আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার সাইকেল, বাড়িয়ালার মেয়ে এবং আমাদের দুজনের গল্প !

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -ভাইয়া কি করছেন? নাজিফার কথা শুনে আমার মনটা বিরক্তিতে ভরে গেল । মেজাজটাও খানিকটা খারাপ হল ! এই রকম ন্যাকামো মার্কা প্রশ্ন শুনলে মেজাজটা কার ঠিক থাকে ? এই ফাজিল মেয়েটা আমার বন্ধু রাফাতের মত কথা বলছে ! ঐ ব্যাটা কয়দিন আগে আমাদের ল্যান্ড লাইনে ফোন দিয়ে বলে দোস্ত তুই কই ? আরে ব্যাটা ফাজিল তুই ফোন দিছিস ল্যান্ড নাইনে আবার জিগাস আমি কই ? এমন বেকুবদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া কি ঠিক ? আর এই মেয়ে দেখতে পারছে আমি সাইকেল মুছতেছি আবার জিগায় আমি কি করতেছি ! এই মেয়ের গায়ে আস্ত একটা তেলাপোকা ছেড়ে দিতে পারলে ভাল লাগতো, কিন্তু সে কাজ করার উপায় নাই ! একে তো মেয়ে দেখতে একেবারে ডানা কাটা পরী তার উপর আবার বাড়ি ওয়ালার মেয়ে ! এই মেয়েকে কিছু বললে আমার আব্বা আমাকে আস্ত রাখবে না । আমি হাসি মুখে বললাম -সাইকেল মুছতেছি ? -সাইকেল চালাবেন ভাইয়া ? না সাইকেল চালাবো কেন ? আমি তো সাইকেলটা কিনেছি কেবল গ্যারেজ ভিতরে রেখে দেওয়ার জন্য ! -হ্যা একটু চালাবো ভাবছি ! -ইস ! সাইকেল চালাতে খুব খুব মজা, তাই না ভাইয়া ? আমি যদি চালাতে পারতাম ! আমি খানিকটা বিপদের গন্ধ পেলাম । এখন এই মেয়ে যদি বলে ফেলে ভাইয়া আমাকে সাইকেল চালানো শিখাবেন তাহলে আমিতো পরবো বিপদে । শুধু বিপদে না মহা বিপদে ! আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল নাজিফা বলল -ভাইয়া আমাকে চালানো শিখাবেন ? এই সেরেছে রে !! আমি এখন কি বলি ! যদি না বলি তাহলে সোজা আমার বাসায় রিপোর্ট চলে যাবে ! আর আমা রবাপ যদি জানতে পারে তাহলে তো হয়েছে !! নাফিজা আবার বলল -ভাইয়া একটু শিখাবেন ? -তুমি শিখতে পারবে ? পরে গেলে তো ব্যাথা পাবে ! কিন্তু এর পর নাজিফা যা বলল তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না ।

নাজিফা বলল -কেন? পরবো কেন ? পরে গেলে আপনি ধরবেন ? এই মেয়ে বলে কি ? আমি আর কথা বাড়ালাম না । এখন এখান থেকে পালাতে পারলে বাঁচি । নাজিফা বলল -আচ্ছা তাহলে এখন যাই ভাইয়া । কোচিং থেকে আসছি তো । কালকে আমার কোচিং নাই ।

কালকে শিখবো কেমন ! হুম আসো ! তোমাকে শিখানোর জন্য আমিতো বসে আছি । -আচ্ছা ঠিক আছে । আমি সাইকেল নিয়ে বের হয়ে গেলাম । খুব বেশি চিন্তা লাগছে না এখন । কাল তানভীর স্যার আসবে বিকেল বেলা ।

খুব সহবেই পাশ কাটানো যাবে । আমি মনের আনন্দে সাইকেল চালাতে লাগলাম । কিন্তু বিপদে আমাকে পড়তেই হল । তানভীর স্যার প্রতিদিন একদম সময় মত এসে হাজির হয় কিন্তু স্যার তো সময় মত এলোই না ফোন করে বলল যে আসতে পারবে না । এ কি বিপদে পড়লাম ।

অন্যদিন তো আমি আল্লাহর কাছে দুয়া করি যেন আজ স্যার না আসে । আর আজকে আমি দুয়া করলাম স্যার যেন আসে কিন্তু হায় ! কপাল খারাপ হলে যা হয় । বিকেল বেলা ঠিক সময় মত নাজিফা এসে হাজির । একটা কথা না স্বীকার করে উপায় নাই ! মেয়েটা আসলেই খুব সুন্দর । যত ন্যাকামো মার্কা কথাই মেয়েটা বলুক না কেন এর আশে পাশে থাকলে কিছুক্ষনের ভিতর মনটার ভিতর কেমন একটা অচেনা অনুভুতি হয় ! সারাটা বিকেল মেজাজটা খারাপ হয়ে রইল কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না ।

তবে একটা ব্যাপার বেশ ভাল লাগল যে কাজীর গলির আর যে কয়টা ছেলে আছে সবাই আমার দিকে কেমন ঈর্শা ভরা দৃষ্টিতে তাকাতে লাগল । আর তাকাবেই না কেন ? নাজিফা কে আমি সাইকেল চালানো শিখাচ্ছি আর এলাকার অন্য ছেলে গুলো কেবল দুর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর জ্বলছে । এটা একটা আনন্দের বিষয় । নাফিজা যাওয়ার সময় বলল -কালকে আবার কেমন ? তারপর মিষ্টি একটা হাসি দিল । দিন দুয়েক খানেক পরের কথা ।

