আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুড়োর চোখে জল

লিখি বাড়ির উঠানে দ্বীপের মত একটা অতিথি ঘর। আঞ্চলিক নাম বারবারি ঘর। ছানি পড়া একজন বৃদ্ধ বারবারি ঘরের পাশে রাখে খড়ের গাঁদায় মাথা এলিয়ে ডুকরে কাঁদছে। বড় কষ্ট হচ্ছে তার। বাদামী চোখের কোটর থেকে পানি বের হয়ে নেমে আসছে গালের নিচে।

তার দৃষ্টির সবটুকুই পানির পর্দায় ঘিরে আছে। জানি না এ কিসের ব্যথা । কপালে হাত রেখে আছে, নেমে আসা পানি মুছে দেবার কেউ নেই। বৃদ্ধ ভাঙাচোরা এই কঙ্কালসার মানুষটির কী কষ্ট? আমি তখন তার সঙ্গে মিল পেয়ে যাই ত্রিশোর্ধ আঙ্গুরীজানের। দেগযুগ আগে দশ দশটি মাস গর্ভে সন্তান রেখে, নিজ হাতে কাঁথা সেলাই করে, ঘর লেপে মুছে অঙ্গুরী অপেক্ষায় ছিল, আর শীতের এক রাত্রিতে তার খিঁচুনি আসে।

ফলশ্রুতিতে নবজাতকটি বের হয়ে এসেছিল নির্জীব হয়ে। বৃদ্ধের সঙ্গে কিছুটা মেলে বাসু পাগলার। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। আধাউলঙ্গ শরীরটা বাজারের চালের আড়তের সামনে রাখা চটে ঘুমিয়ে পড়লে পথের শিশুরা তাকে টেনে তুলত। পাগলের ক্ষেপে যাওয়া উপভোগ্য।

তবে পাগলদের চোখে পানি থাকে না। কিন্তু একদিন বড় সাহেবের বাড়ির সামনে জলবিয়োগের অভিযোগে প্রহরীর বেত তাকে রক্তাক্ত করে। শরীরের কষ্ট বাসু বুঝে পাগলা বুঝতে পারে। সে কুঁকড়ে থেকে চিৎকার করে গালি দেয় কাউকে। আমি বাড়ি যাবার পথে যখন দেখছিলাম ভুলতে পারি নি দীর্ঘদিন।

অশ্রু-গ্রন্থির সঙ্গে ব্যথার সম্পর্কটা ছাড়া ছাড়া। পত্রিকার পাতায় লেখা আছে, কুল মান ছেড়ে যে কিশোরী পুরুষের সঙ্গে বিদেশে আসে, তার প্রেম কুড়ি টাকার দশটা নোটের কাছে বিক্রি হয়। আমি জেনেছি, সেই কিশোরীর চোখে পানি আসে নি। হয়তো ঘৃণার ব্লটিং পেপার চোখের কৈলাস হিমবাহ শুষে নেয়। বিদেশের প্লেন থেকে ছেলের লাশ নামতে দেখে মা যেমন স্তব্ধ হয়।

শুকনো থাকে তার চোখ। অতিরিক্ত জল নি:স্বরণ ঠেকাতেই কি এমন হয়? দিন মেঘ ছেয়ে গেছে। মেঘের আজ ঝরে পড়ার কথা অথচ অঝোর ধারায় কাঁদছে সেই বৃদ্ধটি। এই গ্রামের কোথাও তাকে দেখি নি। শুধু খড়ের গাঁদা ঝুপরে উঠছে তার কান্নায়! -- ড্রাফট ১.০/ মুক্তগদ্য! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।