আমি ভাবতে চাই শান্তভাবে নিস্তব্ধতায়, সুবিস্তৃত পটভূমিতে, নির্বিঘ্নে, নিদ্রাতুর চেতনে, এক থেকে অন্য আরেকটিতে ছলকে যাব বলে, কোন প্রতিকুল বা প্রতিবন্ধক অনুভুতি ছাড়াই , ডুবে যেতে চাই গভীর থেকে গভীরতায়, পায়ের তলা থেকে বহুদুরে, নির্মম পৃথক বিচ্ছিনতায় ... সঙ্গতি
শহীদ কাদরী
(অমিয় চক্রবর্তী, শ্রদ্ধাস্পদেষু)
বন্য শূকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদা
মাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ,
কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে শাদা
ঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচ
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...
একাকী পথিক ফিরে যাবে তার ঘরে
শূন্য হাঁড়ির গহ্বরে অবিরত
শাদা ভাত ঠিক উঠবেই ফুটে তারাপুঞ্জের মতো,
পুরোনো গানের বিস্মৃত-কথা ফিরবে তোমার স্বরে
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...
ব্যারাকে-ব্যারাকে থামবে কুচকাওয়াজ
ক্ষুধার্ত বাঘ পেয়ে যাবে নীলগাই,
গ্রামান্তরের বাতাস আনবে স্বাদু আওয়াজ
মেয়েলি গানের- তোমরা দু'জন একঘরে পাবে ঠাঁই
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...
-(কাব্যগ্রন্থ : কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই)
তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা
শহীদ কাদরী
ভয় নেই
আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী
গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে
মার্চপাস্ট করে চলে যাবে
এবং স্যালুট করবে
কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো
বন-বাদাড় ডিঙ্গিয়ে
কাঁটা-তার, ব্যারিকেড পার হয়ে, অনেক রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে
আর্মার্ড-কারগুলো এসে দাঁড়াবে
ভায়োলিন বোঝাই করে
কেবল তোমার দোরগোড়ায় প্রিয়তমা।
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো-
বি-৫২ আর মিগ-২১গুলো
মাথার ওপর গোঁ-গোঁ করবে
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো
চকোলেট, টফি আর লজেন্সগুলো
প্যারাট্রুপারদের মতো ঝরে পড়বে
কেবল তোমার উঠোনে প্রিয়তমা।
ভয় নেই...আমি এমন ব্যবস্থা করবো
একজন কবি কমান্ড করবেন বঙ্গোপসাগরের সবগুলো রণতরী
এবং আসন্ন নির্বাচনে সমরমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায়
সবগুলো গণভোট পাবেন একজন প্রেমিক, প্রিয়তমা!
সংঘর্ষের সব সম্ভাবনা, ঠিক জেনো, শেষ হবে যাবে-
আমি এমন ব্যবস্থা করবো, একজন গায়ক
অনায়াসে বিরোধীদলের অধিনায়ক হয়ে যাবেন
সীমান্তের ট্রেঞ্চগুলোয় পাহারা দেবে সারাটা বৎসর
লাল নীল সোনালি মাছি-
ভালোবাসার চোরাচালান ছাড়া সবকিছু নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, প্রিয়তমা।
ভয় নেই আমি এমন ব্যবস্থা করবো মুদ্রাস্ফীতি কমে গিয়ে বেড়ে যাবে
