আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মতিঝিল এ জি বি কলোনীর ---সেকাল মায়েরা আর একালের মায়েরা।

দেশটা আমাদের। এর জন্য ভাল কিছু করতে হলে আমাদেরই করতে হবে। Mail:rabiul@gmail.com আমার বাবা সরকারী চাকুরী করতেন। সেই সুবাদে মতিঝিল এ জি বি কলোনীতে(আইডিয়েল জোন) আমাদের সরকারী বাসা ছিল। আমার জন্ম সেখানেই।

সেখানেই বড় হওয়া। আমার ছোট বেলার নিজ চোখে দেখা মতিঝিল এ জি বি কলোনীর তখনকার আর এখনকার মানুষজন আর পরিবেশ নিয়েই আজকের এই লেখা। ১৯৮৩ বা ৮৪ সালের কথা। তখনও প্রাইমারী স্কুলে যাওয়ার সময় হয়নি। ওই সময়ের দিনগুলোর কথা অস্পষ্টভাবে মনে পড়ে।

আমাদের বিল্ডং এ মোট ফ্লাটের সংখ্যা ছিল ৮টি। ৮টি পরিবারের সবাই সবাই কে চিনতেন। সব বাসারই আসবাব পত্রের মান ছিল সমান। ঝাকঝমক ছিলই না বলা চলে। আমরা ছোট ছিলাম।

অত কিছু বুঝতাম না। তবে সব পরিবারের সাথে সব পরিবারের এত বেশী আন্তরিকতা ছিল যে আমরা ছোটরা ভাবতাম সবাই বুঝি পরষ্প্র আত্নীয়। সরকারী অফিসের সময় তখন ছিল সকাল ৭টা থেকে ২টা পর্যন্ত। সপ্তাহে ৬ দিনই অফিস ছিল আর বৃহসপ্রতিবার ছিল হাফ অফিস। বাবারা সেই সাত সকালেই অফিসে চলে যেতেন।

আমরা ছোটারা দেখতাম বাবারা চলে যাওয়ার পর থেকে মায়েরা এক জন আন্য জনের বাসায় যেতেন। কার কি অবস্থা সবাই সবার খোজ নিতেন। কেউ বিপদে থাকলে সবাই জেনে যেতেন,কারো বাসায় ভাল রান্না হলে একজন অন্য জনের বাসায় পাঠাতেন। কেঊ বড় বিপদে পড়লে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ত। মায়েদের আড্ডার ওই সময় আমরা ছোটরা লুকোচুরি খেলতাম।

ওই সময়টুকুতে বিল্ডিংয়ের সব ফ্লাটেই আমাদের ছোটদের থাকতো অবাধ যাতায়াত। প্রায় সব ফ্লাটের মায়েরা একজন অন্যজনের সাথে গল্পে মগ্ন থাকাতে প্রায় সব ফ্লাটের ওই সময় দরজা থাকতো খোলা। আমরা ছোটরাও ওই সময় মহাআনন্দে এক ফ্লাট থেকে অন্য ফ্লাটে দৌড়ে বেড়াতাম আর লুকোচুরি খেলতাম। ছুটোছুটিতে অন্যর বাসার বিছানা ,আলনার কাপড় এলোমেলো করে ফেলতাম। সেটা নিয়ে নিজের মায়ের বকুনিও খেতাম,অনেক সময় মারও খেতাম কিন্তু যার বাসার জিনিষ এলোমেলো করে ফেলেছি সেই মা দেখা যেত মায়ের আদর দিয়ে মায়ের মার থেকে বাচাত।

অন্য মায়েরা এমনই ছিল সহনশীল। খেলার সবচাইতে বড় সময় ছিল বিকেলবেলা। প্রায় সব বিল্ডিংয়ের সামনেই খেলার জায়গা আছে। বিকেল বেলায় খেলার সময় বিল্ডিংয়ের প্রায় সমবয়সি সব ছেলেমেয়েরা এক সাথেই খেলা করতাম। প্রায় সব বাসাতেই ছিল বুড়ো-বুড়ি মানে বাসাপ্রাপ্ত লোকের মা বাবা।

যাদের আমরা দাদা দাদী বা নানা নানী বলে ডাকতাম। কলোনীর কারো মৃতুর খবর শুনলে সবাই যেতেন ওই বাসায়। যদি বৃদ্ধের মৃতু হত তাহলে বড়রা কেউ অত চিন্তা করতো না কেউ কিন্তু চাকরী করে এমন কেঊ মৃতুবরন করলে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ত কিভাবে ওই ফ্যমেলী চলবে এটা নিয়ে। ওই ফ্যমেলীর কোন ছেলে বা মেয়ে বা স্ত্রী যদি চাকরীর যোগ্য হয় আর তারা যদি চাকরী চায় তাহলে এই ব্যপারে সবাই সহযোগীতা করত। মৃতু পরবর্তী পেনসনের যাবতীয় কাজ কলোনীতে বসবাসকারী ওই ডিপার্টমেন্টের অন্য লোকেরাই করে দিত।

