আমি নিতান্ত সাদমাটা মানুষ। বলারমত কোন পরিচায় নাই। নিরামিষ মানুষ । এক.
ছার আমারে লন!
চমকে ফিরে তাকালেন আরিফ সাহেব।
তোরে নিব মানে! আমি কি তোরে নিবার জন্য বাজারে আসছি।
বাজেরের জন্য কুলি লাগবনা!
লাগতেও পারে! নাও পারে
এইটা কেমুন কতা? ছার!
এটাই সত্য কথা। দুনিয়া বড়ই জটিল জায়গা। কোন সময় কি হয় বলা যায় না! আর বাজারেরে যেই হালহকিকত বাজার করার টাকা হয় কিনা সন্দেহ। কুলি নিব কি কইরা।
আমি কি টেকা চাইছি ।
টেকার লাইগা আপনেরে ভাবন লাগতনা। আপনের লাইগা ফ্রি।
তুইতো বেটা হাজী মোহম্মদ মহসীন হয়ে গেছিস!
এই হাজী আবার কে?
ওড়ে তুই চিনবিনা। বড়ই দানশীল লোক।
হাজী কন আর পাজি কন আপনের বাজার আমিই নিমু।
আপনে বাজারে কইরা আহেন। আমি ঐ চা দোহানে আছি।
তুইতো দেখি নাছোর বান্দা। তা তোর নামটা কি?
হারেছ আলী
বাহ! ভেরী বিউটিফুল নামতো।
এইডা কোন ফুলের নাম না ছার! এইডাতো আমার নাম
ঠিক আছে বেটা ঠিক আছে।
দুই.
আজ ছুটির দিন। ছুটির দিনগুলোতে বাজারে দারুন ভীর। আজ মনে হচ্ছে অন্য দিনের চেয়ে ভীর আরো বেড়েছে। চারদিকে লোকে গিজ গিজ করছে। অনেকটা পোকার মত।
আরিফ সাহেব এ ভীড়ের মধ্যে ঠেলেঠুলে বহুকষ্টে বাজারের কাজ সম্পন্ন করলেন। প্রচন্ড গরম পড়েছে আজ। বাজরের জিনিস পত্রের দামেও যেন তার ছোয়া লেগেছে। আবহাওযার তাপমাত্রা আর জিনিসপত্রের দাম শুনে আরিফ সাহেবের মাথ গেল গুলিয়ে। অনেক যন্ত্রনা আর বাহাস করে একগাদা বাজার কিনে তিনি কুলি খুজতে লাগলেন।
হারেছ আলির কথা আর মনে রইল না।
এই কুলি যাবি?
যামু সাব। মাল কই যাইব?
খিলগাঁও! গেলে মালগুলা তারাতরি উঠা । শরীরটা সুবিধা মনে হয় না।
অক্ষুনি উঠাইতাছি সাব।
লোকমান মিয়ার চায়ের দোকানে বসে হারেছ আলী চা খাচ্ছিল। হঠাৎ সে লক্ষ করল আরিফ সাহেব কে। অন্য একজন কুলি তার মাল উঠাচ্ছে। দৌড়ে সেখান উপস্থিত হলো সে।
ছার আপনের জন্য অনেক্ষন হইল চায়ের দোকানডায় বইয়া আছি।
দেন বাজার গুলা টুকরিতে উঠাইয়া রাখি।
হারেছের কথা শুনে দ্বিতীয় কুলিটা গেল রেগে।
তুই কইথেইকা আইছস! যা ভাগ এনতে! সাবে আমারে ঠিক করছে । বাজার আমার টুকরিতে উঠবো।
দেখ সুরুইজা ! কেচাল করবিনা! ছারে আমারে বাজার করনের আগেই ঠিক কইরা গেছে।
তার জন্য আমি মেলাথুন বইয়া আছি। ছারের বাজার আমিই নিমূ।
বেশী বাড়াবাড়ী করবিনা হারেইচ্চা! বাজার আমি নিমু। তুই পারলে ঠেকা।
তরে আবরো কইতাছি।
কেচাল করবিনা কইলাম।
কি করবি তুই আমার, ফকিরের পোলা।
মুখ সামলাইয়া কথা ক কইলাম হারামজাদা। আমার বাপ মৌলবি ছিল ফকির ছিল না। বাপ তুইলা যদি আর একটা কতা কস তোর কপালে খারাবি আছে ।
আমারে তুই ডর দেহাস। ভালা চাইলে এনতে চইলা যা।
যামু! অক্ষুনি যামু। তয় ছারের বাজার লইয়া যামু
তোরে আজকা আমি শেষ কইরা ফালামু । রাগে রাস্তার পাশ থেকে একটা ইট নিয়ে মারতে উদ্ধত হয় সরুজ।
আরিফ সাহেব এই পরিস্থিতিতে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। এদিকে বাজরে সবলোক তাকে ঘিরে জটলা পাকিয়ে ফেলেছে। এরা আবার দু দলে ভাগ হয়ে গেছে। একদল হারেছের পক্ষে আরেক দল সুরুজের পক্ষে। মহা গ্যানজাম।
যে কোন সময় বড় কোন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এমন অবস্থা।
হঠাৎ আরিফ সাহেব বলে উঠলেন ঝগড়া করার দরকার নাই তোদের। দোষ সব আমারই! চল তোরা দুইজনই চল।
আরিফ সাহেব দুই কুলির ঝুড়িতে তার বাজার গুলো ভাগ করে রাখলেন।
অতপর কাজী নজরুলের সেই গানটি গাইতে গাইতে বাড়ির পথ ধরলেন-
চল চল চল
উর্ধ গগণে বাজে মাদল
নিম্নে উতলা ধরনীতল
অরুন পাতের তরুন দল
চলরে চলরে চল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।