আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রান্না এবং কমপ্লিমেন্ট

তরুণদের ভাল কিছু করার আকাঙ্খা যখন তারনা দেয়, একটা দেশ তখনই অগ্রসর হয়। আমার পা যথেষ্ট ছোট, লম্বা পা হইলে না হয় দেশের বাইরের মেজবান খাইতাম, তাই দেশের মেজবান থেকেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আমাদের দেশের যেকোনো ঘরোয়া দাওয়াতের একটা কমন পর্ব হচ্ছে "আজকের রান্না ভালো হয় নাই এই বিষয়ক টক সু" তা আবার ভোজন পর্বের ঠিক মাঝেই অনুষ্ঠিত হবে, যা কিনা আমার মতো ভোজনরশিকদের মোটেও পছন্দের নয়। আর এই টক সু এর উপস্থাপক দাওয়াতি বাসার কর্তা, প্রশ্নোত্তর পর্বের উত্তর দাতা হচ্ছেন, গৃহকর্ত্রী, এক মাত্র এই টক সু তেই আমাদের দেশের মহিলারা তাদের দুরবস্থার কথা অকপটে স্বীকার করেন। লাইক, "না ভাবী বইলেন না, আমার রান্না আগের চেয়ে খারাপ হয়ে গেছে।

" ব্লাহ ব্লাহ তবে এইটা ঠিক, সবাই কিন্তু আগে অনেক অসাধারণ রাঁধুনি ছিল। জানতাম এক্সপেরিয়েঞ্চ মানুষকে আরও দক্ষ করে তোলে, কিন্তু আমি বুঝি না আমাদের দেশের মহিলারা দিন যাওয়ার সাথে সাথে বাজে রাঁধুনি কেন হয়? রোজার কিছু দিন আগের কাহিনী, আব্বুর এক কলিগের বাসায় রাতের খাবারের দাওয়াত ছিল। আগে ফ্যামিলির সাথে বিভিন্ন দাওয়াতে যাইতাম, একটু বুড়া হয়ার সাথে সাথে এখন আর তেমন একটা যাই না, তার পরও কেন জানি ওই দিন গেছিলাম। ফার্স্টেই রাজি হইছিলাম, পরে কেন জানি মনে হইলো আম্মুর কাছ থেকে কাইদা কইরা কিছু খবর নেই, তখন শুনলাম আঙ্কেলের দুইডা পুলাই আছে, তার পর ভাবছিলাম না করুম, কিন্তু তখন না করলে বাপ মা খারাপ ভাবতে পারে, তাই আর করলাম না। হুদাই ভালা কাপড় পইড়া মাঞ্জা মাইরা যাওনে কোন কাম নাই, তাই একটা শার্ট আর জিঞ্ছের ছিঁড়া প্যান্টটাই পইড়া গেলাম।

চুলেও ওয়াক্স দিলাম না, হুদাই নষ্ট হইবো। গেলাম বাসায়, যা যা কথা হয়, তাই তাই হইতেছিল। পোলাপাইন পড়ে না, রাইত জাইজ্ঞা কম্পুটারে কি না কি করে, তখন আঙ্কেল কইলেন, দেখেন না আমার ছেলের তো শরীর খারাপ হইয়া যাচ্ছে। আমার বাপ লগে লগে কয়া বইলেন, না, আমার ছেলে তো রাত জাইগা কম্পুটারে পড়াশুনা করে, অন্য কিছু দেখে না। দেখেন না স্বাস্থ্যও মাশাল্লাহ।

আমি লগে লগে পুলাডার দিকে তাকায়া একটা চাইপ্পা হাঁসি দিলাম। বেচারা। জাওজ্ঞা আমার বাপতো জানে না, মাওসের উপর কনট্রোলের লাইগা আমারে AVN এ্যাওয়ার্ড দেয়া উচিৎ। আমি মনে মনে টেবিলের মানচিত্রের কথা ভাবতেছিলাম। কতো টুকু জায়গা বাটি দখল করে রাখবে।

প্লেট, গ্লাস, রাইস ডিস, আর কাড়ির বাটি গুলা নিজেদের জায়গা দখলের লড়ায়ে তৃতীয় টেবিল যুদ্ধ আরম্ভ করবে। চাপাচাপি গাদাগাদি করে একে অপরের গায়ে গায়ে ঘষা খাবে, তবে মেইক আওউট করবে না, কারণ ওরা তো খাওন, ওরাতো ভালা, ওরা বিয়ার পর অর্থাৎ পেটে যাইয়া পরে একে অপরের সাথে মিলবে, মানুষই না খারাপ কুরকুরানি সইতে পারে না। খাবারের কথা আমি যখনই ভাবি আমি তখন ক্যামনে জানি বেশরম হওয়া যাই। অ্যান্টি আসলেন রুমে, আইসাই বললেন, খাবার দিয়ে দেই, কি বলেন? আমি সবার আগে কইয়া বইলাম, খাবার গরম গরম খাওয়া ই ভালো এইটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আর রাতের গরম খাবার হজমে সাহায্য করে।

