খাদ্য অধিদপ্তরের ১০ ধরনের (ক্যাটাগরি) এক হাজার ৫৫২টি পদে নিয়োগের চলমান প্রক্রিয়া বাতিল করার পথ খোঁজা হচ্ছে। ‘যথেষ্ট সংখ্যক রাজনৈতিক কর্মী’ নিয়োগের সম্ভাবনা না থাকাই এর মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর অধিদপ্তরে নিয়োগসংক্রান্ত বিভাগীয় নির্বাচন ও বাছাই কমিটির সভায় দুই ধরনের পদে নিয়োগ-প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়। এর কারণ হিসেবে প্রায় চার মাস আগে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নে বিধি লঙ্ঘনের কথা বলা হচ্ছে। অন্যান্য পদেও নিয়োগ-প্রক্রিয়া বাতিলের পথ খোঁজা হচ্ছে বলে বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়।
সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, কয়েক ধরনের পদে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বিভিন্ন এলাকার সাংসদ, সরকারি দলের নেতা ও তদবিরবাজেরা নিয়োগ বাতিল করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন। কারণ, এ নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় তাঁদের সুপারিশকৃত ‘যথেষ্ট সংখ্যক’ রাজনৈতিক কর্মী নির্বাচিত হচ্ছেন না।
এ চাপের কারণেই নিয়োগ-প্রক্রিয়াটি অস্বাভাবিক রকম বিলম্বিত হচ্ছে। তৃতীয় শ্রেণীর ওই পদগুলোতে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গত ডিসেম্বর মাসে। সর্বশেষ দুটি পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ২৫ মে।
এর মধ্যে কয়েকটি পদে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলেও মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়নি।
জানতে চাইলে নিয়োগ কমিটির প্রধান ও খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ইলাহী দাদ খান প্রথম আলোকে বলেন, কিছু খাতা দেখা বাকি আছে। চলতি মাসের মধ্যেই সেগুলো দেখা শেষ হবে। এরপর আগামী মাসে (অক্টোবর) মৌখিক পরীক্ষা শুরু করা হবে।
রাজনৈতিক চাপে নিয়োগ-প্রক্রিয়া বাতিলের পথ খোঁজা এবং অস্বাভাবিক বিলম্বের বিষয়ে কমিটির প্রধান বলেন, ‘আমাদের ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই।
আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিলম্বের কারণ, ১০ ধরনের পদে প্রায় চার লাখ পরীক্ষার্থীর খাতা দেখা। ’
ইলাহী দাদ খান কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বললেও সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক এবং অফিস সহকারী ও কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে লিখিত পরীক্ষার মোট খাতার মাত্র ৩০ শতাংশের মতো দেখার পর গত ১১ জুন থেকে তা বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ের মধ্যে অন্য কোনো পদের নিয়োগ-প্রক্রিয়াও চালানো হয়নি।
খাদ্য পরিদর্শক পদে লিখিত পরীক্ষা হয়েছে গত ডিসেম্বর মাসে।
পরীক্ষার ১৫ দিনের মধ্যেই ফলাফল তৈরি করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা আটকে রাখা হয়েছে। ওই পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দাবিদার অনেক প্রার্থী ঢাকায় অবস্থান করে নিয়মিত চাকরির খোঁজখবর নিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে ঘোরাঘুরি করেন।
তাঁদের কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে অনেক দালাল তাঁদের আশপাশে জুটেছে, যারা আট লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি নিশ্চিত করে দেওয়ার কথা বলছে। আবার পরীক্ষা বাতিলের কথাও তাঁরা শুনছেন।
পরিদর্শক পদে নিয়োগ করা হবে ৩২৮ জন। পরীক্ষা দিয়েছেন প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে প্রতিটি পদের বিপরীতে ১০ থেকে ১২ জন করে মৌখিক পরীক্ষার জন্য রাখা হয়েছে। চাকরি নিশ্চিত করার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকে ঘুষ চাওয়া ও নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর সঙ্গে একশ্রেণীর দালাল, তাঁদের সঙ্গে সম্পৃক্ত খাদ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সরকারি দলের কিছু নেতা-কর্মীর একাধিক চক্র জড়িত বলে জানা গেছে।
সরকারি সূত্র জানায়, পরীক্ষা বাতিলের দায়িত্ব কে নেবে তা নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। এ ব্যাপারে ছয়-সাতটি অনানুষ্ঠানিক সভা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক এবং অফিস সহকারী ও কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগ-প্রক্রিয়া না চালানোর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি শাখা থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ওই দুটি পদের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করেছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু তা করার কথা নিয়োগ কমিটির।
এ ব্যাপারে পরীক্ষা কমিটির বক্তব্য হচ্ছে, একাধিক পদে অনেক লোক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় কিছু কাজ ‘আউটসোর্সিং’ (বাইরের সহায়তা নেওয়া) করতে হয়। মন্ত্রণালয়ের প্রশ্নপত্র তৈরিকেও ‘আউটসোর্সিং’ হিসেবে বিবেচনা করে নিয়োগ-প্রক্রিয়া চালানো যায়।
সরকারি সূত্র জানায়, উপরোল্লিখিত অনানুষ্ঠানিক সভাগুলোতে নিয়োগ-প্রক্রিয়া বাতিল হওয়ার পর কে বা কারা কোন পদে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করবেন, সে বিষয়েও আলোচনা করে রাখা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রার্থী রাজনৈতিক কর্মীরা আগেভাগেই প্রশ্নপত্র সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন।
যে ১০ ধরনের পদে নিয়োগ-প্রক্রিয়া চলছে সেগুলো হচ্ছে: খাদ্য পরিদর্শক, কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক, অপারেটর (পেস্ট কন্ট্রোল), উপখাদ্য পরিদর্শক, সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক, উচ্চমান সহকারী, অডিটর, হিসাবরক্ষক কাম ক্যাশিয়ার, সুপারভাইজার (সাইলো), সহকারী অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক এবং ডাটা এন্ট্রি ও কন্ট্রোল অপারেটর।
নিয়োগ কমিটির প্রধান ইলাহী দাদ খান। সদস্য হিসেবে আছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) একজন প্রোগ্রামার। কমিটির সদস্য সচিব হচ্ছেন খাদ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) ইফতেখার আহমেদ।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।