আমি তো ভাই..... দে-দৌড়
পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে খসড়া বিধিমালা চূড়ান্ত
ঢাকা: পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১২-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। শিগগিরই বিধিমালাটির প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। খসড়াটি চূড়ান্ত করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ।
সম্প্রতি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে এটি যাচাই করে প্রজ্ঞাপনের জন্য পাঠাতে মাস খানেকের বেশি সময় লাগবে।
”
এ বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করতে মন্ত্রিসভা ও জাতীয় সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন হবে না। আইন মন্ত্রণালয়ের যাচাই শেষে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। প্রজ্ঞাপন জারি হলেই এই বিধিমালাটি মূল আইনের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন সচিব।
শাস্তির বিধান রেখে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে বিল পাস
নারীর প্রতি সহিংসতা: বছরে ক্ষতি ১৫ কোটি টাকা
বিস্তারিত আইন দেখতে ক্লিক করুন...
মূল আইন দেখতে ক্লিক করুন...
জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর প্রতি সব বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯-এর সাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসাবে এবং বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ, পারিবারিক সহিংসতা হতেনারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারিবারিত সহিংসতা আইন করা হয়।
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ জাতীয় সংসদে পাস হয় প্রায় দুই বছরে আগে ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর।
মূল আইন প্রয়োগে কয়েকটি ক্ষেত্র বিধিমালা দিয়ে নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। তা বাস্তবায়ন করতেই এই বিধিমালা চূড়ান্ত করেছে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
আইনে অপরাধ প্রমাণ হলে অপরাধীর অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং উভয় দণ্ড দিতে পারবেন আদালত। তবে সশ্রম না বিনাশ্রম তা বলা নেই। বিধিমালায় এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, সুরক্ষা আদেশ প্রথমবার লঙ্ঘন করলে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অপরাধ পুনরাবৃত্তি হলে সশ্রম কারাদণ্ড হবে।
এছাড়া বিধিমালায় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদনের পদ্ধতি, আদালতের নোটিশ ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পদ্ধতি, সুরক্ষা আদেশ লঙ্ঘন, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ পদ্ধতি, পুলিশ অফিসারের দায়িত্ব কর্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কর্তব্যসহ ১৫টি বিষয়ের কার্যপদ্ধতি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা নিয়োগ
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইনের সহায়ক হিসেবে তৈরি করা খসড়া বিধিমালায় এলাকার একজন অথবা আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী একাধিক আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রেও কাজের অধিক্ষেত্র নির্ধারিত হবে বিধিমালা অনুসারে। মূল আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে প্রতিটি উপজেলা, থানা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রয়োগকারী কর্মকর্তা হিসেবে ওই এলাকার এক বা একাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে হবে।
এছাড়া আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার চাকরির শর্তাবলী বিধিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
আইন প্রয়োকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব
বিধি মোতাবেক প্রয়োগকারী কর্মকর্তা মোবাইলে, টেলিফোনে, ইমেইলে মৌখিক বা লিখিতভাবে অভিযোগ গ্রহণ করবেন। অভিযোগ গ্রহণ করে নির্ধরিত ‘ক’ ফরমে পূরণ করে তা সংরক্ষণ করবেন। অভিযোগ লিখিতভাবে সংরক্ষণের পর অভিযোগকারীর স্বাক্ষর নেবেন। প্রয়োজনে তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় লিপিবদ্ধ করবেন।
অভিযোগকারী আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে নির্ধারিত ‘ক’ ও ‘খ’ ফরমে পূরণ করবেন। প্রয়োগকারী কর্মকর্তা নিজে অথবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সেবা সংস্থার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির ২৪ ঘণ্টা প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করবেন। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে আইনের সব অধিকার অবহিত করবেন এবং নির্ধারিত ‘ক’ ফরম পূরণে সহযোগিতা করবেন।
পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারী বা শিশুকে তার সম্মতিতে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইনের অধীন সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক পরামর্শ সেবা প্রদানকারী, আশ্রয়নিবাস এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করবেন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা।
আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা যথোপযুক্ত তথ্য অনুসন্ধান করে অভিযুক্ত ব্যক্তির পারিশ্রমিক, সম্পত্তি, ব্যাংক হিসাব, দলিল সংক্রান্ত তথ্য, বাসগৃহের বাস্তবচিত্রসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি উল্লেখ প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
ওই কর্মকর্তা এই আইন ও বিধানগুলো কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও আদালতের ন্যস্ত করা সব দায়িত্ব পালন করবেন। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির চিকিৎসা, আশ্রয় ও মামলার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ দেওয়ার ব্যবস্থা নেবেন।
সেবাদানকারী সংস্থা
আইনের ৭ ধারা মোতাবেক তৈরি খসড়া বিধিমালায় বলা হয়, নিবন্ধিত যে কোনো সেবা প্রদানকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা সমিতি, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি এই আইনের অধীনে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করার অনুমতি নেওয়ার জন্য ‘ঙ’ ফরম মোতাবেক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করবে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিবেচনা করে সেবা প্রদানকারী হিসেবে নিবন্ধন দেবে।
শর্ত হিসেবে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম ৩ বছরের সেবা দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
নিবন্ধনের পর জেলা বা বিভাগভিত্তিক সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর তালিকা তৈরি করে সংবাদপত্রে ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
পুলিশ অফিসারের দায়িত্ব কর্তব্য
বিধিমালায় বলা হয়, সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ কোনোভাবে পারিবারিক সহিংসতার খবর পেলেই বিধিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত ‘ছ’ ফরমে তা পূরণ করে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন।
এই কর্মকর্তাকে আবেদনকারী প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র সংগ্রহে সহযোগিতা করবেন।
আদালত যুক্তিযুক্ত মনে করলে কিংবা চাহিদা মোতাবেক পুলিশ কর্মকর্তা পারিবারিক সহিংসতা সংশ্লিষ্ট ঘটনার তথ্য অনুসন্ধানে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করিবেন।
আইনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য আদালতের নির্দেশিত অন্যান্য দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদন করবেন।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কর্তব্য
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্যের ক্ষেত্রে বিধিমালায় বলা হয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা নিয়োগে অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতাকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করে দেবে।
প্রত্যেক আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাকে পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আইন ও বিধির আওতায় তার কার্যাবলী সম্পাদন করবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জাতীয় পর্যায়ে প্রতিরোধ ও মনিটরিং কমিটি গঠন করবে। এ কমিটিতে জনপ্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা থাকবেন; কমিটির কার্যপরিধি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করবে।
সুরক্ষা আদেশ লঙ্ঘন
সুরক্ষা আদেশ বা অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশের কোনো শর্ত লঙ্ঘন হলে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি লঙ্ঘন সংক্রান্ত অভিযোগ করতে পারবেন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার কাছে। অভিযোগ গ্রহণ করার পর আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এর অনুলিপিসহ অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যথোপযুক্ত আদেশের জন্য পাঠাবেন।
প্রত্যেকটি আবেদন তথ্য সরবরাহকারীর লিখিত ও তার স্বাক্ষরিত হতে হবে।
সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি, সুরক্ষা আদেশ লঙ্ঘনসংক্রান্ত অভিযোগ সরাসরি সুরক্ষা আদেশ প্রদানকারী আদালতে দায়ের করতে পারবেন।
শাস্তির ক্ষেত্রে মূল আইনে বলা হয়, অপরাধীকে অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
আর অপরাধ পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে মূল আইনে এ ক্ষেত্রে বিধির মাধ্যমে দণ্ড নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। বিধিমালার আলোকে সুরক্ষা আদেশ প্রথমবার লঙ্ঘন হলে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অপরাধ পুনরাবৃত্তি হলে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে খসড়া বিধিমালায়।
ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ পদ্ধতি
আইনের আওতায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির ওপর শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে দেওয়া সাক্ষ্য, প্রমাণ বিবেচনায় ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরণ আদালত নির্ধারণ করবেন। মানসিক ক্ষতি নিরূপণের জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আদালত কাউন্সিলর বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট বা মনোচিকিৎসকের পরামর্শপত্র বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, উপরোক্ত ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে ‘ঝ’ ফরম মোতাবেক ‘ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ব্যবহারবিধি’ বিবেচনায় নিতে হবে।
সমাজকল্যাণ কাজে সেবাপ্রদানের আদেশ ও ক্ষতিগ্রস্ত নারীর প্রাপ্য
আইনের ৩১ (৩) উপ-ধারা (১) ও (২) এর উদ্দেশ্য পূরণে বিধিমালায় বলা হয়, আদালত কোনো সমাজকল্যাণমূলক কাজে সেবা দেওয়ার লক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিপক্ষকে আদেশ দিতে পারবেন। তবে এ কাজের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের ন্যায়সঙ্গত অংশ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা ক্ষেত্রমতে তার সন্তান বা তার ওপর নির্ভরশীলদের দেওয়া যাবে।
এছাড়া খসড়া বিধিমালায় আইনের আওতায় অর্থদণ্ড হিসেবে আদায়কৃত অর্থ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা ক্ষেত্রমতে তার সন্তান বা তার ওপর নির্ভরশীলদের দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এসএম আব্বাস, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
Click This Link
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০
( ২০১০ সনের ৫৮ নং আইন )
[]
জাতিসংঘ কর্তৃ ক ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯ এর স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসাবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ,পারিবারিক সহিংসতা হইতে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন।
যেহেতু জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯ এর স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসাবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ, পারিবারিক সহিংসতা হইতে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল br />
প্রম অধ্যায়
প্রারম্ভিক
সংক্ষিপ্ত শিরোনাম এবং মেয়াদ
১। (১) এই আইন পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ নামে অভিহিত হইবে।
(২) সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে তারিখ নির্ধারণ করিবে সেই তারিখে এই আইন কার্যকর হইবে।
সংজ্ঞা
২। - বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কিছু না থাকিলে, এই আইনে-
(১) "অর্ন্তব র্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ" অর্থ ধারা ১৩ এর অধীন প্রদত্ত আদেশ;
(২) "অংশীদারী বাসগৃহ" অর্থ এমন বাসগৃহ
(ক) যেখানে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বাসবাস করেন;
(খ) যেখানে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি পারিবারিক সম্পর্ক থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষের সহিত
একত্রে বা পৃথকভাবে বসবাস করিত;
(গ) যাহাতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এবং প্রতিপক্ষ এর যে কোন একজনের বা উভয়ের
মালিকানা স্বত্ব ছিল বা উহাদের যে কোন একজন বা উভয়েই যৌথভাবে ভাড়া নিয়াছিল;
(ঘ) যাহাতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এবং প্রতিপক্ষ এর যে কোন একজনের বা উভয়ের যে
কোন ধরনের অধিকার, মালিকানা, স্বত্ব বা ন্যায়পরায়ণ অধিকার রহিয়াছে বা
ছিল; অথবা
