^^^^^^^^^ ছোটবেলায় আমার পুকুঘাটে যাওয়ার উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা ছিল। সাঁতার জানতাম না একটা কারণ, অন্য কারণ ছিল কিছু গ্রাম্য কু-সংস্কার। মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান হলে তাকে নাকি পুকুর বেশি টানে (!), এই টানাটানির কবলে পড়ে আমি ততদিন পর্যন্ত পুকুরে নামার সাহস পাইনি যতদিনে আমার অনেক ছোট পাড়াতো ভাইয়েরা পুকুরের এপাড়-ওপাড় সাঁতরে বেড়াত।
আমার সাঁতার না জানা দিনের ঘটনা, বাড়ির সামনের রাস্তায় ফুটবল খেলছিলাম। বলে গোবর লাগায় সেটা ধুতে গিয়েছি আমাদের পুকুর ঘাটে।
বর্ষার ভরা পুকুর, ঘাটের তাকে গাছের পাতার পানি পড়ে পড়ে শ্যাওলা জমেছে অনেক জায়গায়। আস্তে আস্তে নামছিলাম। হঠাৎ ঘাটের পাশে পানিতে আমাদের পাশের বাড়ির এক বুড়ির লাঠি। আমি উনার লাঠি পানিতে পড়ে গেছে মনে করে লাঠি উঠাতে সেটা ধরে টানতেই দেখি সাথে বুড়িও উঠে আসছেন! উনার হাতে ঘাট নাগাল পাওয়ার সাথে সাথে বুড়ি পানি থেকে মাথা তুলে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ঘাটে উঠে সটান শুয়ে পড়েন। চোখ লাল আর বুড়ির নাক-মুখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।
এতক্ষণ বুঝতে পারিনি আমি কি করেছি, বুড়ি শোয়া অবস্থায় আমার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, "আঁই মরি গেইলাম, তুই আঁরে বাঁচাইওস"। এরপর বুড়ি অনেক দোয়া করলেন, এমন আন্তরিকভাবে কেউ কাউকে দোয়া করতে জীবনে দেখিনি!
কিছুদিন আগে শ্বশুরবাড়িতে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম বাসার সবাই। আসার সময় গাড়িতে সবার জায়গা হবেনা জেনে আমার আব্বু, ছোট দুই ভাই আর এক কাজিনকে বাসায় ছেড়ে আসার জন্য বেরিয়েছি, বাইরে তুমুল বৃষ্টি। ভাই মোবাইল ফেলে আসাতে সেটা আনতে যাওয়ার আমরা পথে অপেক্ষা করছিলাম। বৃষ্টি, গাড়িতে এসি চলছিল, আমরাও বিভিন্ন গল্প করছিলাম।
এর মাঝে মৃদু একটা হর্ন বা হুইসেলের শব্দ শুনি যা অন্যরা খেয়ালই করেনি। ভাই গাড়িতে ফিরে আসলে আমরা রওনা হই। এর দু'শো মিটার সামনে ছিল একটা রেল ক্রসিং। রেল লাইন পার হওয়ার আগে আমি দাঁড়াই, এবারও দাঁড়িয়েছি। ডানে দেখলাম, অল ক্লিয়ার।
বামে দেখলাম, রেল লাইনের সমান্তরালে যে রাস্তাটা সেটা একটা বিয়ে উপলক্ষে এমনভাবে সাজিয়েছে বামে রেল লাইন পুরোটাই অন্ধকারে, কিছুই দেখা যায় না, তার উপর তুমুল বৃষ্টি। আমি দাঁড়িয়ে আছি এক মিনিটের বেশি, আমার আব্বু বলেন, 'যাও দাঁড়িয়ে আছ কেন?' আমি হিসেব মিলাতে থাকি, ওটা ট্রাকের হর্ন হলে ভালো কথা। যদি ট্রেনের হুইসেল হয় তবে ঐ হর্ন বাজিয়েছে আমিন জুটমিল এর আগে বা পরে, তাহলে ওখান থেকে ট্রেন আসতে মিনিট দুই বা তার বেশিও লাগতে পারে। নাহ! ট্রেন আসার কোন লক্ষণ নাই। এবার যাওয়া যায়।
আলোকসজ্জা পেরিয়ে আমার গাড়ি রেললাইনে উঠবে এমন সময় বড়জোর ৫০ মিটার বামে দেখি ট্রেনের হেডলাইট। সেকন্ড এর ভগ্নাংশে সব ইন্দ্রিয় সচল হয়ে উঠে। কি হবে- আমি কি পেট্রল দিয়ে রেললাইন পেরিয়ে যেতে পারব? গাড়ি কি তেলে চলছে নাকি গ্যাসে? যদি মাঝপথে স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়? হাতটা গিয়ারে আগেই প্রস্তুত ছিল, ড্রাইভ থেকে রিভার্সে রেখেই জোরসে পেট্রোল করি। গাড়ি রেললাইন থেকে, ধাবমান কোচের থেকে দূরে সরে যায়!
উপসংহারে কি লিখা যায় ভাবছি। আদৌ কি উপসংহার শেষ করা হবে।
যেখানে প্রকৃতির প্রত্যেকটা সৃষ্টি প্রতি মুহূর্তেই শেষ হয়ে যেতে পারে প্রকৃতির খেয়ালে সেখানে প্রকৃতিই তাদের বড় রক্ষাকর্তা। উপাসনালয়ের আর্তনাদ থাকেনা, থাকে উপাসনাকারীর মিনতি, প্রকৃতি তার উপাদান রক্ষা করে। উপাসনালয় সে তো প্রকৃতির উপাদানের উপাদান!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।