নামহীন...... আজ অনেক ভারাক্রান্ত মনে এই লেখা লেখতে বসেছি। আমি কুয়েটের শেষ বর্ষের একজন অভাগা ছাত্র। অভাগা বলছি এই কারনে, যে কুয়েটে একটি ব্যাচ ৩ বছর ৮ মাসে বের হয়ে যাওয়ার রেকর্ড আছে, সেই কুয়েটে আজ ৪ বছর ৪ মাস অতিক্রান্ত। বের হতে আর ৩ মাস কিংবা ১ বছর লাগবে কিনা, তাও জানা নেই।
২০০৯ সালে যখন কুয়েটে পড়তে আসলাম তখন থেকেই দেখেছি রাজনৈতিক অস্থিরতা।
বড় ভাইদের থেকে শুনেছিলাম আগের সরকারের আমলে বড় ধরনের কোনও ঝামেলা ছাড়াই তারা কুয়েট লাইফ পার করেছেন, কিন্তু রাজনৈতিক ভিসি আর তার ছাত্রনামধারী সাঙ্গপাঙ্গদের দুর্নীতি আর বিশৃঙ্খলায় আজ কুয়েট বিপর্যস্ত।
বিগত প্রায় ২ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে আমাদের এই কুয়েট। কারন কি? কারন হল শিক্ষকরা আন্দোলনে, তারা ধর্মঘট ডেকেছেন যে, তারা ক্লাস-পরীক্ষা কিছুই নেবেন না। তাদের দাবি কি? আসুন দেখি তাদের দাবিগুলো –
১। কুয়েটের এক মেয়ে এক স্যারের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে এবং কিছু ছাত্রছাত্রী মিলে অনলাইনে অপপ্রচার চালিয়েছে।
এর কারনে স্যাররা আগেও ধর্মঘট ডেকেছেন। সেই মেয়ের আগে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে, সাথে আরও কয়েকজনের আর সেটা বিভিন্ন মেয়াদের নিষেধাজ্ঞা। তবে তারা হাইকোর্টে রিট করে ক্লাস-পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি নিয়ে এসেছে।
এখানেই যত বিপত্তি, তারা ক্লাসে আসলে স্যাররা ক্লাস নিবেন না। প্রথমে শুধু সিভিল ডিপার্টমেন্ট গেলো আন্দোলনে, তারপর সবাই, আর আমরা পড়লাম চরম গ্যাঁড়াকলে।
স্যারদের দাবি আইনজীবী নিয়োগ করে ঐ রিটের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
২। এর সাথে যুক্ত হয়েছে গতবছর একুশে হলে মারামারি করা ছাত্রলীগের ছাত্রদের বিরুদ্ধে শাস্তির সঠিক প্রয়োগের
৩। এছাড়াও ছাত্রলীগ কর্তৃক স্যারদের অপমানের শাস্তি দাবি।
এছাড়াও আরও কিছু দাবি আছে, যেমন ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ, শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
এখন আসি পরিস্থতি বিশ্লেষণে। আমার কাছে স্যারদের কিছু দাবি যৌক্তিক মনে হয়েছে আর কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়েছে তারা অতিরিক্ত করছেন।
কিছু ক্ষেত্রে তো মনে হচ্ছে তারা ছাত্রদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বী রুপে দাড় করিয়েছেন। রাজনৈতিক ভিসির বদৌলতে কিছু ছাত্র খারাপ কাজ করছে আর সেটার ফলাফল আমাদের সবাইকে বইতে হবে কেন?
কালপ্রিটরা বাদে কিছু ছাত্র ভুল করতেই পারে, তাই বলে কি কুয়েটের আড়াইহাজার ছাত্রের উপর ক্ষোভ ঢালতে হবে?
