক্তি যদি এমন নির্দেশনার বিপক্ষে গিয়ে বুকে গলায় তাবিজ কিংবা কোরান বেধে আন্দোলনে নামেন তাদের প্রতিহত করে স্বীয় নীতিতে অটল থাকা রাষ্ট্রের কর্তব্য, ধর্মীয় অস্থিরতার আশংকায় নিজের নীতির সাথে ক্রমাগত আপোষ রাষ্ট্রকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি প্রচার ও প্রসারকারী রাজনীতিবিদদের কাছে জিম্মি করে রাখবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.