বুধবার উদ্ধারকারী সেনা কর্মকর্তাদের দেয়া অনুযায়ী এখনো ১৪৯ জনের নিখোঁজ থাকার কথা বলা হলেও অপেক্ষমান স্বজনদের সংখ্যা বলছে ভিন্ন কথা।
উদ্ধার অভিযানের দশম দিনেও ধ্বংসস্তূপ, সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও এনাম মেডিকেল কলেজ হানপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভিড় লেগে আছে স্বজনহারাদের। ভবন ধসের পর থেকেই প্রিয়জনদের ছবি নিয়ে খুঁজে ফিরছেন তারা।
উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্বে থাকা সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী জানিয়েছেন, শুক্রবার প্রথম প্রহর থেকে অর্ধশতাধিক মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন তারা।
সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস ও রেড ক্রিসেন্টের উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে কংক্রিট সরানোর পাশাপাশি লাশের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন।
উদ্ধার করা লাশগুলো স্বজনদের সনাক্ত করার জন্য নেয়া হচ্ছে সাভারের অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। সেখানে অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত পুলিশ উপ পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন জানান, শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত হস্তান্তর করা হয়েছে ৪০৩ জনের লাশ।
পচন ধরায় কিছু লাশ আগেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়, যাদের মধ্যে পরিচয় না পাওয়া ৩২ জনকে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলার আকিরন বেগম মেয়ের লাশ সামনে পেয়েও চিনতে পারছিলেন না। চেহারা দেখেও বোঝার উপায় নেই মমতাজ (৩০) তার সামনে লাশ হয়ে পড়ে আছে।
অবশেষে জামা-কাপড়, হাত ও পায়ের আঙ্গুল দেখে প্রিয় সন্তানের লাশ সনাক্ত করেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, ভবন ধসের সময় মমতাজ চার তলায় ছিল। কাজ করতেন অপারেটর পদে। স্বামীত্যাগী মমতাজ একমাত্র ছেলে মুন্নাকে মানুষ করার জন্য গার্মেন্টে চাকরি নেয়।
আর দশদিনেও নিখোঁজ নিশি খাতুনের খোঁজ পাননি তার স্বজনরা।
নিশিকে না পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন মা মঞ্জুয়ারা বেগম।
বাবা ইউসুফ আলী বলেন, অসচ্ছল সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে গার্মেন্টে চাকরি নিয়েছিলেন নিশি খাতুন (১৪)। একমাস আগে সে ঢাকায় এসেছিল। পহেলা এপ্রিল থেকে রানা প্লাজার সপ্তম তলায় কাজে যোগ দেয়।
প্রথম মাসের বেতনের টাকা তুলে দিতে চেয়েছিলে মায়ের কাছে।
কিন্তু সেই টাকা না তুলেই সে এখনও ধংসস্তূপে চাপা পড়া লাশ।
ইউসুফ বলেন, “আমি একজন রিকশা চালাই। মাইয়ারে না পাইয়া ওর মা পাগল হয়ে গেছে। তারে পাবনা মানসিক হাসপাতলে ভর্তি করা হইছে। ”
রংপুর জেলার পীরগাছা থানার তৈয়বমোজা গ্রামের আকবর আলীর মেয়ে রোকসানার কথা কে বলবে! রানা প্লাজার চতুর্থ তলায় সুইং অপারেটর পদে কাজ করতো রোকসানা।
খোঁজ পাওয়া যায়নি ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার টাবনি গ্রামের রোকেয়া আক্তারের। তার ছবি বুকে ঝুলিয়ে ধংসস্তূপের সামনে অপেক্ষা করছেন স্বামী এনামুল হক।
ক্ষুব্ধ কন্ঠে বললেন, “আর কতদিন অপেক্ষা করবো। এভাবে উদ্ধারকাজ চালালে তো লাশও চিনতে পারবো না। ”
কামাল হোসেন এসেছেন নেত্রকোনার বানিয়াজুড়া গ্রাম থেকে।
মেয়ে পলি আক্তারের (২২) ছবি বুকে তিনিও ঘুরে ফিরছেন। সন্ধান নেই। তার ধারণা, ধংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে মেয়ের নিথর দেহ।
শনিবার রাত পর্যন্ত গত ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজায় ধসের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে এ পর্যন্ত উদ্ধার করা লাশের সংখ্যা বেড়ে ৫২৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।