শুনেছি আমাদের ভিসি নাকি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিশাল ব্যস্ত, তার এদিকে তাকানোর সময় হয় না। কুয়েট মরে যাক, পচে যাক, তার আছে ক্ষমতা আর তিনি কুয়েটের উন্নয়ন(নতুন স্থাপনা নির্মাণ) করছেন।
অনেকে বলে ভিসি কুয়েটে নতুন হল বানাইসে, সৌন্দর্য বর্ধন করেছে। আমি আপনাদেরকে আমার বন্ধুর একটা কথা বলি, “একটা মানুষকে দুনিয়ার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কান্সার আর এইডস এর জীবাণু এমনভাবে পুশ করলেন যে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে তার মৃত্যু নিশ্চিত”।
এটার যেমন মূল্য নেই, ঠিক তেমনি কুয়েটে এখন কান্সার ছড়িয়ে পড়েছে, সৌন্দর্যও দিয়ে একে ঢাকা যাবে না।
ভিসির তো অনেক দুর্নাম করলাম, এখন আসি শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের প্রসঙ্গে। সবার প্রতি আমার ক্ষোভ নাই।
সব ছাত্ররা যেমন বিপথে যাই না, আমি বিশ্বাস করতে চাই যে, সব শিক্ষকরা আমাদের ক্ষতি চান না।
শুনেছি ইলেকট্রিকাল ফ্যাকাল্টির সিংহভাগ পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে, মেকানিকাল আর সিভিলের কিছু স্যারের জন্য সব বন্ধ আছে।
এক নোংরা রাজনীতি বন্ধের জন্য যদি আরেক রাজনীতির আভাস পাওয়া যায়, তাহলে আমরা কোথায় যাবো স্যার? আমাদের দিকটা কি একবার দেখবেন না?
বিশেষ করে মেকানিক্যাল এর ’০৮ ব্যাচকে তো তাদের স্যাররা দেখতেই পারে না। এই আচরন কি আমরা একজন শিক্ষকের কাছে প্রত্যাশা করি? একটা কথা শুনেছিলাম –“There is no bad students, only bed teachers”. একমত হতেও পারেন, নাও পারেন, সেটা আপনার ব্যাপার।
মাসের পর মাস আপনারা ক্লাস পরীক্ষা না নিলেও আপনারা বেতন পাবেন, আপনাদের পেপার পাবলিশ হবে।
আপনারাই বলেন আপানাদের কোনও ক্ষতি হবে না।
কিন্তু গ্রামের যে ছেলেটি কুয়েটে এসেছে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাবে বলে, বাবার ঋণ শোধ করবে বলে, মা-বোনের দারিদ্রক্লিষ্ট মুখে একটু হাসি ফোটাবে বলে, সেতো আজ বের হতে পারছেনা স্যার। বাসা থেকে মমতাময়ী মা তাকে জিজ্ঞেস করে, “বাবা আর কতদিন?” সেতো জবাব দিতে পারে না স্যার, কি জবাব দিবে? বলেন একবার।
আমার পরিচিত এক বন্ধুর মাস চলার টাকা বাবা-মা দিতে পারে না, তার চাচা দেয়। চার বছরের যা টাকা লাগে একসাথে দিয়ে দিয়েছে।
এখন সে কিভাবে চলে স্যার? সে খোঁজ কি আপনারা রাখেন?
বছরের অর্ধেক শেষ, চাকরীর বাজার সংকুচিত হচ্ছে। ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্টে স্যামসাঙ এর আসার কথা। কিন্তু এই অনিশ্চয়তায় তারা আসবে না। পরীক্ষা শেষ না হলে তারা কেনইবা আসবে। ২-৩ টা পরীক্ষা দিয়ে আমরা আটকে আছি।
বেশী দেরী হলে স্যামসাঙ হয়তোবা আর আসবেই না।
শেষে আমার কিছু কথা বলি, অনেক ইচ্ছা ছিল এবার ঈদে বাসায় সবাইকে কিছু না কিছু কিনে দিবো, যেকোনো একটা চাকরি নিয়ে। তা আর হলো না। আমার নাহয় ঈদ হবে, কুয়েটের সবাই সচ্ছল না। কুয়েটের সব ছাত্রের কি ঈদ টা ঠিকমতো হবে? আমার জানা নাই, আপনার জানা আছে কি স্যার?
তাই বলি সৎসাহস থাকলে স্টেপ নেন, আমাদের ক্লাস-পরিক্ষা নেন।
আমাদেরকে মুক্তি দেন।
বি.দ্র. : এখানে আমার অনেক ব্যক্তিগত মতামত আছে, সবার মতের সাথে মিলতে হবে এমন কোনও কথা নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।