(ঙ) যাহাতে পরিবারের সদস্য হিসাবে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এবং প্রতিপক্ষ এর যে কোন একজনের বা উভয়ের যে কোন ধরনের অধিকার, মালিকানা, স্বত্ব বা ন্যায়পরায়ণ অধিকার রহিয়াছে বা ছিল;
(৩) "আবেদন" অর্থ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি অথবা তাহার পৰে অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক এই আইনের অধীন কোন প্রতিকার লাভের জন্য আদালতে দাখিলকৃত কোন আবেদন;
(৪) "আশ্রয় নিবাস" অর্থ সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত আবাসিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত কোন নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান অথবা আশ্রয় কেন্দ্র, যেখানে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি নিরাপদে সাময়িক সময়ের জন্য অবস্থান করিতে পারেন;
(৫) "ক্ষতিপূরণ আদেশ" অর্থ ধারা ১৬ এর অধীন প্রদত্ত কোন আদেশ;
(৬) "সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি" অর্থ কোন শিশু বা নারী যিনি পারিবারিক সম্পর্ক থাকিবার কারণে
পরিবারের অপর কোন সদস্য কতৃর্ক পারিবারিক সহিংসতার শিকার হইয়াছেন বা হইতেছেন বা সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে রহিয়াছেন;
(৭) "নিরাপদ আশ্রয় স্থান" অর্থ সরকার কতৃর্ক অনুমোদিত অথবা আদালতের বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য নিরাপদ বলিয়া বিবেচিত এমন কোন আশ্রয় বা গৃহ, যাহা কোন
ব্যক্তি বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়;
(৮) "নিরাপদ হেফাজত আদেশ" অর্থ ধারা ১৭ এর অধীন প্রদত্ত কোন আদেশ;
(৯) "নারী" অর্থ যে কোন বয়সের নারী;
(১০) "পরিবার" অর্থ রক্ত সম্বন্ধীয় বা বৈবাহিক সম্পর্কীয় কারণে অথবা দত্তক বা যৌথ
পরিবারের সদস্য হইবার কারণে যাহারা অংশীদারী বাসগৃহে একত্রে বসবাস করেন অথবা বসবাস করিতেন;
(১১) "পারিবারিক সম্পর্ক" অর্থ রক্ত সম্বন্ধীয় বা বৈবাহিক সম্প র্কীয় কারণে অথবা দত্তক বা যৌথ পরিবারের সদস্য হইবার কারণে প্রতিষ্ঠিত কোন সম্পর্ক;
(১২) "পারিবারিক সহিংসতা" অর্থ ধারা ৩ এ পারিবারিক সহিংসতা অভিব্যক্তিটি যে অর্থেব্যবহৃত হইয়াছে;
(১৩) "প্রতিপক্ষ" অর্থ এমন কোন ব্যক্তি যাহার বিরুদ্ধে এই আইনের অধীন কোন আবেদন দাখিল বা প্রতিকার প্রার্থনা করা হইয়াছে;
(১৪) "প্রয়োগকারী কর্মকর্তা" অর্থ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বা সরকার কতৃর্ক ধারা ৫ অনুসারে নিযুক্ত কোন কর্মকর্তা;
(১৫) "ফৌজদারী কার্যবিধি" অর্থ Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898);
(১৬) "বসবাস আদেশ" অর্থ ধারা ১৫ এর অধীন প্রদত্ত কোন আদেশ;
(১৭) "বিধি" অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;
(১৮) "শিশু" অর্থ আঠার বৎসর বয়স পূর্ণ হয় নাই এমন কোন ব্যক্তি;
(১৯) "সুরক্ষা আদেশ" অর্থ ধারা ১৪ এর অধীন প্রদত্ত কোন আদেশ।
দ্বিতীয় অধ্যায়
পারিবারিক সহিংসতা
পারিবারিক সহিংসতা
৩। - এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে পারিবারিক সহিংসতা বলিতে পারিবারিক সম্পর্ক রহিয়াছে এমন কোন ব্যক্তি কতৃর্ক পরিবারের অপর কোন নারী বা শিশু সদস্যের উপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বুঝাইবে।
ব্যাখ্যা : এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে-
(ক) "শারীরিক নির্যাতন" অর্থে এমন কোন কাজ বা আচরণ করা, যাহা দ্বারা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির জীবন, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা বা শরীরের কোন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হইবার সম্ভাবনা থাকে এবং সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে অপরাধমূলক কাজ করিতে বাধ্য করা বা প্ররোচনা প্রদান করা বা বলপ্রয়োগও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(খ) "মানসিক নির্যাতন" অর্থে নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহও অন্তর্ভুক্ত হইবে, যথা br />
(অ) মৌখিক নির্যাতন, অপমান, অবজ্ঞা, ভীতি প্রদর্শন বা এমন কোন উক্তি করা, যাহা দ্বারা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়;
(আ) হয়রানি; অথবা
(ই) ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ অর্থাৎ স্বাভাবিক চলাচল, যোগাযোগ বা ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা মতামত প্রকাশের উপর হস্তক্ষেপ;
(গ) "যৌন নির্যাতন" অর্থে যৌন প্রকৃতির এমন আচরণও অন্তর্ভুক্ত হইবে, যাহা দ্বারা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সম্ভ্রম, সম্মান বা সুনামের ক্ষতি হয়;
