আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আব্বুর কাছ থেকে সাইকেল উপহার।।

সময় টা ছিল ২০০১ আমার দুরন্ত শৈশব জীবনের একটা অন্যতম সেরা বছর । তখন আমরা কুষ্টিয়া তে থাকতাম। সবে মাত্র কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে ভর্তি হলাম। খুবই নাম করা স্কুল দেখেই ভর্তি হতে পেরে আনন্দে মনতো সপ্তম আসমানে । কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে খুব বড় একটা সাইকেল স্ট্যান্ড আছে, যারা পড়ে তারা জানে , ঐইখানে সকল স্টুডেন্টরা তাদের সাইকেল রাখতো ।

আমি সবে নতুন স্কুলে, অন্যদের সাইকেল দেখে আমার খুব আগ্রহ জন্মাল সাইকেলের প্রতি। আর তাছাড়া আমার বয়সের প্রায় সকলেরই সাইকেল ছিল। যেহেতু কুষ্টিয়া একটা মফঃস্বল শহর সাইকেল নামক যানবাহন ওই খানে তখন প্রচণ্ড পপুলার ছিল। বিশেষ করে রেসিং সাইকেল গুলা চরম জনপ্রিয় ছিল। আমার সহপাঠীদের সাইকেল নিয়ে তিড়িং বিরিং করে রাস্তাই চলাচল দেখে মাথাটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল ।

তাই মনে মনে সিধান্ত নিলাম আব্বু কে এইবার বলবোই আমাকে একটা সাইকেল কিনে দিতে। । এমনিতে আমি কিছুই চাইনা । মধ্যবিত্ত ঘরের সুবদ বালক। ছোট বেলা থেকেই আব্বুর কাছে কিছু চাইতে গেলে আগে আম্মু কে বলতাম।

কারন আম্মু কে সবসময় নিজের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম মনে হত । । যাই হোক আম্মু কে যেয়ে বললাম আমার সাইকেলের আবদার । আম্মু প্রথম বাহানা দেখাল যে তুমি বড় সাইকেল চালাতে পারবেনা, কথাই দুরঘটনা হবে। কিন্তু আমি আম্মু কে বললাম যে আম্মু আমার সহপাঠীরাতো চালাচ্ছে।

ওদের বাবা মা তো কিনে দিছে। । বহু কষ্টে আম্মুকে মানালাম। তারপর আম্মু আব্বু কে আমার সাইকেলের কথা বলল, প্রথম আব্বু কিছুটা রাগ করলেন। পরে এক মহা শর্ত জুড়ে দিলেন।

বার্ষিক পরীক্ষাতে ১ থেকে ১০ এর মধ্যে থাকতে হবে। এইখানে বলে রাখা ভাল ছোটবেলা থেকে পড়াশোনা বড়ই কষ্ট লাগতো। আমার আব্বু আম্মু ধরে রাখছিলেন যে তাদের ছেলে কখনও ১ থেকে ১০ এর মধ্যে আসছেনা । আব্বুর এই শর্ত আমাকে সত্যি খুব ঝামেলাই ফেলে দিল । একবার ভাবছি ধুর লাগবেনা সাইকেল , কিন্তু স্কুলে অন্নদের কাছে সাইকেল দেখে মাথা ঠিক থাকতো না।

মিশনে নেমেই পরলাম, চিন্তা করলাম সাইকেল আমি নিয়েই ছাড়বো আব্বুর কাছ থেকে। খুব ভাল করে পরলাম । বার্ষিক পরীক্ষা হল, ভালই পরীক্ষা দিলাম। তবে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিলাম না। এইভাবে এক মাস পর, ২২শে ডিসেম্বর ২০০১ ফলাফল দিল।

আমার নাম ধরে যখন ডাক দিল ক্লাস টিচার , গেলাম রেজালট নিতে গেলাম, আজগর স্যার বলল ফয়সাল তুমি ৫ম হয়েছো। । বিশ্বাসই হচ্ছিল না। । খুশিতে কেদে দিয়ে ছিলাম।

তখন আর সাইকেল এর কথা মাথাই ছিল না। বাসাই গিয়ে আম্মু কে ফলাফল দেখালাম, আম্মু ও ভাবতে পারেনি এমন কিছু হবে। পরে আব্বু কে ফোনে জানানো হল। আব্বু ছিল ঢাকাতে। আব্বু শুনে খুব খুশি হল।

আব্বু বলল তোমার সাইকেল আমি কিনে দিবই, যেমন সাইকেল চাও আমি দিব। ২৬শে ডিসেম্বর সেই মুহূর্ত চলে এল ,ঐ দিন আবার আমার জন্মদিন , আব্বুর সাথে গেলাম কুষ্টিয়ার সবচেয়ে বড় সাইকেল স্টোরে রাজু সাইকেল স্টোরে , অনেক দেখে শুনে একটি রেসিং সাইকেল পছন্দ হল নেভি ব্লু রঙ, সাইকেলের নামটা অদ্ভুতই ছিল "টাইটানিক "। একটা বিখ্যাত জাহাজ ও সিনেমার নাম। যাইহোক সাইকেল টা আমার খুব পছন্দ হল। ।

কিনে দিল আব্বু, একটা হর্ন ও লাগালাম। । নিজের একটা বড় স্বপ্ন পূরনের দিন ছিল। । এখন ও দিনটার কথা মনে পরে খুব.।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।