আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি কর্মকর্তা (পর্ব ১)

জোর হোক শুধু গলার আওয়াজ, গায়ের জোরটা তোলাই থাকুক সিআইও (CIO), সিটিও (CTO), সিআইটিও (CITO), “Head of IT” বা “প্রধান তথ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা”। তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবিদের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত পদ এগুলি। এই আসনটির সঙ্গেই যেন জড়িয়ে আছে - মোটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বহুতল ভবনে বড় অফিস, একাধিক গাড়ি সহ বহুবিধ সুযোগ সুবিধা। এর বদলে কাজ? কৌশলগত পরিকল্পনা, বিনিয়োগ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি মূল্যায়ন, ক্রয় ব্যবস্থাপনা, কর্মকৌশল উন্নয়ন, নেতৃত্ব তৈরি, ফলাফল ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা, তথ্যপ্রযুক্তি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সব ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

এ বিষয়ে আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে বোর্ডকে সহায়তা, প্রতিষ্ঠানকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আরও দ্রুত লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা এবং প্রয়োজনে গবেষণা ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা। এছাড়া মাঝে মধ্যে যাদুর মতো কিছু সফলতা দেখান; সফলতার আংশিক ও বিফলতার পুরো দায়ভার নেয়া। আজকাল প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই খাতে ক্রমশ বিনিয়োগ বাড়াছে। আগে অর্থ বা প্রশাসন বিভাগের আওতায় ছোট্ট একটি বিভাগ থাকত।

কখনও বিভাগীয় প্রধান ছাড়াই চলতো। এখন এ বিভাগের প্রধানের পদটি গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। এমনকি ব্যবস্থাপনা বোর্ডে বসার সুযোগ হচ্ছে। দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো এই আসনটির পেছনে ভালা বিনিয়োগ করছেন। যেকোনো বিনিয়োগ বাড়ে বাড়তি মুনাফার আশায়।

তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রও ভিন্ন নয়। তাই সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি এই পদের দায়িত্বটি ৮ ঘণ্টা হতে ২৪ ঘণ্টায় পৌঁছে গেছে। দায়বদ্ধতা একজন চাকুরিজীবির সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। এই চেয়ারের দায়বদ্ধতা চলে গেছে প্রায় উদ্যোক্তার কাছাকাছি। প্রতিটি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী এই পদের স্বপ্ন দেখেন তাদের পেশার শুরুর দিন থেকে।

সেটা সবার জন্যই ভাল। তবে বেশিরভাগ লোক মোহগ্রস্থের মতো একটি “যাদুর কাঠি” খুঁজতে থাকে। যেটা তাকে দ্রুত ওই চেয়ারে বসিয়ে দেবে। আরও আহ্লাদ যেন -– সেই কাঠিটিও খুঁজে পেতে কষ্ট না হয়। তবে কয়েক বছরেই বোঝা যায় যে, বাস্তবতা ভিন্ন।

কাঠির অপেক্ষায় সময় পার হয়ে যায়। চেয়ারের প্রয়োজনীয় বাস্তব প্রস্তুতিগুলো নেওয়া হয়ে উঠে না। ফলাফল যা হয়, তাতে ওই পদটি আজীবন স্বপ্নই থেকে যায়। প্রযুক্তি পেশাতে এসে যারা টিকে যায়, তাদের মধ্য থেকে বড় অংশ বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ হতে চায়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বগুলো ঝামেলাপূর্ণ মনে করে।

তাই দূরে সরিয়ে রাখে। আর যারা প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনায় আসতে চায়, তারা অনেক সময় কারিগরি বিষয়ে জ্ঞানার্জনটা ততটা গুরুত্ব দেন না। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি প্রধান হবার জন্য দুটো বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র একটি বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ হয়ে প্রতিযোগীতায় টেকা কঠিন। দেখা যায় -- শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগীতায় খুব বেশি লোক থাকে না।

এর মধ্যে কিছু মানুষ নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যান। যেকোনো একটি কারিগরি বিষয়ে নিজেকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে তৈরি করে। সেই সাথে -- কারিগরি, ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনার সবগুলো শাখা বুঝে নেয়। ধৈর্য ধরে নিজেকে তৈরি করে। তারাই প্রতিযোগীতার অভাবে সময়ের আগেই ওই চেয়ারটিতে বসে যেতে পারে।

আমার পেশার শুরু থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনায় আগ্রহ ছিল। কাজের মাঝে অন্যান্য শিল্পের সফল তথ্যপ্রযুক্তি প্রধানের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। নিজেও দীর্ঘসময় এ পেশায় কাজ করেছি। আমি মনে করি -– বাণিজ্যিক, প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা সবগুলো বিষয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রধানের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর জ্ঞান এবং দক্ষতা সমানভাবে প্রয়োজন।

সেই সাথে নিজের কাজটি ঠিকমতো করে যেতে পারলে সাফল্য প্রত্যাশিত সময়ের আগেই আসে। এদেশ সহ বিদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রযুক্তি প্রধান বাংলাদেশি হোক। যোগ্য হোক। উপভোগ করার মত বয়স থাকতে হোক। এই কামনায়।

========= সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর প্রাক্তন তথ্য প্রযুক্তি প্রধান ও উদ্যোক্তা কোচ  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.