(ঘ) "আর্থিক ক্ষতি" অর্থে নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহও অন্তর্ভুক্ত হইবে, যথা -
(অ) আইন বা প্রথা অনুসারে বা কোন আদালত বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কতৃর্ক প্রদত্ত
আদেশ অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যে সকল আর্থিক সুযোগ-সুবিধা, সম্পদ বা সম্পত্তি লাভের অধিকারী উহা হইতে তাহাকে বঞ্চিত করা অথবা উহার উপর তাহার বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা প্রদান;
(আ) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র প্রদান না করা;
(ই) বিবাহের সময় প্রাপ্ত উপহার বা স্ত্রীধন বা অন্য কোন দান বা উপহার হিসাবে প্রাপ্ত কোন সম্পদ হইতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা বা উহার উপর তাহার বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা প্রদান;
(ঈ) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির মালিকানাধীন যে কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি তাহার অনুমতি ব্যতিরেকে হস্তান্তর করা বা উহার উপর তাহার বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা প্রদান; অথবা
(এ) পারিবারিক সম্পর্কের কারণে যে সকল সম্পদ বা সুযোগ-সুবিধাদিতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির ব্যবহার বা ভোগদখলের অধিকার রহিয়াছে উহা হইতে তাহাকে বঞ্চিত করা বা উহার উপর তাহার বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা প্রদান।
তৃতীয় অধ্যায়
পুলিশ অফিসার, প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এবং সেবা প্রদানকারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য ইত্যাদি
পুলিশ অফিসারের দায়িত্ব ও কর্তব্য
৪। যদি কোন পুলিশ অফিসার কোনভাবে পারিবারিক সহিংসতার সংবাদ প্রাপ্ত হন অথবা পারিবারিক সহিংসতা যে স্থানে ঘটিয়াছে সে স্থানে উপস্থিত থাকিবার কারণে পারিবারিক সহিংসতা সম্পর্কে তথ্য প্রাপ্ত হন, তাহা হইলে তিনি পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিকে নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ অবহিত করিবেন, যথাঃ-
(ক) এই আইন অনুসারে প্রতিকার পাইবার অধিকার;
(খ) চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির সুযোগ;
(গ) প্রয়োগকারী কর্মকর্তার নিকট হইতে সেবা প্রাপ্তির সুযোগ;
(ঘ) প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ (২০০০ সনের ৬ নং আইন) অনুসারে বিনা খরচে আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রাপ্তি;
(ঙ) অন্য কোন আইন অনুসারে প্রতিকার প্রাপ্তির উপায়; এবং
(চ) সরকার কর্তৃক বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন।
প্রয়োগকারী কর্মকর্তা নিয়োগ
৫। (১) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ক্ষেত্রমত, প্রত্যেক উপজেলা, থানা, জেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য এক বা একাধিক প্রয়োগকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করিতে পারিবে এবং প্রয়োগকারী কর্মকর্তা কর্তৃক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য তাহাদের অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করিয়া দিতে পারিবে।
(২) প্রয়োগকারী কর্মকর্তার নিয়োগ পদ্ধতি এবং চাকুরীর শর্তাবলী বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
প্রয়োগকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য
৬। (১) প্রয়োগকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হইবে নিম্নরূপ, যথা br />
(ক) এই আইন অনুসারে কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে আদালতকে সহযোগিতা করা;
(খ) পারিবারিক সহিংসতার ঘটনাবলী সম্পর্কে আদালতের নিকট প্রতিবেদন উপস্থাপন;
(গ) পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা অবহিত হইবার পর যে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অধিক্ষেত্রের মধ্যে ঘটনাটি সংঘটিত হইয়াছে সেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করা;
(ঘ) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অনুরোধের প্রেক্ষিতে আদালতের নিকট সুরক্ষা আদেশের জন্য আবেদন পেশ;
(ঙ) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যাহাতে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ (২০০০ সনের ৬ নং আইন) অনুসারে বিনা খরচায় আইনগত সহায়তা এবং বিনামূল্যে দরখাস্ত দাখিলসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করিতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান;