এসব নিয়ে ওই পরিবারের কাউকে ভুগতে হতো না। কলোনীতে বাসায় কাজের মহিলা যারা কাজ করতো তাদের বুয়া বলে ডাকতাম। দেখা যেত যে বাসায় কাজ শুরু করেছে সে বাসায় ১৫/১৬ বছর ধরে কাজ করছে। ব্যতিক্রম ছিল না যে তা নয়। তবে যাদের বাসায় কাজের লোক কাজ করতে চাইতো না তাদেরকে নিয়ে অন্যরা আড়ালে হাসাহাসি করতো।

লজ্জায় দেখা যেত ওই মহিলারা এমনিতেই ঠিক হয়ে যেত। অনেক বাসায় কাজের লোকদের ছেলে মেয়েদের পড়ার সুবিধাও করে দিত। কাজের মহিলারাও তাদের সুখ দুঃখ মালিকের সাথে ভাগাভাগি করতে পারত। কাজের মহিলারাও তাদের কাজের বাইরে অতিরিক্ত কাজ অন্তর থেকেই করে দিত। উতসবের দিনগুলোতে থাকতো অন্য রকম মজা।

ঈদের দিনেতো দিনের বেলাতে কারো বাসার দরজা বন্ধ থাকতো না। শবে বরাতে সব বাসা সব বাসায় খাবার পাঠাবেনই। কলোনীর কারো ছেলে বা মেয়ের কোন কারনে মৃতু হলে সবাই খুব দুঃখ পেতেন। এই রকম ধারা মোটামুটি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল। ধীরে ধীরে নতুন মানুষরা কলোনীতে আসতে লাগলো ।

পুরাতনেরা বিদায় নিতে থাকলো। পরিবেশও ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে লাগলো। নতুন মায়েরা ছিল পুরাতন মায়েদের চাইতে অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত। তাদের বাসাবাড়ির আসবাবও পুরাতনদের চাইতে অপেক্ষাকৃত সুন্দর। তাদের গায়ের পোষাকও পুরাতনদের চাইতে আধুনিক।

তাদের সন্তানরাতো আরো আধুনিক। নতুনদের কারো সাথে কারোর তেমন পরিচয় নাই। একই বিল্ডিংয়ে বসবাস করেও কেঊ কাউকে চিনে না। সন্তানরাও কেউ কাউকে চিনেনা অথচ একই জায়গায় বসবাস। আধুনিক মায়েরদের এমন একা একা বসবাস করার কারনে সন্তানরাও খুব সহযে একা একা বসবাস করা শিখে ফেলেছে।

এমনকি ২য় তলার বাসিন্দাও ৩য় তলাতে কারা থাকেন তাদের চিনেন না। বাসার দরজা সবসময়ের জন্য বন্ধ। যোগাযোগ শুধু ছিল পুরাতনদের মধ্য। তারাও এক এক করে বিদায় নিল। বলা যায় পুরাতনরা তখন বিদায় নিতে পারলেই বাচে।

এখন আর কলোনীতে বাসায় বাসায় বুড়ো বুড়িদের দেখা যায় না কারন এখনকার শিক্ষিত মহিলারা কি দাদা দাদী /নানা নানীদের জায়গা দেন?সন্তানরাও বুড়ো-বুড়িদের দেখতে পারে না। এখন পাশাপাশি দুটো ফ্লাটের আসবাবপত্রেও আকাশ পাতাল ব্যবধান। যে বেশী ঘুষ খেতে পারে তার আসবাবপত্র তত দামী। এখনকার কাজের মহিলারাও কোন বাসায় ৬ মাস পার করতে পারেন না। একই বিল্ডিংয়েও যদি কেঊ মারা যায় তারও কোন খবর থাকে না।

মৃতু পরবর্তী পেনসনের যাবতীয় কাযেও আর কেউ বিনে পয়সায় সাহায্য করে না। উতসবের দিনগুলোতেও বিল্ডিংয়ের সবার সাথে সবার দেখা হওয়া দূর্লভ। এখন আর কলোনীতে থাকি না। মাঝে মাঝে যাই। এখনকার এই সব পরিবর্তনগুলো দেখে বিশাসই করতে মন চায়না এইত মাত্র ২৫ বছর আগেও পরিবেশ এমন মধুর ছিল।

জানি না আর কয়দিন পর কেমন হয়। তবে এই সব দেখে ভাবি আমাদের ওই সব ক্ষেত মায়েরাই ভাল ছিল। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.