আমারে বুকাচু কইরা আব্বু কইয়া বইলেন, কই আগে তো কোন দিন বলোস নাই, আর তুই তো বাসায় মাঝে মাঝেই ঠাণ্ডা তরকারি খাস। বিষম খাইয়া উত্তর দিলাম, বেশি গরম খাইলে কোষ্ঠকাঠিন্নের সমস্যা হয়, তাই বাসায় ঠাণ্ডা গুলা খাই, আর আজকে তো এখানে ড্রিঙ্কস আছেই, আর এই ড্রিঙ্কস সেই গরম ব্যলেঞ্ছ করবে। আব্বু কইলেন, ও আচ্ছা। এর পর আন্টি তার বড় পুলাডারে ডাক দিলেন, ভিতরে যেয়ে কি জানি বললেন, তার পর পুলাডা বাহিরে যাওয়ার জন্য জুতা পরতাছে, আব্বু জিজ্ঞেস করলেন কই যাও বাবা, পুলাডা কইলো, এইতো আঙ্কেল একটু হাইট্টা আসি, আমি মুছকি মুছকি হাঁসি। কারণ এই সিন ও তো আমার পরিচিত, কারণ প্রত্যেক বাংলাদেশীই জানেন, ঘরে মেহমান আসার পর ঘরের পুলাদের বাইরে হাটতে যাইতে হয়, আর ঘরে ধুঁকার সময় মুচড়াইয়া মুচড়াইয়া ধুঁকতে হয়।

ও বাইরে যাইতেই আন্টি বললেন, আমি খাবার গরমে দিচ্ছি, আর ও আসলে সবাই একসাথেই বসবো। বেচারা পুলাডা কোঁকের বিশাল বোতল নিয়া যখন ধুঁকল, আমার চোখ এরাইতে পারলো না। কি আর করার আমি তো জানি কুন এঙ্গেলে তালাইলে কি কি দেখা যায়। খেতে বসলাম সবাই। আমি, আব্বু, আম্মু, আমার ভাই, আঙ্কেল আর তার দুইপুলা(কেন আঙ্কেল একটা রিক্স নিলো না, আঙ্কেল আন্টি দুই জনই মাশাল্লাহ)।

বেগম রোকেয়া ওই দিন ওই বাসায় থাকলে হয়তো আর আমাদের খাওয়া হইতো না, কারণ আন্টি তখন বসেন নাই, তিনি পরে খাবেন। তবে আমাদের বাসার নিয়মটা সুন্দর, আব্বু আম্মুকে রেখে খান না। এক সাথে পরে দুই জন খান। ভেজিটেবল, রূপচাঁদা, ইলিশ, কাবাব, চিকেন, মাটন আর বিফ, আর দুইটা ডেজার্ট তো ছিলই। টেবিলে বাটি গুলার মাঝে জায়গা দখলের ফলে ঘটা মনমালিন্নে আমি কেন জানি সেইরাম খুশী।

আমি খাবার টেবিলে কথা কম বলি, কাজে মন বেশি দেই। খাচ্ছি হঠাৎ উঠলো সেই কথা, আর বইলেন না, ইদানীং রান্না ভুইলা গেছি, আগের মতো রাঁধতে পারি না। আজকের টাও তেমন একটা ভালো হয় নাই। আমি মনে মনে হাঁসি আর খাই। আঙ্কেলও পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি দেয়া শুরু করলেন।

আর আমার বাপ মা সেই কথার পিঠে বলতেছে আরে নাহ ভাবি রান্না যথেষ্ট ভালো হইছে। কিন্তু আঙ্কেল আন্টি তো মানবেনই না। না আন্টির রান্না খারাপই হইছে, একবার ভাবলাম বইলাই বসি, আসলেই আঙ্কেল আপনার কথা ঠিক। কিন্তু বললে এক্কেবারে কবিরা গুনা হইয়া যাবে, কারণ রান্না আসলেই ভালো ছিল। এক কথায় বড়ই শ্বাদের।

কিন্তু তাদের ওই টক সু আমার খাবারে খুব ডিস্টার্বিচ্ছিল। কি কমু কি কমু ভাবতেছিলাম আর ইলিশের পেটি খাইতেছিলাম, লজ্জা শরমের মাথা, লেজ আর পেটি খাইয়া কইয়া ফেললাম, "আন্টি আমার আফসোস হচ্ছে এই ভেবে, যে আপনার একটা মেয়ে নাই" ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।