বাংলাদেশকে ভালোবাসুন আইনজীবী, পুলিশ ও সাংবাদিক পেশার লোকজনের সাথে ব্যাংকিং করবে না স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
বাংলাদেশের কয়েক শ্রেণীর পেশাজীবীদের প্রতি নাখোশ বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। তাদের জন্য ব্যাংকিং সেবায় দ্বৈতনীতি নিয়েছে ব্যাংকটি। এই তালিকায় রয়েছেন আইনজীবী, পুলিশসহ আরও কয়েকটি পেশার মানুষ।
ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি এইসব পেশাজীবীর সঙ্গে বৈরী আচরণ করছে। ক্রেডিট কার্ড, ঋণসহ অন্য বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা পেতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।
কয়েকটি পেশার মানুষের সঙ্গে ব্যাংকিং নিষিদ্ধও ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এমনটি হিসাব খোলার ক্ষেত্রেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
এসব পেশার কয়েকজন ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে বিষয়টি টেলিফোনে জানানোর পর ব্যাংকটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একাধিক সূত্র বাংলানিউজকে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট কয়েকটি পেশার মানুষের সঙ্গে ব্যাংকিং না করতে নির্দেশনা দেয়। নতুন করে হিসাব খোলা থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যাংকিং সবক্ষেত্রেই কার্যকর রয়েঠে এমন সিদ্ধান্ত।
তবে সূত্র জানায়, বিষয়টি যাতে প্রকাশ না পায় এজন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন চিঠি বা অফিস আদেশ দেওয়া হয়নি শাখা পর্যায়ে। পুরো বিষয়টি করা হয়েছে মৌখিক নির্দেশে। আইনজীবী এবং বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদেরও নতুন করে ব্যাংকিং সেবায় না আনতে বলা হয়েছে। তালিকায় রয়েছে সাংবাদিকও।
সূত্র আরো জানায়, এই পেশাজীবীদের যাতে ক্রেডিট কার্ড না দেওয়া হয় মর্মে কার্ড ডিভিশনকে কর্ড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কার্ড বিভাগরে উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি বাংলানিউজের কাছে স্বীকারও করেছেন।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অভ্যন্তরীন একটি সূত্র বলছে, সংবাদ মাধ্যমে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসে বাংলানিউজে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কার্ডের নানা অনিয়ম ও প্রতারণা নিয়ে তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরে বাংলা দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ’ বিভিন্ন সংবাদপত্রে এর কার্ড জালিয়াতির ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে। ফলে মূল ব্যবসা ক্রেডিট কার্ড ব্যাংকিং এ হোচোট খেতে হয় ব্যাংকটিকে।
সূত্র বলছে, সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদনের জের ধরে এক পর্যায়ে কার্ড সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে ব্যাখ্যা চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এর লিখিত জবাব কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দিয়েছে বলে জানায় সূত্র। তবে এর পর আর বিষয়টি অগ্রসর হয়নি।
জানা গেছে, এসব ঘটনার পর ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বেঠক করে করনীয় ঠিক করে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, সাংবাদিক, আইনজীবী এবং পুলিশ সদস্যদের ব্যাংকিং সেবা না দিতে।
একইভাবে এই তিন পেশার মানুষকে কোন ক্রেডিট কার্ড না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে সিদ্ধান্ত বাস্তাবায়নে একটু সময় নেয় ব্যাংকের কর্তৃপক্ষ। যাতে করে বিষয়টি প্রকাশ না পায়। পরে আগস্ট থেকে এর বাস্তবায়ন শুরু করে। এবং সেপ্টেম্বর মাস থেকে এর পুরো বাস্তবায়ন হয়।
একাধিক সাংবাদিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সিনিয়র পর্যায়ে কর্মরত থাকলেও তাদেরকে ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছে না স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। তবে কৌশল করে আবেদন গ্রহণ অব্যাহত রেখেছে। কিন্ত পরে তাদের নানা অজুহাত দেখিয়ে বলা হচ্ছে, কার্ড দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এখানেই শেখ নয়, ব্যাংকটির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে বেরিয়ে আসে, ব্যাংকটির স্প্রেড (ঋণ ও আমানতের সুদের হারে পার্থক্য) দুই অংকের ঘরে।
যদি বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় এটি ৫ শতাংশ রাখার কথা বলে আসছে।
জানতে চাইলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান বিটপী দাশ চৌধুরী সোমবার বাংলানিউজের কাছে বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এমন কোন নিদের্শনা দেওয়া হয়নি। তবে এসময় তিনি বাংলানিউজের প্রতিবেদকের সাথে আগের প্রতিবেদনগুলোর জের ধরে অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে কথা বলেন। তিনি প্রতিবেদককে অফিসে যেতে বলে বিস্তারিত জানাবেন বলেন।
তিনি আরো বলেন, বিষয়টি গুজব ও অসত্য।
প্রতিবেদক তাকে বিশ্বস্ত সূত্র এবং একাধিক ব্যক্তির অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে জানতে চাইলে বলেন, সূত্রের নাম আমাদের জানান। আমরা ব্যবস্থা নেব।
লিংক: সেবাবঞ্চিত নির্দিষ্ট পেশাজীবীরা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।