আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেপরোয়া দাম্পত্যজীবন: ক্রেডিট গোজ টু বাড়িওয়ালাস

বারবার শুধু ছিটকে পড়ি অশ্লীল কারাগারে কমলাপুরে মাস্টাররোলের কাজটা বাগিয়েই সাইফুদ্দিন আর সবার মতো স্বপ্ন দেখে একদিন ট্রেনচালক হবে। প্রথমে লোকাল..আস্তে আস্তে এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক। সাইফুদ্দিনের স্বপ্নে আপাতত গুড়ে বালি। লোকাল আর এক্সপ্রেস ট্রেন চালায় ঠিকই তবে রেললাইনের ভুমিকায় থাকে স্ত্রী । কিন্তু বিষম বাঁধল বউ বাপের বাড়ি যাওয়ায়।

প্রথমবার বউরে ছাড়া সাপ্তাহিক ছুটিটা কোন রকমে কাটিয়েই জন্মাষ্টমীর ছুটিতে সোজা শশুড়বাড়ি। শশুড়বাড়িতে সারাদিন মাস্টাররোলের পিয়ন হিসেবেই থাকতে হলো। রাতেও কোন আশা নেই। গরীব শশুড়ের একটা মাত্র ঘর, একটা মাত্র চৌকি। চৌকির এক পাশে সাইফুদ্দিন আর বউ এর জায়গা হলো।

ক্রমান্বয়ে শালা,শালী, শাশুড়ি এবং সবচে অন্য ধারে শশুরের আসন। সাইফুদ্দিনের কাতর আহ্বানে একসময় বউ লোকাল চালানোর পারমিশন দিল, তবে সেটাই ছিল বড় ভুল। চালকের হাতে স্টিয়ারিং উঠে গেলে আর হুশ থাকেনা। লোকাল একসময় এক্সপ্রেস ট্রেনের রুপ নিতেই এক্সিডেন্ট। বীপরিত দিকের কিনারায় শশুড় সাহেবে এক্সপ্রেসের আচমকা গতিতে চৌকির বাইরে পপাত ধরণীতল।

’লোকাল চালাও আর এক্সপ্রেস চালাও মাগার প্যাসেঞ্জার পড়লে চলব’ রাগে গরগর করতে শশুর আবার তার স্বআসনে সমাসীন হয়। (সংগ্রহ থেকে মেরে দেওয়া) পুরাই বাস্তব থেকে মেরে দেয়া রাতিন -তৃণা দম্পতিও লোকাল এক্সপ্রেসের মধ্যে ভালই ছিল। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল নতুন প্যাসেঞ্জার নেয়ায়। কদিন ধরেই বাড়িওয়ালা লক্ষ্য করছিল তৃণা ওড়নাটা বুক থেকে পেটে ছড়িয়ে দিয়ে চলাফেরা করছে। সন্দেহ থেকে সরাসরিই জেরা আর অভিনন্দন।

কিন্তু পরেরদিনই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ। মুখে অবশ্যিই তৃণার ভালর জন্যই ব্যক্ত করলেন- ‘কনসিভ অবস্থায় রোজ চারতলায় ওঠানামা করা তোমার জন্য ক্ষতিকর। তোমার উচিত নিচতলা বা বেশি হলে দোতলায় কোন বাসা ভাড়া করা। এর ওপর কিন্তু ওঠাই চলবেনা’। আড়ালে কিন্তু বাড়িওয়ালা আন্টির অন্য হিসেব।

বাচ্চা হলে অনেক মেহমান আসবে, বাচ্চার জন্য স্থায়ী কোন আত্নীয় বা কাজের লোক রাখার মাধ্যমে পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেড়ে যাবে, বেশি পানি খরচ হবে। বাড়িওয়ালাদের বৈষিয়িক বুদ্ধির সিপিডির বিশেষজ্ঞরাও দুধভাত। রাতিনের বিশেষ অনুরোধে অবশেষে নামলাম বাড়ি খুজতে। শেখের টেক থেকে শুরু করলাম। দুই বেডরুম, ড্রইং, ডাইনিং (শুধু ছোট ফ্যামেলি)।

দন্ত বিকশিত করে কলিংবেল প্রেস করলাম। যেহেতু অল্প কদিন পরেই পুচকে সদস্য আসবে তাই আগেই বলে নিলাম। ’ শুধু হাসবেন্ড ওয়াইফ হলে ভাড়া দিব, বাচ্চা কাচ্চা থাকলে হবেনা'। বিরস বদনে আবার লুকিং ফর টুলেট। দুই দুইটি বাড়ি পরিদর্শন শেষে একই ফলাফল।

তৃতীয়বারে বাড়িওয়ালা আঙ্কেলের এক বাচ্চায় অনাপত্তি নেই জেনে ভাড়াও মোটামুটি সেটেল করে ফেললাম। টার্মস এন্ড কন্ডিশনের মাঝামাছি থাকা অবস্থায় বাড়িওয়ালা আন্টির আগমন, আর স্বশব্দে অনাপত্তি প্রত্যাহার। ‘ বাচ্চা কাচ্চা বহুত ঝামেলা” আপ্নারা অন্য জায়গায় দেখুন। সিড়ির গোড়াতেই দাড়োয়ানকে বিকশিত দন্তযোগে দন্ডায়মান দেখে ঝাল ঝাড়ার একটা সুযোগ হেলায় না হারানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। ’দুই বেডরুম, ড্রইং ডাইনিং, দুই বাথসহ ভাড়া দিবা, আর বাচ্চাকাচ্চা থাকতে দিবানা।

এত বড় বাড়ি নিয়া হাজব্যান্ড ওয়াইফ কি ফুটবল খেলব? ’ফুটবল খেলবেন কেন, যেইটা নিয়ম সেইটা খেলবেন, একদিন একরুমে, আরেকদিন আরেকরুমে, আবার একরুম দিয়ে শুরু করে পুরাবাসা চক্কর দিতে থাকবেন’ পান খাওয়া লালচে দাতের পুরোটা প্রদর্শনপুর্ব হাসতে থাকে আদিবাসী দাড়োয়ান। বাড়িওয়ালারা স্ত্রীজাতীয় সব নিকট আত্নীয়র প্রতি বিশেষ বিশেষন প্রয়োগ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে মনে হলো বাড়িওয়ালারাতে দোষের কিছু করছেনা। এমনিতেই বাড়তি প্যাসেঞ্জারের কারণে বাংলাদেশ ওভারলোডেড। তারওপর যদি নবদম্পতিরা প্যাসেঞ্জার নেয়ার দিকে ঝোঁকে তাহলে দেশের বারোটা বাজতে 2021 সাল পর্যন্ত ওয়েট করতে হবেনা। বাড়িওয়ালাদের যতই হিপোক্রেট ভাবিনা কেন আদতে তারাতো বাংলাদেশে ভবিষ্যত নিয়েই ভাবছে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা রোধে বাড়িওয়ালাদের এই গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকার প্রতি কারো কোন মাথা ব্যাথা নাই। আফসুস.... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।