আর যারা পরকালে বিশ্বাস করে না তারা নিঃসন্দেহ পথ থেকে তো বিপথগামী। (২৩-৭৪)
—শ্বশুরবাড়ির সবাইকে অত পাত্তা দিবি না।
—কী করব বুঝতে পারছি না।
—আরে, তুই তো বোকা। কিছুই বুঝবি না।
তোকে ভালো মানুষ পেয়ে সব দায়িত্ব কাঁধে দেবে।
—কিন্তু দায়িত্ব এড়াব কী করে? বড় ছেলের বউ। শ্বাশুড়ি অসুস্থ।
—কেন তোর ননাসরা আছে না ? তারা মাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাবে। তুই কেন যাবি?
ওপরের কথোপকথনটি মা-মেয়ের—সেটি সহজে বোঝা যায়।
কিন্তু মায়ের এই অযাচিত উপদেশ মেয়ের সংসারে, দাম্পত্য জীবনে মাঝেমধ্যে টানাপোড়েন তৈরি করে, অশান্তির ঝড় তোলে, তা হয়তো অনেক মা বুঝতে পারেন না। কখনো মেয়েও বুঝতে পারেন না। তখনই ঘটে বিপত্তি।
পারিবারিক আয়োজনেই বিয়ে হয়েছিল রাকিব-মোনার (ছদ্মনাম)। বিয়ের পরপরই রাকিব বুঝতে পারেন, সংসারে নানাভাবে তাঁর শাশুড়ি প্রভাব ফেলার চেষ্টা করছেন।
বিষয়টি এমন তীব্র আকার ধারণ করল যে কী রান্না করা হবে, কখন খাবে—সবই শাশুড়ি টেলিফোনে মোনাকে নির্দেশনা দেন।
রাকিব-মোনার দাম্পত্য জীবনে অশান্তি দানা বাঁধলেও বড় আকার ধারণ করেনি। ‘আমি বুঝতে পারতাম। তাই মায়ের সব কথাকে গুরুত্ব দিতাম না। তা না হলে সমস্যা বাড়ত।
রাকিবের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করেছি। দুজনই একমতে এসেছি। সংসারে অশান্তি কমাতে হলে এসব এড়িয়ে চলতে হবে। মাকেও বুঝিয়ে বলেছি। ’ বলেন মোনা।
সব মেয়ে তো মোনার মতো বুঝতে পারেন না। এর ফলে কারও কারও সংসারও ভেঙে যায়। বিয়ের পর থেকেই মিথিলার (ছদ্মনাম) সংসারে মায়ের খবরদারি চলতে থাকে। ঘর কীভাবে সাজাবেন, পর্দা কোন রঙের কিনবেন, এমনকি বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমায় কোথায় যাবেন—সবই মিথিলার মায়ের পরামর্শে হয়। বাধ্য মেয়ের মতো মিথিলাও মায়ের কথামতো চলেছেন।
এ বিষয় নিয়ে দাম্পত্য জীবনে ক্রমেই অশান্তি বাড়ে। শুরুতে মিথিলার স্বামী আদনান (ছদ্মনাম) মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও একসময় জীবন অসহনীয় হয়ে ওঠে।
আদনান বলেন, ‘মিথিলার মা ওকে প্রায়ই তাঁর কাছে নিয়ে গিয়ে রাখতেন। আমাদের বাড়ির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরিতে সাহায্য করেন তিনি। মায়ের কথা শুনে মিথিলার আচরণও বদলে যেতে থাকে।
ওর মা আমাকে ডেকে বলেন, “আমাদের বাড়িতে এসে থাকো।
এখানেই সংসার করো। মিথিলা তোমাদের ওখানে যাবে না। ” সেটি মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। আর মিথিলাও মায়ের সিদ্ধান্ত মেনে আলাদা থাকতে চাইল।
পরিণতিতে আমাদের সংসারটাই ভেঙে গেল। ’
মায়েরা সাধারণত নিরাপত্তাহীনতা বোধ থেকে মেয়ের সংসারে অনুপ্রবেশ ঘটান। বুঝতেও পারেন না তাঁর অযাচিত উপদেশ মেয়ের দাম্পত্য জীবনে হিতে বিপরীত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক দুটো মানুষের স্বাধীনভাবে থাকার এবং চিন্তা-ভাবনা করার অধিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের মতো করেই থাকতে দেওয়া ভালো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলরুবা আফরোজ এমনটাই মনে করেন। শুধু অন্যকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য নয়, নিজের মেয়ের ক্ষেত্রেও তিনি এই নীতি মেনে চলেন।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় টেলিফোন করে ঘটনা ধরে ধরে উপদেশ না দিয়ে মায়ের মেয়েকে ছোটবেলা থেকেই আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলা উচিত। যেকোনো পরিস্থিতিতে যেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর থাকে। মাকে বুঝতে হবে, তাঁর অহেতুক দুশ্চিন্তা ও অযাচিত উপদেশ মেয়ের দাম্পত্য জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
যদি কোনো কিছু নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন, সেটি ভালোভাবে মেয়ে ও মেয়ে জামাইয়ের সামনে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করা যেতে পারে। তবে অন্যায় আচরণ এবং নির্যাতনের বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। সেক্ষেত্রে সোচ্চার হতেই হয়।
মেয়েরা সাংসারিক বুদ্ধি নিতে মায়ের কাছে ছুটে যান। তখন মেয়েকে সরাসরি কোনো বুদ্ধি-পরামর্শ না দিয়ে পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক তাঁর সামনে তুলে ধরার পরামর্শ মনোবিজ্ঞানীর।
তাহলে মেয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
আবার উল্টোদিকে দাম্পত্য জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে মায়ের সঙ্গে বুদ্ধি-পরামর্শ করাও মেয়ের দিক থেকে ঠিক নয়। আর মায়ের কোন কথাটা গুরুত্ব দিতে হবে আর কোনটা দিতে হবে না, সেই বিবেচনা থাকতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরামর্শক নাসিমা আকতার বলেন, ‘বেশির ভাগ সময় তৃতীয় পক্ষের অনুপ্রবেশে দাম্পত্য জীবনে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়; চরম আকার ধারণ করে, পরিণতিতে বিবাহবিচ্ছেদও ঘটে। শুধু মেয়ের মা নন, দাম্পত্য জীবনে শাশুড়ি ও ননদেরাও অযাচিত উপদেশ দিয়ে থাকেন অনেক সময়।
মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে। নিজের সন্তান হলেও তিনি আলাদা মানুষ, ভিন্ন সত্তা আছে তাঁর। যদি কোনো ঝামেলা হয়, তা হলে উভয় পক্ষের কাছের মানুষ মিলে এর সমাধান করা যেতে পারে। কিন্তু অযাচিত প্রবেশ ও পরামর্শ দেওয়া যাবে না। ’
ProthomAlo Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।