শিল্পোত্তীর্ণ কবিতার সংখ্যা প্রতিদিন
আমি এমন ব্যবস্থা করবো গণরোষের বদলে
গণচুম্বনের ভয়ে
হন্তারকের হাত থেকে পড়ে যাবে ছুরি, প্রিয়তমা।
ভয় নেই,
আমি এমন ব্যবস্থা করবো
শীতের পার্কের ওপর বসন্তের সংগোপন আক্রমণের মতো
অ্যাকর্ডিয়ান বাজাতে-বাজাতে বিপ্লবীরা দাঁড়াবে শহরে,
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো
স্টেটব্যাংকে গিয়ে
গোলাপ কিম্বা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে
একটি বেলফুল দিলে চারটি কার্ডিগান।
ভয় নেই, ভয় নেই
ভয় নেই,
আমি এমন ব্যবস্থা করবো
নৌ, বিমান আর পদাতিক বাহিনী
কেবল তোমাকেই চতুর্দিক থেকে ঘিরে-ঘিরে
নিশিদিন অভিবাদন করবে, প্রিয়তমা।
কেন যেতে চাই
শহীদ কাদরী
আমি তোমাদেররই দিকে যেতে চাই
ঝকঝকে নতুন একটি সেতু
যেমন নদীর পাড়ে দাঁড়ানো ঐ লোকগুলোর কাছে পৌছে যেতে চায়
কিন্তু তামা ও পিতলসহ বাসন-কোসন,চিড়ে-গুড় ইত্যাদি গোছাতে
তোমরা ব্যস্ত,বড্ড ব্যস্ত।
মাঝে মাঝে দূর থেকে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে তোমাদের ব্যস্ততা দেখতে
ভালবাসি।
সমুদ্র তরঙ্গগুলো সমুদ্রকে নিয়ে এ্যাতো ব্যস্ত নয়,
অরণ্যের অভ্যন্তরে ক্ষুধার্ত,স্বাধীন বাঘ হরিণের জন্য এ্যাতো
ব্যস্ত নয়,
দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রেমিকের হাত ব্রেসিয়ারের ভেতর এ্যাতো
ব্যস্ত নয়,
আমি তোমাদেররই দিকে যেতে চাই
শীতের পর প্রথম উল্টাপাল্টা বাতাস যেমন
প্রত্যেকটি ফাঁক-ফোকর এবং রন্ধ্র দিয়ে যেতে চায় তোমাদের
চোখে-মুখে-চুলে
কিন্তু তৈজসপত্র রঙ,টেবিল চেয়ারের ঢঙ,জানালার পর্দা
ইত্যাদি
বদলাতে,গোছগাছ করতে
তোমরা ব্যস্ত,বড্ড বেশি ব্যস্ত।
ক্বচিৎ-কখনো খুব কাছ থেকে তোমাদের প্রচন্ড ব্যস্ততা আমি দেখি,
দিগন্ত আঁধার-করা সজল শ্রাবণও বৃষ্টি ঝরানোর জন্য
অমন ব্যস্ত নয়,
তাক-করা রাইফেলের অমোঘ রেন্জ থেকে উড়ে পালানোর জন্য
হরিয়ালের ঝাঁকও অমন ব্যস্ত নয়,
কর্কট-রোগীর দেহে ক্যান্সারের কোষগুলো ছড়িয়ে পড়ার জন্য
অমন ব্যস্ত নয়,
আমি তো তোমাদেরই দিকে যেতে চাই
ইন্দ্রনীল একটি মোহন আংটি
প্রেমিকের কম্পমান হাত থেকে প্রেমিকার আঙ্গুলে যেমন
উঠে যেতে চায়,
কিন্তু চাষাবাদ,বানিজ্য এবং প্রতিযোগিতামূলক শিল্প
ইত্যাদি বিষয় নিয়ে
তোমরা ব্যস্ত,বড্ড বেশি ব্যস্ত।
হরিণ-হননকারী ব্যাধের মাংসল মুঠো থেকে ছুটে-যাওয়া
বল্লমের মতো তোমরা ব্যস্ত
দিগভ্রান্ত তৃষ্ণার্ত পথিককে গিলে ফেলার জন্য উত্তর বাংলার
চোরাবালির মতো তোমরা ব্যস্ত
চিরচেনা বৃক্ষরাজিকে পল্লবশূন্য করার জন্য শীতের জটিল
বিস্তারের মতো তোমরা ব্যস্ত
যাত্রী নিয়ে ঘর-ফেরা নৌকাগুলো হরণ করার জন্য চোরাস্রোত
এবং ঘূর্ণিপাকের মতো তোমরা ব্যস্ত
তোমরা ব্যস্ত,তোমরা ব্যস্ত,তোমরা ব্যস্ত
তোমারা বড্ড বেশি ব্যস্ত
অথচ আমি তো আজীবন তোমাদেরই দিকে যেতে চাই।
কেন যেতে চাই!