(চ) আদালতের অধিক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থিত আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা, মনস্তাত্বিক ও সামাজিক পরামর্শ সেবা প্রদানকারী, আশ্রয় নিবাস এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংরক্ষণ;
(ছ) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সম্মতি ও অভিপ্রায় অনুসারে তাহাকে আশ্রয় নিবাসে প্রেরণ এবং উক্তরূপ প্রেরণের বিষয়টি অধিক্ষেত্র সম্পন্ন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এবং আদালতকে অবহিতকরণ;
(জ) প্রয়োজন অনুসারে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করিয়া উহার অনুলিপি অধিক্ষেত্র সম্পন্ন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এবং আদালতকে অবহিতকরণ;
(ঝ) ক্ষতিপূরণ আদেশ প্রতিপালনের বিষয় নিশ্চিতকরণ; এবং
(ঞ) সরকার কর্তৃক বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন।
২। প্রয়োগকারী কর্মকর্তা আদালতের তত্ত্বাবধানে থাকিয়া সরকার বা আদালতের নির্দেশ এবং এই আইন অনুসারে তাঁহার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদন করিবে।
সেবা প্রদানকারী এবং উহাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
৭। (১) এই আইন এবং তদধীন প্রণীত বিধির বিধান সাপেক্ষে, Societies Registration Act, 1860 (Act No.XXI of 1860) এর অধীন নিবন্ধিত কোন স্বেচ্ছাসেবী সমিতি, Voluntary Social Welfare Agencies (Registration and Control) Ordinance, 1961 (Ordinance No. XLVI of 1961) অথবা কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন) এর অধীন নিবন্ধিত কোন অলাভজনক কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠান অথবা Foreign Donations (Voluntary Activities) Regulation Ordinance, 1978 (Ordinance No. XLVI of 1978) এর অধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধিত কোন অলাভজনক সংস্থা বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান, যাহা আপাততঃ বলবৎ কোন আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত এবং যাহার উদ্দেশ্যাবলীর মধ্যে মানবাধিকার বিশেষতঃ মহিলা ও শিশুদের স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণ অন্তর্ভুক্ত এবং যাহা উক্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নার্থে আইনগত সহায়তা, চিকিৎসা, আর্থিক বা অন্যকোন সহায়তা প্রদানের নিমিত্ত এই
আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করিয়াছে এইরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহ এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সেবা প্রদানকারী বলিয়া গণ্য হইবে।
(২) সেবা প্রদানকারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য হইবে নিম্নরূপ, যথা br />
(ক) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সম্মতির ভিত্তিতে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা নির্ধারিত ফরমে লিপিবদ্ধকরণ এবং সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রের আদালত এবং প্রয়োগকারী কর্মকর্তার নিকট অনুলিপি প্রেরণ;
(খ) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রের প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এবং থানায় প্রেরণ;
(গ) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে আশ্রয় নিবাসে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উক্তরূপ প্রেরণের বিষয়টি নিকটবর্তী থানাকে অবহিতকরণ;
(ঘ) সরকার কর্তৃক বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন।
আশ্রয় নিবাসের দায়িত্ব
৮। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তাহার পরে কোন পুলিশ অফিসার, প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী বা অন্য কোন ব্যক্তির অনুরোধের প্রেক্ষিতে আশ্রয় নিবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে আশ্রয় প্রদান করিবে।
চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীর দায়িত্ব
৯। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে কোন পুলিশ অফিসার, প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী বা অন্য কোন ব্যক্তির অনুরোধের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল, ক্লিনিক বা চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করিবে।
চতুর্থ অধ্যায়
সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অধিকার, প্রতিকার প্রাপ্তি, ইত্যাদি
অংশীদারী বাসগৃহে বসবাসের অধিকার
১০।
সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির পারিবারিক সম্পর্ক থাকিবার কারণে অংশীদারী বাসগৃহে বসবাসের অধিকার থাকিবে।
আদালতে আবেদন
১১। (১) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে কোন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী বা অন্য কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন প্রতিকার পাইবার জন্য আবেদন করিতে পারিবেন।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রতিটি আবেদন বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে করিতে হইবে।
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন আবেদন প্রাপ্তির ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে আদালত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদন শুনানীর জন্য তারিখ নির্ধারণ করিবে।
আবেদন দাখিলের স্থান
১২। এই আইনের অধীন কোন আবেদন নিম্নবর্ণিত স্থানের অধিক্ষেত্র সম্পন্ন কোন আদালতে দাখিল করা যাইবে-
(ক) যে স্থানে আবেদনকারী বসবাস করেন;
(খ) যে স্থানে প্রতিপক্ষ বসবাস করেন;
(গ) পারিবারিক সহিংসতা যে স্থানে সংঘটিত হইয়াছে; বা
(ঘ) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যেখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
অন্তবর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ ও নোটিশ জারী
১৩। (১) ধারা ১১ এর অধীন কোন আবেদন প্রাপ্তির পর আদালত যদি আবেদন পত্রের সহিত উপস্থাপিত তথ্যাদি পর্যালোচনা করিয়া এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, প্রতিপক্ষ কর্তৃক বা তাহার প্ররোচনায় কোনরূপ পারিবারিক সহিংসতা ঘটিয়াছে বা ঘটিবার সম্ভাবনা রহিয়াছে, তাহা হইলে আদালত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে অন্তব র্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ প্রদান করিতে পারিবে এবং কেন স্থায়ী সুরক্ষা আদেশ প্রদান করা হইবে না, নোটিশ প্রাপ্তির ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে, উহার কারণ দর্শাইবার জন্য প্রতিপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।
(২) রেজিস্টার্ড ডাকযোগে, জারী কারক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নোটিশ জারী করা যাইবে।
সুরক্ষা আদেশ
১৪। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ও প্রতিপক্ষকে শুনানীর সুযোগ প্রদান করিয়া আদালত যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, পারিবারিক সহিংসতা ঘটিয়াছে বা ঘটিবার সম্ভাবনা রহিয়াছে, তাহা হইলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির পক্ষে সুরক্ষা আদেশ প্রদান করিতে পারিবে এবং প্রতিপক্ষকে নিম্নবর্ণিত কাজ করা হইতে বিরত থাকিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে, যথা br />
(ক) পারিবারিক সহিংসতামূলক কোন কাজ সংঘটন;
(খ) পারিবারিক সহিংসতামূলক কাজ সংঘটনে সহায়তা করা বা প্ররোচনা প্রদান;
(গ) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির কর্মস্থল, ব্যবসা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অন্যকোন প্রতিষ্ঠান যেখানে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সচরাচর যাতায়াত করেন সে স্থানে প্রবেশ;
(ঘ) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সহিত ব্যক্তিগত, লিখিত, টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ই-মেইল বা অন্য কোন উপায়ে যোগাযোগ;
(ঙ) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল বা তাহার কোন আত্মীয় বা অন্যকোন ব্যক্তি, যিনি তাহাকে পারিবারিক সহিংসতা হইতে রক্ষার জন্য সহায়তা প্রদান করিয়াছেন উক্তরূপ ব্যক্তির প্রতি সহিংসতামূলক কাজ;
(চ) সুরক্ষা আদেশে উল্লিখিত অন্য যে কোন কাজ।
বসবাস আদেশ
১৫। (১) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত নিম্নরূপ বসবাস আদেশ প্রদান করিতে পারিবে, যথা br />
(ক) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যে অংশীদারী বাসগৃহে বা উহার যে অংশে বসবাস করেন সেই গৃহে বা অংশে প্রতিপক্ষকে বসবাস করিবার বা যাতায়াত করিবার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ;
(খ) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে অংশীদারী বাসগৃহ বা উহার কোন অংশ হইতে বেদখল করা বা ভোগ দখলে কোনরূপ বাধা সৃষ্টি সংক্রান্ত কার্য হইতে প্রতিপক্ষকে বারিত করা;
(গ) আদালতের নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, সুরক্ষা আদেশ বলবৎ থাকা অবস্থায় অংশীদারী বাসগৃহ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তাহার সন্তানের জন্য নিরাপদ নয়, তাহা হইলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সম্মতির প্রেক্ষিতে আদালত প্রয়োগকারী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির জন্য নিরাপদ আশ্রয় স্থানের ব্যবস্থা;