স্কুল থেকে বাসায় আসছি । আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে ! গলির মধ্যে গাড়ি ঢুকতেই একটা অবাক করা দৃশ্য দেখলাম । নাজিফা সাইকেল চালাচ্ছে মনের আনন্দের ! একটা গোলাপী রংয়ের লেডিস সাইকেল । এই সাইকেল মেয়েটা পেল কোথায় ? তার থেকেও বড় কথা নাজিফা এতো ভাল সাইকেল চালাতে শিখলো কোথা থেকে ? গত দুইদিন আমি ওকে যে পরিমান শিখেইছি তাতে তো এতো ভাল চালানোর কথা না । ঐদুই দিন আমাকে সব সময় সাইকেলে পেছন পেছন থাকতে হয়েছে ।

ও বেশ কয়েক বার পরে যেতে নিয়েছে আমাকে তা আটকাতে হয়েছে । কিন্তু এখন তো দেখছি এই মেয়ে দিব্যি সাইকেল চালাচ্ছে । আমি গাড়ি থেকে নেমে নাজিফার সামনে দাড়ালাম । আমাকে দেখেই নাজিফা সাইকেলে ব্রেক ধরে দাড়িয়ে পড়লো । নাজিফার মুখে এক্সপ্রেশন দেখে মনে হল কোন একটা অন্যায় করে ধরা পড়লে মুখের যে ভাবটা হয়, ওর মুখে এখন ঠিক তেমন একটা ভাব ।

আমি কিছু না বলে ওর সামনে দিয়ে চলে এলাম । এই বার আমার মেজাজটা আসলেই খারাপ হল । এই আগে থেকেই সাইকেল চালাতে পারে । তাহলে আমাকে খামোখা কেন কষ্ট করালো ! এই ফাজিল মেয়ের গায়ে আসলেই একটা তেলাপোকা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ ! প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় আমার সাইকেল চালানোর একটা অভ্যাস ! সািকেল চালাচ্ছিলাম । চালাতে চালাতে মিন্টু রোডের দিকে চলে গেলাম ।

এই এলাকাটা সাইকেল চালানোর জন্য বেশ ভাল । কাজীর গলিটা একটু ছোট ! আমি একদম মিন্টু রোডের শেষ মাথা পর্যন্ত চলে এলাম । আর সামনে যাওয়া যাবে না । ওখান থেকে আবার ব্যস্ত রাস্তা শুরু হয়েছে ! আমি সাইকেল ঘুরাতে যাবো ঠিক তখনই নাজিফা আমার সাইকেলর সামনের দিকেটা এসে একটা ধাক্কা দিল । একটু অবাক হলাম ।

মেয়েটা এতোদুর সাইেকল চালিয়ে এসেছে আমার পেছন পেছন । -সরি শামস ভাইয়া ! কিন্তু ওর মুখ দেখে মনে হল যে ও খুব একটা সরি ফিল করছে ! চেহারায় কেমন একটা দুষ্টামির ভাব । -আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন ? না তোমার উপর রাগ করবো কেন ! তোমাকে তো কোলে তুলে নাচা উচিৎ ! আমাকে খামোকাহ দুইদিন তোমার সাইকেলের পিছন পিছন ঘুড়ালে আর এখন বলছে আমি রাগ করেছি কি না ? ফাজিল !! -এই রকম করার মানে কি ? -আপনি মানে বুঝেন নি ! আরে এখানে মানে বোঝার কি আছে । আমি বললাম -না ! কেন করলে ! নাজিফা কিছু না বলে চুপ করে রইলো কিছুক্ষন । তারপর বলল -আপনাকে আমি বেশ বুদ্ধিমান মনে করতাম ।

কিন্তু ........ একটা মেয়ে সাইকেল চালাতে পেরেও কেন আবার আপনার কাছে সাইকেল চালানো শিখতে চা্য় বুঝেন না ? প্রথমে আমি কিছু বুঝতেই পারলাম না মেয়েটা কি বলতে চায় । দেখলাম নাজিফা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে ! ওর চোখে মেন হল যেন পানি জমতে শুরু করেছে ! আরে আমি বুঝতে পারিনি এটাতে কান্নার কি হল ? এই মেয়েগুলা এতো বেকুক...........!! ওয়েট ! তাই !! এতোক্ষন আমি বুঝে পারলাম ন। এতোক্ষন পর আমি বুঝলাম যে কেন সাইকেল চালাতে পেরেই কেন নাজিফা আবার আমার কাছে সাইকেল চালান শিখতে চেয়েছে ! কেন ওর চোখে পানি এসেছে !\ বেকুব তো এই মেয়ে না ! বেকুব তো আমি ! মহা বেকুব !! নাজিফা বলল -আমি যাই ! দেরি হয়ে যাচ্ছে ! -এখনই যাবে ! এখনও তো সাইকেল চালানো ভাল করে শিখাতেই পালাম না ! এইবার নাজিফার মুখে একটু হাসি আসলো ! নাজিফা বলল -ইস কত শখ ! আমি আপনার কাছে শিখবো না ! এই বলে সাইকেল টান দিল । -এই কই যাও ........। আমি ছুটলাম ওর পিছন পিছন !! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.