প্রেম
শহীদ কাদরী
না,প্রেম সে কোনো ছিপছিপে নৌকা নয়-
যার চোখ,মুখ,নাক ঠুকরে খাবে
তলোয়ার- মাছের দঙ্গল,সুগভীর জলের জঙ্গলে
সমুদ্রচারীর বাঁকা দাঁতের জন্যে যে উঠেছে বেড়ে,
তাকে,হ্যাঁ,তাকে কেবল জিজ্ঞেস ক'রো,সেই বলবে
না,প্রেম সে কোনো ছিপছিপে নৌকা নয়,
ভেঙে-আসা জাহাজের পাটাতন নয়,দারুচিনি দ্বীপ নয়,
দীপ্র বাহুর সাঁতার নয়; খড়খুটো? তা-ও নয়।
ঝোড়ো রাতে পুরোনো আটাচালার কিংবা প্রবল বৃষ্টিতে
কোনো এক গাড়ি বারান্দার ছাঁট-লাগা আশ্রয়টুকুও নয়,
ফুসফুসের ভেতর যদি পোকা-মাকড় গুন্জন ক'রে ওঠে
না,প্রেম তখন আর শুশ্রূষাও নয়; সর্বদা,সর্বত্র
পরাস্ত সে; মৃত প্রেমিকের ঠান্ডা হাত ধ'রে
সে বড়ো বিহ্বল,হাঁটু ভেঙে- পড়া কাতর মানুষ।
মাথার খুলির মধ্যে যখন গভীর গূঢ় বেদনার
চোরাস্রোত হীরকের ধারালো- ছটার মতো
ব'য়ে যায়,বড়ো তাৎপর্যহীন হ'য়ে ওঠে আমাদের
ঊরুর উত্থান,উদ্যত শিশ্নের লাফ,স্তনের গঠন।
মাঝে মাঝে মনে হয় শীতরাতে শুধু কম্বলের জন্যে,
দুটো চাপাতি এবং সামান্য শব্জীর জন্যে
কিংবা একটু শান্তির আকাঙ্খায়,কেবল স্বস্তির জন্যে
বেদনার অবসান চেয়ে তোমাকে হয়তো কিছু বর্বরের কাছে
অনায়াসে বিক্রি ক'রে দিতে পারি-অবশ্যই পারি।
কিন্তু এখন,এই মুহূর্ত, এই স্বীকারোক্তির পর মনে হলো:
হয়তো বা আমি তা পারি না-হয়তো আমি তা পারবো না।
তালাকনামা
তসলিমা নাসরিন
যে কোনও দূরত্বে গেলে তুমি আর আমার থাকো না
তুমি হও যার-তার খেলুড়ে পুরুষ।
যে কোনও শরীরে গিয়ে
শকুনের মতো খুঁটে খুঁটে রূপ ও মাংস তুমি আহার করো
গণিকা ও প্রেমিকার শরীরে কোনও পার্থক্য বোঝো না।
কবিতার চে' চাতুর্য বোঝো ভাল,
রাত্রি এলে রক্তের ভেতর টকাশ-টকাশ দৌড়ে যায়
একশো একটা লাগামহীন ঘোড়া,
রোমকূপে পূর্বপুরুষ নেচে উঠে তাধিন-তাধিন।
আমি জোস্নার কথা তোমাকে অনেক বলেছি
তুমি অমাবস্যা ও পূর্ণিমার কোনও পার্থক্য বোঝো না।
ভালবাসার চে' প্রাচুর্য বোঝো বেশি
যে কারও গোড়ালির নীচ থেকে চেটে খাও
এক ফোঁটা মদ, লক্ষ গ্যালন মদে আমুণ্ডু ডুবে
তবু তোমার তৃষ্ণা ঘোচে না।
তোমাকে স্বপ্নের অথা অনেক বলেছি
সমুদ্র ও নর্দমার ভেতরে তুমি কোনও পার্থক্য বোঝো না।
যে কোনও দূরত্বে গেলে তুমি হও যার-তার খেলুড়ে পুরুষ।
যার-তার পুরুষকে আমি আমার বলি না।
কাব্যগ্রন্থঃনির্বাসিত নারীর কবিতা
"রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে লেখা চিঠি"
–তসলিমা নাসরিন
প্রিয় রুদ্র,
প্রযত্নেঃ আকাশ
তুমি আকাশের ঠিকানায়
চিঠি লিখতে বলেছিলে। তুমি কি এখন আকাশ জুড়ে থাকো?
তুমি আকাশে উড়ে বেড়াও? তুলোর মতো,
পাখির মতো? তুমি এই জগত্সংসার
ছেড়ে আকাশে চলে গেছো।
তুমি আসলে বেঁচেই গেছো রুদ্র। আচ্ছা,
তোমার
কি পাখি হয়ে উড়ে ফিরে আসতে ইচ্ছে করে না?
