এটা আমার রাজত্ব
কাক ডাকা ভোর। সূর্য এখনও তার চেহারা পৃথিবীকে দেখায়নি। তাই ঘরটা খানিকটা অন্ধকার। মোবাইল এর অ্যালার্ম টাও বেরসিক ভাবে বেজে চলেছে অবিরাম। শীতের এই সকালে অত্যাচারটা ভাল লাগল না রাসিদের।
অন্য যে কোনদিন এত অত্যাচারের মাঝেও এমন ঘুমন্ত পরিবেশে ওর ঘুম কখনও ভাঙ্গেনা। তবে আজ কেন যেন ঘুম ভেঙ্গে গেল। অনেক এপাশ ওপাশ করেও ঘুম এর কোন সিগন্যাল পেলনা রাসিদ। অগত্যা ঘুম থেকে উঠতে হল তার। প্রচণ্ড শীত।
কাথার নিচ থেকে বের হয়েই এক প্রকার বিপদে পড়ল সে। আগের সন্ধ্যায় গ্রাম থেকে ফিরেছে সে। শরীর প্রচণ্ড ক্লান্ত। কোন রকমে বাথরুমে গিয়ে কল ছাড়ল রাসিদ। পানি মুখে ছিটাতেই মনে হল ওর মুখের শিরাগুলো যেন জমে গিয়েছে।
তবু গোঁয়ার এর মত করে ফ্রেশ হয়ে নিল রাসিদ ওই ঠাণ্ডা পানি দিয়েই। ঘরে ফিরে ঘড়িতে দেখল সকাল ৬ টা বাজে। ‘আজ ভার্সিটিতে যাওয়া যেতেই পারে’ মনে মনে ভাবল রাসিদ। তার ক্লাসমেট দের মধ্যে সেই একমাত্র ছাত্র যে কি না নিয়মিত ভাবে অনিয়মিত তার ক্লাসে। ভার্সিটির সবাই যদি একটিভ হয় তবে সে একমাত্র প্যাসিভ ছাত্র।
৭ টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি যায় টার বাসার পাশ দিয়ে। সেই বাসে যাবে বলেই মনস্থির করল রাসিদ।
প্রায় এক মাস পর ভার্সিটিতে যাওয়া হবে, বন্ধুদের কি কি মন্তব্য হজম করতে হবে তার একটা খসড়া মনে মনে তৈরি করতে প্রস্তুত হতে লাগল সে। ৬-৩০ বাজে ঘড়িতে অ্যালার্ম টা আবার কর্কশ ভঙ্গিতে জানিয়ে দিল তাকে। রাসিদ ভাবল বেরিয়ে পড়াই যায়।
যেই ভাবা সেই কাজ। কালবিলম্ব না করে বেরিয়ে পরল সে। কাধে একটা ব্যাগ আর কানে কান টুপি পড়ে হেলে দুলে বাস স্ট্যান্ডের দিকে রওনা দিল সে। পরনে একটা মোটা জ্যাকেট, তাতেও শীত মানছিলনা তার। তবে তাকে কিম্ভুতকিমাকার লাগছিল, কারন সে এমনিতেও মোটা।
তার উপর আরেকটা মোটা জ্যাকেট থাকায় মনে হচ্ছিল সে যেন এস্কিমদের দেশ থেকে এসেছে।
বাসার থেকে বাস স্ট্যান্ডের দূরত্ব অল্প। তাই কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌঁছে গেল সে তার গন্তব্যে। রাসিদের প্রথম কাজ হল তার আশে পাশে কে কে আছে টা একটু দেখে নেওয়া। এদিনও ব্যাতিক্রম হলনা।
তিনটা মেয়ে পাশা পাশি দাড়িয়ে আছে। গল্প করছে। দুই জন কে সে চেনে। তৃতীয় জন একটু ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বলে তাকে চিনতে পারলনা রাসিদ। যেহেতু পরিচিত কেউ নাই তাই একা একা বাস আসার পথের দিকে তাকিয়ে রইল সে।
‘দেখ, ছেলেটা কিভাবে ঝুলে ঝুলে যাচ্ছে’ পাশ থেকে ওই মেয়েগুলোর মধ্য থেকে কেউ বলে উঠল। কণ্ঠটা খুব মিষ্টি আর নরম। রাসিদ লক্ষ্য করল ওই মেয়েগুলোর দিকে। তিন নম্বর মেয়েটা তখনও অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিল। রাসিদ বুঝতে পারল কণ্ঠ টা তারই।
কারন বাকি দুইজনের কণ্ঠ তার ভালভাবেই চেনা। তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য একটু কাশল সে। এতক্ষনে মেয়েটা ফিরে তাকাল এদিকে। রাসিদ অপলকে তাকিয়ে রইল তার দিকে। সত্যি বলতে সকালের ওই পবিত্র সময়ে তার সামনে সোনালী নয়না এক সুন্দরিকে দেখার জন্য সে প্রস্তুত ছিলনা।
মেয়েটির স্বর্ণাভ চোখ, গোলাপের পাপড়ির মত লাল ঠোঁট, গৌর বর্ণ চেহারা মুহূর্তেই তার মস্তিষ্কে একটা আঘাত হানল। আর তার শরীরে জড়ানো লাল চাদর দেখে মনে হচ্ছিল যে ওর সামনে এক রাঙ্গা গোলাপ দাড়িয়ে আছে যে কিনা ঈশ্বরের নিজ হাতে তৈরি। অদ্ভুত এক মায়া গ্রাস করল তার মনকে। রাসিদ বুঝল এই মেয়েকে ছাড়া হয়ত সে বাচতেই পারবেনা। এরই মধ্যে বাস এসে হাজির হয়ে গেল।
বাসে উঠলেও তার চোখ শুধু খুজে ফিরতে লাগল সেই সোনালী নয়না কে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।