(ঘ) উপযুক্ত বলিয়া বিবেচিত হইলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির জন্য অংশীদারী বাসগৃহের বিকল্প বাসস্থান বা অনুরূপ বাসস্থানের জন্য ভাড়া প্রদানের জন্য প্রতিপক্ষকে নির্দেশ;
(ঙ) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে প্রয়োগকারী কর্মকর্তাসহ অংশীদারী বাসগৃহে প্রবেশের অনুমতি প্রদানের আদেশ, যাহাতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উক্ত বাসগৃহ হইতে তাহার ব্যক্তিগত ও মালিকানাধীন জিনিস পত্র, যেমন- চিকিৎসা, শিক্ষা ও পেশাগত দলিলাদি ও সনদপত্রসহ যে কোন ধরনের দলিল, পাসপোর্ট, চেক বই, সঞ্চয়পত্র, বিনিয়োগ ও ব্যাংক হিসাব এবং আয়কর সম্পর্কিত কাগজপত্র, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন, গৃহস্থালী জিনিসপত্র এবং অন্যান্য যে কোন সামগ্রী সংগ্রহ করিতে পারেন;
(চ) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কতৃর্ক ব্যবহৃত এবং ব্যয় বহনকৃত যানবাহন ব্যবহার অব্যাহত রাখিবার নিমিত্ত প্রতিপক্ষকে আদেশ প্রদান।
(২) অংশীদারী বাসগৃহের সম্পূর্ণ বা অংশ বিশেষ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অনুকূলে দখলে রাখিবার আদেশ প্রদান করা হইলেও উক্ত আদেশ উক্ত বাসগৃহে প্রতিপক্ষের স্বত্ব ও স্বার্থকে ক্ষুন্ন করিবে না।
(৩) যদি আদালতের এই মর্মে বিশ্বাস করিবার যুক্তিসংগত কারণ থাকে যে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করিবার জন্য প্রতিপক্ষকে অংশীদারী বাসগৃহ হইতে সাময়িকভাবে উচ্ছেদ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে আদালত প্রতিপক্ষকে অংশীদারী বাসগৃহ হইতে সাময়িক উচ্ছেদের আদেশ প্রদান করিতে পারিবে :
তবে শর্ত থাকে যে, এইরূপ আদেশ অকার্যকর হইবে, যদি-
(ক) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির জন্য সুবিধাজনক নিরাপদ আশ্রয় বা নিরাপদ স্থান বা বিকল্প বাসগৃহ প্রদান করা সম্ভব হয়; অথবা
(খ) আদালতের নিকট সন্তোজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, উক্তরূপ উচ্ছেদ আদেশ বহাল রাখিবার আর কোন প্রয়োজন নাই।
(৪) আদালতের নিকট উপযুক্ত বলিয়া বিবেচিত হইলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তাহার সন্তান অথবা তাহার পরিবারের অন্য কোন সদস্যের নিরাপত্তার স্বার্থে অন্য যে কোন শর্ত আরোপ বা নির্দেশনা প্রদান করিতে পারিবে।
(৫) প্রতিপক্ষকে জামানতসহ বা জামানত ব্যতীত এই মর্মে মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দিতে পারিবে যে, তিনি বা তাহার পরিবারের অন্য কোন সদস্য ভবিষ্যতে পারিবারিক সহিংসতামূলক কাজ করিবেন না।
(৬) উপ-ধারা (১), (২) অথবা (৩) এর অধীন আদেশ প্রদানের সময় আদালত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তাহার সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিবার লক্ষো সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
(৭) আদালত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির মালিকানাধীন যে কোন স্থাবর সম্পত্তি, স্ত্রীধন, উপহার সামগ্রী বা বিবাহের সময় অর্জিত যে কোন সম্পদ এবং অস্থাবর সম্পত্তি, মূল্যবান দলিল, সনদ এবং অন্য কোন সম্পদ বা মূল্যবান জামানত তাহাকে ফেরত প্রদান করিবার জন্য প্রতিপক্ষকে আদেশ দিতে পারিবে।
ক্ষতিপূরণ আদেশ
১৬। (১) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষতি হইলে বা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকিলে, ধারা ১১ এর অধীন আবেদনের সহিত অথবা পরবর্তীতে পৃথক দরখাস্তের মাধ্যমে আদালতের নিকট ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করা যাইবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন আবেদন প্রাপ্তির ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে আদালত উক্ত আবেদন নিষ্পত্তি করিবে।
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রাপ্ত আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে পক্ষসমূহকে শুনানীর সুযোগ প্রদান করিয়া, উপ-ধারা (৪) এর বিধান সাপেক্ষে, আদালত যেরূপ উপযুক্ত মনে করিবে সেইরূপ আর্থিক ক্ষতিপূরণ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে প্রদানের জন্য প্রতিপক্ষকে আদেশ দিতে পারিবে।
(৪) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রাপ্ত আবেদন নিষ্পত্তির পূর্বে ক্ষতির।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।