তোমার সেই ইন্দিরা রোডের বাড়িতে,
আবার সেই নীলক্ষেত, শাহবাগ, পরীবাগ,
লালবাগ চষে বেড়াতে? ইচ্ছে তোমার
হয় না এ আমি বিশ্বাস করি না,
ইচ্ছে ঠিকই হয়, পারো না। অথচ এক সময়
যা ইচ্ছে হতো তোমার তাই করতে।
ইচ্ছে যদি হতো সারারাত
না ঘুমিয়ে গল্প করতে – করতে।
ইচ্ছে যদি হতো সারাদিন
পথে পথে হাটতে – হাটতে।
কে তোমাকে বাধা দিতো? জীবন তোমার
হাতের মুঠোয় ছিলো। এই জীবন
নিয়ে যেমন ইচ্ছে খেলেছো। আমার
ভেবে অবাক লাগে, জীবন এখন তোমার
হাতের মুঠোয় নেই।
ওরা তোমাকে ট্রাকে উঠিয়ে মিঠেখালি রেখে এলো,
তুমি প্রতিবাদ করতে পারোনি।
আচ্ছা, তোমার লালবাগের সেই
প্রেমিকাটির খবর কি, দীর্ঘ বছর প্রেম
করেছিলে তোমার যে নেলী খালার
সাথে? তার উদ্দেশ্যে তোমার
দিস্তা দিস্তা প্রেমের
কবিতা দেখে আমি কি ভীষণ
কেঁদেছিলাম একদিন! তুমি আর
কারো সঙ্গে প্রেম করছো, এ আমার
সইতো না। কি অবুঝ বালিকা ছিলাম! তাই
কি? যেন আমাকেই তোমার
ভালোবাসতে হবে। যেন আমরা দু’জন
জন্মেছি দু’জনের জন্য। যেদিন
ট্রাকে করে তোমাকে নিয়ে গেলো বাড়ি থেকে,
আমার খুব দম বন্ধ লাগছিলো।
ঢাকা শহরটিকে এতো ফাঁকা আর
কখনো লাগেনি। বুকের মধ্যে আমার
এতো হাহাকারও আর কখনো জমেনি।
আমি ঢাকা ছেড়ে সেদিন
চলে গিয়েছিলাম ময়মনসিংহে। আমার
ঘরে তোমার
বাক্সভর্তি চিঠিগুলো হাতে নিয়ে জন্মের
কান্না কেঁদেছিলাম। আমাদের বিচ্ছেদ
ছিলো চার বছরের।
এতো বছর পরও
তুমি কী গভীর করে বুকের
মধ্যে রয়ে গিয়েছিলে! সেদিন আমি টের
পেয়েছি।
আমার বড়ো হাসি পায় দেখে,
এখন তোমার শ’য়ে শ’য়ে বন্ধু বেরোচ্ছে।
তারা তখন কোথায় ছিলো? যখন পয়সার
অভাবে তুমি একটি সিঙ্গারা খেয়ে দুপুর কাটিয়েছো। আমি না হয় তোমার বন্ধু নই,
তোমাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম বলে। এই
যে এখন তোমার নামে মেলা হয়, তোমার
চেনা এক আমিই বোধ হয় অনুপস্থিত
থাকি মেলায়।
যারা এখন রুদ্র রুদ্র
বলে মাতম করে বুঝিনা তারা তখন
কোথায় ছিলো?
শেষদিকে তুমি শিমুল নামের এক
মেয়েকে ভালোবাসতে। বিয়ের কথাও
হচ্ছিলো। আমাকে শিমুলের সব গল্প
একদিন করলে। শুনে …
তুমি বোঝোনি আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো।
এই ভেবে যে, তুমি কি অনায়াসে প্রেম
করছো! তার গল্প শোনাচ্ছো ! ঠিক এইরকম
অনুভব একসময় আমার জন্য ছিলো তোমার!
আজ আরেকজনের জন্য তোমার অস্থিরতা।
নির্ঘুম রাত কাটাবার গল্প শুনে আমার
কান্না পায় না বলো?
তুমি শিমুলকে নিয়ে কি কি কবিতা লিখলে তা দিব্যি বলে গেলে!
আমাকে আবার জিজ্ঞেসও করলে, কেমন
হয়েছে। আমি বললাম, খুব ভালো। শিমুল
মেয়েটিকে আমি কোনোদিন দেখিনি,
তুমি তাকে ভালোবাসো, যখন নিজেই
বললে, তখন আমার
কষ্টটাকে বুঝতে দেইনি।
তোমাকে ছেড়ে চলে গেছি ঠিকই কিন্তু
আর কাউকে ভালোবাসতে পারিনি।
ভালোবাসা যে যাকে তাকে বিলোবার
জিনিস নয়।
আকাশের সঙ্গে কতো কথা হয় রোজ!
কষ্টের কথা, সুখের কথা। একদিন
আকাশভরা জোত্স্নায়
গা ভেসে যাচ্ছিলো আমাদের। তুমি দু
চারটি কষ্টের কথা বলে নিজের
লেখা একটি গান শুনিয়েছিলে।
“ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের
ঠিকানায় চিঠি দিও”। মংলায়
বসে গানটি লিখেছিলে।
মনে মনে তুমি কার চিঠি চেয়েছিলে?
আমার? নেলী খালার? শিমুলের?
