noneed প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চাকরি চান পুলিশ হেফাজতে (!) ধর্ষিত হয়ে নিহত ইয়াসমিনের মা শরীফা বেগম। গত মঙ্গলবার দিনাজপুর শহরে গোহতাশ কণ্ঠে আক্ষেপ আর আর্তি ফুটিয়ে বলেন, “‘ইয়াসমিন মারা যাওয়ার পর অনেকে অনেক আশ্বাস দিয়েছিলেন। কোনোটাই পূরণ করা হয়নি। একটা চাকরি-বাকরি দিলে সংসারটা চলতো। কষ্ট করে চলি, বড় কষ্টে আছি....’ বলে ফুঁপিয়ে থামলেন ইয়াসমিনের মা।
কপোল গড়িয়ে অঝোর অশ্রুর বান ডাকলো দু’চোখে। একে তো মাঝেমধ্যেই চাগাড় দেয় সতেরো বছর আগে বুকের গহীনে তৈরি হওয়া মেয়ে হারানোর ক্ষত। তারওপর সংসারের নিত্য টানাপড়েনও হরহামেশা ডোবায় হতাশার অন্ধকারে। নিজ বাড়িতে অকপটে জীবনের প্রয়োজনে জীবিকার এই ফরিয়াদ জানান শরীফা।
তিনি বলেন, ‘খুব বড় কিচ্ছু না, হাসপাতালে বা কোনখানে আয়া পদে একটি চাকরি হইলেই দিন চলে যাবে আমার।
দেশের প্রধানমন্ত্রী চাইলে আমার এই কষ্ট থাকে না। তারে সামনে পাইলে বলতাম- আমি ইয়াসমিনের মা, একটি চাকরির আমার খুব প্রয়োজন। ’
১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট ভোরে ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁওগামী হাছনা এন্টারপ্রাইজের একটি নৈশকোচের সুপারভাইজার দিনাজপুরের দশমাইল মোড়ে ইয়াসমিনকে নামিয়ে দেয়। আর এক চায়ের দোকানদারকে বলে দেয়, সকাল হলে কিশোরীটিকে যেন দিনাজপুর শহরগামী কোনো বাসে উঠিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ পরই পুলিশের একটি টহল দল পিকআপভ্যান নিয়ে সেখানে আসে।
পুলিশ সদস্যরা চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে থাকা ইয়াসমিনকে নানা প্রশ্ন করতে থাকে। এক পর্যায়ে দিনাজপুর শহরে তাকে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তাকে ভ্যানে তুলে নেয় পুলিশ।
এরপর তারা দশমাইল সংলগ্ন সাধনা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে নিয়ে ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রাস্তার পাশে লাশ ফেলে রেখে চলে যায়।
এ ঘটনায় দিনাজপুরের সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ওঠে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি।
ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলাগুলোর বিচার কাজ ১শ’ ২৩ দিনে শেষ হয়। অবশেষে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আব্দুল মতিন মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের ৮ বছর পর ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চাঞ্চল্যকর ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসি রায় কার্যকর করা হয়।
২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটে মামলার অন্যতম আসামি এএসআই মইনুল হক, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তারকে রংপুর জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
অপর আসামি পিকআপভ্যান চালক অমৃত লাল বর্মনকে ২০০৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটে রংপুর জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
উপমহাদেশের ইতিহাসে দোষী পুলিশদের ফাঁসিতে মৃত্যু কার্যকরের ঘটনা এটাই প্রথম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।