যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই কিছুদিন ধরে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছি। কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগেনা। ভালো লাগেনা বললে ভুল হবে; আসলে কথা বলতে হলে মুখ খুলতে হবে, মুখ খুললেই দাঁতে ব্যাথা শুরু হবে। আর সেই ব্যাথা মুখ থেকে শুরু হয়ে কানের নীচে পর্যন্ত অবশ করে দেয়।
খেতে পারছিনা বললে ভুল হবে।
খাচ্ছি টমেটো সুপ, ডালের মতো রাধা খিচুড়ী, আর জাউ। মুখ আসলে খুলতেই পারছিনা। মুখের বামদিক ফুলে ঢোলের মতো হয়ে গেছে, সঙ্গে টন্সিলটাও ফুলেছে। পেইন কিলার খেতে খেতে আর পেইন কিলারে কাজ হচ্ছে না। রক্ত পড়ছে দগ দগ করে।
এত বড় বর্ণনা দেখে সবার মনে হবে, না জানি কি হয়েছে। আসলে আমার মুখের বামদিকের আক্কেল দাঁতের অপারেশন হয়েছে। দাঁতের অপারেশন যে এত ভয়াবহ হতে পারে এই অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। চার বছর ধরে আক্কেল দাঁত উঠছে। আর ব্যাথায় ভুগছি।
ডাক্তারের কাছে যাবার পর, তিনি ঘোষনা দিলেন, চারটি দাঁতই ফেলে দিতে হবে। অগত্যা, অপারেশন করাতেই হলো। শত চেষ্টায়ও আক্কেল দাঁতগুলো রক্ষা করা গেলো না।
অপারেশনের বর্ণনা না দিয়েও পারছিনা। ঢাকায় যখন দাঁতের ফিলিং করিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম অপারেশন ব্যাপারটা এমন কিছুই হবে।
কিন্তু আমার উপর যখন এক মহিলা ডাক্তার আর তার এসিসটেন্ট ঝাপিয়ে পড়লো; তখন টের পেলাম কোন ভয়াবহ ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে।
এনেস্থেসিয়া দেয়ার পরও ব্যাথা পাচ্ছি। পর পর তিনবার নীচের পাটি এবং উপরের পাটিতে এনেস্থেসিয়া দেয়া হলো। ব্যাথায় মুখ কুঁচকে যাচ্ছে। ডাক্তার মুখ যত ডানে নিতে বলে, আমি ততো বামে নেই।
এবার তিনজন মিলে আমাকে শক্ত করে ধরলো। চোখের উপর কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলো। মনে হলো, ড্রিল মেশিন দিয়ে কেউ গর্ত খুড়ছে। উপরের মাড়িটা কেটে ফেলা হলো, কারন দাঁতটা বেরই হয় নাই।
সহজে দাঁত ফেলতে পারছেনা, তাই ডাক্তার জার্মান ভাষায় বলতে লাগলেন, এর ঘাড়টা অনেক ছোট।
এত ছোট ঘাড়ের মানুষের দাঁত তোলা সহজ কাজ নয়। ভীষণ অপমানিত আমিও বললাম, হ্যা, আমার ঘাড় ছোট। এখন কি ঘাড় বড় করার কোন উপায় আছে?
আমার ঠোটের একপাশ ছিড়ে ফেলেছে। মনে হচ্ছিলো, বাম দিকের গালটা কেটে নিতে পারলে ভদ্রমহিলার সুবিধাই হতো।
অবশেষে এক ঘন্টা যুদ্ধ করে আমার মুখের বাম দিকের আক্কেল দুটো দাঁত ফেলতে তিনি সমর্থ হলেন।
আসলে ভদ্রমহিলার বয়স বেশি হওয়ায় তার হাত কাঁপছিলো বলে গোপন সুত্রে জানতে পারি।
এখন ব্যাথা নিয়ে দিন কাটাচ্ছি আর ঘুমের ভেতর নানারকম সুস্বাদু খাবারের স্বপ্ন দেখছি। যেসব খাবার সচারচর খাই না, সেসব খাবারকেও সুস্বাদু মনে হচ্ছে।
কিছুদিনের মাঝেই দ্বিতীয় অপারেশনের দিন ঘনিয়ে আসছে। আর আতঙ্ক বাড়ছে।
মনে পড়ছে সেই অপারেশন থিয়েটারের ভয়াবহ স্মৃতি আর বৃদ্ধ ডাক্তারের কাঁপা কাঁপা মুখ। মনে হচ্ছে পালিয়ে যাই।
না না । । এই যুদ্ধে আমাকে জিততেই হবে।
জয়ী আমি হবোই। আক্কেল দাঁতের অপারেশন বুঝি একেই বলে !!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।