অনেকদিন ইচ্ছে তোমাকে একটা চিঠি লিখি।
একটা সময় ছিলো তোমাকে প্রতিদিন
চিঠি লিখতাম। তুমিও লিখতে প্রতিদিন।
সেবার আরমানিটোলার
বাড়িতে বসে দিলে আকাশের ঠিকানা।
তুমি পাবে তো এই চিঠি? জীবন
এবং জগতের তৃষ্ণা তো মানুষের
কখনো মেটে না, তবু মানুষ আর
বাঁচে ক’দিন বলো? দিন তো ফুরোয়।
আমার
কি দিন ফুরোচ্ছে না? তুমি ভালো থেকো।
আমি ভালো নেই।
ইতি,
সকাল
পুনশ্চঃ আমাকে সকাল বলে ডাকতে তুমি।
কতোকাল ঐ ডাক শুনি না। তুমি কি আকাশ থেকে সকাল, আমার সকাল বলে মাঝে মধ্যে ডাকো? নাকি আমি ভুল শুনি?
বাঁচো
তসলিমা নাসরিন
সত্য বললে কিছু লোক আছে খুব রাগ করে,
এখন থেকে আর সত্য বোলো না তসলিমা।
গ্যালিলিওর যুগ নয় এই যুগ, কিন্তু
এই একবিংশ শতাব্দীতেও
সত্য বললে একঘরে করে রাখে সমাজ,
দেশছাড়া করে দেশ।
গৃহবন্দী করে রাষ্ট্র,
রাষ্ট্র শাস্তি দেয়,
সত্য বোলো না।
তার চেয়ে মিথ্যে বলো,
বলো যে পৃথিবীর চারদিকে সূর্য ঘোরে,
বলো যে সূর্যের যেমন নিজের আলো আছে, চাঁদেরও আছে,
বলো যে পাহাড়গুলো পৃথিবীর গায়ে পেরেকের মতো পুঁতে দেওয়া,
বলো যে পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে নারীকে বানানো,
বলো যে নারীর ঘাড়ের কী যেন একটা খুব বাকা।
বলো যে শেষ-বিচারের দিনে মানুষেরা সব কবর থেকে,
ছাই থেকে, নষ্ট হাড়গোড় থেকে টাটকা যুবক যুবতী হয়ে
আচমকা জেগে উঠবে, স্বর্গ বা নরকে অনন্তকালের জন্য জীবন কাটাতে যাবে।
তুমি মিথ্যে বলো তসলিমা।
বলো যে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের অগুণতি গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্ররাজি মিথ্যে,
মাধ্যাকর্ষণ শক্তি মিথ্যে, মানুষ চাঁদে গিয়েছিল, মিথ্যে।
মিথ্যে বললে তুমি নির্বাসন থেকে মুক্তি পাবে,
তুমি দেশ পাবে, প্রচুর বন্ধু পাবে,
হাত পায়ের শেকল খুলে দেওয়া হবে, তুমি আলো দেখবে, আকাশ দেখবে।
একা একা অন্ধকারে হাঁমুখো মৃত্যুর মুখে ছুড়ে দেবে না তোমাকে কেউ।
তুমি সত্য বলো না তসলিমা,
বাঁচো।
আমি উঠে এসেছি সৎকারবিহীন
শামসুর রাহমান
একজন আধবুড়ো লোক, চাঁদকপালী গরু,
কতিপয় পাখি আর মুর্গির বাচ্চার জন্যে কান-খাড়া করা
বালক,
আকাশী রঙের শাড়িপরা বানডাকা নদীর মতো
এক তম্বী তৈরি করেছিলো চমৎকার দৃশ্য।
এখন সেখানে
হারিয়ে যাওয়ার নিঃস্ব হাহাকার।
ওরা কেউ আজ নেই, সাঁঝবাতি নিয়ে দাওয়ায়
দাঁড়াবে কে? ওরা যেন
অনেক আগেকার সুর, পুরনো সারিন্দায় বাজানো,
কোনো আনাড়ি বাদকের হাত থেকে নিঃসৃত।
যে-ভাষা নদীর, হাওয়ার, নদীতীরবর্তী কাশফুলের,
কবরের ঘাসের, যে ভাষা নীরবতার,
সে ভাষায় আমি আজ কথা বলছি
হে-নগরবাসী। হে-ঝাল্মলে শহরের নাগরিকবৃন্দ,
আমিও নেই,
তবু উঠে এসেছি, সৎকারবিহীন। আমি কোনো অভিযোগ
নিয়ে আসি নি, আমার কোনো দাবি নেই
সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে।
শুধু চাই,
একবার আমার দিকে তাকান
ভালো ক'রে, চোখ-কান খোলা রাখুন; আমিও
পুরুষোত্তমের মতো করাতে পারি বিশ্ব-দর্শন। কেউ
আমার প্রতি করুণা বর্ষণ করুন
চাই না আমি; সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আমি আসি,
চলে যাই হাওয়ার ঝাপ্টার মতো।
এখন অগি্ন আমাকে পোড়াতে পারে না, জলেরও ক্ষমতা নেই
আমাকে ডোবানোর, মাটি
করতে পারে না গ্রাস। আমার পায়ের পাতা নেই যে,
মাছ ঠোকরাবে, চোখের মণি নেই যে,
উপড়ে নেবে দাঁড়কাক, আমার মেদমজ্জা নেই যে
খুবলে নেবে শেয়াল-কুকুর।
অথচ দেখতে পাই সবকিছু, শুনতেও অসুবিধা হয় না;
যেখানেই যাই
কানে আসে বাঁচাও বাঁচাও ধ্বনি, অথবা হতে পারে
আমি নিজেই সেই ধ্বনি।
সারাক্ষণ দেখি,
একটা রেসকু্য বোট পাক খাচ্ছে মধ্যযুগের রাত্রির ঘূর্ণিস্রোতে,
কেবলি দূরে সরে যাচ্ছে আমার প্রসারিত হাত থেকে, বহু দূরে।
অথচ এখন আমার
কোনো রেসকু্য বোট কিংবা লাল বয়ার প্রয়োজন নেই।
খুব বেশিদিন কি বেঁচেছিলাম?
