তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা
শুক্র ও শনিবার, এ দুদিন আমার জন্য ভিন্ন আবহ বয়ে আনে। আমি অপেক্ষায় থাকি, কোথাও ঘুরতে যাবো, তবে সেজন্য ভালো সঙ্গী চাই। সঙ্গী তো আমার অনেক, তবে সেরকম নয়।
রিং বেজে উঠলো। এহসান ভাইয়ের ফোন।
এই লোকটির সাথে ঘুরতে গিয়ে মজা আছে। চলি¬শের কাছাকাছি বয়স। তবু একেবারে তারুণ্যে ভরা মনমানস। আমোদ-ফূর্তিতে মেতে থাকতে ভালোবাসেন। অন্যকে খাওয়ায়ে আনন্দ অনুভব করেন।
যে যখন তাকে ডাকে সামান্য সাহায্যের আশায়, তিনি লাব্বাইক বলে হাজির। প্রখর সূর্য কিংবা রাতের অন্ধকার, তাকে কেউ আটকাতে পারেনা।
আমি ফোনে সাড়া দিলাম। তুমি কি যাবে আমার সাথে, অনেক দূরের এক আকিকা অনুষ্ঠানে?’ আরে যাবো না মানে, অবশ্যই যাবো। আপনি আসেন, আমি তৈয়ার।
’
রাত আটটায় রওয়ানা হলাম। দোহা ছাড়িয়ে গাড়ি চলল প্রশস্ত সড়ক ধরে। দু পাশে ধু ধু মরুতে রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। ভয়ভয় পরিবেশ। অনেক দূর থেকে সড়কবাতি গুলো দেখে মনে হচ্ছে, মরুর গলায় কে যেন অলংকার সাজিয়ে রেখেছে।
গাড়ি ছুটছে, আমার মন আনন্দে নাচছে।
পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে চলে এসেছি। এখানে আজব কান্ড দেখছি। রাস্তার দু পাশে জমে আছে পানি। ব্যাপার কী? আরও সামনে এগিয়ে অবাক হওয়ার গতি বেড়ে গেল।
এ এলাকায় বিদ্যুত নেই। পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে আছে।
আমরা গাড়ি থামিয়ে দিলাম। একজন বাংলাদেশীকে পেলাম। তার যবানিতে জানা গেল, আজ দুপুর থেকে এখানে ঘন্টাব্যাপী তুমুল বাতাস বয়েছে, প্রচন্ড ঝড় হয়েছে।
বাতাসের তীব্রতায় উড়ে গেছে দোকানপাটের সাইনবোর্ড। ভয়াবহ অবস্থা ভাই, ঐ যে দেখেন, চারদিকে অনেক কিছুই কাত হয়ে পড়ে আছে। মসজিদের পানির ট্যাংকি তো উইড়া গেছে। অন্য পানির ট্যাংকিগুলো জায়গা থেকে সরে গিয়ে কই কই গড়ায়া পড়ছে। ’
তার কথার সত্যতা মিলল।
কারণ, বাতাসে উপড়ে যাওয়া খুঁিট বিকল হয়ে বিদ্যুতবিহীন হয়ে আছে গোটা এলাকা।
বাতাস আর ঝড়ের এমন ভয়ংকর তান্ডব কাতারে আমি আর দেখিনি। আমি ভাবছি, দোহায় কেন এমন কিছু হলনা। কামনা করছি, দোহায় যেন ঘন্টাদুয়েক ভারিবর্ষন হয়। তাতে রাস্তাঘাটে পানি জমে একাকার হবে।
আরবরা জুব্বা উঠিয়ে রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হবে। সে এক মজাদার দৃশ্য। দেখতে ভারি মজা হবে।
আমরা চলে এসেছি কাঙ্খিত অনুষ্ঠানস্থলের কাছাকাছি। ওয়াম্মা, নাক বন্ধ হয়ে আসছে।
চারিদিকে উটের লেদ-গোবরের দুর্গন্ধ। শেখদের পালিত উট কিংবা দামি দামি খাবার পেটে যায় বলেই কি ওদের মল-মূত্রের এমন উৎকট হাওয়া। ‘ওয়াঅ. ওয়াঅ’ করে বমি আসতে চাইছে।
রাস্তায় জমে আছে পানি, চারিদিকে কাদামাটি। অগত্যা শুকনো রাস্তা খোঁজার জন্য এদিক ওদিক হন্যে হয়ে ঘুরছেন বেচারা এহসান ভাই।
আমি নাক চেপে বসে আছি, তাকে বললাম, ভাই, গাড়ি এখানে রাখেন। দুইটা উট আনেন, উটে চড়ে দাওয়াত খেতে যাই। ’ সদাহাস্যমুখ এহসান ভাইয়ের হাসি হারিয়ে গেছে। এমন বিপদসংকুল আন্ধার পথে বেচারা আশংকায় হয়রান তার অতি পুরনো গাড়িটির হায়াত-মওত নিয়ে।
এ এলাকাটি শুধুই উট লালন-পালনের জন্য।
প্রতি বছর এখানে উটের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সে লক্ষ্যে অতি খাতির যতœ করে আরব শেখদের উট পরিচর্যার জন্য অনেকগুলো আলাদা আলাদা খামার এপাশে ওপাশে।
সড়কের ওপাশে উটের রেসের জন্য প্রতিযোগিতাস্থল। আলোয় আলোয় ঝলমল করছে চারিপাশ। আহা! অবসর শেখদের বিনোদনের জন্য উটের রাজকীয় সমাদর।
কি ছাই মানব আমি, উট হয়েও এরা কাটাচ্ছে নিশ্চিন্ত আরামদায়ক প্রহর।
অনুষ্ঠানস্থলে গেলাম। অনেকক্ষণ পর খাবার এল। খেয়ে নিলাম। এবার ফেরার পালা।
ফিরে চললাম।
ততক্ষণে গোটা এলাকায় আলো জ্বলে উঠেছে। উট আয়োজনে আরবদের বরাদ্দ আর মনোরঞ্জন এবং রাখালদের জীবনকাহিনী নিয়ে খুব শিগগিরই লিখবো, এটুকু ইচ্ছা তখন মনের ভেতর উঁিক দিচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।