এখন আমি ভাবি একটা নিকনো উঠোনের কথা,
পুকুরে নুয়ে-পড়া ডাল, ডাগর লাউয়ের মাচান,
মাদুরে মনসুর বয়াতীর বয়েতের মতো শুয়ে-থাকা, নোলকপরা
বেতফলরঙ যুবতীর কথা, ধোঁয়া ওঠা
লাল্চে ভাত, সোনালি শুরুয়ায় ডুবে-থাকা
এক টুক্রো মাছের কথা। লোকে বলে,
গানের গলা ছিলো আমার আমি সেই গানের কথাও ভাবি।
কিন্তু আমার সব কিছু ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে,
এমনকি আমার কণ্ঠস্বরও।
আজ আমি
কথা বলি নদী, হাওয়া, কাশফুল কবরের ঘাস আর
নীরবতার ভাষায়।
অচেনা মানুষ
শারল বোদলেয়ার
‘বলো আমাকে রহস্যময় মানুষ, কাকে তুমি
সবচেয়ে ভালবাসো?
তোমার পিতা, মাতা, ভ্রাতা অথবা ভগ্নীকে?
পিতা, মাতা, ভ্রাতা অথবা ভগ্নী-কিছুই নেই আমার।
তোমার বন্ধুরা?
ঐ শব্দের অর্থ আমি কখনোই জানিনি।
তোমার দেশ?
জানি না কোন্ দ্রাঘিমায় তার অবস্থান।
সৌন্দর্য?
পারতাম বটে তাকে ভালবাসতে- দেবী তিনি অমরা।
কাঞ্চন?
ঘৃণা করি কাঞ্চন, যেমন তোমরা ঘৃণা করো ঈশ্বরকে।
বলো তবে, অদ্ভুত অচেনা মানুষ, কী ভালবাসো তুমি?
আমি ভালবাসি মেঘ,…..চলিষ্ণু মেঘ…….
উঁচুতে……..ঐ উঁচুতে……..
আমি ভালবাসি আশ্চর্য মেঘদল।
...
অনুবাদ-বুদ্ধদেব বসু
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য
হুমায়ুন আজাদ
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো
ছোট ঘাসফুলের জন্যে
একটি টলোমলো শিশিরবিন্দুর জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো চৈত্রের বাতাসে
উড়ে যাওয়া একটি পাঁপড়ির জন্যে
একফোঁটা বৃষ্টির জন্যে
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
দোয়েলের শিসের জন্যে
শিশুর গালের একটি টোলের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো চোখের মণিতে
গেঁথে থাকা একবিন্দু অশ্রুর জন্যে
একফোঁটা রৌদ্রের জন্যে
আমি সম্ভবতখুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
এক কণা জ্যোৎস্নার জন্যে
এক টুকরো মেঘের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো টাওয়ারের একুশ তলায়
হারিয়ে যাওয়া একটি প্রজাপতির জন্যে
এক ফোঁটা সবুজের জন্যে
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
খুব ছোট একটি স্বপ্নের জন্যে
খুব ছোট দুঃখের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো ঘুমের ভেতরে
একটি ছোটো দীর্ঘশ্বাসের জন্যে
একফোঁটা সৌন্দর্যের জন্যে
পরানের গহীন ভিতর
সৈয়দ শামসুল হক
আমি কার কাছে গিয়া জিগামু সে দুঃখ দ্যায় ক্যান,
ক্যান এত তপ্ত কথা কয়, ক্যান পাশ ফিরা শোয়,
ঘরের বিছন নিয়া ক্যান অন্য ধান খ্যাত রোয়?-
অথচ বিয়ার আগে আমি তার আছিলাম ধ্যান ।
আছিলাম ঘুমের ভিতরে তার য্যান জলপিপি,
বাশীঁর লহরে ডোবা পরানের ঘাসের ভিতরে,
এখন শুকনা পাতা উঠানের পরে খেলা করে,
এখন সংসার ভরা ইন্দুরের বড় বড় ঢিপি।
মানুষ এমন ভাবে বদলায়া যায়, ক্যান যায়?
পুন্নিমার চান হয় অমাবস্যা কিভাবে আবার?
সাধের পিনিস ক্যান রঙচটা রদ্দুরে শুকায়?
সিন্দুরমতির মেলা হয় ক্যান বিরান পাথার?
মানুষ এমন তয়,একবার পাইবার পর
নিতান্ত মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর।
প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার
মলয় রায়চৌধুরী
(এই কবিতাটি অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত এবং নিম্ন আদালতে দণ্ডিত হয়েছিল | উচ্চ আদালতে এই রায়
নাকচ হয়ে যায়, ২৬ জুলাই ১৯৬৭)
ওঃ মরে যাব মরে যাব মরে যাব
আমার চামড়ার লহমা জ্বলে যাচ্ছে অকাট্য তুরুপে
আমি কী কোর্বো কোথায় যাব ওঃ কিছুই ভাল্লাগছে না
সাহিত্য-ফাহিত্য লাথি মেরে চলে যাব শুভা
শুভা আমাকে তোমার তর্মুজ-আঙরাখার ভেতরে চলে যেতে দাও
চুর্মার অন্ধকারে জাফ্রান মশারির আলুলায়িত ছায়ায়
সমস্ত নোঙর তুলে নেবার পর শেষ নোঙর আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে
আর আমি পার্ছিনা, অজস্র কাঁচ ভেঙে যাচ্ছে কর্টেক্সে
আমি যানি শুভা, যোনি মেলে ধরো, শান্তি দাও
প্রতিটি শিরা অশ্রুস্রোত বয়ে নিয়ে যাচ্ছে হৃদয়াভিগর্ভে
শাশ্বত অসুস্থতায় পচে যাচ্ছে মগজের সংক্রামক স্ফুলিঙ্গ
মা, তুমি আমায় কঙ্কালরূপে ভূমিষ্ঠ করলে না কেন ?
তাহলে আমি দুকোটি আলোকবর্ষ ঈশ্বরের পোঁদে চুমু খেতুম
কিন্তু কিছুই ভালো লাগে না আমার কিছুই ভালো লাগছে না
একাধিক চুমো খেলে আমার গা গুলোয়
ধর্ষণকালে নারীকে ভুলে গিয়ে শিল্পে ফিরে এসেছি কতদিন
কবিতার আদিত্যবর্ণা মুত্রাশয়ে
এসব কী হচ্ছে জানি না তবু বুকের মধ্যে ঘটে যাচ্ছে অহরহ
সব ভেঙে চুরমার করে দেব শালা
ছিন্নভিন্ন করে দেব তোমাদের পাঁজরাবদ্ধ উত্সব
শুভাকে হিঁচড়ে উঠিয়ে নিয়ে যাব আমার ক্ষুধায়
দিতেই হবে শুভাকে
ওঃ মলয়
কোল্কাতাকে আর্দ্র ও পিচ্ছিল বরাঙ্গের মিছিল মনে হচ্ছে আজ
কিন্তু আমাকে নিয়ে কী কোর্বো বুঝতে পার্ছিনা
আমার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
আমাকে মৃত্যুর দিকে যেতে দাও একা
আমাকে ধর্ষণ ও মরে যাওয়া শিখে নিতে হয়নি
প্রস্রাবের পর শেষ ফোঁটা ঝাড়ার দায়িত্ব আমায় শিখতে হয়নি
অন্ধকারে শুভার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়া শিখতে হয়নি
শিখতে হয়নি নন্দিতার বুকের ওপর শুয়ে ফরাসি চামড়ার ব্যবহার
অথচ আমি চেয়েছিলুম আলেয়ার নতুন জবার মতো যোনির সুস্থতা
যোনিকেশরে কাঁচের টুকরোর মতো ঘামের সুস্থতা
আজ আমি মগজের শরণাপন্ন বিপর্যয়ের দিকে চলে এলুম
আমি বুঝতে পার্ছিনা কী জন্য আমি বেঁচে থাকতে চাইছি
আমার পূর্বপুরুষ লম্পট সাবর্ণ চৌধুরীদের কথা আমি ভাবছি
আমাকে নতুন ও ভিন্নতর কিছু কোর্তে হবে
শুভার স্তনের ত্বকের মতো বিছানায় শেষবার ঘুমোতে দাও আমাকে
জন্মমুহুর্তের তীব্রচ্ছটা সূর্যজখম মনে পড়ছে
আমি আমার নিজের মৃত্যু দেখে যেতে চাই
মলয় রায়চৌধুরীর প্রয়োজন পৃথিবীর ছিল না
তোমার তীব্র রূপালি য়ুটেরাসে ঘুমোতে দাও কিছুকাল শুভা
শান্তি দাও, শুভা শান্তি দাও
তোমার ঋতুস্রাবে ধুয়ে যেতে দাও আমার পাততাড়িত কঙ্কাল
আমাকে তোমার গর্ভে আমারি শুক্র থেক জন্ম নিতে দাও
আমার বাবা-মা অন্য হলেও কি আমি এরকম হতুম ?
সম্পূর্ণ ভিন্ন এক শুক্র থেকে মলয় ওর্ফে আমি হতে পার্তুম ?
আমার বাবার অন্য নারীর গর্ভে ঢুকেও কি মলয় হতুম ?
শুভা না থাকলে আমি কি পেশাদার ভালোলোক হতুম মৃত ভায়ের
ওঃ বলুক কেউ এসবের জবাবদিহি করুক
শুভা, ওঃ শুভা
তোমার সেলোফেন সতিচ্ছদের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীটা দেখতে দাও
পুনরায় সবুজ তোশকের উপর চলে এসো শুভা
যেমন ক্যাথোড রশ্মিকে তীক্ষ্ণধী চুম্বকের আঁচ মেরে তুলতে হয়
১৯৫৬ সালের সেই হেস্তনেস্তকারী চিঠি মনে পড়ছে
তখন ভাল্লুকের ছাল দিয়ে সাজানো হচ্ছিল তোমার ক্লিটোরিসের আশপাশ
পাঁজর নিকুচি-করা ঝুরি তখন তোমার স্তনে নামছে
হুঁশাহুঁশহীন গাফিলতির বর্ত্মে স্ফীত হয়ে উঠছে নির্বোধ আত্মীয়তা
আ আ আ আ আ আ আ আ আ আঃ
মরে যাব কিনা বুঝতে পার্ছিনা
তুল্কালাম হয়ে যাচ্ছে বুকের ভেতরকার সমগ্র অসহায়তায়
সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়ে যাব
শিল্পের জন্যে সক্কোলকে ভেঙে খান-খান করে দোব
কবিতার জন্য আত্মহত্যা ছাড়া স্বাভাবিকতা নেই
শুভা
আমাকে তোমরা ল্যাবিয়া ম্যাজোরার স্মরণাতীত অসংযমে প্রবেশ কোর্তে দাও
দুঃখহীন আয়াসের অসম্ভাব্যতায় যেতে দাও
বেসামাল হৃদয়বত্তার স্বর্ণসবুজে
কেন আমি হারিয়ে যাইনি আমার মায়ের যোনিবর্ত্মে
কেন আমি পিতার আত্মমৈথুনের পর তাঁ পেচেছাপে বয়ে যাইনি
কেন আমি রজঃস্রাবে মিশে যাইনি শ্লেষ্মায়
অথচ আমার নিচে চিত আধবোজা অবস্থায়
আরাম গ্রহণকারিনী শুভাকে দেখে ভীষণ কষ্ট হয়েছে আমার
এরকম অসহায় চেহারা ফুটিয়েও নারী বিশ্বাসঘাতিনী হয়
আজ মনে হয় নারী ও শিল্পের মতো বিশ্বাসঘাতিনী কিছু নেই
এখন আমার হিংস্র হৃৎপিণ্ড অসম্ভব মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে
মাটি ফুঁড়ে জলের ঘূর্ণি আমার গলা ওব্দি উঠে আসছে
আমি মরে যাব
ওঃ এ সমস্ত কী ঘটছে আমার মধ্যে
আমি আমার হাত হাতের চেটো খুঁজে পাচ্ছি না
পায়জামার শুকিয়ে যাওয়া বীর্য থেকে ডানা মেলছে
৩০০০০০ শিশু উড়ে যাচ্ছে শুভার স্তনমণ্ডলীর দিকে
ঝাঁকে ঝাঁকে ছুঁচ ছুটে যাচ্ছে রক্ত থেকে কবিতায়
এখন আমার জেদি ঠ্যাঙের চোরাচালান সেঁদোতে চাইছে
হিপ্নোটিক শব্দরাজ্য থেকে ফাঁসানো মৃত্যুভেদী যৌন-পর্চুলায়
ঘরের প্রত্যেকটা দেয়ালে মার্মুখী আয়না লাগিয়ে আমি দেখছি
কয়েকটা ন্যাংটো মলয়কে ছেড়ে দিয়ে তার অপ্রতিষ্ঠ খেয়োখেয়ি
হাংরি বুলেটিন
১৯৬৪ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।